somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

দৈনন্দি জীবনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুন্নাহ, যেগুলোর অনুসরণ করা আমাদের একান্ত প্রয়োজন।

১৫ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবিঃ অন্তর্জাল।

দৈনন্দি জীবনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুন্নাহ, যেগুলোর অনুসরণ করা আমাদের একান্ত প্রয়োজন।

সুন্নাত কি?

‘সুন্নাত’ হলো নবী কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে অবস্থায় যে কাজ যতটুকু গুরুত্বসহকারে করেছেন বা ছেড়ে দিয়েছেন, সে অবস্থায় সেই কাজ ততটুকু গুরুত্বসহকারে করা কিংবা ছেড়ে দেয়া। রাসূল প্রেমের গভীর অনুরাগ এবং বিমূর্ত ভালোবাসায় জীবনের প্রতিটি কাজ একমাত্র তাঁরই অনুকরণে সম্পন্ন করা।

বস্তুতঃ নবী কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা যা করেছেন, সবই সুন্নাত। তাঁর জীবনের প্রধান অবলম্বনই ছিল সত্য, পবিত্রতা ও প্রেম। সত্যবাদিতার জন্য তিনি আশৈশব ‘আল আমিন’ অর্থাৎ, সত্যবাদী, বিশ্বাসী ও বিশ্বস্ত উপাধি পেয়েছিলেন। আজীবন কোনো শত্রুও তাঁকে কখনো মিথ্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করতে পারেনি।

তাঁর জীবন ছিল নিষ্কলুষ, পুত পবিত্র। পূর্ণিমার পূর্ণ শশীর গায়েও থাকে কলঙ্ক তিলক কিন্তু তিনি ছিলেন আশৈশব স্বচ্ছ স্ফটিকের মত। ঝর্ণার অমল ধবল জলের মত নির্মল ছিল তাঁর চরিত্র।

প্রেম, প্রীতি, ভালোবাসা, স্নেহ, মমতা, ক্ষমা পরায়নতায় তাঁর চেয়ে অগ্রগামী এই মর্ত্যালোকে মানব জনমের শুরু লগ্ন হতে এ যাবত কাউকে দেখা যায়নি এবং পৃথিবী ধ্বংসের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত যাবেও না। তিনি শুধু তাঁর সময়কালের মানবগোষ্ঠীকে ভালোবেসেছেন, বিষয়টি এমন নয়। তিনি কেয়ামত পর্যন্ত অনাগত বিশ্ববাসী সকল মানুষের কল্যান চিন্তায় বিভোর থাকতেন। তাদের ইহকালীন ও পারলৌকিক মুক্তির জন্য ভাবতেন। গোটা মানব সম্প্রদায়ের মুক্তির অগ্রপথিক ছিলেন তিনি।

সুন্নাত আমরা কেন মেনে চলবো?

ইসলামী শরিয়তের সকল আমলই আমরা করে থাকি নবী কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসৃত পথ ও মত তথা, সুন্নাহ অনুসরণে। সুন্নাহ বা হাদিস বাদ দিয়ে ইসলামী শরিয়াহ পালন করার সুযোগ নেই। এটি কোনক্রমেই সম্ভব নয়। বলা বাহুল্য, সুন্নাত মেনে চলতে হয় এই কারণেই।

ইসলাম এমনই পূর্ণাঙ্গ এবং পবিত্র একটি জীবন বিধান যার পরিবিস্তৃতি চিন্তায়, মননে, বিশ্বাস ও কর্মের সকল ক্ষেত্রেই। শারীরিক, মানসিক, আর্থিক ও সামাজিক প্রতিটি পর্যায়ে পরিব্যাপ্ত এর পরিধি।

রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম –এর ভালোবাসা মুমিনের ঈমান; আর বলা বাহুল্য, একমাত্র সুন্নাতের অনুসরণই হচ্ছে হৃদয় উজাড় করে দেয়া সেই ভালোবাসার প্রমাণ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইরশাদ করেন,

قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

(হে রাসুল!) আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তবে আমার অনুসরণ করো; ফলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন, তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু। -সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১

রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

من أَحْيَا سُنَّتِي فَقَدْ أَحَبَّنِي وَمَنْ أَحَبَّنِي كَانَ مَعِي فِي الْجنَّة

‘যে আমার সুন্নাতকে ভালোবাসে, সে অবশ্যই আমাকে ভালোবাসে; আর যে আমাকে ভালোবাসে সে জান্নাতে আমার সঙ্গেই থাকবে। - মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان), ১৭৫, তিরমিজি: ২৬৭৮

তিনি আরও বলেন,

عَنْ أَنَسٍ، قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ

তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ মুমিন হবে না, যতক্ষণ না আমি (নবীজি সা.) তার নিকট তার সন্তান অপেক্ষা, তার পিতা অপেক্ষা এবং সকল মানুষ অপেক্ষা বেশি প্রিয় না হই। -সহিহ বুখারি: ঈমান (كتاب الإيمان) ১৩-১৪

যে যাকে ভালোবাসবে, তার সঙ্গে তার হাশর নশর হবে। -সহিহ বুখারি: ৬১৬৯ ৩৬৮৮, সহিহ মুসলিম: ২৬৩৯

হাদিসে আরও রয়েছে, সর্বোত্তম আমল হলো আল্লাহর জন্য ভালোবাসা। -জামে সহিহ্: ২৫৩৯

রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মহব্বত করে ও আল্লাহর জন্য ঘৃণা করে এবং আল্লাহর জন্য দান করে ও আল্লাহর জন্য বিরত থাকে; অবশ্যই তার ইমান পূর্ণ হলো। -আবু দাঊদ: ৪০৬৪

জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম –এর সুন্নাত এবং আদর্শ অনুকরণ ও অনুসরণ করাই ইসলাম। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন,

مَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا

রাসুলে কারিম রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের যা দিয়েছেন তোমরা তা ধারণ করো আর তিনি যা বারণ করেছেন তা হতে বিরত থাকো। -সুরা হাশর, আয়াত: ৭

ফরজ ও ওয়াজিব পরিত্যাগ করে সুন্নাত পালনের দাবি অসারঃ

সুন্নাতের কথা যখন আসে ফরজ ও ওয়াজিব তার আগেই থাকে। ফরজ ও ওয়াজিব পরিত্যাগ করে সুন্নাত পালনের দাবি অসার। সৎ উপার্জন, হালাল খাবার ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত। রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম –এর জীবন, দর্শন ও কর্ম যে যতটুকু অনুসরণ করবে, সে ততটুকু সফলতা ও কল্যাণ লাভ করবে।

প্রেমেই আনুগত্য, আনুগত্যই ইবাদতঃ

প্রেম সৃষ্টির অনুপ্রেরণা। প্রেম মানে সংযোগ। প্রেম মানে সংযোজন। প্রেম মানে মিলন। প্রেম মানে সৃজনশীলতা। নতুন কিছুর আবিষ্কারে প্রেম থাকে। প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মহান আল্লাহ তাআলা কুল মাখলুকাত সৃজন করেছেন। প্রেমেই আনুগত্য, আনুগত্যই ইবাদত। আর প্রেমের বিপরীতে থাকে শত্রুতা ও অবাধ্যতা। শত্রুতা বৃদ্ধি করে দূরত্ব। শত্রুতা ও অবাধ্যতার পরিণতি সন্দেহ, সংশয় আর ভ্রান্তি। যে পথির আদি পথিক ইবলিশ শয়তান। সুতরাং, আমরা প্রেমের পথে, ভালোবাসার পথে, সংযোজন এবং মিলনের পথে। আমাদের প্রেম আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার প্রতি, তার প্রেরিত বান্দা ও রাসূল প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম –এর প্রতি এবং কুল কায়েনাতের সমগ্র সৃষ্টির প্রতি।

