মূল্যবোধ মানুষকে উন্নত চরিত্র গঠনে পথ দেখায়। মন্দ কাজ এবং আচরণ কে চিনতে শেখায়, অনাচার পাপাচার থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে। মূল্যবোধ সততা ও সৎ হতে উৎসারিত একটি আলোকিত প্রত্যয়- যা ব্যক্তিমানুষকে মানবিকবোধে উদ্বুদ্ধ করে তোলে। মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। ব্যক্তিগত চরিত্র গঠনে ভূমিকা রাখে
বর্তমানে আমাদের সমাজে চরম মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কথা শুনতেও দেখতে পাচ্ছি। সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনীতি ও রাজনীতির অবক্ষয়ের কারণ হিসাবে মূল্যবোধের চরম দৈন্যদশা কথা বলতেই হয়। দেশে দুর্নীতির প্রসার ও বিচারহীনতার কথা সাধারণ ঘটনা মাত্র। চাঁদাবাজি ,গোপনটর্চার সেল গঠন, ক্যাসিনো কালচার, মদ জুয়া ,ছাত্র নামধারী কলংকিত অছাত্রদের সীমাহীন ঔদ্ধত্বপূর্ণ আচরণ ,মারামরি ,এবং অন্যায়ভাবে দ্রুত বড়লোক হওয়ার প্রতিযোগিতা এখন সিংহভাগ মানুষের মাঝে চরমভাবে পরিলক্ষিত। আমাদের সমাজ চরম নৈরাজ্যে ও আত্মকেন্দ্রিকতার দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। সমাজে ও রাষ্ট্রে ন্যায়কে সরিয়ে বলা যায় ছুড়ে ফেলে অন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে। সুন্দর ভালো সৃজনশীলকে সরিয়ে মন্দ ,অনাচার ,খারাপ আচরণ জায়গা করে নিচ্ছে। সততাকে এখন বইয়ের পাতার রূপকথার মতো শোনায়। অসৎ ব্যক্তিকে সমাজে বুক ফুলিয়ে বীরের বেশে সদর্পে চলতে দেখি। বিচারের বানী নিভৃতে গুমরে গুমরে কাঁদে।বর্তমানে মূল্যবোধ ও মানবিকতার চরম অভাব সমাজকে এক অন্ধকার গহ্বরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে ।
মূল্যবোধ মানুষকে ভালো হতে শেখায়। মন্দকে চিনতে শেখায়, মন্দ থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে। মূল্যবোধ সততা ও সৎ হতে উৎসারিত বিবেকবোধসম্পন্ন একটি আলোকিত প্রত্যয়- যা ব্যক্তিকে মানবিকবোধে উজ্জীবিত করে। মানুষকে সত্য ও ন্যায়পথে পরিচালিত করে। বিশেষ করে, মানুষকে সৎবুদ্ধি ও মানবতার সেবায় উদ্বুদ্ধ করে। প্রশ্ন জাগে, তাহলে মূল্যবোধ কী? এককথায় বলা যায়, মূল্যবোধ হলো মানুষের সর্বজনীন আচরণ। সত্য, ন্যায়, ভালবাসা ও পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ই মূল্যবোধের বহিঃপ্রকাশ। এগুলো মানুষের মানবিক গুণ। এ মূল্যবোধ কালের আবর্তেও পরিবর্তন হয় না। অধিকাংশ সমাজ এ গুণগুলোকে, এ ভালো আচরণগুলোকে শাশ্বত হিসাবে লালন করে। এ মূল্যবোধ প্রতিটি সমাজে সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত।
সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্রমবিকাশে আরও কিছু সম্মতিসূচক কাজ- এ মূল্যবোধের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। বর্তমান সমাজে কিছু ধারণা যেমন- ন্যায়, দেশপ্রেম,সামাজিক বিচার, স্বাধীনতা, নাগরিকত্ব, শ্রমের মর্যাদা, ধৈর্যশীলতা, নারী ও বয়স্কদের প্রতি সম্মান এবং দরিদ্রদের প্রতি দয়া- এসবও সর্বজনীন মূল্যবোধের পড়ে বল বলে সর্বজনে বিবেচ্য। মানুষকে সম্প্রীতির মাঝে প্রশান্তিতে বসবাস ও বিকাশের জন্য এ মূল্যবোধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমাজ-সংসার কিংবা রাষ্ট্র বা জাতিতে জাতিতে কোন্দলের অন্যতম কারণ মূল্যবোধের অবক্ষয়। তাই মূল্যবোধের যে কোনো বিচ্যুতি সমাজে ভারসাম্যহীনতার জন্ম দেয়। মূল্যবোধহীনতা সমাজে অন্যায়, অত্যাচার বৃদ্ধি করে।নানা অশান্তি সৃষ্টি হয়। আমরা যদি সত্যি সত্যি ভালো ভালো সুন্দর নির্মলভাবে আমাদের জীবনকে সামনে এগিয়ে নিতে চাই, তাহলে সর্বজনীন মূল্যবোধে ফিরে যেতে হবে। মন্দ পথ পরিহার করে ন্যায়ের পথকে প্রশস্ত করতে হবে।
আমাদের সমাজে ‘নৈতিকতা’ কথাটি প্রায়ই ব্যবহৃত হয়। মানুষের ভালো কাজের সাথে নৈতিকতা শব্দটি ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত। এ নৈতিকতা আবার মূল্যবোধ থেকে উৎসারিত। নৈতিকতা বলতে ব্যবহার , ব্যক্তি চরিত্র এবং সঠিক আচরণ ,সমাজ সংসারের প্রতি দায়বদ্ধতা । নৈতিকতা বলতে সাধারণত আচরণ বিধিকে বোঝায়, যা আয়ত্ত করে একজন ব্যক্তি, দল বা সমাজ, সত্য ও মিথ্যাকে পার্থক্য করতে শেখে এবং যার দ্বারা সত্যকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া যায়।
জগতের জাগতিক কর্মযজ্ঞে ভালো ও মন্দ দুটো বিশেষণ ব্যবহৃত হয়। ভালো কাজ হলো যা বিভিন্ন আলোকিত গুণাবলী যেমন- মূল্যবোধ, সদ্গুণ, আদর্শ, ন্যায়বিচার, কল্যাণ ইত্যাদির সাথে সম্পর্কিত। অন্যদিকে মন্দ কাজ হলো ভালো কর্মগুলোর বা ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত অর্থবোধক।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ২:৫৩