somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেমন কাটালাম এবারের ঈদ!

২৭ শে মে, ২০২০ রাত ৯:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(পোস্টটা গতকালের লেখা)

গতকাল পবিত্র ঈদুল ফিতর গত হয়ে গেল! মনের মাঝে আনন্দ বিষাদের বিচিত্র সব অনুভূতি খেলা করে চলছিল সেই সকাল থেকেই। এবারের রোযার মাসটা আল্লাহতা’লার অশেষ রহমতে খুব ভাল কেটেছে আমার। মনে শুধু একটাই আফসোস ছিল যে, মাসজিদে তারাবীহ’র নামায পড়তে পারিনি যা গত প্রায় তেত্রিশ বছর ধরে কখনো অকারণে বাদ পড়েনি (কোন কোন বছরে বড়জোর দু’তিন দিন হয়তো বাদ পড়েছে, তবে তা কোন বিশেষ কারণ ছাড়া নয়তো অবশ্যই)। এবারে বাধ্য হয়ে রাষ্ট্রীয় নির্দেশের প্রতি অনুগত থেকে এবং ধর্মসম্মতভাবেও, তা বাদ দিয়েছি, স্বদেশে ও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারীর কারণে। তা সত্ত্বেও এবারে প্রতিদিন নিয়ম মাফিক ঘরে বসেই ইবাদত বন্দেগী করেছি, রোযার অনুশাসনসমূহ যথাসম্ভব নিষ্ঠার সাথে পালন করতে চেষ্টা করেছি। বাহিরে যাবার কোন তাগিদ ছিল না, ঈদের কোন কেনাকাটা ছিল না, এবং এসব না থাকাতে সময়টা যে কত সুন্দর হতে পারে, তা বুঝেছি এবং প্রাণভরে এ সুযোগটার সদ্ব্যবহার করেছি। পুরো রোযার মাসে অতীব জরুরী কাজে শুধুমাত্র দু’দিন বাসা থেকে বের হয়েছি। কারো সাথে কোন ‘ফযুল বাৎ-চিত’ করিনি, ইবাদত বন্দেগী ছাড়া যেটুকু সময় পেয়েছি, পড়াশোনা এবং লেখালেখি করেছি, স্রষ্টার সৃষ্টি ও তার বিধি বিধান সম্পর্কে ‘তাফাক্কুর’ করেছি। রোযা শুরু হবার আগে মাত্র পনের দিনের ব্যবধানে আমার দু’জন ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং একজন বন্ধুপত্নীকে চিরতরে হারিয়েছি, তার মধ্যে একজন করোনাক্রান্ত ছিল। গত একমাসে এই রোযার মধ্যেই বেশ কয়েকজন আত্মীয় স্বজন এবং প্রাক্তন সহকর্মীকে কয়েকদিন পর পর এক এক করে হারিয়েছি। এসব নিয়ে মনের ভেতরে একটা বেদনাবোধ পুরো মাস জুড়েই ছিল। এবাদতের সময় তাদের মুখগুলো মনের পর্দায় ভেসে ওঠাতে তাদের জন্য দোয়া খায়ের করতে পেরেছি। জাগতিক চাওয়া পাওয়ার অন্তঃসারশূন্যতা মনের মাঝে পরিষ্কারভাবে প্রতিনিয়ত প্রতিভাত হয়েছে এবং প্রকৃত শান্তির উৎস অনুসন্ধানে মনকে উৎসাহিত করেছে। এসব কারণে রোযার মাস জুড়ে আমার মনে আত্মতৃপ্তি এবং সেইসাথে সন্তুষ্টিবোধ ছিল।

