somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধোয়া (সিজন -৩)

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে বসে আছেন ওসি সাহেব ।
সামনের চায়ের কাপ নিশ্চুপ , সেখান থেকে কোনো ধোয়া উঠছে না, কয়েকটা মাছি উড়ে উড়ে চায়ের স্বাদ নিচ্ছে । তিনি একবার পিছনে হেলে যাচ্ছেন আবার সামনে এসে দেখছেন রিপোর্ট। কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়নি রিপন কে। সম্ভবত টেনে ছিড়ে ফেলা হয়েছে তার দুই হাত আর মাথা। এক ভয়ঙ্কর ভাবে তাকে খুন করা হয়েছে। মানুষের পক্ষে মানুষ কে টেনে ছিড়ে ফেলা একটু কষ্টকর অথবা অনেকটা না পারার কাছাকাছি। শরীরের ভেতরে কোথাও বিশেষ কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। তার পরনের যে শার্ট ছিল সেটাও কোনো কাটা ছিল না। চিরে যাওয়ার মতো অনেকটা। শরীর থেকে একটা বিদঘুটে ধোঁয়াটে গন্ধ আসছিলো আর হলদে হলদে ভাব।
গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেলেন ওসি সাহেব।মিনিট বিশেক চুপচাপ থেকে হঠাৎ কি যেন ভেবে কনস্টবল কে বললো, মিন্টু কে তার সামনে নিয়ে আসতে। মিন্টু মিয়া এসে ঠক ঠক করে কাঁপতে কাঁপতে সামনে দাঁড়ালো। তার চোখমুখে এক আতঙ্কের ছায়া। ওসি জিজ্ঞেস করলেন ,
মিন্টু মিয়া , ভুত ভয় পাও ?
-জ্বি ছার্ , অনেক।
তা, কখনো দেখেছো ভুত ?
ছার্ , আমার যে ছুপড়ী দোহান ডা আছে ,হুনছি আলা হেনো কি জানি আছে , মাজে মদদেই খারাপ খারাপ স্বপ্ন দ্যাক্তাম , বুবাই দরতো। তয় চোখে কিছু দেহি নাই , খুব ডরায় ছার্ , খুব ডরায়।
ওসি সাহেব উঠে কি জানি মনে করে মিন্টু কে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন।
- ছার্ আমারে ছাইড়া দ্যান, আমি কিছুই জানিনা, কিছুই দেহি নি।
ওসি সাহেব আবার কনস্টবলকে মিন্টুকে ভিতরে ঢুকিয়ে তালা দিয়ে দিতে বললেন। মিন্টু বিড়বিড় করে কি যেন বলতে বলতে চলে গেলো ভিতরে।

আগরবাতি জ্বালানো হয়েছে, গন্ধ বেশ কড়া।
দোকান মালিক আর আশেপাশের কয়েকজনের সহযোগিতায় মিলাদের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রিপন খুন হওয়ার তিনদিন পর এই মিলাদের আয়োজন করা হয়েছে। হুজুর সুর করে আরবিতে কিছু পড়ে সবাইকে তিনবার সূরা ফাতিহা, সূরা ইখলাস, আর কয়েকবার দরূদ শরীফ পাঠ করতে বললেন। এর মাঝখানে একজন গোলাপ জল ছিটিয়ে দিচ্ছিলো। সবাই মাথা নিচু করে পড়তে লাগলো , কিছু ছোট ছেলেরা বসে ছিল একদম জিলাপির ঠোঙার কাছাকাছি,ওরা কোনো কিছু পড়তে পারে না মনে হয় , অন্য কথা বলছিলো সবাই। হুজুর মুনাজাত ধরলেন, রিপনের আত্মার শান্তির জন্য দোয়া করা হলো , সকল প্রকার জীন ভুতের অনিষ্ট থেকে অত্র এলাকার সবাইকে যেন আল্লাহ হেফাজত করেন সেই দোয়াও করা হলো। মিলাদ শেষে সবার মাঝে তবারক মানে জিলাপি বিতরণ করে দেওয়া হলো। কয়েকজন জটলা হয়ে জিলাপি খেতে খেতে আসতে আসতে কি যেন আলোচনা করতে লাগলো। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে লাগলো চৌরাস্তার মোর। সবাই আগের মতো স্বাভাবিক ভাবেই চলাফেরা করতে লাগলো আবার।

