somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্যা হিপোক্রেসি - নরকের কীটের সাথে সহবাস

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ৭:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পর্ব -১০
মানব সভ্যতা ও পারিবারিক বন্ধনের ধারাবাহিকতায় পুরুষ ও নারীর বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত শুরুতেই নড়বড়ে হয়ে গেলে তার প্রভাব ভবিষ্যতে কতটা ভয়াবহ হবে তা সবেমাত্র আঁচ করতে লাগলাম। মায়ের মলিন মুখ আর রাজ্যের সমস্ত বিষাদ নিয়ে চুপ হয়ে থাকা বাবার চেহারা আমাকে ভিষণ অপরাধী করে দিলো। নিজেকে মনে মনে ধিক্কার দিলাম এতগুলো বছর কিভাবে নষ্ট করলাম? এতটা উন্মাদ ও দায়িত্বহীনতাকে আমি দুরভিসন্ধিত্বের প্রতীক হিসাবে ভাবতে লাগলাম। মানুষের বোধহয় মজ্জাগত বিষয় হলো, বিদেশের মাটিতে আবেগের সাগর ফুলে ফেঁপে উঠে আর তা থেকে সাঁতার কাটতে কাটতে তীরে উঠে আসার জন্য সুচিন্তিত পরিকল্পনা প্রয়োজন যাতে করে অযাচিত আশা ও দুরাশার দোলাচলে দুলতে থাকা কঠিন হৃদয় অনুরাগে সিক্ত হয়ে যায়। সুবিবেচক লোকই পারে সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করতে আর আমার মতো অবিবেচক সারাজীবন আহাম্মক থেকেই যায়। আমি যে কতবড় সর্বনাশ করেছি তা এবার বুঝতে পারলাম। পরিবারের লোকজনের মতের বাইরে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া আর পথভ্রষ্ট হওয়া সমান মনে হলো। কিন্তু আমি যতদুর পথ পাড়ি দিয়েছি তা থেকে ফিরে আসার আর কোন পন্থা নেই। আমার মা অনেক ইশারা ও ইঙ্গিতে আমাকে আবারও চিন্তা করতে বললেন কিন্তু আমিতো নাছোড়বান্দা। আমার বাঁধনকে চাই-ই চাই । মাকে খুব গোপনে বললাম, দেখ মা, বিদেশের মাটিতে এতদিন বানেছা বিবির ঘরে একসাথে থাকি যার জন্য আমাকে কোন টাকাকড়ি দিতে হয়নি তার উপর আমার আসার টিকেটের অর্ধেক বাকিতে করে আসি যা বানেছা বিবি পরিশোধ করবেন। একজন লোক আমার জন্য এতকিছু করলো আর আমি ভিসা পেয়ে বদলে যাবো তা কি হয় ? তুমি যেকোনোভাবে বাবাকে এ বিয়েতে সম্মত করো। মা' চোখের পানি মুছতে মুছতে বললেন তুই যা চাস তাই হবে, তোর সুখই আমাদের সুখ।
মায়ের একান্ত চেষ্টায় অনেক কাঠগড় পুড়িয়ে অবশেষে বাবা আমার বিয়েতে সম্মতি দিলেন। সাথে তাও বললেন সামাজিক দিক বিবেচনা করে যদিও আমি রাজী কিন্তু আমার মন কোন অবস্থায় তৃপ্ত নয়। যাহোক চৌদ্দই ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস যেন আমার আকাশ জুড়ে ভালোবাসার উজ্জ্বল তাঁরারা জ্বলে উঠলো। অবশেষে আমি বাদশা ভেলেন্টাইনস বহুল প্রতীক্ষিত কাঙ্ক্ষিত রাণীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। আনন্দের পসরা সাজিয়ে বসে হৃদয়ে জমানো যত দীর্ঘনিশ্বাস।