কিন্তু গতকাল ঈদের দিনে সকাল থেকেই মনটাতে ঠিক আনন্দ বলতে যা বোঝায় তা ছিল না। আমাদের ধর্মীয় মতে ঈদের দিনে মনটাকে খুশী খুশী রাখতে হয়, সেটা জেনেও আমি ঠিক সেভাবে আনন্দ উপভোগ করতে পারছিলাম না। কিন্তু আমাকে নিরানন্দ দেখলে বাসার বাদ বাকি সবাই নিরানন্দ বোধ করবে, এই ভেবে সকালে আরো কিছুক্ষণ শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করলেও, সময়মত উঠে গোসল করে তৈরী হয়ে নিলাম। আমাকে দেখে বাকি অন্যরাও তৈরী হয়ে নিলো এবং আমরা বাসার সবাই মিলে ঘরেই ঈদের নামায পড়লাম। যদিও এর আগে আমি পারিবারিক জামাতে ইমামতি করেছি, কিন্তু জীবনে এই প্রথম ইমাম হিসেবে ঈদের নামায পড়লাম ও পড়ালাম। নানান উৎস থেকে পাওয়া ভিডিও ক্লিপ দেখে এই নামায পড়ানোর নিয়মনীতিগুলো আগেই আত্মস্থ করেছিলাম, সকালে বেশ সাবলীলভাবেই তা কার্যতঃ প্রয়োগ করলাম। নামায পড়ে উঠে বাসার সবাই মিলে যথারীতি একসাথে বসে নাস্তা করলাম। নাস্তার আগে অবশ্য ঈদ-সালাম পর্ব পালিত হলো। আগে আমাকেও কেউ সালাম করতো, আমিও কাউকে করতাম। এখন দিনে দিনে আমার সালাম করার মানুষের সংখ্যাটা কমে যাচ্ছে, ঢাকায় তেমন নেই বললেই চলে।

নাস্তার পর স্বদেশে-বিদেশে অবস্থানরত আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে পাওয়া কিছু ফোনকল এ্যাটেন্ড করলাম, আবার কাউকে কাউকে নিজেই কল করলাম। এগুলো প্রতি ঈদেই রুটিন মাফিক করি। কিন্তু এবারে কেন যেন বেশীরভাগ কথাবার্তাই প্রাণহীন মনে হচ্ছিল। তবে আমার নিজের এবং আত্মীয়সূত্রে কয়েকজন নাতি-নাতনির ছবি দেখে মনটা ভাল হয়ে যায়। আরো ভাল লাগে যখন জানতে পারি, একসাথে বাবা মাকে ঘরে পেয়ে ওরা সবাই কতটা খুশী! ওদের জন্য আমরা কেমন বিশ্ব রেখে যাচ্ছি, তা ভেবে শঙ্কিত না হয়ে পারা যায় না। দু’বছর আগে আমাদের ভারত সফরের সময় দিল্লী থেকে নাতনি আনায়ার জন্য কিছু পোষাক কিনে এনেছিলাম, তার মধ্যে একটি ওর গায়ে বড় হবে জেনেও কিনেছিলাম ফ্রকটা পছন্দ হয়েছিল বলে। গতকাল ঈদের দিনে ওর মা ওকে সেটা পরিয়েছিল, এবং তা মানিয়েছিলও বেশ। দু’বছর পর এখন সেটা বেশ ভালভাবে ফিট হয়েছে। ওর পাঁচমাস বয়সী ছোটভাই আরহামকেও নতুন পাজামা-পাঞ্জাবি পরিয়েছিল। পাজামা –পাঞ্জাবিতে পুচকোটাকেও বেশ মানিয়েছিল। ওদের ছবি দেখে মনটা ভাল হয়ে গেল।

