ব্লগে না এলে যে জিনিষগুলো হয়তো জানাই হত না.........
আমার ব্লগ জীবনে প্রবেশের চিত্রটা আর দশজনের থেকে একটু ভিন্নরকম ছিল। ২০১০ কি ২০১১ সালের দিককার কথা। কোনো একটা কিছু খুঁজতে গুগল করছিলাম। গুগল মহাশয় অতি সদয় হয়ে অন্যান্য পেইজের মত সামুর একটা লিঙ্কও আমার সামনে তুলে ধরে। ক্লিক করে ঢুকলাম সেখানে। সে লেখাটা দেখার পরে অভ্যাসবশতঃ ওয়েবসাইটটি সম্মন্ধে একটু আইডিয়া নেয়ার জন্য 'প্রথম পাতা' আইকনে ক্লিক করে সামুর হোম পেইজে চলে আসি। সামুর সাথে পরিচয় পর্বটা এমনই ছিল।
সামুতে লিখতে গিয়ে .........
সামুতে লিখতে গিয়ে কতজনকে কতভাবে নাকাল হতে হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। অত্যন্ত রসালোভাবে ভূয়া মফিজ ভাই তার কোনো এক পোস্টে এই বিষয়ক হৃদয় বিদারক অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছিলেন একবার। নাকানি চুবানি তো আছেই। ঝগড়া, টুকটাক মতবিরোধ থেকে শুরু করে বউয়ের হাতে অনেকের শুধু মারটাই খাওয়া বাকি! তবে এমন অবস্থা সব ব্লগারের নয়। যারা নিজেদের পারিবারিক প্রয়োজনাদির প্রতি সচেতনতা প্রদর্শন করে ব্লগে সময় দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যালেন্স রক্ষা করে চলতে অপারগ তারাই হয়তো এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়ে থাকতে পারেন। অর্থাৎ, অবস্থা যাদের এমন পর্যায়ে চলে যায় যে,
ব্লগে ডুবে হারিয়ে খেই-
ঘর সংসারের খবর নেই।
এমন অবস্থা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সামঞ্জস্য রক্ষা করেই চলা উচিত।
সামু না স্ত্রী, কাকে বেশি সময় দিবেন?
অনেকে সামুতে দিনরাত সময় দেয়ার ফলে এমন প্রশ্নের উদ্ভব হয় যে, সামু না স্ত্রী, কাকে বেশি সময় দিবেন? সামু আসলে সামুর স্থলে সঠিক। বাংলা ভাষার চমৎকার একটি প্লাটফরম। লেখার জায়গা। শেখার জায়গা। নিজেকে চেনার জায়গা। অন্যদের সম্মান করতে শেখারও এটি আদর্শ ঠিকানা। এই প্লাটফরম এর সাথে স্ত্রীকে তুলনা করার কিছু নেই। স্ত্রী কিংবা স্বামী একে অপরের পরিপূরক। ভার্চুয়াল কোনো সাইট স্বামী বা স্ত্রীর বিকল্প হতে পারেন না। সুতরাং, এখানেও ঐ আগের কথাটিই মাথায় রাখা চাই। প্রয়োজন এবং অবস্থা অনুযায়ী সময়ের সঠিক ব্যবহারই এই ধরণের অবান্তর প্রশ্ন উত্থাপনের আশঙ্কা দূর করতে পারে।
সামুর কারণে চাকরি হারানোর ঘটনা............
সামুতে লেগে থাকার কারণে ইতোপূর্বে আমরা জনৈক প্রিয় ব্লগারের (নাম উল্লেখ করতে চাচ্ছি না) চাকরি হারানোর ঘটনা জানতে পেরেছিলাম। এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা জেনে তখন সত্যি মর্মাহত হয়েছি। পূর্ণ সতর্কতার সাথে চলার মাধ্যমে এই ধরণের অনভিপ্রেত ঘটনার হাত থেকে আত্মরক্ষায় অবশ্যই মনযোগ থাকা উচিত আমাদের।
সামু দু'হাত খুলে লিখতে শিখিয়েছে...........