বুদ্ধিমান তো তিনিই, যিনি আসল জীবনের খবর নেন আগেই

ক্ষনস্থায়ী পৃথিবী আমাদের কারও থাকার স্থান নয়। ইচ্ছায় হোক কিংবা অনিচ্ছায়, পৃথিবীর সকল মায়ার বন্ধন ছিন্ন করে আমার, আপনার, আমাদের প্রত্যেকের পাড়ি জমাতে হবে পরকালের অন্তহীন-অনাদি-অনন্তকালের সীমাহীন জীবনের উদ্দেশ্যে। পৃথিবীতে আমাদের পাঠানোর পেছনে আল্লাহ পাকের রয়েছে বিশেষ উদ্দেশ্য। তিনি দেখতে চেয়েছেন, আমাদের কার আমল কত ভালো। তিনি বলেছেন- 'লিইয়াবলুআকুম আইয়্যুকুম আহসানু আমালা'!

الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ

'যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়।' -সূরাহ আল মুলক, আয়াত-০২

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা বান্দার ভালো আমল দেখতে চান। আমাদের আমলের নিরিখে আমাদেরকে পরখ করতে চান। আমরা কে কতটা ভালো আমল করি, তা তিনি দেখতে চান। আচ্ছা, আল্লাহ পাকের আমলের কি প্রয়োজন? তিনি বান্দার আমল দিয়ে কি করবেন? সুবহানাল্লাহি বিহামদিহী! সুবহানাল্লাহিল আজিম! তিনি পুত:পবিত্র! পবিত্রতম! তিনি মহান! তিনি তো সকল প্রয়োজনের উর্ধ্বে! তিনি তো 'ছমাদ', 'চির অভাবমুক্ত'! কোনো দিন তাকে কোনো কিছুর মুখাপেক্ষী হতে হয় না! হওয়ার প্রশ্নও আসে না! তাহলে? তাহলেও কেন তিনি বান্দার আমলের দিকে তাকিয়ে থাকেন? কেন তাদের পরখ করতে চান তাদের আমল দেখে দেখে? কারণ, তিনি বান্দার উত্তম আমল দেখে খুশি হন। এমনকি কোনো বান্দা যখন একটিবার গভীর অভিনিবেশ সহকারে, ইখলাসের সাথে 'সুবহানাল্লাহ' পাঠ করেন, তিনি খুশি হয়ে যান। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা এতই খুশি হন যে, তিনি এই ছোট্ট 'সুবহানাল্লাহ' শব্দের বিনিময়ে এত পরিমানে সাওয়াব দান করে থাকেন যা মিজানের পাল্লাকে ভারী করে দিবে। বান্দা যখন তাকে স্মরন করেন, তাঁর গুনগান বর্ণনা করেন, তাঁর তাসবিহাত জপতে থাকেন, তিনি বান্দার প্রতি দয়ার দৃষ্টিতে তাকান। তার প্রতি আপন রহমতের বারিধারা বর্ষন করেন। ফেরেশতাদের ডেকে উত্তম মজলিশ কায়েম করেন। সেখানে তাসবিহ পাঠে রত বান্দার আলোচনা চলতে থাকে। আল্লাহু আকবার! কতই না মহান তিনি! তাকে ডাকলে তিনিও বান্দাকে ডাকেন! তাকে স্মরণ করলে তিনিও বান্দাকে স্মরণ করেন। আহ, কতই না মায়া এবং দয়ার আধার তিনি! কতই না মহান এবং মহিয়ান তিনি! আহ, কতই না সুন্দর বলেছেন তিনি! 'ফাজকুরূনী আজকুরকুম'! আমাকে ডাকো, আমাকে স্মরণ করো, আমিও স্মরণ করবো তোমাদেরকে!

فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُواْ لِي وَلاَ تَكْفُرُونِ

'সুতরাং, তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না।' -সূরাহ আল বাক্কারাহ, আয়াত-১৫২

তিনি মহাসত্যবাদী। তিনি কথা রাখেন। ফেরেশতাদের ডেকে বলেন, 'পৃথিবীতে আমার অমুক বান্দা কি বলেছে, তোমরা কি শুনেছ?'

ফেরেশতারা বলেন, 'হে পরওয়ার দিগারে আলম! আপনি তো সবই জানেন, তিনি আপনার পবিত্রতার ঘোষনা দিচ্ছেন।'

আল্লাহ পাক বলেন, 'সে বান্দা কি আমাকে দেখেছে?'

ফেরেশতারা বলেন, 'জ্বি না, হে পরওয়ার দিগারে আলম। তিনি আপনাকে দেখেননি।'

আল্লাহ পাক বলেন, 'বান্দা যদি আমাকে দেখতে পেত, তাহলে অবস্থা কেমন হত?'

ফেরেশতারা বলেন, 'আপনাকে আরও বেশি পরিমানে ডাকতেন। আরও বেশি স্মরন করতেন।'

'সে কেন এমন করে বিনীত বদনে আমার তাসবীহ পাঠে রত? কি চায় সে?' শুধান মহান স্রষ্টা।

ফেরেশতাদের সকাতর নিবেদন, 'আপনার শাস্তি থেকে বাঁচতে চান, চির শান্তিময় জান্নাতের আশা করেন।'

'সে কি জান্নাত-জাহান্নাম দেখেছে?' আল্লাহ পাক জানতে চান পুনরায়।

ফেরেশতাদের বিনীত জবাব, 'মালিক মহিয়ান! না, তিনি দেখেননি।'

'দেখলে কি হত? কেমন করতো সে?' পুনরায় জিজ্ঞেস করেন মহান স্রষ্টা।

ফেরেশতাদের মস্তকাবনত প্রত্যুত্তর, 'আরও বেশি বেশি আপনার শাস্তি থেকে বাঁচতে চাইতেন, আরও বেশি বেশি আপনার চির শান্তিময় জান্নাতের আশা করে ফরিয়াদ করতে থাকতেন।'

প্রভূ মহিয়ানের রহমাতের দরিয়ায় যেন ঢেউ খেলে যায় মুহূর্তেই! ফেরেশতাদের সম্মোধন করে বলেন, 'তোমরা সাক্ষী থেকো, আমার এই বান্দাকে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি।'

ক্ষমা পেতে কে না চাই আমরা? ক্ষমার উপযোগী কাজগুলোও তো বেশি বেশি করতে হবে। সুন্নাতের রঙে রাঙিয়ে নিতে হবে আমাদের জীবন। আসুন, আজ দৈনন্দিন জীবনে অবশ্য পালনীয় অতি গুরুত্বপূর্ণ মাসুনূন দুআ-আমল শিখে নিই; সুন্নাতের আলোকে উদ্ভাসিত আমলি যিন্দেগী গঠনে যেগুলো একান্ত সহযোগী ভূমিকা পালন করবে। আল্লাহ পাক আমাদের এগুলোর উপরে আমল করার তাওফিক দান করুন-

প্রতি ওয়াক্ত ফরজ সালাত অন্তে মাসনূন সহজ যে আমলগুলো করা উত্তম:

১। তাসবীহ-তাহমীদ-তাকবীর:

হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি নামাজের পর ৩৩ বার-سُبْحَانَ اللّهِ (আল্লাহ অতিশয় পবিত্র), ৩৩ বার- َالْحَمْدُ لِلّهِ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য), ৩৩ বার- اَللّهُ أَكْبَرُ ( আল্লাহ সুমহান) এবং একশত পূর্ণ করার জন্য একবার বলে –

لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ وَحْدَه لَا شَرِيكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়, যদিও তা সাগরের ফেনাপুঞ্জের সমান হয়। -ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ননা করেছেন

অন্য বর্ণনায় : হযরত কা’ব ইবনে উজরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : পঠিতব্য কয়েকটি কালিমা এমন আছে যেগুলোর পাঠকারী অথবা (বলেন) সম্পাদনকারী ব্যর্থ হয় না। সেগুলো হল প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ৩৩ বার-سُبْحَانَ اللّهِ (আল্লাহ অতিশয় পবিত্র), ৩৩ বার- َالْحَمْدُ لِلّهِ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য), ৩৪ বার- اَللّهُ أَكْبَرُ (আল্লাহ সুমহান) বলবে। -সহিহ বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী-৩৩৪৮ : হাসান

২। সূরাহ ফাতিহা ১ বার, আয়াতুল কুরসী ১ বার, শাহিদাল্লাহু আন্নাহু লা- ইলাহা ১ বার, কুলিল্লাহুম্মা- ১ বার।

রেফারেন্স: তাফসীরে ইবনে কাসীরে উল্লেখ করা হয়েছে, ইমাম বগভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, যে ব্যাক্তি প্রত্যেক নামাজের পরে সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসী, সূরা আলে ইমরানের শাহিদাল্লাহু.. (১৭ নং) আয়াত শেষ পর্যন্ত, কুলিল্লাহুম্মা.. (২৬ ও ২৭ নং) আয়াত বিগাইরি হিছাব পর্যন্ত পাঠ করে আমি তার ঠিকানা জান্নাতে করে দেব, দৈনিক সত্তুর বার তার প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেব, আমার সকাশে তাকে স্থান দেব, শত্রুর কবল থেকে তাকে আশ্রয় দেব এবং শত্রুর বিরুদ্ধে তাকে জয়ী করব। -তাফসীরে ইবনে কাসীর

৩। সূরাহ ফালাক ও সুরা নাস- ১ বার করে।

রেফারেন্স: হযরত উকবা ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পরে মুয়াব্বিযাতাইন মানে, সূরাহ ফালাক এবং নাস পড়তে আদেশ করেছেন। -তিরমিযী-২৮৩৮: হাসান , আবু দাউদ, নাসাঈ ও বায়হাকী

৪। তাওবাহ, ইস্তিগফার ও দুআ:

হযরত সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাজ শেষ করতেন তখন তিনবার ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। অতঃপর বলতেন-

اَللّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ

'হে আল্লাহ! আপনিই শান্তিদাতা, আপনার কাছ থেকেই শান্তি আসে। হে প্রতাপ ও সম্মানের অধিকারী! আপনি বরকত ও প্রাচুর্য্যময়।'

ইমাম আওজায়ী রহমাতুল্লাহ আলাইহিকে (বর্ণনাকারী) জিজ্ঞেস করা হল, 'তাঁর ক্ষমা প্রার্থনা কেমন ছিল?'

তিনি বলেন, 'রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন :

- أَسْتَغْفِرُ اللّهَ- أَسْتَغْفِرُ اللّهَ - أَسْتَغْفِرُ اللّهَ

-মুসলিম, তিরমিযী : হাসান ও সহীহ, আবু দাউদ, নাসাই ও ইবনে মাজাহ

৫। বিশেষ দুআ:

হযরত মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত ধরে বলেছেন :'হে মুয়াজ! আল্লাহর কসম, আমি তোমাকে ভালবাসি।' অতঃপর বললেন : 'হে মুয়াজ! আমি তোমাকে অসিয়ত করছি, প্রতি নামাজের পরে নিম্নোক্ত কালিমাগুলো পড়ো-

اللّهُمَّ أَعِنِّيْ عَلى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ

'হে আল্লাহ! আমি আপনার সাহায্য প্রার্থনা করছি- আপনার জিকির, শোকর এবং সর্বাঙ্গীন সুন্দর ইবাদাতের ক্ষেত্রে।' -আবু দাউদ

সকাল- সন্ধ্যার গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসনুন আমলঃ

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পরে যেসব আমল করা বিধেয় তা উপরে বর্ণিত হয়েছে। সকাল-সন্ধ্যা অর্থাত, ফজর এবং মাগরিব নামাজান্তে উপরে বর্ণিত আমলগুলো তো আদায় করতেই হবে। এর সাথে সহজে আদায়যোগ্য আরও কিছু আমল রয়েছে যা সকাল সন্ধ্যার সাথে সম্পৃক্ত। সেগুলো হচ্ছে-

১। সূরাহ হাশরের শেষ তিন আয়াত ১ বার পাঠ:

হযরত মালিক ইবনে ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: 'যে ব্যক্তি সকালে উপনীত হয়ে তিনবার বলবে: আঊ-জু বিল্লা-হিচ্ছামি-ইল আলী-মি মিনাশশাইত্ব-নির রজী-ম। অতঃপর সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পড়বে, আল্লাহ পাক তার জন্য সত্তুর হাজার ফিরিশতা নিযুক্ত করবেন, তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য দুআ করতে থাকবেন। আর ঐ দিন সে মারা গেলে তার শহীদী মৃত্যু হবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এরূপ পড়বে, সে (রাতের জন্য) অনুরূপ মর্যাদার অধিকারী হবে।' -তিরমিযী : হাসান

২। সূরাহ ইখলাস, সূরাহ ফালাক ও সূরাহ নাস- ৩ বার করে:

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, 'রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন: সন্ধ্যায় ও সকালে কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ, কুল আউ-জু বিরব্বিল ফালাক ও কুল আউ-জু বিরব্বিন্নাছ. তিন বার করে পড়ো। তাহলে এগুলো সবকিছু থেকে তোমার জন্য যথেষ্ট হবে'। -আবু দাউদ ও তিরমিযী

৩। সূরাহ কাহাফের প্রথম তিন আয়াত ১ বার পাঠ করা:

হযরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : 'যে ব্যক্তি সূরাহ কাহাফের প্রথম তিনটি আয়াত পাঠ করবে, তাকে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ রাখা হবে।' -মুসলিম ও তিরমিযী-২৮২১ হাসান ও সহীহ্

৪। সৃষ্টির যাবতীয় অনিষ্টতা থেকে হিফাজতের জন্য যে দুআ:

হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : 'যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে তিনবার বলে-

أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

'আমি আল্লাহর কাছে তার পরিপূর্ণ বাক্যের উসীলায় আশ্রয় প্রার্থনা করি, তার সমস্ত সৃষ্টির অনিষ্টতা থেকে, ঐ রাতে (কোন বিষধর প্রানীর দংশন জনিত) বিষ তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।' -মুসলিম ও তিরমিযী

৫। সকল অনিষ্টতা থেকে হিফাজতে থাকার আমল:

হযরত উসমান ইবনে আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: 'যে কোন বান্দা প্রতিদিন সকালে ও প্রতি সন্ধ্যায় তিনবার করে এই দুআ পাঠ করবে, কোন কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না।'

بِسْمِ اللّهِ الَّذِيْ لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِه شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيمُ

অর্থাৎ 'আল্লাহর নামে, যার নামের বরকতে আসমান ও জমীনের কোন কিছুই কোন ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।' -তিরমিযী-৩৩২৪ : হাসান ও সহীহ, আবু দাউদ, নাসাই ও ইবনে মাজাহ্