গতকাল ফোনে সবার কথাতেই একটা শঙ্কা ব্যক্ত হচ্ছিল, এ পরিস্থিতি আমাদেরকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা কি আমরা গুরুত্বের সাথে ভাবছি? এই ঈদের দিনটাতেই গতকাল বাংলাদেশে করোনাজনিত মৃত্যুর সংখ্যাটা পাঁচশত অতিক্রম করে গেল! ঈদের মাত্র কয়েকদিন আগে যেভাবে গ্রামমুখী মানুষের গিজগিজ করে লঞ্চ/ফেরী বোঝাই করে দেশের বাড়ীতে ছোটার দৃশ্য দেখলাম, সে কথা ভেবে শঙ্কাটা আরও বেড়ে গেল। এরা হয়তো এ রোগটাকে শহর থেকে নিয়ে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দিয়ে আসবে! ফোনে সবাই দোয়া চাচ্ছিল, আমিও চাচ্ছিলাম। আল্লাহ রাব্বুল ‘আ-লামীন কার দোয়া কখন কবুল করবেন, তা কেউ বলতে পারেনা। আবার কেউ যখন দোয়া চায়, তার জন্য দোয়া করাটা সাদাক্বাহ এর পর্যায়ে পড়ে। এজন্য সবসময় ময়-মুরুব্বীদের জন্য, স্নেহ-ভালবাসার মানুষদের জন্য বেশী বেশী করে দোয়া করা উচিত, তারা না চাইলেও। যারা আমাকে স্মরণ করে কল করেছেন, শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন, তাদের সবার জন্য রইলো আন্তরিক দোয়া এবং ধন্যবাদ, যদিও অকপটে স্বীকার করছি, আমি অনেকেরই শুভেচ্ছাবার্তার জবাব দেইনি।

দুপুরে মেলবোর্ন প্রবাসী ছেলে ও বৌমা ওদের ঈদের দিনের তৈরী বিভিন্ন ডিশের ছবি আমাদের ফ্যামিলী গ্রুপে পোস্ট করলো। এবারে ওদের এবং আমাদের ঈদ একই দিনে হয়েছে। আমরা মাত্র দু’মাস আগে ওদের বাসায় তিন মাস কাটিয়ে দেশে ফিরেছি। ওখানে থাকার সময়েই লক্ষ্য করেছি যে বৌমা রানা-বান্নার ব্যাপারে এখন বেশ আগ্রহী এবং সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠেছে। ওর রান্না আমার খুব ভাল লাগতো, তাই আমিও কম বেশী এ্যাপ্রিশিয়েট করতাম। এতে সে অনুপ্রাণিত হয়ে আরো নতুন নতুন আইটেম বানাতো। আজকের ডিশগুলো দেখতেও যেমন ‘দর্শনধারী’ হয়েছে, খেতেও নিশ্চয়ই তেমনি ‘গুণবিচারি’ (সুস্বাদু) হবে। এসব নানাকিছু দেখতে দেখতে এবং ভাবতে ভাবতে মোটের উপর কিছুটা আনন্দ, কিছুটা বেদনা ও কিছুটা দুশ্চিন্তা নিয়ে ঈদের দিনটা ভালই কাটালাম, আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ রাব্বুল ‘আ-লামীন এর নিকট প্রার্থনা, তিনি যেন সত্ত্বর আমাদের দেশকে ও বিশ্বকে মহামারীমুক্ত করে দেন। আমরা প্রকৃতির প্রতি অনেক অবিচার করেছি, আমাদেরকে তার মূল্য দিতে হচ্ছে। আশাকরি বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এ ব্যাপারে যথেষ্ট সাবধান হবেন এবং পরিস্থিতি সংশোধনে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন।

সবাই সুস্থ থাকুন, সুস্বাস্থ্যে থাকুন সপরিবারে! যতদূর সম্ভব, ঘরে থাকুন আরও কিছুটা দিন। নিজেরা ভাল থাকুন, নিরাপদে থাকুন,‌ অন্যদেরকেও নিরাপদে রাখুন। আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের জন্য আপনাদের সকলের নিকট দোয়া কামনা করছি!

ঢাকা
২৬ মে ২০২০
শব্দসংখ্যাঃ ৯০৫
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০২০ দুপুর ১২:৪০
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×