somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হোক কলরব ফুলগুলো সব লাল না হয়ে 'লাশ' হলো কেন ?

২১ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ১০:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রাস্তায় বাসের চাপা, গলিতে ছিনতাইকারীর ছুরি, ঘরে ডাকাতের কোপ, বাজারে চাঁদাবাজের গুলি। বৃষ্টিতে পড়ে ড্রেন, মাথায় পড়ে বিজ্ঞাপনের ইট এবার আকাশ থেকেও এলো মৃত্যু। আজকের বাংলাদেশে আর যেকোনো কিছু অনিশ্চিত হোক, মৃত্যু নিঃসন্দেহে গ্যারান্টি। সকালে বাচ্চা স্কুলে পাঠানোর সময় আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন না, সে বাসের নিচে পড়বে, স্কুল বিল্ডিং ভেঙে পড়বে, নাকি আজকের মতো কোনো প্রশিক্ষণবিমানের ধ্বংসস্তূপে পিষ্ট হবে।

আজ সকালেই ঢাকার এক স্কুলের ছাদের উপর ভেঙে পড়েছে একটি প্রশিক্ষণ বিমান। বই হাতে, স্কুল ইউনিফর্মে সেজে, ভবিষ্যতের স্বপ্ন চোখে নিয়ে যারা শ্রেণিকক্ষে বসেছিল তাদের অনেকেই আজ নেই। শোকস্তব্ধ পরিবারগুলো কেবল কাঁদতে জানে, আর রাষ্ট্র জানে দুঃখ প্রকাশ করতে। কারণ এই দেশে প্রটোকলটাই তো এমন কর্তৃত্বের কারিগররা ভুল করে, আর সাধারণ মানুষ তার মূল্য চুকায়।

বলা হবে, প্রশিক্ষণ বিমান নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, শহরের মাঝখানে স্কুলের মাথার ওপর এই প্রশিক্ষণ কেন? এই কি ছিল উন্নয়নের ফ্লাইট প্ল্যান ? একদিকে দুর্নীতিতে ঘেরা ইনফ্রাস্ট্রাকচার, অন্যদিকে অদক্ষ পরিকল্পনা ও মুল্যবোধহীন সিদ্ধান্ত এই দুই মিলে আজ শিশুদের বুকেই আছড়ে পড়েছে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের ব্যর্থতার ধ্বংসাবশেষ। আরও ভয়ংকর সত্য হলো, এই মৃত্যু শুধুই দুর্ঘটনা নয়, এটি রাষ্ট্রীয় অবহেলার প্রাত্যহিক রূপ।

এখানে মৃত্যু যতটা বাস্তব, বাঁচা ততটাই কাকতালীয়। বাংলাদেশে মানুষ মারা যায় শুধু বয়স বা রোগে না এখানে মৃত্যু আসে রাস্তায় উন্মত্ত বাসের চাকার নিচে, বৃষ্টির দিনে উন্মুক্ত ড্রেনের গহ্বরে, ছিনতাইকারীর ছুরির আঘাতে, অথবা ডেঙ্গু-মশার কামড়ে। এখন নতুন সংযোজন হয়েছে আকাশ থেকে পড়া বিমান। মানুষ যদি মরেই, তবে যেন একটু অভিনব ভাবে মরে এটাই যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের নীরব প্রতিশ্রুতি।

সকালে খবর শুনে বলি, “ওহ, স্কুলে প্লেন পড়ে গেছে? কয়জন মরেছে?" তারপর হাত ধুয়ে নাস্তা খাই। কারণ আমরা আর মৃতদেহ দেখি না, আমরা শুধু সংখ্যায় গুনে নিই। পাঁচজন শিশু মারা গেলে আমাদের মন খারাপ হয় কিছুক্ষণ, বিশজন মারা গেলে ফেসবুকে কালো প্রোফাইল ছবি দিই, আর কেউ যদি জীবিত বেঁচে যায়, তাকে বলি, “ভাগ্য ভালো ভাই !”

প্রশ্ন হচ্ছে, আর কতদিন এভাবে চলবে? আর কত শিশু মরলে আপনি বলবেন এই রাষ্ট্র ব্যবস্থা ভেঙে নতুন কিছু দরকার? আর কত মায়ের বুক খালি হলে আমরা রাস্তায় নামবো? আর কত তদন্ত রিপোর্ট চাপা পড়লে আমরা বুঝবো এই রাষ্ট্রের চালক অন্ধ? আজকের এই বিমান দুর্ঘটনা কেবল প্রযুক্তিগত ব্যর্থতা নয়, এটি একটি রাষ্ট্রের প্রতিদিনকার অপরাধের প্রকাশ। মৃত্যুকে যেভাবে আমরা নিয়তি ভেবে নিয়েছি, সেটাই সবচেয়ে বড় সংকট। আকাশ থেকে যে প্লেন পড়ে, তা শুধু ইঞ্জিনে আগুন ধরিয়ে দেয় না, তা জাতির আত্মার ভেতরেও আগুন লাগায়। আপনি কি সেটা টের পাচ্ছেন ? নাকি আপনি নিজের মৃত্যুর ধরনটা বেছে নিতে ব্যস্ত ?

বাংলাদেশে জন্ম মানেই এখন যেন রাশিয়ান রুলেট খেলা। একদিন হয়তো বেঁচে যাবেন, আরেকদিন হয়তো আকাশ থেকে একটি ড্রোন বা প্লেন এসে আপনার বাচ্চার বুক চিরে দেবে। আপনি শুধু অপেক্ষা করুন আপনার পালা কবে আসে। কারণ এখানে জীবন নেই, আছে শুধু বেঁচে থাকা। আর সেই বেঁচে থাকাটাও প্রতিদিনের এক দুঃস্বপ্ন। এত ক্রিয়েটিভ মৃত্যুর অপশন আর কোনো দেশ আপনাকে দেবে না। আপনি কী বেছে নিয়েছেন আপনারটা?
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ১১:১০
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয় দিবসের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানিয়ে । সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ২০২৫, ১৬ই ডিসেম্বর।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৯




দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রানের এক সাগর রক্তের বিনিময়। দুই লক্ষাধিক মা বোনের সম্ভ্রম হারানো। লক্ষ শিশুর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত‍্যু। এক কোটি মানুষের বাস্তুহারা জিবন। লক্ষ কোটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×