৬। জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য পাঠ করতে হবে:

হযরত মুসলিম ইবনে হারিস তামীমী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে চুপে চুপে বলেছেন : যখন তুমি মাগরিবের নামাজ শেষ কর তখন কারো সাথে কথা বলার আগেই সাতবার পাঠ করবে-

اَللّهُمَّ أَجِرْنِيْ مِنَ النَّارِ

যদি তুমি তা পাঠ কর আর ঐ রাতে তোমার মৃত্যু হয় তাহলে তোমার জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তি লিখে দেওয়া হবে। অনুরূপ ভাবে যদি ফজরের নামাজের পর পাঠ কর আর ঐ দিনে তোমার মৃত্যু হয় তবে তোমার জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তি লিখে দেওয়া হবে। -তিরমিযী, আবু দাউদ ও তাবরানী

৭। সমস্ত সমস্যার সমাধান:

হযরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় সাতবার করে বলে-

حَسْبِيَ اَللّهُ لَآ اِلهَ أِلأَّ هُؤَ عَلَيْهِ تَؤَكَّلْتُ ؤَهُؤَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ

আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নাই, আমি তার উপরই নির্ভর করছি আর তিনি মহান আরশের অধিপতি, আল্লাহ তায়ালা তার সকল কাজ সমাধা করে দেন এবং তার সকল ইচ্ছা পূর্ণ করেন। -মুসনাদে আহমাদ

৮। আল্লাহর সন্তোষ লাভ:

হযরত সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার বলে-

رَضِيتُ بِاللّهِ رَبًّا وَّبِالْإِسْلَامِ دِيْنًا وَّبِمُحَمَّدٍ نَّبِيًّا

(আমি আল্লাহকে রব হিসাবে, ইসলামকে দ্বীন হিসাবে এবং মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নবী হিসাবে পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছি), তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যাওয়া আল্লাহর কর্তব্য হয়ে যায়। -তিরমিযী-৩৩২৫ : হাসান

৯। সাওয়াব লাভের একটি আমল:

হযরত আবু আইউব আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি দশবার বলে-

لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ

(আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, তিনি এক, তার কোন শরীক নাই, রাজত্ব তারই, সমস্ত প্রশংসা তারই জন্য এবং তিনি সব কিছুর উপর সর্বময় ক্ষমতাবান), সে হযরত ইসমাইল আলাইহিসসালামের বংশের দশ জন গোলাম আজাদ করার সমপরিমান সওয়াব পাবে। -বুখারী, মুসলিম ও তিরমিযী

অন্য বর্ণনায় : হযরত আবু আইয়াশ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় বলে-

لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ

তার জন্য হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের বংশের গোলাম আজাদ করার সমতুল্য বলে গন্য হবে, দশটি নেকী লেখা হবে, দশটি পাপ মোচন করা হবে, দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে এবং শয়তান হতে নিরাপদে থাকবে। -তিরমিযী, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ

১০। সকল দুআর সম্মিলিত ফজিলতের দুআটি পাঠ করুন ১ বার:

আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক দুআই করেছেন আমরা তার কিছুই স্মরণ রাখতে পারিনি। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি অনেক দুআই করেছেন আমরা তার কিছুই স্মরণ রাখতে পারিনি। তিনি বললেন: আমি কি তোমাদেরকে এমন কিছু বলে দিব না, যা সেই সমস্ত দোয়ার সমষ্টি হবে? তোমরা বল-

اَللّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ مَا سَأَلَكَ مِنْهُ نَبِيُّكَ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا اسْتَعَاذَ مِنْهُ نَبِيُّكَ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنْتَ الْمُسْتَعَانُ وَعَلَيْكَ الْبَلَاغُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّهِ০

'হে আল্লাহ! আমরা আপনার নিকট সেই কল্যাণ কামনা করি, যা আপনার নবী মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার নিকট কামনা করেছেন এবং আমরা আপনার নিকট সেই অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি, যে অনিষ্ট থেকে আপনার নবী মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। আপনিই একমাত্র সাহায্যকারী এবং আপনিই কল্যাণ পৌঁছিয়ে দেন। আল্লাহ ভিন্ন ক্ষতি রোধ করার এবং কল্যাণ পৌঁছানোর কারো কোন শক্তি নাই'। -তিরমিযী

১১। উত্তম জিকির :

- اَللّهُ أَكْبَرُ- لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ - اَلْحَمْدُ لِلّهِ - سُبْحَانَ اللّهِ (সম্ভব হলে একশত বার) : হযরত আমর ইবনে শুয়াইব (র) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার রাদিয়াল্লাহু আনহু সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি সকালে একশতবার ও সন্ধ্যায় একশতবার سُبْحَانَ اللّهِ বলে, সে একশতবার হজ্জ আদায়কারীর সমতুল্য। যে ব্যক্তি সকালে একশতবার ও সন্ধ্যায় একশতবার اَلْحَمْدُ لِلّهِ বলে, সে আল্লাহর পথে একশত ঘোড়া দানকারীর অনুরূপ অথবা তিনি বলেছেন একশতবার জিহাদে অংশ গ্রহনকারীর সমতুল্য। যে ব্যক্তি সকালে একশতবার ও সন্ধ্যায় একশতবার لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ বলে, সে ইসমাইল আলাইহিস্সালাম এর বংশের একশত গোলাম আজাদকারীর ন্যায়। যে ব্যক্তি সকালে একশতবার ও সন্ধ্যায় একশতবার اَللّهُ أَكْبَرُ বলে, সেই দিনের মধ্যে তার চেয়ে আর কেউ অধিক কিছু (আমল) পেশ করতে পারবে না। তবে যে ব্যক্তি তার অনুরূপ সংখ্যায় পড়েছে বা তার চেয়ে বেশী সে ব্যতীত। -তিরমিযী : হাসান ও নাসাই

১২। দরূদ শরীফ- দশ বারঃ

উম্মে দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় দশবার করে দুরূদ শরীফ পাঠ করে, সে কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ লাভ করবে। -তারগীব

১৩। সাইয়্যেদুল ইস্তিগফারঃ

হযরত সাদ্দাদ ইবনে আউস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সর্বশ্রেষ্ঠ ইস্তিগফার হল-

اَللّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوْءُ لَكَ بِذَنْبِيْ فَاغْفِرْ لِيْ فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلَّا أَنْتَ০

(হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রভু, তমি ছাড়া কোন ইলাহ নাই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছো আর আমি তোমার গোলাম। আমি আমার সাধ্যমত তোমার প্রতিশ্র“তি ও অংগীকারে আবদ্ধ রয়েছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তোমার কাছে স্বীকার করছি আমার উপর তোমার প্রদত্ত অনুগ্রহকে এবং আমার পাপও স্বীকার করছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। নিশ্চয়ই তুমি ব্যতীত কোন ক্ষমাকারী নাই) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : যে ব্যক্তি ইয়াকীনের সাথে উক্ত দোয়া দিবসে পাঠ করবে এবং সন্ধ্যার পূর্বে মারা যাবে সে জান্নাতীদের অন্তর্ভূক্ত হবে আর যে ব্যক্তি ইয়াকীনের সাথে উক্ত দোয়া রাতে পাঠ করবে এবং সকালের পূর্বে মারা যাবে সেও জান্নাতীদের অন্তর্ভূক্ত হবে। -বুখারী, তিরমিযীতেও অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে

