somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেলবোর্নের দিনলিপি-১১ ... হান্টিংডেল ও ক্লেটন এ কিছুটা সময় কাটানো

০৪ ঠা জুন, ২০২০ রাত ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এর আগের পর্বটি দেখতে পাবেন এখানেঃ মেলবোর্নের দিনলিপি-১০ ... কিছু বিক্ষিপ্ত স্মৃতি

১৬ জানুয়ারী ২০২০। আজ খুব সকালে বিয়াই সাহেব এবং বিয়াইন ওনাদের ছেলের বাসা থেকে সরাসরি বিমানবন্দরে চলে গেলেন, ঢাকার উদ্দেশ্যে তাদের দীর্ঘ যাত্রা শুরু করার জন্য। আমাদের সাথে বিদায় পর্ব আগেই সেরে নেয়া হয়েছিল, তাই আমরা আর বিমান বন্দরে গেলাম না। ওনারা রওনা হবার কিছুক্ষণ পরে আরমান (ছেলে) আর সানজিদা (বৌমা) আমাদের বাসা থেকে রওনা হয়ে গেল ওনাদেরকে সী-অফ করতে। ওনাদেরকে বিদায় জানিয়ে ফেরার সময় বৌমা রাস্তা থেকেই ফোন করে জানালো যে ওরা কিছু সদাইপাতি করার জন্য হান্টিংডেল যাবে। আমরাও যদি ওদের সাথে যেতে চাই তবে যেন তৈরী হয়ে থাকি। আমাদের তেমন দরকার না থাকলেও ভাবলাম, বাবা মাকে বিদায় দিয়ে নিশ্চয়ই এখন ওর মনটা একটু ভারি থাকবে। তাই ওকে সঙ্গ দেয়ার কারণেই আমরা রাজী হ’লাম এবং তৈরী হয়ে নিলাম। ওরা বাসায় ফিরে এসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়ার পর আমরা সবাই মিলে একসাথে রওনা হ’লাম। ছেলে নিকটস্থ সেভেন-ইলেভেন থেকে এক মাগ কফি কিনে নিল। গাড়ী নিয়ে রাস্তায় বের হলে ও সব সময় এটা করে। অনেক সময় আমরাও ওর সাথে কফি পানে যোগ দেই, কিন্তু সেদিন ঐ সময়ে আমরা আর কেউ তাতে আগ্রহী হলাম না। পথে বৌমার কলেজ- ‘ম্যাকিনন সেকন্ডারী কলেজ’ অতিক্রম করার সময় সে আমাদেরকে কলেজ টা দেখালো, আমরা সামান্য একটু সময় গাড়ী থামিয়ে গাড়ী থেকেই কলেজটার বাহ্যিক কাঠামোটা দেখে নিলাম। পুলিশের টিকেটের ভয়ে রাস্তায় বেশীক্ষণ গাড়ী থামিয়ে না রেখে সেখান থেকে হান্টিংডেল এসে আমরা গাড়ী পার্ক করলাম।

হান্টিংডেল এ বেশ কয়েকটা বাংলাদেশী মালিকের দোকান আছে। এখানে প্রায়ই অনেক বাঙালি আসে দেশী শাক-সব্জী, মাছ ও অন্যান্য সামগ্রী কিনতে। বৌমা সেসব দোকানের দিকে গেল, আমাদেরকে বললো আশেপাশের জায়গাগুলো একটু ঘুরে দেখতে। আমরা হান্টিংডেল রেল স্টেশন এবং বাস পার্কিং এলাকাটা একটু ভাল করে দেখে নিলাম, যেন এর পরে প্রয়োজন হলে আমরা একাই পাবলিক ট্রান্সপোর্টে এখানে চলে আসতে পারি। যোহরের নামাযের সময় আগেই হয়েছিল। দেখলাম, সেখানে একটা মাসজিদ আছে। কিছু মুসল্লীর সাথে আলাপে জানলাম, মাসজিদটি পরিচালনার সাথে অনেক বাংলাদেশী সম্পৃক্ত আছে। নামে ‘হান্টিংডেল মাসজিদ’ হলেও প্রচলিত অর্থে সেটাকে মাসজিদ না বলে ‘নামায-ঘর’ বলাই সঙ্গত। সেটার উপরে কোন মিনার নেই, কোন মাইক নেই। সেখান থেকে মাইকে কোন আযান দেয়া হয় না। শুধু প্রতি ওয়াক্তে খালি গলায় আযান দিয়ে একজন ইমামের নেতৃত্বে জামাতে নামায পড়ানো হয়। নারীদের জন্যেও সেখানে আলাদাভাবে জামাতে নামায পড়ার সুব্যবস্থা আছে। দেখলাম, সেখানে প্রচুর সংখ্যক বাঙালি নামায পড়তে আসে। সাথে অন্যান্য দক্ষিণ এশীয়, মিসরীয়, লেবানীজ, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের এবং আফ্রিকান মুসল্লীরাও আসে। শুক্রবারে স্থান স্বল্পতার কারণে এখানে দু’বার জুম্মার জামাত অনুষ্ঠিত হয়- প্রথমবার বেলা দেড়টায় এবং পরেরবার আড়াইটায়। আমরা দু’জন সেখানে যোহরের নামায পড়ে নিয়ে ছেলে ও বৌমার সাথে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশী দোকানগুলোর দিকে পা বাড়ালাম।

