ছবি: ইন্টারনেট
অনেক দিন থেকে চেষ্টা করে বিনা পয়সায় কোনো দালাল না ধরে একটা জব পেয়েছি মিডলইস্ট এর এক দেশে। এপলাই করেছিলাম প্রফেশনাল প্লাটফর্ম লিংকড ইনে । সত্যি কথা বলতে কি মিডলইস্টে ম্যানেজমেন্ট এ বাংলাদেশীরা একদম নেই বললেই চলে। আমি এর আগেও এক লেখায় বলেছিলাম ইনস্ট্রুমেন্টেশন সাবজেক্টটা বাংলাদেশে নেই। যার কারণে অয়েল এন্ড গ্যাস ফিল্ডে বাংলাদেশিদের ইঞ্জিনিয়ার হয়ে জব পাওয়াটা খুবই কঠিন বিষয়। যাই হোক, একটা নতুন অভিজ্ঞতা শেয়ার করা জন্য আজকের এই লেখা।
আমার জব চলে আজকে ৪ মাস এর কাছাকাছি। আমার সহকর্মীরা এবং আমার রিপোর্টিং বস আমাদের জেনারেল ম্যানেজার সবাই প্রায় তামিল নাড়ুর। কয়েকজন আছে পাকিস্তানী। পুরো অফিস জুড়ে একমাত্র আমিই বাংলাদেশী এখানে। মনে মনে ভাবতাম যদি সুযোগ পাই তবে কয়েকজন বাংলাদেশিকে জয়েন করাবো। অন্তত বাংলায় কথা বলা যাবে মন খুলে। অবশেষে সেই সুযোগ এলো আমার কাছে। জেনারেল ম্যানেজার হঠাৎ করে বললেন কয়েকজন বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে এসো তোমার দেশ থেকে। বললাম কতজন লাগবে ?
বললেন, বড় যেই প্রজেক্ট এর কাজটা পেয়েছি ভাবছি সেখানে সব বাংলাদেশ থেকে ইঞ্জিনিয়ার নিবো। আমি তো খুশি হয়ে গিয়ে বললাম ঠিকাছে আমি ম্যানেজ করছি। উনি সর্বমোট ১৬ জনের কথা বললেন। প্রজেক্ট প্রায় ৩ বছরের। আমাদের এখানে প্রজেক্ট শেষ না হতেই অন্য প্রজেক্ট শুরু হয়ে যায়।
খুব খুশি হয়ে আমার লিংকড ইন এ পোস্ট করলাম রিকুইরেমেন্ট গুলো যার মধ্যে খুব কঠিন কোনো রিকুইরেমেন্ট ছিল না। গর্ব করে উল্লেখ করে দিয়েছিলাম This post is only for Bangladesh Nationalities। আমার লিংকড ইন কানেকশন প্রায় ১৫০০ এর মতো হবে যার মধ্যে ৬০% বাংলাদেশী। আমি হতাশ হয়ে গেলাম আমার ইমেইল এ মাত্র দুইটা সিভি এসেছে এবং তারা একদম ফ্রেশার। কিন্তু এখানে অনভিজ্ঞ লোক দিয়ে কাজ হবে না। দুই দিন অপেক্ষা করে দেখলাম কোনো লাভ হলো না। অবশেষে সেম পোস্টই কপি করে ফেসবুকে দিলাম। কয়েকজন মেসেঞ্জার এ নক দিয়ে বললো তারা ইংলিশ এ কথা বলতে পারে না ,চলবে কিনা ?
আমি বললাম চালাইলেই চলবে না। আমি তো পোস্ট এ স্পেসিফিকলি উল্লেখ করে দিয়েছিলাম ইংলিশ কমুনিকেশন ইন্টারমেডিয়েট লেভেলে হলেও চলবে। কি এক বিপদে পড়লাম। অবশেষে জেনারেল ম্যানেজার কে বললাম, আমি আপনাকে সর্বোচ্চ দক্ষ কিছু প্রফেশনালদের সিভি দিচ্ছি। তারা আপনাকে এবং ক্লায়েন্ট কে হ্যাপি করতে পারবে। উনি একটু হেসে বললেন, ঠিকাছে সিভিগুলো ফরোয়ার্ড করে রাখো, আমি ইন্ডিয়া থেকেই লোক নিবো।
একদিকে অপমানিত বোধ করছি অন্য দিকে কষ্ট লাগছে এই ভেবে যে সুযোগটা হাত ছাড়া হয়ে গেলো কার জন্য? আমার যোগাযোগ দক্ষতার জন্য নাকি আমার দেশের ভাইদের জন্য? শেষে ভাবলাম আমার দেশের একাডেমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যবহারিক ইংলিশ নেই বললেই চলে। এখনো ইংলিশ এ কমুনিকেশন করাটা একটা ট্যাবু হয়ে আছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে,অনেক পরিবারে। জানিনা আবার এমন সুযোগ পাবো কিনা। আবার ভাবছি, আমরা কামলা হিসেবেই ভালো আছি। জমি বিক্রি করে কামলা দিতে আসা আমাদের রক্তে মিশে আছে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:২২