somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যবসা পরিকল্পনায় পে য়াজের ভান্ডারে যেভাবে পেয়েছি পেঁয়াজের দেখাঃ যা জানা লাগবেই

২২ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পেঁয়াজের খোঁজে পাবনার কাশিনাথপুর বাজারে

ট্রেনে পরিচয় হলো পাবনার স্থানীয় এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি জানালেন যে চাটমোহর স্টেশন থেকে পাবনায় তাড়াতাড়ি যাওয়া যায়। আমার টিকেট ছিলো ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশন পর্যন্ত। সেটা চাটমোহর থেকে আরো ৩০-৪০ মিনিট দূর। তাই, চাটমোহরেই নামার সিদ্ধান্ত নিলাম।

স্টেশনে নেমে বুঝতে পারলাম, বেশ ঠান্ডা পড়েছে। সেইখান থেকে সি,এন,জি করে পাবনায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় ৪০-৫০ মিনিট লেগে গেলো। রুপকথা’র গলিতে যখন হোটেলে উঠলাম, ততক্ষণে ঠান্ডা লেগে কাশছি। আশে-পাশের সব দোকান খোলা। যদিও রাত তখন বেজে ১১.৩০ টা।

স্থানীয় এক চায়নিজ কাম বাংলা খাবারের রেস্টুরেন্টে ডিনার সারলাম। হোটেলে এসে পরের দিনের প্ল্যান সাজাতে সাজাতে ব্যক্তিগত দরকারী কাজগুলোও করছি, এই সময় খেয়াল হলো, পরের দিন করমজা হাঁটে গিয়ে লাভ হবে না।

পাবনায় অনেকগুলো হাঁট বসলেও, বড় মাত্র চারটি- করমজা, আতাইকুলী, কাশিনাথপুর আর হাজির হাঁট। এগুলোর মাঝে, করমজা’র হাঁটেই সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উঠে। এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজের হাঁট।

করমজা হাঁট বসে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার। আতাইকুলি’রটা রবি ও বুধবার, হাজির হাঁট শুক্রবার আর কাশিনাথপুর রবি ও বৃহস্পতিবার। তাই, কাশিনাথপুর হাঁটে যাওয়াই ঠিক করলাম।

কাশিনাথপুর হাঁটে যেভাবে পৌছালামঃ

সকালে উঠেই চটজলদি নাস্তাটা সেরে নিলাম। তারপর, অটোরিক্সায় চড়ে সোজা বাস টার্মিনাল। এখানে বলে নেওয়া উচিৎ যে, পাবনা শহরে যত রিক্সা দেখেছি, সবগুলোতেই মোটর লাগানো। বাস টার্মিনালে আসতে ৪০ টাকা লাগলো। এরপরে, সি,এন,জি করে বেড়া হয়ে কাশিনাথপুর বাজার।

বাজারে এসেই দেখলাম, হাঁট বসেছে। পেঁয়াজ চাষীদের সাথে সাথে সেখানে সবজী’র চাষীরা উপস্থিত। বেপারীরা দাম হাঁকাচ্ছেন, ওদিকে চাষীরাও নিজেদের দাম বলছেন, সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার। সেই হুলুস্থুলের মাঝেই আমি এক পেঁয়াজ চাষীর কাছে পৌঁছালাম।



জীবনে প্রথমবারের মতো পেঁয়াজ চাষী’র সাথে কথোপকথনঃ

আগে অনেক চাষী’র সাথে কথা হলেও কখনো পেঁয়াজ চাষী’র সাথে দেখা বা কথা হয়নি। তাই, কিছুটা রোমাঞ্চিত বোধ করলাম। মনে মনে দারুণ একটা ফাইটের প্রস্তুতি নিয়ে লোকটার দিকে তাকালাম।

৫ ফুট ৩-৪ ইঞ্চি হবে লোকটার উচ্চতা। শুকনো চেহারা। স্বাস্থ্যও খুব একটা ভালো না। এই মানুষটাই তাহলে সেই পেঁয়াজ চাষীদের একজন যাদের কারণে পেঁয়াজের দাম এমন বুকডন দিচ্ছে! চাষীটার দিকে তাকিয়ে কিছুটা হতাশ হলাম মনে মনে।

সামনে এগিয়ে এবার মুখোমুখি দাঁড়ালাম। ‘’ভাই, পেঁয়াজের দাম কত?’’