১৪। হযরত আবু বাকর রাদিয়াল্লাহু আনহু -এর দোয়া- ১ বারঃ

হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু বাকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে এমন কিছুর নির্দেশ দিন যা আমি সকালে ও বিকালে উপনীত হয়ে বলতে পারি। তিনি বললেন, তুমি বল :

اَللّهُمَّ عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبَّ كُلِّ شَيْءٍ وَّمَلِيْكَه أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلهَ إِلَّا أَنْتَ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِيْ وَمِنْ شَرِّ الشَّيْطَانِ وَشِرْكِه

(হে আল্লাহ! অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, আসমান ও জমীনের সৃষ্টিকর্তা, সব কিছুর প্রতিপালক ও মালিক, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। আমি আমার নাফসের অনিষ্ট থেকে, শয়তানের অনিষ্ট থেকে এবং শিরক থেকে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি)- তিনি বললেন : তুমি এ দোয়া সকালে, বিকালে ও শয্যা গ্রহনকালে পড়বে। -তিরমিযী : হাসান ও সহীহ

১৫। আসমা-উল হুসনা এর ফজিলতঃ

হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আল্লাহর এক কম একশত (অর্থাৎ নিরানব্বইটি) নাম আছে। যে ব্যক্তি এই নামগুলো আয়ত্ব করল সে জান্নাতে প্রবেশ করল। -সহিহ বুখারী, মুসলিম ও তিরমিযী : হাসান ও সহীহ,

আসমা-উল হুসনা (সম্ভব হলে) একবার পাঠ করা উচিত।

ঘুমানোর সময়কার মাসনুন আমলঃ

১। আয়াতুল কুরসী পাঠ:

যদি কেউ শয়নকালে আয়াতুল কুরসী তিলাওয়াত করে তাহলে শয়তান তার নিকটবর্তী হবে না। -বুখারী ও মুসলিম

২। সূরা ইখলাস-ফালাক-নাস পাঠঃ

হযরত আইশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রাতে যখন বিছানায় যেতেন, তখন কুল হুওয়াল্লা-হু আহাদ, কুল আঊ-জু বিরব্বিল ফালাক ও কুল আঊ-জু বিরব্বিন্নাছ পড়ে নিজের দুই হাতের তালু একত্র করে তাতে ফুঁ দিতেন, অতঃপর উভয় হাত যথাসম্ভব সারা শরীরে মলতেন। তিনি মাথা, মুখমন্ডল ও দেহের সামনের অংশ থেকে শুরু করতেন। এভাবে তিনি তিন বার তা মলতেন। -সহিহ বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী-৩৩৩৮, নাসাই ও আবু দাউদ

৩। সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াতঃ

হযরত আবু মাসঊদ আল আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি রাতে সুরা আল বাকারার শেষ দুই আয়াত তিলাওয়াত করবে তা তার জন্য যথেষ্ট হবে। -বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাই ও ইবনে মাজাহ

৪। সূরা মুলক তিলাওয়াতঃ

হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : কুরআনে ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট একটি সুরা আছে, যা কোন ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করলে তাকে মাফ করে দেয়া হয়। এ সুরাটি হল তাবা-রকাল্লাজী বিয়াদিহিল মুলক। -তিরমিযী : হাসান, নাসাই, ইবনে মাজাহ ও আবু দাউদ

রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণতঃ এই সুরা না পড়ে ঘুমাতেন না।

৫। শয়নকালে ইস্তিগফারঃ

হযরত আবু সাইদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : কোন লোক বিছানায় শয়নকালে তিনবার বলে-

أَسْتَغْفِرُ اللّهَ الَّذِيْ لَا إِلهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ

(আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি, যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, যিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী আর তার নিকট তওবা করি) আল্লাহ তার গুনাহ সমূহ মাফ করে দেন, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা রাশির সমতুল্য হয়, যদিও তা বৃক্ষরাজির পাতার ন্যায় অসংখ্য হয়, যদিও তা টিলাসমূহের বালিরাশির ন্যায় হয়, যদিও তা দুনিয়ার দিন সমূহের সমসংখ্যক হয়। -তিরমিযী-৩৩৩৩ : হাসান

৬। শয়নকালে জিকিরঃ

হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফাতিমা আমার নিকট অভিযোগ করে যে, গম পেষার চাকতি ঘুরানোর দরুন তার উভয় হাতে ফোসকা পড়ে গেছে। আমি বললাম, যদি তুমি তোমার পিতার (রসূলুল্লাহ্) নিকট গিয়ে তার কাছে একজন খাদেমের আবেদন করতে। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আমি কি তোমাদের দুজনকে এমন জিনিষ বলে দেব না, যা তোমাদের জন্য খাদেমের চেয়ে উৎকৃষ্ট ? তোমরা শয়ন কালে ৩৩ বার-سُبْحَانَ اللّهِ (আল্লাহ পবিত্র), ৩৩ বার- اَلْحَمْدُ لِلّهِ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য), ৩৪ বার- اَللّهُ أَكْبَرُ ( আল্লাহ সুমহান) বলবে। হাদীসে আরও বিবরন আছে। -বুখারী, মুসলিম ও তিরমিযী-৩৩৩৪ : হাসান

৭। ইশা-বাদ ঘুমের আগে দরূদ পাঠঃ

ইশার নামাজের পর ঘুমের আগে কমপক্ষে একশত বার দুরূদ পাঠ করার জন্য আল্লাহ্ওয়ালাগণ পরামর্শ দিয়েছেন। দুরূদ পাঠের ফলে একই সাথে আল্লাহ্ ও তার রসূলের সাথে গভীর মহব্বত সৃষ্টি হয়। ফলে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে স্বপ্নে জিয়ারত নসীব হওয়ার আশা করা যায়।

৮। শয়নকালে ও ঘুম থেকে উঠে দোয়াঃ

হযরত হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রে বিছানায় শয়নকালে নিজের ডান হাত ডান গন্ডের নীচে রাখতেন। অতঃপর বলতেন-

اَللّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوْتُ وَأَحْيَا

(হে আল্লাহ্, আমি তোমারই নামে মরি এং তোমারই নামে বাঁচি)। অতঃপর তিনি যখন জাগতেন তখন বলতেন-

اَلْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِيْ أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُوْرُ

সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করেছেন। আর তার দরবারেই হাজির হতে হবে। -বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ

৯। ঘুমের শুরুতে দোয়াঃ

হযরত হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঘুমানোর ইচ্ছা করতেন তখন নিজ (ডান) হাত স্বীয় মাথার নীচে রাখতেন, অতঃপর বলতেন-

اَللّهُمَّ قِنِيْ عَذَابَكَ يَوْمَ تَجْمَعُ أَوْ تَبْعَثُ عِبَادَكَ

হে আল্লাহ! যে দিন আপনি আপনার বান্দাদেরকে সমবেত করবেন, অথবা, পূনরুত্থিত করবেন সেদিন আমাকে আপনার শাস্তি থেকে নিরাপদ রাখুন। -তিরমিযী

১০। রাতে ঘুম ভেংগে গেলে দোয়া ও জিকিরঃ

হযরত উবাদা ইবনুস সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি রাতে (ঘুম ভেংগে গেলে) জাগ্রত হয়ে বলে-

لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ وَحْدَه لَا شَرِيكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ وَسُبْحَانَ اللّهِ وَالْحَمْدُ لِلّهِ وَلَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ وَاللّهُ أَكْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّهِ০

(আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তার কোন অংশীদার নেই, সার্বভৌমত্ব তারই জন্য, সমস্ত প্রশংসা তারই প্রাপ্য এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি, সমস্ত প্রসংশা আল্লাহর জন্য, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আল্লাহ সুমহান এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ব্যতীত অন্যায় থেকে বিরত থাকার কিংবা ভাল কাজ করার শক্তি কারো নেই)- অতঃপর সে বলবে- رَبِّ اغْفِرْ لِيْ (হে প্রভু! আমাকে ক্ষমা করে দাও)। অথবা তিনি বলেছেন : সে দোয়া করলে তা কবুল করা হয়। আর সে যদি হিম্মত করে অজু করে নামাজ পড়ে তবে তার নামাজও কবুল করা হবে। -বুখারী ও মুসলিম

১১। ঘুম না আসা পর্যন্ত জিকির ও দোয়াঃ

হযরত আবু উমামা বাহেলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি ঘুমানোর জন্য পবিত্র অবস্থায় বিছানায় যায় এবং ঘুম না আসা পর্যন্ত আল্লাহর জিকির করতে থাকে, সে পার্শ্ব পরিবর্তন করার পূর্বেই আল্লাহর নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ থেকে যা কিছু প্রার্থনা করবে আল্লাহ তাকে অবশ্যই তা দান করবেন। -তিরমিযী : হাসান

সার্বক্ষণিক এবং অন্যান্য মাসনুন আমলঃ

আল্লাহ তা’য়ালা বলেন : তোমরা আমার স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ করবো আর আমার প্রতি শোকর-গোজারী কর এবং (আমার নিয়ামতের নাশোকরী করে) কুফরী করো না। -সূরা বাকারাহ : আয়াত নং ১৫২

তিনি আরও বলেন : নিঃসন্দেহে আসমান সমূহ ও জমিনের সৃষ্টি ও দিন-রাত্রির আবর্তনের মধ্যে জ্ঞানীদের জন্য বহু নিদর্শন রয়েছে, যারা দাড়ানো, বসা ও শায়িত সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকির করে। -সূরা আলে ইমরান : ১৯০-১৯১

হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, আমার বান্দা আমার সম্পর্কে যেমনটি ধারনা করে আমি তার সাথে ঠিক তেমনটি আচরণ করি। সে যখন আমাকে স্মরণ করে তখন আমি তার সাথে থাকি। যদি সে মনে মনে আমাকে স্মরণ করে আমিও মনের মধ্যে তাকে স্মরণ করি। আর যদি কোন মাজলিসে আমাকে স্মরণ করে আমিও তার চাইতে উত্তম মাজলিসে তাকে স্মরণ করি। -বুখারী ও মুসলিম

হযরত ইবনে মাসঊদ ও ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর বন্ধু কারা? উত্তরে তিনি বললেন : তারা হচ্ছে ওরাই যাদেরকে তুমি দেখতে পাও যে, সর্বদা আল্লাহর স্মরনে নিমগ্ন রয়েছে। -মুসনাদে আহমাদ

তাই সদা-সর্বদা বেহুদা কথা-কাজ-চিন্তা পরিহার করে জিকিরের মাঝে জিহবা ও মনকে লিপ্ত রাখা উচিৎ। সহজে আমলযোগ্য কিছু জিকির হল-

১। সর্বোত্তম জিকিরঃ

হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি : সর্বোত্তম জিকির হচ্ছে- لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ সর্বদা এই জিকিরে লিপ্ত থাকা যায়। -তিরমিযী

২। তাসবীহ, তাহমীদ, তাহলীল ও তাকবীরঃ

হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

سُبْحَانَ اللّهِ وَالْحَمْدُ لِلّهِ وَلَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ وَاللّهُ أَكْبَرُ

(আল্লাহ অতিশয় পবিত্র, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং আল্লাহ সুমহান) বলা আমার নিকট যে সব জিনিসের উপর সূর্য উদিত হয় তার চেয়ে অধিক প্রিয়। -মুসলিম ও তিরমিযী

অন্য বর্ণনায়: হযরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমি মি’রাজের রাত্রে ইব্রাহীম আলাইহিস্সালাম এর সাথে সাক্ষাৎ করেছি। তিনি বলেন- হে মুহাম্মাদ! আপনার উম্মাতকে আমার সালাম পৌঁছিয়ে দিন এবং তাদেরকে জানিয়ে দিন যে, জান্নাতের মাটি অত্যন্ত সুগন্ধিযুক্ত এবং সেখানকার পানি অত্যন্ত সুস্বাদু। জান্নাত একটি সমতল ময়দান এবং তথাকার বৃক্ষরাজি হল :

سُبْحَانَ اللّهِ وَالْحَمْدُ لِلّهِ وَلَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ وَاللّهُ أَكْبَرُ

'আল্লাহ অতিশয় পবিত্র, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং আল্লাহ সুমহান'। -তিরমিযী : হাসান

৩। ক্ষমালাভের অনন্য জিকিরঃ

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: 'পৃথিবীর বুকে যে ব্যক্তি বলে-

لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ وَاللّهُ أَكْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّهِ

(আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, আল্লাহ সুমহান এবং আল্লাহর সাহায্য ছাড়া মন্দকে রোধ করার ও কল্যাণ হাসিল করার শক্তি কারো নাই), তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয় যদিও তা সমুদ্রের ফেনারাশির মত হয়।' -তিরমিযী

৪। লা- হাওলা.... জান্নাতের গুপ্তধনঃ

হযরত আবু মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : আমি কি তোমাকে জান্নাতের একটি গুপ্তধনের কথা জানাবো না? আমি বললাম, অবশ্যই, হে আল্লাহর রসুল! তিনি বলেন, তা হল-
لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّهِ -বুখারী ও মুসলিম

৫। ক্ষমালাভের আরেকটি জিকিরঃ

হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : 'যে ব্যক্তি একশত বার বলে-

سُبْحَانَ اللّهِ وَبِحَمْدِه

(আমি প্রশংসা সহকারে আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি) তার গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যায়, তা সমুদ্রের ফেনারাশির সমপরিমান হলেও'। -তিরমিযী-৩৪০০ : হাসান ও সহীহ, বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ ও মুসনাদে আহমাদ

৬। চারটি কালিমা তিনবার পড়ার সওয়াব ফজর থেকে চাশত পর্যন্ত জিকির করার ন্যায়ঃ

তিনবার পড়ার সওয়াব ফজর থেকে চাশত পর্যন্ত জিকির করার ন্যায়- (মুসলিম শরীফে হাদীসটির আরও বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে)

سُبْحَانَ اللّهِ وَبِحَمْدِه عَدَدَ خَلْقِه وَرِضَا نَفْسِه وَزِنَةَ عَرْشِه وَمِدَادَ كَلِمَاتِه

'প্রশংসাসহ আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি তাঁর সমগ্র সৃষ্টির সমপরিমান, তাঁর সন্তোষের পরিমান, তাঁর আরশের ওজন পরিমান, তাঁর কালিমার সমপরিমান'।

৭। যে কালিমা পাঠে জান্নাতে লাগানো হয় খেজুর গাছঃ

হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি একবার বলে-

سُبْحَانَ اللّهِ الْعَظِيمِ وَبِحَمْدِه

(আমি মহান আল্লাহর প্রশংসা সহকারে পবিত্রতা ঘোষণা করছি), তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ লাগানো হয়। -তিরমিযী-৩৩৯৮ ও ৩৩৯৯

৮। দু'টি বাক্য যা মুখে উচ্চারণ করা খুবই সহজ, মিজানে ওজনে অনেক ভারী এবং করুণাময় আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়ঃ

হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : এমন দুটি বাক্য আছে যা মুখে উচ্চারণ করা খুবই সহজ, মিজানে ওজনে অনেক ভারী এবং করুণাময় আল্লাহর কাছে অতি প্রিয় (তা হল)-

سُبْحَانَ اللّهِ وَبِحَمْدِه- سُبْحَانَ اللّهِ الْعَظِيْمِ

'আমি প্রশংসা সহকারে আল্লাহর পবিত্রতা বর্ননা করছি। আমি মহান আল্লাহর পবিত্রতা বর্ননা করছি'। -বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাই ও ইবনে মাজাহ

একনজরে সংক্ষেপে দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুন্নাহ সম্মত দোআ, তাসবিহ ও জিকিরঃ

জীবন চলার পথে কত কথাই না আমরা বলে থাকি। কথার খই ফোটে আমাদের মুখে। প্রয়োজনীয় কথার পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় অনর্থক অনেক কথাও উচ্চারিত হয় আমাদের মুখে। অথচ একটু লক্ষ্য রেখে চললেই বিনা কষ্টে, বিনা পয়সায় অর্জন করা সম্ভব হাজারো সাওয়াব। স্থান-কাল-পাত্র বুঝে শুধুমাত্র কয়েকটি শব্দ উচ্চারন করলেই লাভ করা যায় এই অমূল্য আখিরাতের সম্বল। আজ এমনই অতি সহজভাবে আমলযোগ্য কিছু সুন্নাতের আলোচনা-

০১। ভালো কিছু খাওয়া বা পান করার সময়, কোনো কিছু লেখা বা পড়ার সময়, কোনো কাজ শুরু করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলে শুরু করা সুন্নাত। -সহিহ বুখারি : ৫৩৭৬
০২। ভবিষ্যতে কোনো কিছু করার ইচ্ছা করলে ‘ইনশাআল্লাহ’ বলা সুন্নাত। -সূরা আল কাহাফ : ২৩-২৪
০৩। স্বাভাবিকের মধ্যে কোনো ব্যতিক্রম দেখলে কিংবা আশ্চর্য ধরনের কোনো কথা শুনলে ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা সুন্নাত। -সহিহ বুখারি : ৬২১৮
০৪। কষ্ট, দুঃখ ও যন্ত্রণায়- ‘ইয়া- আল্ল-হ’ পাঠ করে আল্লাহ তাআ'লাকে স্মরণ করা।
০৫। ভালো যে কোনো কিছু বেশি বা ব্যতিক্রম দেখলে ‘মাশাআল্লাহ’ বলা সুন্নাত। -সহিহ মুসলিম : ৩৫০৮
০৬। ধন্যবাদ জ্ঞাপনে- ‘জাঝাকাল্ল-হু খাইরান’ বলা।
০৭। ঘুমানোর সময়- ‘বিসমিল্লা-হি আল্ল-হুম্মা বিসমিকা আমূতু ওয়া আ‘হইয়া’ পড়া এবং ডান কাত হয়ে শয়ন করা।
০৮। ঘুমানোর পূর্বে- ‘সুরাহ মূল্‌ক্’ পড়া।
০৯। ঘুম থেকে জাগ্রত হবার পর- ‘আল হামদু লিল্লা-হিল্লাযী আ‘হইয়া-না- বা‘দা মা- আমা-তানা- ওয়া ইলাইহিন্নুশূর’ পাঠ করা।
১০। খানার পূর্বে- ‘উভয় হাত উত্তম রূপে ধুয়ে নেয়া এবং কুলি করা’।
১১। আল্লাহ তায়ালার শ্রেষ্ঠত্ব, মহত্ব বা বড়ত্বের কোনো কৃতিত্ব দেখলে কিংবা শুনলে ‘আল্লাহু আকবার’ বলা সুন্নাত। -সহিহ বুখারি : ৬২১৮
১২। ভালো কিছু খাওয়া বা পান করা শেষে, কোনো শুভ সংবাদ শোনা হলে, কেউ ‘কেমন আছেন’ জিজ্ঞেস করলে- জবাবে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা সুন্নাত। -ইবনে মাজাহ : ৩৮০৫
১৩। খানার মাঝে মাঝে-‘লাকাল ‘হামদু ওয়া লাকাশ্‌ শুক্‌রু’ পাঠ করা।
১৪। খানার শেষে-আল‘হামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত্ব‘আমানা- ওয়া ছাক্ব-না- ওয়া জা‘আলানা মিনাল মুসলিমীন পাঠ করা।
১৫। কোথাও দা’ওয়াতে খানার শেষে- ‘আল্লাহুম্মা আত‘ইম মান আত্‘আমানী ওয়াসক্বি মান সাক্বানী ওয়াজা‘আলানী মিনাল মুসলিমীন’ পাঠ করা।
১৬। শৌচাগারে প্রবেশের সময়- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযু বিকা মিনাল খুবসি ওয়াল খাবায়িস' বলা এবং বাম পায়ে প্রবেশ করা।
১৭। শৌচাগার থেকে বের হতে ডান পায়ে বের হওয়া এবং ‘গুফরানাকাল হামদুলিল্লাহিল্লাজি আযহাবা আন্নিল আজা ওয়া আফানী’ পড়া।
১৮। ওযুর শুরুতে ‘বিস্‌মিল্লাহ’ বলা।
১৯। ওযুর শেষে আকাশের দিকে তাকিয়ে ‘আশহাদু আল লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া‘হদাহূ লা শারীকা লাহূ ওয়া আশহাদু আন্না মু‘হাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রসূলুহ, আল্লাহুম্মাজ‘আলনী মিনাত তাওয়াবীনা ওয়াজ‘আলনী মিনাল মুতাত্বহ্‌হিরীন’ পাঠ করা।
২০। মসজিদে প্রবেশের সময়-‘আল্লাহুম্মাফতা‘হলী আবওয়াবা র‘হমাতিক, পড়া এবং ডান পায়ে প্রবেশ করা।
২১। মসজিদে প্রবেশ করে ‘দুই রকা‘আত তা‘হিয়্যাতুল মাসজিদ আদায় করা’।
২২। তাকবীরে উলা তথা প্রথম তাকবীরে অংশগ্রহণ করা, (যা ইমাম আল্লাহু আকবার বলে নিয়্যত করার সাথে সাথে করতে হয়, না হয় তাকবীরে উলার ফযীলত পাওয়া যায় না)।
২৩। নামাযের শেষে একবার 'আল্লাহু আকবার' এবং তিনবার ‘আসতাগফিরুল্লাহ’, অতঃপর আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম তাবারকতা ইয়া যালজালালি ওয়াল ইকরাম, তিন তাসবী‘হ তথা ৩৩ বার সুব‘হানাল্লাহ, ৩৩ বার আল-‘হামদু লিল্লাহ, ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পাঠশেষে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া‘হদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল ‘হামদু ইউ‘হয়ী ওয়া ইউমীতু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাইইন ক্বাদীর’ বলা।
২৪। প্রত্যেক ফারয নামাযের পর ‘আয়াতুল কুরছী’ তথা- 'আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল ‘হাইয়ুল ক্বইয়ূম, লা তা’খুযুহূ সিনাতুও ওয়ালা নাওম, লাহু মা ফিস সামাওয়াতি ওয়া মা ফিল আরদ্ব, মানঁযাল্লাযী ইয়াশফা‘উ ‘ইনদাহূ ইল্লা বি-ইযনিহী, ইয়া’লামু মা বাইনা আইদীহিম ওয়া মা খলফাহুম, ওয়া লা ইয়ু‘হীতূনা বি শায়ইম মিন ‘ইলমিহী ইল্লা বিমাশা’, ওয়াসি‘আ কুরসিয়্যুহুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্ব, ওয়া লা ইয়াঊদুহু হিফযুহুমা, ওয়া হুওয়াল ‘আলিইয়ূল ‘আযীম' পাঠ করা।
পড়া।
২৫। মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময়- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা মিন ফাদ্বলিক’ পড়া এবং বাম পায়ে বের হওয়া।
২৬। রাস্তা-ঘাটে কাউকে দেখলে সালাম দেয়া, কেউ সালাম দিলে তার উত্তর দেয়া (এটা ওয়াজিব, না দিলে গুনাহগার হতে হবে)। সালামের সঠিক উচ্চারণ- 'আস সালামু ‘আলাকুম ওয়া র‘হমাতুল্ল-হি ওয়া বারকা-তুহ' এবং উত্তর দিতে হবে 'ওয়া ‘আলাইকুমুস সালামা ওয়া র‘হমাতুল্ল-হি ওয়া বারকাতুহ' বলে।
২৭। রস্তার ডান পাশে চলা, নিচের দিকে দৃষ্টি রেখে চলা, চলার পথে কষ্টদায়ক কিছু দেখলে তা রাস্তা থেকে অন্যত্র ফেলে দেয়া।
২৮। শপথ নেয়ার সময়- ‘ওয়াল্ল-হ/ বিল্লা-হ/ তাল্লাহ’ (তবে কথায় কথায় কসম বা শপথ দিতে নিষেধ আছে)।
২৯। কোনো হাঁচি দাতা ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলতে শুনলে- ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা সুন্নাত। -সহিহ বুখারি : ৬২২৪
৩০। অন্য কেউ হাঁচি দিলে- 'ইয়ার‘হামুকাল্ল-হ' বলা (এটা বলা এবং জোরে বলা ওয়াজিব, না হয় গোনাহগার হতে হবে)।
৩১। কেউ ভাল-মন্দ কুশলাদি জিজ্ঞাসা করলে- ‘আল-‘হামদু লিল্লা-হ’ বলে জবাব দেয়া।
৩২। দু‘আর শেষে ‘আমীন’ বলা।
৩৩। কোন ধর্মিয় বৈঠক শেষে 'সুব‘হানাল্লাহি ওয়া বি-হামদিহী সুব‘হানাকাল্লাহুম্ম আশহাদু আল লা- ইলাহা ইল্লা আনতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইক’ বলা।
৩৪। নিশ্চিতভাবে না জেনে কোনো বিষয়ে কিছু বললে, কথা শেষে ‘ওয়াল্লাহু আ’লাম’ বলা সুন্নাত। -সহিহ বুখারি : ৫৫৭০
৩৫। কোনো বিজয় লাভ করলে কিংবা বিজয় লাভের আশায় শ্লোগান দিলে ‘আল্লাহু আকবার’ বলা সুন্নাত। -সহিহ বুখারি : ৬১০
৩৬। কোন সমস্যা দেখা দিলে ‘তাওয়াক্কালতু ‘আলাল্ল-হ’ বলা।
৩৭। পাপের অনুশোচনায়-তাওবাহ তথা ‘আসতাগফিরুল্ল-হ’ বলা।
৩৮। অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে বা দেখলে কিংবা কোনো বাজে কথা শুনলে ‘নাউজুবিল্লাহ’ বলা সুন্নাত। -সহিহ বুখারি : ৬৩৬২
৩৯। আনন্দদায়ক কিছু দেখলে- ‘ফা-তাবারকাল্ল-হ’ বলা।
৪০। কোনো বিপদের কথা শুনলে কিংবা কোনো খারাপ বা অশুভ সংবাদ শুনলে, কোনো কিছু হারিয়ে গেলে, কোনো কিছু চুরি হয়ে গেলে, কোনো কষ্ট পেলে ‘ইন্নালিল্লাহ’ বলা সুন্নাত। -সহিহ মুসলিম : ২১২৬
৪১। দূঃখ বা মৃত্যুর সংবাদ শুনলে- ‘ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না- ইলাইহি র-জি‘ঊন’ পাঠ করা।
৪২। আযানের ধ্বনি শুনলে মুআয্যিনের সাথে হুবহ আযানের বাক্যগুলো উচ্চারণ করা প্রত্যেক বাক্যের শেষে।
৪৩। আযান শেষ হলে ‘আল্লাহুম্মা রব্বা হাযিহিদ দা’ওয়াতিত তা-ম্মাহ ওয়াস সলাতিল ক্বা-য়িমাহ আ-তি মু‘হাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাদ্বীলাহ ওয়াব‘আছহু মাক্বামাম মা‘হমূদানিল্লাযী ওয়া‘ত্তাহ ‘হাল্লাত লাহূ শাফা‘আতী ইয়াউমাল ক্বিয়ামাহ ইন্নাকা লা- তুখলিফুর মী‘আদ’ পড়া।
৪৪। আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়ে দু‘আ করা।
৪৫। রুগী দেখতে যাওয়া, সাথে কিছু হাদিয়া নিয়ে যাওয়া, রুগীর জন্য দু‘আ করা, রুগীর কাছে দু‘আ চাওয়া।
৪৬। কেউ কিছু দিলে কিংবা কারো মাধ্যমে কোনো কাজ হলে তার বদলে ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ বলা সুন্নাত। -সহিহ বুখারি : ৩৩৬

