বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এটি শুধু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং রাষ্ট্রের নৈতিক অবস্থানের প্রতিফলন এবং জনগণের দীর্ঘ আন্দোলনের প্রতি এক প্রতীকী জবাবদিহিতা।
এই পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে জনগণের ক্ষোভ এবং হাসনাত আব্দুল্লাহদের মতো সংগ্রামী তরুনদের তুমুল আন্দোলন। যখন রাষ্ট্রযন্ত্র দলীয় দখলে বন্দী ছিল, তখন এই গণআন্দোলনই হয়ে উঠেছিল আশার শেষ প্রদীপ। ২০২৪ সালের গণজাগরণ একটি নতুন রাজনৈতিক চেতনার জন্ম দেয়।
আওয়ামী লীগের শাসনকাল ছিল নিপীড়ন, দুর্নীতি ও দুঃশাসনের দীর্ঘ অধ্যায়। বিরোধী নেতাকর্মীদের গুম, হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, ব্যাংক ও শেয়ারবাজার লুট, এবং বিদেশে অর্থপাচার—এসব অভিযোগ কেবল বিরোধী পক্ষের নয়, বরং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ও দেশের জনগণের স্পষ্ট ভাষ্য।
এই নিষেধাজ্ঞা কোনো প্রতিশোধ নয়; এটি জনগণের ওপর নিপীড়নের বিচারের সূচনা। এটি একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়: ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়, এবং একদিন না একদিন জনগণের রায়ই বিজয়ী হয়। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের নামে দেশে দলীয় ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছিল—নির্বাচনের নামে প্রহসন, বিচার বিভাগের দলীয়করণ, মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ ও ভিন্নমতের দমন—এসবই তার প্রমাণ।
এই নিষেধাজ্ঞা হোক সুবিচারের সূচনা, প্রতিহিংসার নয়। অন্তর্বর্তী সরকার যেন একটি স্বচ্ছ, দায়বদ্ধ এবং জনমুখী রাজনৈতিক সংস্কৃতির ভিত্তি গড়ে তোলে। বাংলাদেশের জনগণ বহু ত্যাগ স্বীকার করেছে। এখন সময় এসেছে একটি সত্যিকারের জনগণের রাষ্ট্র গড়ার, যেখানে ক্ষমতা থাকবে জনগণের হাতে—গুটিকয়েক স্বার্থান্বেষীর নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০২৫ সকাল ৯:১২