ওদের সাথে দেখা হওয়ার পর ওরা জানালো যে ওদের ওখানকার কাজ শেষ, ওখান থেকে ওরা ক্লেটন যাবে, সেখানকার ‘COLES’ স্টোর থেকে কিছু কেনা কাটার জন্য। এর মধ্যে বেশ খিদে পেয়েছিল। ঠিক এক সপ্তাহ আগের বৃহস্পতিবারে বিয়াই-বিয়াইনসহ আমরা ক্লেটন এর “মান-ও-সালওয়া’ রেস্টুরেন্টে লেইট লাঞ্চ করেছিলাম। সেদিনের ‘পাপড়ি-চাট’ আর চিকেন বিহারি পরাটা রোল এর স্বাদ মুখে লেগেছিল। খিদে পাওয়াতে আমি প্রস্তাব দিলাম আবার সেখানে খেতে যাবার জন্য। আগেরবারে খুব ভাল লাগাতে একই মেন্যু নিলাম, সাথে কুলফি আর ফালুদা। আগেরবার নিয়েছিলাম ম্যাঙ্গো লাচ্ছি। তবে, এবারে পাপড়ি চাটের স্বাদ আগের বারের মত মুখরোচক মনে না হলেও, পেস্তাশিও কুলফিটা চমৎকার ছিল, এবং ফালুদাও।

বিকেলের দিকে হাল্কা বৃষ্টি শুরু হলো। বৌমার এক বান্ধবীর বিবাহ-বার্ষিকী উপলক্ষে সন্ধ্যায় ওদের দাওয়াত ছিল। ওরা দু’জনে চলে যাবার পর আমরাও বের হ’লাম আমাদের প্রাত্যহিক বৈকালিক/সান্ধ্য হন্টনের উদ্দেশ্যে। আকাশের অবস্থা দেখে ভেবেছিলাম, বৃষ্টি আমাদের হাঁটায় বাধ সাধবে। কিন্তু আমরাও নামলাম, বৃষ্টিও থেমে গেল! আমরা আমাদের এলাকার ওয়াকওয়ে ধরে হাঁটা শুরু করলাম। ঢাকায় থাকতে যেমন আমাদের এলাকার পুকুর পাড়ের ওয়াকওয়ে ধরে ছয় চক্কর দিলে দুই মাইল (৩.২ কিমি) হাঁটা হতো, এখানেও তেমনি আমাদের বাসস্থানের চারিদিকে প্রায় বৃত্তাকার একটা ওয়াক রুট পেয়ে গেলাম, যেটা ছয় চক্কর দিলে দুই মাইল পথ হাঁটা হয়। আমরা গল্প করতে করতে ছয় চক্কর শেষ করে ঘরে ফিরে এসে ডিনার করে নিলাম। তারপর গিন্নী যতক্ষণ তার রুটিন মাফিক ঢাকায় এবং কানাডায় ফোন করে ছেলে ও বৌমাদের সাথে তার আলাপচারিতা সেরে নিচ্ছিলেন, আমি ততক্ষণ ল্যাপটপ খুলে কিছুটা লেখালেখির কাজ সেরে নিলাম।