‘’ব্যাপারীরা তো ৭০০০ টাকা বলে গেলো।‘’ এক গাল হাসি দিয়ে চাষীটার উত্তর।
‘’আপনার বস্তায় কয় কেজি?’’
‘’লোকটার উত্তর ৪১ কেজি আছে। ১ কেজির দাম রাখবো না। আপনের জন্যে ফ্রি।‘’

আমার মাথা ঘুরে গেলো! বলে কি ব্যাটা! এত্তো দাম! তার বস্তার দিকে তাকালাম। ছোট ছোট পেঁয়াজ। এগুলো জন্যে এতো চাইছে! সরে গেলাম লোকটার কাছ থেকে কোন কিছু না বলে।

এই ভাবে কয়েক জনের কাছে গিয়ে গিয়ে দাম জিজ্ঞাসা করলাম বা বেপারীরা যখন দাম হাঁকাচ্ছে তখন তাদের দাম শুনছিলাম। কয়েক ঘণ্টার মাঝেই দাম পড়ে গেলো। ৫০-৭০ কেজির বস্তা ৬৫০০-৭০০০ টাকায় বিক্রি হলো আমার চোখের সামনেই। বুঝে গেলাম, এখানে দাম কেমন হবে।

পেঁয়াজ ঢাকায় নিয়ে আসার ধারণা লাভঃ


এবারে গেলাম স্থান ট্রাক মালিক সমিতি’র অফিসে। সেখানে কথা হলো সমিতি’র সেক্রেটারী’র বলে পরিচয় দেওয়া একজন ব্যক্তি’র সাথে। পাশে একজন ট্রাক মালিক।

সেক্রেটারী সাহেব জানালেন যে, তিন ধরণের ট্রাকে পেঁয়াজ ঢাকায় যায়- ১ টন, ৩ টন আর ৫ টন। ট্রাকের ভাড়া নির্ধারিত হয় দুই ভাবে- ১) বস্তা হিসেবে, অথবা, ২) টাক লোড হিসেবে।

বস্তা হিসেবে ট্রাক নিলে প্রতি বস্তার জন্যে ট্রাক ভাড়া ৯০ টাকা। আর, পুরো ট্রাক ভাড়া করলে, ১ টনের জন্যে ৯০০০ টাকা যাতে ৫০-৬০ বস্তা ধরবে, ৩ টনের জন্যে ১০০০০ টাকা যাতে ১৬০ বস্তা ধরবে, আর, ৫ টনী ট্রাকের জন্যে ১৫০০০ টাকা যাতে ২২০ বস্তা পেঁয়াজ ধরবে। এখানে বলে নেওয়া ভালো যে, প্রতিটি বস্তার ওজন ৬৫-৭০ কেজি ধরে এই হিসাব।



ট্রাক ভাড়াই শেষ নয়ঃ

চাষীদের কাছ থেকে পেঁয়াজ কিনেই ট্রাকে তুলে ফেলা যায় না। আড়তদারকে দিয়ে নেটের বস্তায় ভরে শ্রমিক দিয়ে ট্রাকে তুলতে হয়। আবার, ট্রাক ঢাকায় পৌঁছানোর পরে শ্রমিক দিয়ে ট্রাক হতে আনলোড করা লাগে। এইজন্যে, লাগে আলাদা খরচ। তারপর রয়েছে ঢাকায় এনে আড়তদারকে কমিশন। তারপর, সেইখান থেকে বিভিন্ন ছোট ছোট দোকান নিয়ে যাওয়া হয় পেঁয়াজ। এরপরে, দোকানদাররা নিজেদের লাভ রেখে পেঁয়াজ বিক্রি করেন। এইসব মিলেই পেঁয়াজ বা অন্যান্য খাদ্যের মূল্য নির্ধারিত হয়।

৭০ কেজির একেকটা নেটের মূল্য ২০ টাকা। স্থানীয় দোকানেই তা পাওয়া যায়। শ্রমিক ভাড়া ও আরতের খাজনা ৩৫ টাকা/বস্তা। আবার, আনলোডের সময় ৪-৫ টাকা/বস্তা। ঢাকার আড়তে বিক্রির উপর আবারো ৭-৮% খাজনা।

তাহলে দেখা যাচ্ছে, ভোক্তার কাছে আসার আগে পেঁয়াজের ভ্যেলু চেইন অনেকটা এরকমঃ

চাষী-- বেপারী-- ঢাকার বাইরের আড়তদার-- ট্রাক মালিক-- ঢাকার আড়তদার -- দোকানদার

এভাবে করে, একেকটি বস্তা ঢাকা পর্যন্ত আসতে প্রায় ১৫০ টাকা//বস্তা পড়ে যায়। অর্থাৎ, ৭০ কেজির বস্তায় ট্রান্সপোর্ট ও অন্যান্য খরচ মিলে ১৫০ টাকা হলে প্রত্যেক কেজিতে ২.১০ টাকা। আর, ঢাকা’র আড়তে’র খাজনা প্রায় ৭টাকা/কেজি।

এভাবেই পেঁয়াজের মূল্য নির্ধারিত হচ্ছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে। আপনি পেঁয়াজ ছাড়া অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী (যেমন- শাকসবজি) নিয়ে এলেও এই একই ভাবে মূল্য নির্ধারিত হয়। এই সম্পর্কে যে কোন তথ্যের জন্যে কৃষি তথ্য অধিদপ্তর রয়েছে। আপনি সেইখান থেকে তথ্য নিতে পারেন। এছাড়া, এই ব্লগার তো রয়েছেনই।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৩৮
১১টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×