দু'শ আশির ঘর ছাড়িয়ে পিঁয়াজ যখন তিন'শ ক্রস করে তখন আমাদের পিঁয়াজ মন্ত্রী একটা দাওয়ায় দিয়েছিল, তিনি পিঁয়াজ ছাড়া বাইশ রকমের রান্না করতে পারে ।
তার আগে অবশ্য পিঁয়াজ ক্ষেত মাড়িয়ে এসেছে গণভবনের টিকটক ।
ভাবলাম, পিঁয়াজ ছাড়া রান্নার পদ্ধতিটা যদিসত্যিই শেখা যায় তাহলে মাসে অন্তত দেড় হাজার টাকা সেভ হবে, কিন্তু কার কাছ থেকে শিখব ? অনেক ভেবে চিন্তে শেষে এক ঠাকুরের আশীর্বাদ নিয়ে গেলাম একজন বয়স্কা রক্ষণশীল হিন্দু রমনীর কাছে, তারপর বললাম, মা আমি এক হতভাগ্য দীন দরিদ্র মানুষ, পিঁয়াজ ছাড়া রান্নার পদ্ধতিটা কি আমাকে একটু শেখানো যায় ? তিনি বললেন, আগে বলো পিঁয়াজের দাম কমলে গরুর মাংস খাওয়া বাদ দেবে । আমি বললাম, আগেই বলেছি আমি এক হতভাগ্য দীন দরিদ্র মানুষ, গরুর গোসত কেনার সামর্থ আমার একেবারেই নেই মা । উনি একটু চিন্তা করে বললেন, এখন বাজারে গিয়ে দ্যাখ, পিঁয়াজের দাম কমে গেছে ।
আমি বললাম, কিন্তু আমার পিঁয়াজ ছাড়া রান্নার পদ্ধতিটা...
- রাখো তোমার রান্নার পদ্ধতি, ওটা আমাদের দীর্ঘ দিনের সাধনার ফসল, তোমাকে শেখানো যাবেনা ।
এরপর আমি অনেকটা দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বাজারে এসে দেখি, সত্যিই পিঁয়াজের দাম কমে দু'শ টাকার নিচে চলে এসেছে । আমি আবার একটু একটু করে পিঁয়াজি হতে শুরু করলাম ।
এর তিন দিন পর বাজারে গিয়ে তো অবাক, পিঁয়াজ আবার পূর্বের দামে চলে এসেছে । অবশেষে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, গাজর, আদা, রসুনের দোকান ঘুরে খালি ব্যাগ, ক্লান্ত শরীর নিয়ে নিরস মুখে বাজারের এক কোণে গিয়ে দাঁড়ালাম । হঠাৎ পাশে থেকে একজন বলল, ভাই আমার মনে হয় কয়দিন আগের বুলবুইল্লা বাজারটাকে একেবারে চুলবুল করে দিয়ে গেছে । আমি বললাম, ভাই তাতো বুঝলাম, কিন্তু শুনছি পিঁয়াজ তো আমদানি হচ্ছে জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষ দিয়ে; তারপরও দাম কেন আবার বাড়ল ?
উনি একটু মুচকি হেসে বললেন, আরে ভাই এই সহজ হিসেবটা বুঝলেন না, পিঁয়াজ তো আমদানি করছে মামুরা; তাতে লোকশান হলে মামীরা কি ঘরে ঢুকতে দেবে ? কেনা দামের চেয়ে চারগুন লাভ করার সুযোগ না দিলে মালয়শিয়া, সিংগাপুরে বাড়ি হবে ক্যামনে ?
আমি লোকটার মুখের দিকে চেয়ে আস্তে করে বললাম- ও, আচ্ছা ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:২১