জানো তো এইসব টুঁইচাল বেয়ে নেমে আসা কুয়াশা দিনে, টুপটাপ নেমে আসে স্মৃতির শিশির। শিউলি ফুরানো মাঘের এই সময়টুকুর ফাল্গুনে যাবার তাড়া থাকে খুব। সর্ষেফুলের পাতা ঝরে বেশ ডাগর হয়ে উঠেছে, নেই সেই মউ মউ সুখ। কেটে নেয়া ধানের ক্ষেতের মত হাহাকার সময়। এই যে আমার সখ্য সুহৃদ জীবন টুকু অন্য রকম ও হতে পারত বেশ। সুখি সুখি ঘরকন্না ফুরালে সান্ধ্য আজানের সুরে দূর হতে নাম ধরে কেউ ডাকে আমায়।
যে ডাক পাঠায় সে আমার একলা বৈরাগ্য, যে কিনা উদাস হবার বিলাসিতা টুকু সমস্তটা দিয়ে নিজের গায়ে মাখে। এই তো অল্পকটা দিন ই এমন। মাঘী পূর্ণিমা এলেই নেই নেই বুকের বাতাস টুকু ব্যস্ত হবে, পূর্ণিমার চাঁদ খুঁজে এনে বসার ঘরের ফুল ভেজানোর চাড়ি’ তে সাজানোর জন্য। তাই বৈরাগী সময় টুকুর মিঠেকড়া অনুভব ঝিরঝিরি বৃষ্টির মত, ভোরের কুয়াশার মত, বাঁশ বনের জোছনার মত গায়ে মাখতে চাই। দীপ্ত প্রাণের অভিমান নিয়ে তোমাকেই না হয় লিখি আজ সাতকাহনের দিস্তা।
আমার প্রেমিক হতে চাওয়া কেউ, আমাকে অরণ্য গহীনে ভোর দেখানোর স্বপ্ন দেখায় নি। লালঝুটি বনমোরগের রক্তিমাভতে কিভাবে সূর্যদয় নেমে আসে, বুনো ঝোপের আঙিনায় !! শুনাতে চায়নি কেউ সে অদ্ভুত নির্জন বাতাসের ঘোঙানী। ভালোবাসতো যারা, কারো ইচ্ছের ঝাঁপিতে টগর বেলি জুঁই চামেলি সাজানোর মত- কালবৈশাখি ঝরে সাগরের উনমত্ততায় চোখে চোখ রাখার গল্প তুলে রাখেনি কেউ! তুমুল বৃষ্টিতে বর্ষার নতুন পানির নির্জন বিলের মাঝে, শাপলা কুড়ানোর শখটুকু ও জানা ছিল না তাদের। পৌষের উর্বশী মিহি দিনগুলো আলতো ঝরা বকুলের শব্দের মত নিশ্চুপে অপচয় ই হল কেবল।
যেদিন দূর্বা ছায়ায় বেড়ে উঠা ঘাস ফড়িঙ এর সাথে খুব অবেলায় সখ্যতা হয়ে গেলো এক যান্ত্রিক ট্রেনের, সেদিন ই বুঝেছিলাম আমি, আমার এই সুখী ঘরকন্না আর গেরুয়া চাঁপা সুখের সখ্যতা কোনদিন ও হবে না। দিনমান বয়ে চলা অক্লান্ত নদীর স্রোত’ র মত, সমান্তরাল বেঁকে যাওয়া রেল লাইনের মত' ই রবে। একই স্রোতের পানিতে যেমন দুবার নাওয়া যায় না, তেমনি বৈরাগ্য গাহন আর গৃহসুখ অবগাহন দুই এর মিলন ঘটানো গেলো না। এখন শুধু দিনমান কোজাগর পূর্ণিমা গৃহসুখে ই অবগাহন আমার।
ছবি - মনিরা সুলতানা
Ⓒ মন' সায়র
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৭