somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ জোছনার ফুল

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



(১)
এখন মধ্যরাত। বাসার সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। শুধু অলকার চোখে ঘুম নেই্। সে চুপি চুপি বিছানা ছেড়ে তিনতলার ছাদে এসে অবাক হয়ে দেখলো সমস্ত চরাচর অপার্থিব চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে।।
কি যে মায়া!
শুনশাণ প্রকৃতি সাথে উথাল পাতাল জোছনা।
আহা!
এমন জোছনায় মন উদাস হয়, প্রাণ আকুলায়। কিন্তু অলকাকে এই সব তুচ্ছ মায়ার টান অগ্রাহ্য করতে হবে। নিজের সিদ্ধান্ত থেকে দুরে সরে গেলে হবে না। নিজ সিদ্ধান্তে অটল থাকতে হবে, যে কোন মূল্যেই। এই স্বার্থপর নিষ্ঠুর দুনিয়া তার জন্য না।
ভালোই হলো এমন জোছনা মেখে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করা ক'জনের ভাগ্যেই বা জোটে? অলকা ভাবলো।
সত্যি কি সে চলে যাবে? যাবেই তো। যে পৃথিবীতে তার জন্য কোন ভালোবাসা অবশিষ্ট নেই, কোন পিছু টান নেই, সেই পৃথিবীতে সে কেন থাকবে? কি লাভ থেকে? কার জন্য থাকবে? অভিমানে দু’চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে এলো অলকার।
না নেই কেউ নেই তার। এ নিষ্ঠুর পৃথিবীতে তার কোন আপন জন নেই। কেউ তাকে ভালোবাসে না।কেউ তার সাথে একটু ভালো মুখে কথা বলে না। সবাই সবকিছুতে তার দোষ খোঁজে, তাকেই দোষী করতে চায় অথচ তার তো কোন কিছুতে হাত নেই। তাহলে কেন এই অন্যায় অবিচার! কেন এই উতোর চাপান।
সে এই পৃথিবীতে অবাঞ্ছিত এবং অনাকাঙ্খিত। আচ্ছা সে যখন থাকবে না আর তখন কি কেউ তাকে মনে রাখবে? তার কথা কি কেউ ভাববে? ফেলবে কি দু’ফোটা চোখের জল?
মনে তো হয় না। তাকে যদি কেউ ভালেবাসতো।তাকে যদি বুঝতো। যথাযথ সম্মানটুকু দিত তাহলে তারা নিশ্চয় মনে রাখতো। নিশুতি রাতে মন কেমন করা ক্ষনে তাকে অবশ্যই জল ভরা চোখে তাকে স্মরণ করতো।
তার এই চলে যাওয়াতে বরং কেউ কেউ খুশি হবে, হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে। বলবে ঘাড়ের বোঝা কমলো। পথের কাঁটা দুর হলো ভালোই হলো।বলবে তো বলবে।সে ঠিক জানে।
আচ্ছা মা! মা কি তাকে মনে রাখবে?
মা তো তাকে উঠতে বসতে কথা শোনায়।কেলোটি, অপয়া, অলক্ষী কত কি যে বিশেষণে ভূষিত করে দিনমান।একে নিশ্চয় ভালোবাসা বলে না। তবে মায়ের কষ্টটাও সে বোঝে।তার পিঠাপিঠি আরও তিন বোন ধাই পাই বেড়ে উঠছে। এতগুলো মেয়েকে সুপাত্রস্থ করা কি চারটিখানি কথা ।তার উপর সে যখন বড় এবং সমাজের চোখে অসুন্দর। তখন নানা চিন্তা ভাবনায় হয়তো তার মেজাজ ঠিক থাকে না।
অসুন্দর, কালো, কুৎসিত এই কথাগুলো শুনতে শুনতে অলকার কান ঝালাপালা হয়ে গেছে জ্ঞান হওয়া অবধি।
জ্ঞান হ্যাঁ জ্ঞান বুদ্ধিতে সে বরাবরই দূর্বল সরল সাদাসিধা। পড়াশোনায় একেবারে ভালো না। কি করবে তার তো পড়তে ভালোই লাগে না।পাঠ্য বইয়ের অনেক কিছু সে বোঝেও না । বুঝিয়ে দেওয়ারও কেউ নেই। প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়া বা পড়ানোর সাধ্য নেই তার বা তার পরিবারের।
পড়া পারে না বলে,বোঝে না বলে স্কুলে কতবার যে গাধা গরু ইত্যাদি শুনতে হয়েছে তার শেষ নেই। অপমান অপদস্ত হওয়াই যেন তার নিয়তি। না হলে ফাইনাল টেস্টে এত আন্তরিক চেষ্টা স্বত্বেও দুই বিষয়ে ফেল হবে কেন।তার জন্য স্কুলে কম হেয় হতে হয় নি।অবশেষে বিশেষ ব্যবস্থায় এবং কিছু শর্তে তার এস এস সি পরীক্ষা দেওয়া হচ্ছে। কোন কারণে যদি ফলাফল বিপর্যয় ঘটে তবে কি যে হবে ভগবানই জানে।
ইদানীং তার বিয়ের চেষ্টা হচ্ছে। বেশি তোড়জোড়ের কারণ তার পিঠাপিঠি আরও তিন বোন।সবাই দ্রুত বিবাহ যোগ্যা হয়ে উঠছে।
পাত্র পক্ষ কোন রাখঢাক না রেখে বার দশেক তাকে বাতিল ঘোষণা করেছে। এ যে কত বড় অপমানের তা শুধু ভুক্তভোগী ই জানে।
সে চমৎকার রাঁধে,সুরেলা গলায় হান গাইতে পারে।কত যত্নে সেলাইয়ে ফোঁড় তোলে এগুলো কি কোন বৈশিষ্ট্য নয়। এগুলো কি কোন গুণ নয়। এসবের কি কোন মূল্য নেই। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে অলকা।
নানান কষ্টের কালো মেঘ ক্রমে ক্রমে জমে জমে আজ তা বরষণ মেঘে পরিণত হয়েছে। হ্যাঁ সে এখন ঝরে যাবার অপেক্ষায়। জল হয়ে গলে যাবার অপেক্ষায়।
পঞ্চভূতে বিলীন হবার অপেক্ষায়।
