কনকনে শীতের তাপ দাহ! আমি মূর্ছা যাচ্ছি যাচ্ছি ভাব। কিন্তু গায়ে একের পর এক উষ্ণ পোশাক জড়িয়ে কাটিয়ে নিচ্ছি কোনমতে। এতো হলো আমার নিজের গপ্প। এবার শুরু করি আমার বিছানায় কম্বলে উষ্ণ আদর নিতে আশ্রয় নেয়া সাদা কালো মিশ্রিত পোষা বিড়ালের গপ্পে। একটা নয়,দুটো নয় তিন তিনটে বিড়াল আছে এ বাড়িতে। একটা ধূসর,আরেকটা কুচ কুচে কালো,আরেকটা সাদা কালো মিশ্রিত। কুচকুচে কালোটার শরীর স্বাস্থ্য মোটামুটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতোই ভোম্বল টাইপের। বাকি দুটোকে যা খেতে দিই তা সেই ভোম্বল নিজের দখলে নিয়ে পোদ্দারি করে চেটেপুটে খেয়ে নেয়। আর বাকি দুটো ইরাক আফগান শাসকের মতো মিউমিউ করেই ক্ষান্ত। সাহস নেই একবিন্দু, যে কুচকুচে ভোম্বলটার কাছ থেকে নিজেদের অধিকার টা বুঝিয়ে নেবে। তাই ওরা নেহাতই একটু দূর্বল। প্রতিদিন খেতে বসলেই তিনটে একসাথে মিউমিউ শুরু করে। খাবার দিলে কুচকুচে ভোম্বলটা খেয়ে যা বেচে যায় সেটাই বাকি দুটো ভাগবাটোয়ারা করে খেয়ে নেয়। দিনের বেলায় বেশিরভাগ সময় বাড়িতে এঘর থেকে ওঘর,বারান্দায় হেটেহুটে ঘুমিয়েই চলে যাচ্ছে ওদের বছরের পর বছর। বছর দুয়েক আগে এসে জুটেছিলো ওরা। সেই থেকেই আছে এ বাড়িতে। এখনো পোয়াতি হবার বিন্দুমাত্র লক্ষন নেই কারো। এতোদিনে পোয়াতি হলে অন্তত ঘর বারান্দা পরিপূর্ণ হতো কিছুটা। শুধু বছর দুয়েক নয় সেই দাদীর সময় থেকে দেখে আসছি, এ বাড়িতে বিড়ালের কি দাপুটে আনাগোনা! শুনেছি আমার দাদীর চৌকির অর্ধেকটা জুড়ে এনাদের দখলে ছিলো সবসময়। এমনকি এক থালাতেই চলতো আহার। দাদী বিড়ালের খুব ভক্ত ছিলেন। ওরাও দাদিকে ভক্তি শ্রদ্ধার বিন্দুমাত্র কমতি দেখায়নি কখনো। বসে বসে খাবার পাহাড়া দেয়া,মাছ কেটে রাখলে সেসব পাহাড়া দেয়া সবই চলতো ভক্তির কারনে । বিড়ালের গায়ে কেউ হাত তুলেছে তো সেদিনের জন্য তার হয়ে যেতো। দাদী মারা যাবার পরে ওদের আদর যত্নে ভাটা পড়েছে কিছুটা। ওতো খাতির যত্ন করবে কার দায়। সেই বংশপরম্পরা ধরেই বিড়ালের বসবাস টিকে আছে এ বাড়িতে। অবশ্য দরজা জানালায় শক্ত খিড়কীর কারনে এখন আর ওরা কুলিয়ে উঠতে পারে না সেভাবে। তাইতো এই শীতের রাতে ওদের বারান্দায় কাটিয়ে দিতে হচ্ছে রাতের পর রাত। কিন্তু আজ হঠাৎ দেখি আমি বিছানায় গা এলিয়ে দেবার আগেই আমার কম্বলটা দখলে নিয়ে দিব্যি ঘুমোচ্ছে সাদা কালো মিশ্রিত বিড়ালটা। এমনভাবে ঘুমিয়েছে যে, মনে হচ্ছে এই কম্বলে শান্তিতে ঘুমানোটা ওর জন্মগত অধিকার। বাড়িতে থাকতে দিবো, দিন গেলে তিনবার খেতে দিবো অথচ রাতে আরামে ঘুমের ব্যবস্থা করবো না সেটা যেন কিছুতেই মানতে নারাজ এরা। তাইতো পারলে হাইকোর্টে মামলা ঠুকে কিংবা গ্রাম্য শালীস বসিয়ে ন্যায্য দাবি আদায় করতে আন্দোলনে নামবে শীঘ্রই। আসলেই তো অধিকার কেউ কাউকে দেয়না, অধিকার আদায় করতে হয়, পারলে লাথি মেরে ছিনিয়ে আনতে হয়। এই ধরুন এই শীতে কষ্ট করে বারান্দায় ঘুমিয়ে যখন ও নিজের অধিকার আদায়ে নেমেছে এবং ঠিকঠাক আমার বিছানায় কম্বলের দখল নিয়েছে ঠিক তখন আমি কিন্তু ঠিকই ওকে আর বিরক্ত করিনি। ওর ঘুম ভাঙ্গাইনি, বরং ও যেন একটু শান্তিতে,আরামে ঘুমোতে পারে সেজন্য কম্বলের আরেক পাশটা ওর গায়ে জড়িয়ে দিয়েছি। আজ রাতটা ওর বেশ ভালো ঘুম হবে।
বিড়ালের গপ্প
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪২
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প
তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে
ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন
জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।
সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর
বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?
এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন