somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

কুরবানি: ত্যাগ, মানবিকতা ও ঈমানের প্রতীক

০৮ ই জুন, ২০২৫ সকাল ৯:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
কুরবানি: ত্যাগ, মানবিকতা ও ঈমানের প্রতীক

ছবি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

ঈদুল আযহা—শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটি মুসলিম জীবনের গভীরতম আত্মত্যাগ, মানবিকতা, নৈতিকতা ও আল্লাহর প্রতি পরম আনুগত্যের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। প্রতিবছর এই মহিমান্বিত ইবাদতের সময় এলেই দেখা যায়, কিছু ভেকধারী 'সিজনাল পশুপ্রেমিক' কুরবানির বিরুদ্ধাচরণে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তারা একে "অবলা প্রাণী হত্যা", "নিষ্ঠুরতা" কিংবা "বর্বরতা" বলে আখ্যা দিয়ে অপপ্রচারে লিপ্ত হন। বাস্তবে এসব বক্তব্য কুরবানির প্রকৃত তাৎপর্য, ধর্মীয় গভীরতা এবং বৈজ্ঞানিক-নৈতিক দিকগুলো সম্পর্কে অজ্ঞতারই ফল।

ইসলামে কুরবানির শিকড় রয়ে গেছে হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর প্রিয় পুত্র ইসমাঈল (আ.)-এর ঐতিহাসিক আত্মত্যাগের স্মৃতিতে। আল্লাহর আদেশে পুত্রকে কুরবানি দিতে প্রস্তুত হয়ে ইব্রাহিম (আ.) নিঃস্বার্থ আনুগত্যের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। আল্লাহ এই পরীক্ষায় তাঁর সন্তুষ্টি প্রকাশ করে একটি পশুকে দিয়েছেন বিকল্প হিসেবে। এই ঘটনা মুসলমানদের শেখায়—আল্লাহর জন্য প্রিয় বস্তু ত্যাগে দ্বিধা না রাখা, এবং ঈমানের পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা গড়ে তোলা।

কুরবানি কোনো নিছক প্রাণীজবাই নয়। এটি অত্যন্ত মানবিক, নিয়মবদ্ধ এবং শৃঙ্খলিত একটি ইবাদত। ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী কুরবানির প্রতিটি ধাপে রয়েছে করুণার শিক্ষা: ধারালো ছুরি ব্যবহার, পশুকে পানি পান করানো, অন্য পশুর সামনে জবাই না করা—এগুলো সবই পশুর প্রতি সহানুভূতির নিদর্শন। আধুনিক পশু কল্যাণ গবেষণা এবং ভেটেরিনারি বিজ্ঞানের একাধিক গবেষণায় স্বীকৃত, ইসলামি পদ্ধতিই সবচেয়ে কম যন্ত্রণাদায়ক ও স্বাস্থ্যসম্মত 'হিউম্যান স্লটারিং' পদ্ধতি।

তদুপরি, কুরবানির মাংস সমাজে সাম্য ও সংহতির অনন্য নজির স্থাপন করে। এটি তিন ভাগে বিভক্ত হয়—এক অংশ আত্মীয়স্বজনের জন্য, এক অংশ দরিদ্র-দুঃস্থদের জন্য, এবং এক অংশ নিজের পরিবারের জন্য। অর্থাৎ, এতে কেবল উৎসব নয়, বরং মানবিক দায়বদ্ধতার চর্চা ও বিতরণের নৈতিকতা নিহিত রয়েছে।

এখানে প্রশ্ন জাগে—যেখানে প্রতিদিন বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি পশু সুপারমার্কেট, রেস্তোরাঁ কিংবা ফাস্টফুডের জন্য জবাই হচ্ছে, সেখানে কুরবানিকে নিয়েই কেন এত প্রশ্ন? এটি কি শুধুই প্রাণীর প্রতি সহানুভূতির বহিঃপ্রকাশ, নাকি এর পেছনে রয়েছে সুস্পষ্ট ইসলাম ধর্মবিদ্বেষ ও পক্ষপাতদুষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি?

