somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টাকার অভাবে দেশি মুরগি খেতে পারছেন না শিক্ষিকা সাহিনূর

১২ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


'দেশি মুরগি খেতে পারি না' এই কথা শুনে প্রথমে চোখ জলে ভরে গিয়েছিল। কত নিদারুণ এক শোচনীয় চিত্র! একজন শিক্ষিকা, যিনি নতুন প্রজন্মকে গড়ে তুলছেন, তিনি নিজেই দেশি মুরগির স্বপ্ন দেখছেন। এত বড় একটা কষ্ট! এত বড় একটা অন্যায়! আমার হৃদয় সত্যিই ভেঙে গেছে। তারপর খোঁজ নিয়ে যখন জানলাম যে এই শোচনীয় শিক্ষিকার নিজ এলাকায় পাকা বাড়ি আছে, কুমিল্লায় দুইতলা ভবন আছে, হাজীগঞ্জে ছয়তলা নিজস্ব বিল্ডিং আছে এবং একটি বিউটি পার্লারও চলাচ্ছেন, তখন আমার বুঝতে বাকি রইলো না যে এটা সত্যিই একটা শোচনীয় ঘটনা।

শোচনীয় না বলে আর কী বলব? একটা শিক্ষিকা, যার তিনটি বাড়ি আছে, যিনি একটা ব্যবসা পরিচালনা করছেন, যার স্বামী প্রধান শিক্ষক এবং সম্ভবত মাসিক আয় ৩৫ হাজার টাকার উপরে, তিনি বলছেন দেশি মুরগি খেতে পারেন না! কী দারুণ একটা কাকতালীয় সমাপতন! কী অসাধারণ একটা কমেডি! দেশি মুরগি যেন হয়ে গেছে লাক্সারি আইটেম, প্রথাগত সোনার চেয়েও মূল্যবান! বাজারে ৫০০ টাকার দেশি মুরগি হয়েছে ৫০,০০০ টাকার হীরা!

অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছি এই সৃজনশীল রূপকের প্রয়োগে। একজন শিক্ষক প্রতিনিধি যখন বলেন সব শিক্ষকদের কষ্টের কথা বলতে চেয়েছেন, তখন তিনি একটি চমৎকার পন্থা বেছে নিয়েছেন। তিনি বেছে নিয়েছেন এমন একটি উদাহরণ যা তার নিজের জীবনযাত্রার সাথে পুরোপুরি বেমানান। এটা যেন কোনো এক মহান শিল্পী যিনি অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের মুগ্ধ করছেন। বলছেন: হ্যাঁ, আমিও তারা, আমিও দুঃখী, আমিও ভুক্তভোগী। কিন্তু আমার ছয়তলা বাড়ি আছে, তাই বুঝবেন, আমার দুঃখ কত গভীর!

একটা সরল হিসাব করে দেখুন। যদি কোনো সাধারণ প্রাথমিক শিক্ষিকা মাসে ২৩ হাজার টাকা পান এবং সেই অর্থ দিয়ে একটি পরিবার চালান, তাহলে দেশি মুরগি কেনার ক্ষমতা থাকবে কিনা এটা আসল প্রশ্ন। কিন্তু যখন শিক্ষিকার সরকারি বেতন ২৩ হাজার, এর সাথে স্বামীর আয়, বিউটি পার্লারের মুনাফা, এবং সম্ভবত আরও অনেক কিছু যোগ হয় তখন সেটা হয়ে যায় বিশাল এক রাজস্ব প্রবাহ। তারপর দেশি মুরগি খেতে পারা বা না পারার কথা বলা মানে হল জনগণকে নির্বোধ মনে করা।

এই শিক্ষিকা নিশ্চয়ই অত্যন্ত দক্ষ একজন অভিনেত্রী হতে পারতেন। তিনি যেভাবে নিজের বাস্তবতা ভুলে গিয়ে সাধারণ শিক্ষকদের মুখোশ পরে কথা বলছেন, তা দেখে মন হয় বলিউড অডিশন দিয়ে আসতে। এমন একটি অভিনয় যা একই সাথে বাস্তবতা এবং কল্পনাকে এত নিখুঁতভাবে মিশিয়ে দেয়, তা খুব কম মানুষই করতে পারে। তিনি বলেছেন শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে সব শিক্ষকদের কথা বলছেন। দারুণ! সত্যিই দারুণ এক প্রতিনিধিত্ব! যে প্রতিনিধি নিজে বিশেষ সুবিধাভোগী তিনি সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা বলছেন, এটা যেন গল্পের রাজা ভিখারির জামা পরে ভিক্ষা চাইছেন।

আর যখন প্রকৃত দারিদ্র্যে থাকা শিক্ষিকারা বলছেন তারা ২০ বছর চাকরি করেও দেশি মুরগি কিনতে পারেননি, তখন সেটা একটা পুরো ভিন্ন ধরনের বাস্তবতা। সেটা সত্যিকারের অভাব, সত্যিকারের আর্তনাদ। কিন্তু সেই কণ্ঠস্বর হারিয়ে যাচ্ছে এই ছয়তলার শোরগোলে। এটা যেন এক ধরনের কণ্ঠস্বর চুরি, সত্যিকারের দুর্বলদের প্রতিনিধিত্ব করে তাদের অধিকার নিজে আত্মসাৎ করা।

বাজেট বাড়ে, জিডিপি বাড়ে, আমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হচ্ছি বলে শোনি। কিন্তু এই উন্নয়নের ভাগীদার কী সেই শিক্ষিকা যিনি সত্যিই দারিদ্র্যে আছেন? নাকি সেই শিক্ষিকা যার ছয়তলা বাড়ি এবং ব্যবসা আছে? সত্যিকারের অন্যায় এটাই যে যারা প্রকৃত নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা হলেন বিশেষাধিকারপ্রাপ্ত মানুষ, এবং তারা সাধারণ মানুষের ভাষা ব্যবহার করে তাদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছেন। দেশি মুরগি হয়ে উঠেছে এক মহান প্রতীক যেখানে মূল বিষয়টা হারিয়ে গেছে সম্পূর্ণভাবে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৯
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×