কাজী নজরুল ইসলাম আজ বেঁচে থাকলে তাঁর গানের কথা ঘুরিয়ে হয়ত লিখতেন -
তোমার হাতে পিঁয়াজ মালা
আমার গলে পরালে...
এ যুগের সুনীল, আল মাহমুদরা কি জানতেন এ দেশে পিঁয়াজ নিয়েও একদিন কবিতা হবে, গান হবে, গল্প, নাটক লিখা হবে । সারা বাংলাদেশে পিঁয়াজ এখন ভাইরাল । হিরো আর কাকে বলে !
মাত্র কয়দিন আগে নির্দোষ আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হলো, না ফেরার দেশে । তখন সবার চোখই যেন হয়ে গিয়েছিল এক একটা বিষন্ন নদী, আর সে নদীতে কষ্টেরা ডুব-সাঁতার পাড়ল কিছুদিন । এখন সবার অপেক্ষা অন্ধ চোখে একটা ঐতিহাসিক বিচারের রায় দেখার, সে রায়-এ যদি বিশ্বজিৎ, সাগর-রুনিসহ যুগের হাতে খুন হওয়া কিংবা গুম হওয়া অসহায় আত্মরা কিছুটা শান্তি পায়, তবে মন্দ কি ? শুধু রাষ্ট্রপতি যেন তার নিজ সন্তানের বেলায় দয়া ও মহানুভবতা থেকে বিরত থাকে মেরুদন্ড শক্ত করে ।
যাইহোক, বরগুনার মৃত্যুকে আমরা কিছুতেই হত্যাকান্ড বলতে পারিনা, কারণ ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে আজরাইলও তাদের জান কবজে অনিহা জানায় । তখন নিতান্ত বাধ্য হয়ে পুলিশকে সে দায়িত্ব পালন করতে হয় অনেকটা রাষ্ট্রীয় আদেশের উপর শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রথমে আকাশে গুলি করে এবং পরে বুকে গুলি করে । এ ক্ষেত্রে লাশের সংখ্যা তুমি কম-বেশি করতেই পারো, সে অধিকার তোমার আছে ।
কথায় বলে বাঙালি দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝেনা । আমরা বৃটিশদের তৈরী করা রেলপথ পেয়েছি একেবারে বিনা শ্রমে । তাই ঘন ঘন এ্যাক্সিডেন্ট করছি তাদের ঋণ শোধ করতে আর মনে মনে গালি দিচ্ছি, ব্যাটা তোমরা ট্রেন লাইন দিয়েছ, অথচ ড্রাইভারকে শিখিয়ে দিয়ে যাওনি ঘুমিয়ে কিভাবে ট্রেন চালাতে হয় । তাহলে ট্রেনে চেপে হতভাগ্য কিছু মানুষকে তো চিরতরে আকাশ ভ্রমনে যেতে হত না ।
আমাদের পূর্ব পুরুষরা আমাদের ভেতর ধৈর্যের একটা মেশিন ফিট করে দিয়ে গেছে । তাই আকাশের দিকে তাকিয়ে আমরা একটার পর একটা সব শোক কাটিয়ে উঠতে পারি এবং দু'শ চল্লিশ টাকা কেজি দরের পিঁয়াজ কিনেও অনায়াশে গান, গল্প, কবিতা লিখতে পারি । বাস্তবিক কোন প্রতিবাদ করিনা । আর এর সুযোগ নিয়ে ডোন্ট কেয়ার সরকার বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আমাদের বলতে পারে, সাত'শ টাকা কেজি গরুর মাংস খেতে পারলে দু,শ চল্লিশ টাকা কেজি পিঁয়াজ কেন কিনতে পারবে না ?
আমাদের মাথার উপর ছাদ না থাকলেও এখনো আকাশ আছে । ভেংগে তো পড়েনি, পড়েছে কি ?
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৩১