আসলে কেউ তাকে ভালোবাসে না কেউ যে তার কথা ভাবে ই না। না হলে মা আজ ওভাবে বলতে পারে
তুই মর! তুই মর!! তুই মর!!! তুই মরলে আমার শান্তি। কথায় আছে "যারে দেখতে নারি, তার চলন বাঁকা"। অলকার দশা হয়েছে তাই।
আচ্ছা সমীরদা কি তাকে মনে রাখবে? তার কথা ভাববে কোন অবসরে? মনে তো হয় না। তাকে যদি বিন্দুমাত্র মূল্য দিতো ছেলেটা তাহলে সামান্য একটা প্রেম পত্রের জন্য জনে জনে দেখিয়ে এমন অপদস্ত করতে পারতো না। না হয় সে কিছু না বুঝে মনের আবেগে তাকে একটা প্রেমপত্র দিয়েছিল তাই বলে সেই চিঠি সকলকে দেখিয়ে বেড়াতে হবে?
কি লজ্জা! কি লজ্জা!!
ভালোলাগা ,ভালোবাসা পাপ এ কথা জানা ছিল না তার।বাবার মারের ব্যথা এখনও টের পায় সে।
কারও ভালোবাসার দরকার নেই তার। সে একটা কাগজের ফুল। কোথায় পাবে সে সুগন্ধ?
মেয়ে হয়ে জন্ম নেয়া কি পাপ? বিশেষ করে রঙ কালো, বুদ্ধিতে সহজ সরল হয় যে মেয়ে!
অলকা চকচকে জোছনায় ছাদের কিনারায় এসে দাড়ালো।আর মাত্র কয়েক সেকেন্ড। একেই বলে বুঝি জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ! অদ্ভুত একটা অনুভুতি হচ্ছে। তিনতলা থেকে ঝাপ দিলেই মিলবে মুক্তি। আহ মুক্তি। মিশে যাবে অসীমে। চাইলেই কেউ আর তাকে অপমান করতে পারবে না।
শেষ হবে তীব্র দহন জ্বালার দিন।মিলবে গ্লানিময় জীবন থেকে মুক্তি।
কেউ আর তাকে মা কালি ডাকবে না। অলকা চোখ বুঝলো তার আগে শেষ বারের মত অদ্ভুত সুন্দর পৃথিবীটার মায়াময় জোছনাকে দেখে নিলো একবার।
এমন চাঁদের আলো মরি যদি সেও ভালো।.....
(২)
-অলকা! অলকা!!
কে ডাকে? কে? সে কি মারা গেছে? মৃত্যুর ওপার থেকে কেউ কি তাকে ডাকছে?
-অলকা! অলকা থামো। কি করছো কি? সরে এসো সরে এসো বলছি।
কন্ঠটা চেনা চেনা। কে ডাকে ? থমকে গেল অলকা।
সমীর পাশের ছাদ থেকে একছুটে এসে হ্যাচকা টানে অলকাকে সরিয়ে আনলো ছাদের কিনারা থেকে এবং সজোরে চড় কষে দিল গালে।
অলকা দ্বিগুণ জোরে হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলো, বেশ জোরে বলে উঠলো
- ছাড়ো, ছাড়ো আমার হাত।
- তুই এটা করতে পারিস না অলকা।
- কি করতে পারি না?কি বলতে চাও তুমি?
- তুই আত্মহত্যা করতে যাচ্ছিলি।
- আমার যা খুশি করবো।তাতে তোমার কি?
আহত হলো সমীর
- আমার কিছু না!!
- পথ ছাড়ো তো আমার হাতে সময় নেই এত অপমান করেও তোমার সাধ মেটে নি এখানে এসেছো আরও অপমান করতে? আমি কি একটু শান্তিতে মরতেও পারনো না।এটুকু অধিকার আমার নেই।
- এত অভিমান তোর বুকে কবে কবে জমা হলো অলকা? কিছুই তো বুঝিনি।
- আমায় ছাড়ো তুমি, তোমার কাজে তুমি যাও সমীরদা। আমি তোমার কেউ না। তুলি বা সোহেলী তোমায় ভালো রাখবে।ওরা রুপে গুনে বিদ্যা বুদ্ধিতে অনন্য। তোমাকে সুখে রাখবে।
- এত অভিমান তোর বুকে কবে কবে জমা হলো,বল আমাকে বল ।
- আমার কোন অভিমান নেই কারও প্রতি, কোন অভিযোগও নেই।তুমি যাও তো যাও।
- আমার উপর বুঝি খুব রাগ হয়েছে? তাই এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছিস।
- কারও উপর কোন রাগ নেই আমার বলছি তো রাত বাড়ছে নিজের কাজে যাও।এভাবে কেউ দেখলে তোমার বদনাম হবে।
- তুই আমার জন্য এত ভাবিস।
- কেন আমায় বিরক্ত করছো যাও তো যাও।
- আমি তোকে মরতে দিতে পারি না।
- কেন আমি তোমার কে? এত দায় কিসের তোমার? কোন সম্পর্কের দোহাই দিয়ে তুমি এসব বলছো? আমার অপমানেই তে তোমার সুখ। আমিই তো পথের কাঁটা।
- খুব অভিমান হয়েছে আমার প্রতি।
- আমি বুঝি মানুষ না। আমার বুঝি মন বলে কিছু থাকতে নেই?
- আমার ভুল হয়েছে বড় একটা ভুল হয়েছে।
- ও তোমার মন ভোলানো কথা।
- একটা শেষ সুযোগ দে আমায়, একটা সুযোগ। দিবি না?
অলকা পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো সমীরের দিকে।সেই চোখের মায়া তার দৃষ্টি আটকে গেলো।সেই চোখে শুধু ভালোবাসা। ভালোবাসার শক্তি অসীম। মুহুর্তে অলকার সব মান অভিমান দুঃখ কষ্ট ধুয়ে মুছে জল গেল।সে নিমেষে নিজের মুখ লুকালো সমীরের লোমশ বুকে।
সমীর বলল
- ভাগ্যিস ঘুম আসছিল না বলে ছাদে এসেছিলাম একটা বিড়ি ধরাতে।না হলে কি যে হতো। আমি ভাবতে পারছি না।
- এ্যাই শোন ওসব বিড়ি খাওয়া বাদ দিতে হবে।
- বাবা! ঠিক আছে ঠিক আছে!! মহারানির আদেশ বলে কথা।
সেই মুহুর্তে ভরা জোছনায়,সমস্ত চরাচর ভেসে যেতে লাগলো।আর জোছনাগুলো ফুল হয়ে ঝরতে লাগলো অবিরাম।

© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
সবাইকে বসন্তের শুভেচ্ছা।


সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৪:৫১
১০টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গৃহবধূ থেকে প্রধানমন্ত্রী; অভিভাবক শূন্য হলো বাংলাদেশ |

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১২


খালেদা জিয়া। ইস্পাতসম বজ্রকঠিন দেশপ্রেমের নাম খালেদা জিয়া। যিনি ভালো বেসেছেন দেশকে, নিজের জীবনের চেয়েও দেশকে ভালো বেসেছেন। দেশের বাহিরে যার নেই কোন লুকানো সম্পদ। নেই বাড়ি, গাড়ি অথবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৪



ইয়ে মানে বছর শেষ। ২০২৫ সাল বিদায় নিচ্ছে । তা আপনার কাছে ২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি ?


আমার কাছে সেরা মশকরা হচ্ছে- এনসিপির জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করা।

আরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেগম খালেদা জিয়াঃ এক দৃঢ়চেতা, সাহসী অধ্যায়ের সমাপ্তি

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭



প্রিয় ব্লগার,
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া আর আমাদের মাঝে নেই, ইন্না লিল্লাহি ওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু রাজনীতির মাঠে বিরাট শূন্যতা

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৯

 
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়া এক উল্লেখযোগ্য চরিত্র। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপির টালমাটাল পরিস্থিতিতে তিনি দলটির হাল ধরেন। সেনানিবাসে গড়ে উঠা দলটাকে রাজপথে বেড়ে উঠতে গৃহবধূ থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খালেদা জিয়া মরিয়া প্রমাণ করিলেন , তিনি মরেন নাই ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৮


বেগম খালেদা জিয়া মারা গেছেন। এই খবরে জাতি শোকাহত। কিন্তু একদল মানুষ আছে যারা উনার মৃত্যুর পরেও নিজেদের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থে তার মৃত্যু নিয়ে ঘৃণ্য মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। বদনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×