১৭ জানুয়ারী ২০২০। আজ শুক্রবার, পবিত্র জুম্মার দিন। মেলবোর্নে এসে এক শুক্রবারে এখানকার ‘কীজবরো (KEYSBOROUGH)’ নামক স্থানে অবস্থিত তুর্কীদের দ্বারা পরিচালিত একটি সুন্দর মাসজিদে জুম্মার নামায পড়েছিলাম। গতকাল হান্টিংডেলে অবস্থিত দক্ষিণ এশীয়দের দ্বারা পরিচালিত মাসজিদে যোহরের নামায পড়ার সময়েই মনে মনে স্থির করেছিলাম যে আজ জুম্মার নামায সেখানে পড়বো। বাসা থেকে রওনা হয়ে কফিল্ড পর্যন্ত এসে প্ল্যাটফরম বদল করে অন্য ট্রেন ধরে কি করে হান্টিংডেল আসতে হবে, তা গতকালই আরমানের কাছ থেকে ভাল করে বুঝে নিয়েছিলাম। আমার এবং আমার স্ত্রীর জুম্মার নামাযে যাবার কথা শুনে সানজিদা বললো, সে আজ ফ্রী আছে, সুতরাং সেও আমাদের সাথে যাবে। আমরা বাসা থেকে আর্লী লাঞ্চ করে হান্টিংডেল এর উদ্দেশ্যে ট্রেনযোগে রওনা হ’লাম। হাতে সময় একটু টাইট ছিল। কফিল্ড এর আগের স্টেশন Glenhuntly তে যখন ট্রেন থামলো, ড্রাইভার অভ্যন্তরীন পিএ সিস্টেমে ঘোষণা দিল যে সামনে কিছু বিপত্তির কারণে আমাদেরকে সে স্টেশনেই অনির্ধারিত সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এটা শুনে মনে সন্দেহ দেখা দিল যে সময়মত জুম্মার নামাযে সামিল হতে পারবো কি না। ভাগ্য ভাল যে ৫/৭ মিনিট বিলম্বের পর ড্রাইভার বিলম্বের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে আবার ট্রেন চালানো শুরু করলো, কিন্তু ধীর গতিতে। অবশেষে যখন ট্রেন কফিল্ডে থামলো, আমরা ঝটপট নেমে অপর প্ল্যাটফর্ম এর দিকে ধাবিত হ’লাম হান্টিংডেল এর ট্রেন ধরার জন্য। একটু পরে সে ট্রেনটা আসলো, আমরা সেটাতে উঠে হান্টিংডেল এলাম এবং ত্রস্তপায়ে মাসজিদের দিকে হাঁটা শুরু করলাম।

এই প্রথম এখানকার ট্রেনে একটা খারাপ জিনিস চোখে পড়লো। একটি আসনে কোন একজন যাত্রী সফট ড্রিঙ্কস পান করে খালি ক্যান টা আসনের উপরে রেখে নেমে গিয়েছিল, আরেকটি আসনে দেখলাম একটি প্লাস্টিকের খালি স্ন্যাকবক্স পড়ে আছে। সাথে সাথে সিঙ্গাপুরে দেখা মেট্রোরেলের কঠোর নিয়ম এবং আইন প্রয়োগের কথা মনে পড়ে গেল। সেখানে ট্রেনে বসে পানি খাওয়াও নিষেধ, ধরা পড়লেই জরিমানা। আবার এখানে কিছু চীনা মেয়েকে দেখেছি সম্মুখের সীটে জুতোসহ জোড়া পায়ের গোড়ালি দুটো রেখে পা নাচাতে নাচাতে নিবিষ্ট মনে স্মার্টফোনে টেক্সটিং করে যাচ্ছে। এটা সিঙ্গাপুরে করা অসম্ভব। যাহোক, আমরা মাসজিদে প্রবেশ করে দু’রাকাত দাখলুল মাসজিদ পড়ার পরেই খুৎবা শুরু হয়েছিল। জুম্মার নামায শেষে আমরা বাসযোগে মেলবোর্নের বৃহত্তম শপিং মল চ্যাডস্টোন এ গেলাম। সেখানে কিছু কেনা কাটা করে এবং কফি পান করে আবার বাসযোগেই বাড়ী ফিরে এলাম।

(১৭ জানুয়ারী ২০২০ এর দিনলিপির কথাগুলো অদ্য ০৫ জুন ২০২০ তারিখে মূল পোস্টের সাথে ছবিসহ সংযোজন করলাম)


ঢাকা
০৪ জুন ২০২০
শব্দসংখ্যাঃ ৯৮৮



কফিল্ড রেলস্টেশনের ট্রেন নির্দেশিকা


গ্লেনহান্টলী স্টেশনে এসে ট্রেনের ড্রাইভার অভ্যন্তরীন পিএ সিস্টেমে ঘোষণা দিল যে সামনে কিছু বিপত্তির কারণে আমাদেরকে সে স্টেশনেই অনির্ধারিত সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।


একটি জনপ্রিয় কফি শপ


সুস্বাদু গরম কফি
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০২১ সকাল ১০:৩৮
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×