সামু আমাকে কি দিয়েছে? কিছু কি দিতে পেরেছে আদৌ? না কি শুধুই সময়ের অপচয়? বছরের পর বছর পরে আছি সামুতে। আল্লাহ রব্বুল আলামীন এর দরবারে সামু পরিবারের সকলের জন্য হৃদয় নিংড়ানো কল্যানের দুআ। সামুতে এসে কিছু না পেলেও লেখার স্বাধীনতা পেয়েছি। দু'হাত খুলে লিখতে পেরেছি। হৃদয়ে জমে থাকা কথার মুক্তো দিয়ে মালা গাঁথার অবারিত সুযোগ দিয়েছে সামু। সামু জ্ঞানের আলোকিত মশাল যেন, এর বিচ্ছুরিত আলোক আভায় নিজেকে নিয়তই ধুয়ে নিচ্ছি, শুদ্ধ-পরিশুদ্ধ করছি, ভেঙ্গে চূড়ে নতুন করে আবার নিজেকে গড়ে তুলছি প্রতি দিন।
কঠোর প্রতিমতকেও সম্মান করতে শিখিয়েছে সামু...........
একটা সময় ছিল যখন বিরুদ্ধ মতকে মেনে নেয়া অনেক কষ্টকর ছিল। বিশেষ করে ধর্মীয় ইস্যুতে উল্টোপাল্টা বক্তব্য এমনকি আল্লাহ রাসূলকে গালিগালাজসহ নানান ধরণের কুৎসা ও অবান্তর কথাবার্তা হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটাতো। কখনো কখনো এমনও হয়েছে, এসব দেখে নিরবে অশ্রু বর্ষন করে আল্লাহ তাআ'লার কাছে দু'হাত তুলে তাদের সঠিক পথপ্রাপ্তির জন্য কেঁদেছি। দুআ করেছি। নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশের এছাড়া আর কোনো পথ জানা ছিল না তখন। সামুতে আমার লেখালেখির প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু কিছু ব্লগারের সাথে টুকটাক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। সহনশীলতার অনেকগুলো স্তর রয়েছে। আমার মনে হচ্ছে, তখনকার স্তর আর এখনকার স্তরের মধ্যে অনেক প্রভেদ রয়েছে। এই প্রভেদ এবং পার্থক্যের পেছনে সামুর ভূমিকা এবং অবদান অনেক।
সামুতে আগে অনেকে থাকলেও এখন কিন্তু একাই............
হ্যা, এখন একাই লড়ে যাচ্ছেন। একাই আল্লাহ, রাসূল এবং বিশ্বাসীদেরকে গালিগালাজসহ নানান ধরণের কুৎসা রটনা ও অবান্তর কথাবার্তার সকল দায়িত্ব মনে হচ্ছে নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছেন। শত প্রতিকূলতার ভেতরেও তিনি থেমে যান না। ভেঙ্গে পড়েন না। আমাদের মত অন্ধবিশ্বাসীগণের(!) অম্ল মধুর একটু আধটু বিরোধিতা তার চলার পথকে কন্টকাকীর্ণ করতে পারে না। তিনি তার পথে অনঢ়। যাক, তার জন্য শুভকামনা। কারণ, আল্লাহ পাক যদি তার এতকিছু উল্টোসিধা কাজকাম সহ্য করে তাকে আলো-বাতাস দিয়ে, খাবার-পানীয় দিয়ে, প্রেম-ভালোবাসা-মমতা দিয়ে লালন পালন করতে পারেন; তার প্রতি সামান্য সহনশীলতা প্রদর্শনে আমার সমস্যাটা কোথায়?
আমি যদি সত্যিকারার্থে আল্লাহ তাআ'লাকে ভালোবাসার দাবিদার হয়ে থাকি, তাহলে তাঁর সৃষ্টিকূলের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন আমার উপর অপরিহার্য হয়ে ওঠে। আর হাদিসে তো এসেছে, 'গোটা সৃষ্টিজগত আল্লাহ পাকের বৃহত্তর পরিবারের মত।' সুতরাং, ভালোবাসা সবসময়। সবার জন্য। আল্লাহ পাক তার কল্যান করুন। তাকে পরিচালিত করুন আলোকিত পথে।
কঠিন প্রতিকূলতাকে জয় করার অদম্য বাসনা...........
সামু বন্ধের সে দিনগুলোয় মনে হত যেন, আমি নিজেই বুঝি আটকে আছি। মন মানতো না। প্রাণ খুলে লিখতে না পারার কষ্ট নিয়ে সেই প্রতিকূলতাকে জয় করার দৃঢ় মনোবল কখনো হারাইনি। অদম্য এই মনোবলে সামুর যোগান ছিল, প্রেরণা ছিল।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০২০ সকাল ১০:২০