শয়তান বুড়ো হলেও শয়তানই থেকে যায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার ধূর্ততা আরও বাড়ে, ফন্দি ফিকির আরও গভীর হয়। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সে আরও পাকনা হয়ে ওঠে। মানুষকে বিপথে চালিত করার জন্য নানা ছলচাতুরীর আশ্রয় নেয়। সে শুধু ছায়ার মত দূরে থেকে নয়, বরং অনেক সময় মানুষের বেশ ধরে—বন্ধু, আত্মীয়, কিংবা শুভাকাঙ্ক্ষীর মুখোশ পরে মানুষের খুব কাছাকাছি এসে ধোঁকা দেয়। একসময়ে যাকে আপনজন ভেবে বিশ্বাস করা হয়, দেখা যায় সেই মানুষটাই শয়তানের আজ্ঞাবহ দোসর।
এইসব ছদ্মবেশী শয়তানেরা প্রথমে মানুষের ঈমান ও চরিত্রে আঘাত হানে। তারা সন্দেহের বীজ বপন করে, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে। ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ও নিষ্ঠা ধীরে ধীরে দুর্বল করে ফেলে। তারা কখনো আধুনিকতার নামে, কখনো যুক্তিবাদের মোড়কে, আবার কখনো মানবিকতার ভুয়া জিগির তুলে মানুষকে ধর্ম থেকে বিচ্যুত করার চেষ্টা করে।
আজকের দুনিয়ায় শয়তানের অন্যতম বড় অপকর্ম হচ্ছে ধর্মবিদ্বেষী একশ্রেণির চ্যালা-চামুন্ডা তৈরি করা। এই চক্রকে সে ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদ্গারে নিয়োজিত করেছে। তারা ধর্মীয় শিক্ষা, ইসলামী প্রতীক, মুসলমানদের রীতি-নীতি—সব কিছুর বিরুদ্ধাচরণ করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইসলাম নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে, নবী করিম (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করে, ধর্মীয় বিধানকে মধ্যযুগীয়, বেদুইনদের গালগল্প ও বর্বর আখ্যা দেয়। মূলত এরা নিজেরা যেমন বিভ্রান্ত, তেমনি অন্যদেরও পথভ্রষ্ট করার কাজে নিয়োজিত।
শয়তান কখনো একরূপে আসে না। সে নানা রঙে, নানা মুখোশে, নানা নামে হাজির হয়। কখনো সে বিজ্ঞানের নামে ধর্মকে অবজ্ঞা করে, কখনো আবার সংস্কৃতির নামে ধর্মকে পেছনে ফেলে দিতে চায়। মানুষের মধ্যে নফসকে উসকে দিয়ে সে পাপকে স্বাভাবিক করে তোলে, গোনাহকে সৌন্দর্যের মোড়কে উপস্থাপন করে। ধর্মের নামে বাড়াবাড়িতে লিপ্ত করেও শয়তান কিছু মানুষকে ধোঁকা দেয়। এরা ধর্মের নামে শিরক, বিদআত থেকে শুরু করে নানা কুসংস্কারে লিপ্ত হয়ে পথভ্রষ্ট হয়।
শয়তান আজ আর কেবল একজন অদৃশ্য প্রতিপক্ষ নয়। সে কখনো বন্ধুর মুখোশ পরে আসে, কখনো আত্মীয়ের স্নেহ-ভাষায় কথা বলে। কেউ আপনার পাশে দাঁড়িয়ে আপনাকে "স্বাধীনতার" নামে ধর্ম থেকে সরিয়ে দেয়, আবার কেউ "ভালোবাসা"র নামে পাপের পথে টেনে নেয়। কুরআনেও উল্লেখ আছে—"নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু, অতএব তোমরাও তাকে শত্রু হিসেবে গ্রহণ করো।” — সূরা ফাতির, আয়াত ৬
এই প্রকাশ্য শত্রু অনেক সময় অপ্রকাশ্য থাকে মানুষের চোখে, কিন্তু তার কাজ হয় প্রবল—বিশ্বাসের ভিত কাঁপিয়ে দেওয়ার মতো।
তাই আজকের বাস্তবতায় শয়তানের ছলনায় না পড়ে, আত্মরক্ষার জন্য সচেতন থাকা জরুরি। শয়তানের মুখোশ চিনে তাকে প্রতিহত করাই ঈমানদারের দায়িত্ব। কারণ, সে যতই অভিজ্ঞ আর পাকনা হোক না কেন, আল্লাহর নিকট শরণাপন্ন হলে তার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হবেই।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০২৫ সকাল ১১:৫১