বহু প্রতিক্ষার পর শ্রাবণ বৃষ্টি এলে যেভাবে ভিজিয়ে দেয় মৃত্তিকা। খাঁ খাঁ মরুভূমি যেভাবে গ্রোগাসে গিলে নেয় একফোঁটা জলকে আমিও তেপান্তরে পথ বেয়ে তের জনমের তৃষ্ণা মেটাতে সঙ্গম সুখে অকুন্ঠ নিমজ্জিত হলাম৷
বাঁধন আমার বুকে তার উঞ্চ ঠোঁট চেপে কাঁপা গলায় প্রতিজ্ঞা করতে বললো -
এ জীবনে আমিই তার প্রথম পুরুষ আমি যেন শেষ পুরুষ হয়ে থাকি !
- জীবনের সোনালি দিনগুলো তোমার অপেক্ষায় ছিলাম, শ্রাবণের দিনগুলোতে তোমার পাশে থাকবো। আর ফাগুন রাঙাবো আমাদের হৃদয়ে।
আমিও জীবনের অলিতে-গলিতে হাঁকিয়ে ছুটে অনেক প্রস্তাব সানন্দে ফিরিয়ে দিয়েছি তোমার জন্য।
- তুমি যেভাবে ঝড়ে - বৃষ্টিতে ছায়া হয়ে ছিলো তেমনি থেকো ৷
অপেক্ষার প্রহরের পর্বতশৃঙ্গ বেয়ে শীতল ঝর্ণার সাথে মিলিত হলো দুটি হৃদয়। ফুলের সুবাসিত সৌরভের সাথে হলো মন মহুয়ার সহবাস।
সিলেটের উপশহরে বাঁধনদের দুতলা বাসা। উপরের তলায় বাঁধন ও তার ভাই বাবু থাকে আর নীচতলায় থাকে ভাড়াটিয়া পরিবার। বাঁধনদের ঘরের চিত্র,দামী দামী আসবাবপত্র ও তাদের ভাইবোনের সাজুগুজু, পোশাক পরিচ্ছেদ, দু'হাতে টাকা খরচ এসব দেখলে মনে হয় তারাই প্রকৃত লন্ডনী। তাদের তুলনায় নিজেকে নেহাতই ছোট মনে হলো। বিয়ের রেওয়াজ অনুযায়ী দু'দিন পরই বাঁধনকে নিয়ে শশুড়ালয়ে আসি। আমাদের শহরতলীর বাড়ি ছেড়ে তাদের বাসায় আসার পর বাঁধন আর আমাদের বাড়িতে যেতে চায় না। যদিও শহুরে জীবনের সকল সুযোগ সুবিধা আমাদের ছিলো তবুও বাঁধন আমাকে বলে সে তাদের বাসায় থাকতেই পছন্দ করে। আমি কি বলবো তার তোয়াক্কা না করে সে তার ফাইনাল সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। পরবর্তীতে আমি মা - বাবাকে বলি বাঁধন যেহেতু শহরের মেয়ে তাই তার কাছে আমাদের গ্রামীণ পরিবেশ ভালো লাগছে না তাই সে তাদের বাসায় থেকে যাবে। যা বুঝতে পারলাম অবশ্য তাতে কোন সন্দেহ ছিলো না যে মা-বাবা মনোক্ষুণ্ণ হবেন তাই হলো মা -বাবা তার ছেলের বৌকে তাদের বাসায় থাকার ব্যাপারটি একদম ভালোভাবে নেনেনি। আমি অপারগ হয়ে মা বাবাকে খুশি রাখতে মাঝে মাঝে দিনে মায়ের কাছে এসে দেখা করে যেতাম। আর প্রতি রাতে স্ত্রীর কাছে ছুটে যেতাম। এভাবেই চলছিল বিবাহ পরবর্তী জীবন। আমার মা আমাকে কাছে না পাওয়ায ভালোমতো রান্না করে না খাওয়ানোর জ্বালায় বেশ অতৃপ্ত ছিলেন। যদিও তিনি তা মুখ ফুটে কোনদিন বলেন নি। কিন্তু ছেলে হিসাবে আমি ঠিকই বুঝাতে পারতাম।

ছুটির তিন সপ্তাহ শেষ হয়ে লন্ডনে ফিরে আসার সময় এলো। এবার আমার স্ত্রীকে কোথায় রেখে আসবো ? আমাদের পূর্ব পুরুষের পারিবারিক ঐতিহ্য ও রেওয়াজ অনুযায়ী যেখানে স্ত্রীকে বিয়ের পর স্বামীর ঘরে রাখা উচিৎ আমি তা আগেই অমান্য করে ফেলেছি এবার বিবাহিত স্ত্রীকে শশুড়ালয়ে রাখলে আমার মা-বাবার মুখে চুনকালি পরে যাবে। পাড়াপ্রতিবেশি এই সুযোগে মা- বাবাকে বাঁকা কথা বলবে। এদিকে আমার স্ত্রী বাঁধনেকে এসব বললে সে যদি উল্টো বেঁকে বসে এমতাবস্থায় আমি কি করতে পারি সে চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়লাম!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০৯
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×