শেষের কথাঃ

এরকম আরো অনেক সুন্নাহ সম্মত আমল দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে রয়েছে, যেসবের বাস্তব অনুশীলনের মাধ্যমে আমরা নিজেদের জীবন আলোকিত করতে পারি। কাল ময়দানে মাহশারে রসূলে আকরাম সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর শাফাআত বা সুপারিশ পেতে এসব সুন্নাহর আমল অবশ্যই সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আমাদেরকে রসূলে কারিম সল্লাল্ল-হু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সুন্নাহ অনুসারে ‘আমল করে আমাদের সামগ্রিক জীবন পরিচালনা করার তাওফিক্ব দান করুণ। আমাদের সকলকে তাঁর পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার তাওফিক দিন। উত্তম আমলের মাধ্যমে সাজিয়ে নিতে পারি আমাদের জীবন, সেই কিসমত নসিব করুন। প্রিয় নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিটি সুন্নাতের প্রতি অন্তরে মুহাব্বত তৈরি করে দিন। পার্থিব সংক্ষিপ্ত এ জীবনে দ্বীনের উপরে অটল অবিচল রাখুন। পরকালে নাজাতপ্রাপ্ত মাকবূল মাগফূরগনের সাথে আমাদেরও নাজাত প্রদান করে ধন্য এবং কৃতার্থ করুন। আমীন।

লেখাটি প্রণয়নে কৃতজ্ঞতাঃ সামহোয়্যার ইন ব্লগে প্রকাশিত আমার পুরাতন একাধিক পোস্ট এবং অন্য আরও কিছু সোর্স থেকে সংগৃহিত দোআ এবং জিকরের এই সংকলনটি পরিমার্জিত আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে যাতে আগ্রহী সকলে এগুলোর উপরে আমল করে উপকার গ্রহণ করতে পারেন। অন্যান্য যেসব উৎস থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।

কৈফিয়তঃ শুধুমাত্র বিশ্বাসী সেইসব ব্যক্তিবর্গের জন্যই এই পোস্ট যারা ভালোবেসে সুন্নাতকে নিজেদের জীবনে ধারণ করেন। এর বাইরে যারা এই পোস্ট পাঠ করবেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং শুভকামনা।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:০৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×