সকাল বেলা অফিসের কাজবাজ সবার মাঝে বুঝিয়ে দিয়ে ফেসবুকে স্ক্রলিং করছিলেন ইয়াসিন সাহেব। দেখতে বেশ সুন্দর, সুঠাম গড়নের দেহ। উচ্চতায় প্রায় ৬ ফিট হবেন। তিনি এখানে ম্যানেজার হিসেবে আছেন দীর্ঘদিন। সখিবানুর ওসি সাহেবকে দেওয়া কাগজে লেখা ঠিকানা অনুযায়ী এই অফিসেই আসা হয়েছে খোঁজ খবর নিতে। মগবাজার থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সাথে ডিবির কয়েকজন লোকজন এসেছে এই অফিসে কথা বলতে , জাস্ট রিপনের ব্যাপারে ইনফরমেশন নিতে।
তাদেরকে অফিসের কনফারেন্স রুম এ বসতে দেওয়া হলো। কিছু বিস্কুট আর সাথে লাল চা দিয়ে গেলো একজন।
ইয়াসিন সাহেব এলেন ,বসলেন। নিজের পরিচয় দিয়ে চুপ করলেন।
ডিবি অফিসার জিজ্ঞেস করলেন ,
রিপন এখানে কি হিসেবে চাকরি করতো ?
- অফিস সহকারী কাম ডাটা এন্ট্রি কন্ট্রাকচুয়াল।
আচ্ছা , ছোট্ট করে চায়ে চুমুক দিয়ে নিলেন অফিসার।
কতদিন থেকে এখানে চাকরি করতো ?
- ১ বছর ৩ মাস।
রিপন খুন হয়েছে তা আপনি জানেন ?
-জ্বি জানি , অনলাইন নিউজ রিপোর্ট এ দেখেছিলাম, পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সে আমাদের অফিসের রিপন।
ঘটনার দিন রিপন অফিস করেছিল ?
-জ্বি ,তবে অফিস ছুটি হওয়ার ২ ঘন্টা আগে তার জরুরি কাজের কথা বলে বের হয়ে গিয়েছিলো।
অফিস এ কোন বিষয়টা নিয়ে রিপন বেশি আলোচনা করতো বলে আপনার মনে হয় ?
- সে আমার সাথে সেইভাবে কোনো আলোচনা করতো না তবে অন্যদের সাথে করতে পারে।
এবার বাকিদের এক জন একজন করে ডেকে প্রয়োজন মতো জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো। জুবিয়া নাম এক মেয়ে আছে সে বললো , রিপন বেশ কয়েকদিন কি সব কালোজাদু , প্ল্যানচেট এসব নিয়ে তার সাথে আলোচনা করতো। সে এসবে ভয় পায় বলে আলোচনা বাড়াতো না। অফিসার রিপনের ডেস্ক একবার ঘুরে দেখলো। অফিসার সবার উদ্দেশে বললো, যদি কখনো ডাকা হয় তবে যেন থানায় যায়, যে কাউকে ডাকা হতে পারে। ইয়াসিন সাহেবের থেকে অফিসের সবার নামের একটা তালিকা এবং সেদিনের সবার এটেন্ডেন্সের শিট নিয়ে বেরিয়ে গেলেন সবাই ।

চলবে ।
আগের পর্ব গুলো পড়ুন এখানে
ধোয়া (সিজন -১)
ধোয়া (সিজন ২)




সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৫:১৮
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×