
সরকার যখন সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মতামত নিয়ে পরিচালিত হয় তখন সে সরকার কে গণতান্ত্রিক সরকার বলে। ধারণা করা হয় গণতন্ত্রের প্রথম সূচনা হয় গ্রিসে প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে। আর সংসদীয় গণতন্ত্রের উৎপত্তি হয় যুক্তরাজ্যে ১৫ জুন ১২১৫ সনে। সুতরাং গণতন্ত্র নতুন কোন ধারণা নয়।
আমরা বাংলাদেশীরা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করে আসছি মাত্র পঞ্চাশ বছর আগে থেকে। তাও প্রায় অর্ধ শতাব্দী। গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন গণতন্ত্রের মানসপুত্র হুসেইন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ সময় আমজনতা কে আন্দোলন সংগ্রাম করে শেষ পর্যন্ত ১৯৭০ সালে নির্বাচন আয়োজন করা হয় এবং তিনি জয়লাভ করেন। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের কূটচালের কারণে ঐ প্রচেষ্টা রূদ্ধ হয়ে যায়। শুরু হয় জনগণের ভোটের অধিকার আন্দোলন। সে আন্দোলন রুপ নেয় স্বাধীনতার আন্দোলনে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আমরা পেলাম এক স্বাধীন বাংলাদেশ। ১৯৭২ সালে দশ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে এলেন। স্বপ্ন দেখালেন নতুন বাংলাদেশের। ১৯৭০ নির্বাচন যেখানে শেষ হয়েছিল সেখান থেকে শুরু করলেন। শুরু হল সংসদীয় গণতন্ত্রের যাত্রা। নতুন যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ, নির্বাচন দেওয়ার সময় সুযোগ কোনোটাই নেই। একটু গুছিয়ে দিলেন ৭৩ নির্বাচন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে, বঙ্গবন্ধু যে লক্ষ্যে স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন, তার বাস্তবায়নে হাত দিলেন। কিন্তু অতটা সফল হলেন না। ফলে সংসদীয় গণতন্ত্রিক নির্বাচন পদ্ধতি থেকে সরে দাঁড়ালেন। গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হতেই শেষ। তিনি একজন মহান নেতা। তাঁর চিন্তা চেতনা ছিল মহৎ। তিনি দেশের রাজনৈতিক, অর্থনীতি, সমাজ সংস্কৃতি ঢেলে সাজাতে চাইলেন। অবশ্যই তিনি কী চেয়েছিলেন কী হয়েছে সেটা বিতর্কের বিষয়।
১৫ই আগস্ট ১৯৭৫ সাল আমরা হারালাম স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি কে। ১৯৭৫ পরবর্তী প্রায় দেড় যুগ বাংলাদেশ ছিল অন্ধকার জগতে যেখানে গণতন্ত্রের আলো পরেনি। ১৯৯১ সাল ঢাকা আকাশে বাতাসে ভেসে আসছে একটি স্লোগান স্বৈরাচার নিপাত যাক গণতন্ত্র মুক্তি পাক। জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায়। ব্যাপক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পরে দেশের জনগণ ক্ষমতার চূড়া থেকে এরশাদ কে মাটিতে নামিয়ে আনে। ১৯৯১, নতুন নির্বাচন। জয়ী হলেন বেগম খালেদা জিয়া, দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী।
দীর্ঘ বিরতির পর আবারও ক্ষমতায় এসে বিএনপি পুনরায় ক্ষমতায় আসার পরিকল্পনা করতে লাগলো। ১৯৯৬ সনে প্রহসনের নির্বাচন। আবারও গণতন্ত্রকে হত্যা করার চেষ্টা। জনগন আবারও রাজপথে, আন্দোলন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার। নতুন নির্বাচন। স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায়, গণতন্ত্রের এক নব সূচনা । পাঁচ বছর পর আবারও বিএনপি ক্ষমতায়। পাঁচ বার হল দূর্নীতিতে প্রথম। ভোটের তালিকা থেকে শুরু করে নিবার্চন কমিশনার, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ইত্যাদি বিষয়ে নোংরা হস্তক্ষেপ করা শুরু করলো। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন তা জটিলতা সৃষ্টি হল। গণতন্ত্র আবারও হুমকির মুখে পড়েছে। টানা দুই বছর রাজনৈতিক চর্চা বন্ধ।২০০৮ সালে নির্বাচন । আওয়ামীলীগ ক্ষমতায়। ইচ্ছেমতো প্রয়োজনীয় সব আইন পরিবর্তন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। বারবার সংবিধান সংশোধন হতে থাকে। সরকারের অধীনে নির্বাচন। ২০১৪, বিএনপির নির্বাচন বর্জন। মানুষ দেখলো ভোটারবিহীন এক নির্বাচন। আবারও গণতন্ত্রের পরাজয়। ভোটের অধিকার হারানো জনগণ দেখলো সরকারের নির্দিষ্ট কিছু কাঠামোগত সংস্কার বা উন্নয়ন। যদিও জনগণের কাছে সুশাসন শীতের ঘন কুয়াশার মাঝে একমুঠো সূর্যে আলো। পথ চলা যায় কিন্তু গাঁ গরম হয় না এমন।
আমরা দেখেছি ২০১৮ নির্বাচন। সরকারপন্থীদের মতে এত নিখুঁত ও সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশে আর কখনো হয়নি। যদিও বিভিন্ন মহলের প্রশ্ন আছে নির্বাচন কি রাতে হয়েছিল, না দিনে?
বাংলাদেশ দীর্ঘ আন্দোলনের পর ১৯৭১ স্বাধীন হয়েছিল শুধুই কি স্বাধীন দেশের জন্য? এই স্বাধীনতার মানে কি? এই স্বাধীনতা কি স্বাধীন ভাবে কথা বলার স্বাধীনতা না? অন্যায়ের প্রতিবাদ করার স্বাধীনতা না? নির্ভয়ে পথ চলার স্বাধীনতা না ? মত প্রকাশের স্বাধীনতা না? নিরাপদে ঘরে থাকার স্বাধীনতা না? যদি সুশাসন থাকতো নোয়াখালীর সূবর্ণাচরে ঘটনার পর কবির হাঁটে নারী নির্যাতন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হত না।
গণতন্ত্র শুধু ভোটের অধিকার না। তবে ভোটের অধিকার নিশ্চিত হলে বাকী সব মৌলিক অধিকার আপনাআপনি ঠিক হয়ে যায়।
ভোটের অধিকার মানে ভেজাল মুক্ত নিরাপদ খাদ্যের অধিকার। দূর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার অধিকার। দূর্ঘটনায় প্রাণ না দেওয়ার অধিকার।
আমরা স্বপ্ন দেখি একদিন গণতন্ত্রের জয় হবে। গণতন্ত্র মুক্তি পাবে। মানুষ নির্ভয়ে প্রশ্ন করতে শিখবে। কালো আইন থাকবে না। সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে। মানুষের মনুষ্যত্ব জাগ্রত হবে।
জয় গণতন্ত্রের।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