আসলে ইসলাম প্রাণী হত্যা অনুমোদন করে না, বরং কেবলমাত্র খাদ্য ও ইবাদতের জন্য নির্ধারিত শর্তে এবং আল্লাহর নামে তা বৈধ করেছে। কুরআনে (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত ৩) বলা হয়েছে:
“তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু, রক্ত, শুকরের মাংস এবং যা আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গ করা হয়েছে…”
অর্থাৎ ইসলাম বেপরোয়া হত্যা নয়, বরং ন্যায়সংগত, মানবিক এবং আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবনের প্রয়োজন মেটানোর পক্ষে।

সুতরাং, যারা কুরবানিকে "অবলা প্রাণী হত্যা", "নিষ্ঠুরতা" কিংবা "বর্বরতা" বলে প্রচার করে, তারা হয় ধর্মীয় অজ্ঞতায় ভোগে, নয়তো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচারে লিপ্ত। প্রকৃত সত্য হলো—কুরবানি কোনো বর্বরতা নয়; এটি আত্মশুদ্ধি, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের প্রতীক এবং দরিদ্র-দুঃস্থদের পাশে দাঁড়াবার এক সুমহান উপলক্ষ। যারা সত্যের পথে থাকেন, তারা অপপ্রচারের মুখে নয়, বরং যুক্তি, সহমর্মিতা এবং ঈমানের দৃঢ়তায় অবিচল থাকেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০২৫ সকাল ৯:৩১
১০টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দাসপ্রথার নিগড় ভেঙে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলে দ্বিগুণ উৎপাদন

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:২০

দাসপ্রথার নিগড় ভেঙে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলে দ্বিগুণ উৎপাদন

এআই এর সহায়তায় তৈরি ইমেজ।

প্রায় ১৬ বছর ধরে শেখ হাসিনার অপশাসনের সময়টা ছিল এক অলিখিত আধিপত্যবাদের ছায়া। সাধারণ নাগরিকদের এক কাপ চা পান... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১৯ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:২১

সদ্য প্রকাশিত (year 2026) কিউএস র্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 584 তম স্থান অর্জন করে দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করেছে। । দ্বীতিয় স্থানে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খামেনিকে হত্যা করা হলে ইরানে গৃহযুদ্ধ লেগে যাবে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে জুন, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৭


খামেনেইকে হত্যা করা ইজরায়েলের অভিযানের অন্যতম লক্ষ্য : স্পষ্ট করলেন নেতানিয়াহুর প্রতিরক্ষামন্ত্রী ।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির মৃত্যু দেশটির জন্য কেবলমাত্র একটি নেতৃত্ব পরিবর্তনের প্রশ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডঃ ইউনুস তারেক রহমান বৈঠকঃ কতটুকু নিশ্চয়তা দিলো সুষ্ঠু, নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক উত্তরণের?

লিখেছেন শেহজাদ আমান, ১৯ শে জুন, ২০২৫ রাত ৯:২৫



তারেক রহমানের সাথে ডঃ ইউনুসের সাম্প্রতিক বৈঠকের ফলাফল নিয়ে বিএনপিসহ দেশের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দলগুলোর অনেকেই অনেক ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, অনেকেই দারুণ আনন্দিত। অনেকেই, বিশেষ করে যারা বিএনপি করেন, মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাইপাঁশ

লিখেছেন আরোগ্য, ২০ শে জুন, ২০২৫ রাত ২:০৭

মধ্যিরাতে আমি আর আমার গাঁথা। না কবিতা প্রসব করার মত শক্তি নেই। মস্তিষ্কে চাপ দিতে ইচ্ছে করছে না। শব্দগুলো যেন মরুভূমির ধু ধু প্রান্তরে হারিয়ে গেছে। সেগুলো খুঁজে আনার সাধ্যি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×