somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ! যা চেয়েছিলাম, তার চেয়েও বেশি দয়া করেছেন আমার পরম প্রিয় রব। যা পাইনি, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই—কারণ জানি, তিনি দেন শুধু কল্যাণই। সিজদাবনত শুকরিয়া।nnপ্রত্যাশার একটি ঘর এখনও কি ফাঁকা পড়ে আছে কি না, জানি না। তবে এটুকু জানি—

মানবিক করিডোর: আশীর্বাদ না অভিশাপ?

০৬ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
মানবিক করিডোর: আশীর্বাদ না অভিশাপ?

ছবি, এআই দ্বারা তৈরিকৃত।

রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের জন্য মিয়ানমারের অভ্যন্তরে একটি নিরাপদ ত্রাণপথ বা "মানবিক করিডোর" স্থাপন নিয়ে সাম্প্রতিক কূটনৈতিক আলোচনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। এই প্রস্তাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে কক্সবাজার সীমান্ত দিয়ে আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা রাখাইনে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। এ নিয়ে দেশে-বিদেশে যেমন আলোচনা চলছে, তেমনি উঠছে নানা প্রশ্ন—এই করিডোর সত্যিই মানবতার আশীর্বাদ হবে, নাকি বাংলাদেশের জন্য একটি কৌশলগত অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে?

কী এই "মানবিক করিডোর"?

"মানবিক করিডোর" বলতে বোঝানো হয় একটি নিরাপদ ও নিরপেক্ষ পথ, যা সাধারণত যুদ্ধ বা সংকটপূর্ণ এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানো বা বেসামরিক মানুষ সরিয়ে নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে, সব পক্ষের সম্মতিতে এমন করিডোর পরিচালিত হয়, যেখানে মানবিকতা, নিরপেক্ষতা এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করাই মূল শর্ত।

বাংলাদেশের অবস্থান

বাংলাদেশ সরকার নীতিগতভাবে মানবিক করিডোরে সম্মত হলেও তাতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত জুড়ে দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:

ত্রাণ বিতরণে কোনো জাতিগত বৈষম্য চলবে না।

সহায়তা হতে হবে শর্তহীন ও নিরপেক্ষ।

রাখাইনে যুদ্ধবিরতি ও সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

জাতিসংঘের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ত্রাণ পরিবহন ও বিতরণ পরিচালিত হতে হবে।

সম্ভাব্য সুফল

বিশ্লেষকদের মতে, এই করিডোর বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলে একটি মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে আবারও স্বীকৃতি পাবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর সহযোগিতা বাড়তে পারে, যা কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে উপকারী হবে।

রাখাইনে সহায়তা পৌঁছালে অঞ্চলটির অস্থিতিশীলতা কমতে পারে। এতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা কিছুটা হলেও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি, করিডোর পরিচালনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অর্থায়ন বা সাহায্য বাংলাদেশের স্থানীয় অর্থনীতিতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারে।

বিপদের আশঙ্কা

তবে এই উদ্যোগের সঙ্গে রয়েছে বড় ধরনের ঝুঁকি। বিশেষ করে, রাখাইনের বড় অংশ বর্তমানে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে থাকায় করিডোর ব্যবহার হয়ে উঠতে পারে জটিল ও বিপজ্জনক। ত্রাণ সরবরাহ যদি সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে পড়ে, তবে বাংলাদেশ অনিচ্ছাকৃতভাবে মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। অতীতের উদাহরণ (যেমন গাজা, ইউক্রেন, সিরিয়া) থেকে দেখা গেছে, অনেক সময় মানবিক করিডোর সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে।

বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আন্তর্জাতিক সংস্থার স্থায়ী উপস্থিতি জাতীয় সার্বভৌমত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলছে অনেক রাজনৈতিক দল ও বিশ্লেষক। বিরোধী দল বিএনপি এবং বিভিন্ন নাগরিক সমাজ করিডোরকে “সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি” হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

ভূ-রাজনৈতিক চাপ

রাখাইন অঞ্চলকে ঘিরে চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ও রাশিয়ার কৌশলগত আগ্রহ রয়েছে। এই করিডোর ব্যবস্থায় বাংলাদেশ কোন পক্ষের ঘনিষ্ঠ হয়, সেটি ভেবে ওজন করে পদক্ষেপ না নিলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে জটিলতা তৈরি হতে পারে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র করিডোরে আগ্রহ দেখালেও চীনের অবস্থান নিয়ে স্পষ্টতা নেই, যা বাংলাদেশের জন্য কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করাকে আরও কঠিন করে তুলেছে।

অতীত অভিজ্ঞতা এবং বাংলাদেশের জন্য সতর্কতা

বিশ্বে অনেক মানবিক করিডোর ব্যর্থতার ইতিহাস বহন করে। আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার লাচিন করিডোর, বসনিয়ার সারায়েভো করিডোর বা সিরিয়ার ঘৌতা করিডোর তেমনই কিছু দৃষ্টান্ত, যেখানে মানবিক করিডোর সামরিক করিডোরে পরিণত হয়েছে।

পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য—আফগানিস্তানে করিডোর দেওয়ার পর সেই অঞ্চল হয়ে উঠেছিল সন্ত্রাসবাদের ঘাঁটি, যা পরবর্তীতে পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই ঝুঁকি নাকচ করা যায় না।

বাংলাদেশের করণীয়

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করিডোর বাস্তবায়নের আগে সরকারকে চাই স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ। রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি জাতীয় কৌশল প্রণয়ন প্রয়োজন।

জাতিসংঘের নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধান ছাড়া করিডোর পরিচালনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ত্রাণ যাতে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে না পড়ে, সেজন্য কঠোর নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

উপসংহার

মানবিক করিডোর, একদিকে যেমন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য একটি নতুন দরজা খুলে দিতে পারে, তেমনি অদূর ভবিষ্যতে নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, এবং কূটনৈতিক ভারসাম্যের মারাত্মক পরীক্ষায় ফেলতে পারে বাংলাদেশকে। ফলে করিডোর বাস্তবায়নে প্রয়োজন অত্যন্ত সতর্ক কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ, এবং সর্বোপরি—জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৪২
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×