somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপারেশন তালপট্টি ও একটি স্বপ্ন

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[ পূর্ব কথাঃ ৮ জুলাই ২০১৪, আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমা মামলায় বাংলাদেশ জয় লাভ করে ২৫৬০২ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ১৯৪৬৭ বর্গকিলোমিটার পেয়েছিল, বাকি অংশ পায় ভারত । ভারতের প্রাপ্ত অংশের মধ্যে ছিল তালপট্টি নামের এক দ্বীপ যেটা সেই সময় পানির নিচে হারিয়ে যায় । তাই বাংলাদেশের কতিপয় লোক ছাড়া আর কেউ তেমন ভাবেনি ব্যাপারটা নিয়ে । কিন্তু ২০২৮ সালে এই দ্বীপটাই অনেক আলোচিত হয়ে উঠে । আলৌকিক ভাবে এই দ্বীপ এখন পানির উপরে আর তাই নয় এর আয়তন আগে ১০ হাজার বর্গমিটার হলেও এখন ৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার । ২০২২ সালে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে আগের দেওয়া আন্তর্জাতিক আদালতের রায় এখন মেনে চলা হয় না, যে কারণে সমুদ্রসীমায় জোর যার মুল্লুক তার ধরণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত । ]

চট্টগ্রামের বিএনএস ইশা খাঁ ঘাটির কনফারেন্স রুমে বসে আছি আমি । বসে বসে কিছু করার পাচ্ছি না । আজকে আমার ছুটির দিন ছিল কিন্তু এরিয়া কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল কালকে রাতে ফোন করে বললেন, " কমান্ডার, কালকে এক জরুরী মিটিং আছে । তোমাকে আসতে হবে । " মেজাজটা একটু খারাপ হয়ে গেলো । সম্প্রতি তালপট্টি জেগে উঠায় ভারতের সাথে আবার সম্পর্কের অবনতি দেখা দিয়েছে । বাংলাদেশের অনুরোধ সত্ত্বেও ভারত তালপট্টিতে তাদের যুদ্ধজাহাজ পাঠাইছে । বাংলাদেশের বিএনএস পদ্মা ও মেঘনা সেই দিকে গেলেও ভারতের যুদ্ধজাহাজ থেকে গোলা বর্ষণ করা হয় । সেই কারণেই আজকের মিটিং । মিটিং আসলে এখানকার উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের সাথে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর । মনটাই খারাপ হয়ে গেলো । ইচ্ছা ছিলো ঢাকায় গিয়ে মায়ের সাথে দেখা করবো । কিন্তু এখন মনে হয় সেটা আর সম্ভব নয় । আমাকে ডাকার কারণ টাও অনুমেয় । দেশের নির্মিত ডেস্ট্রয়ার বিএনএস খালিদ-বিন-ওয়ালিদ নিয়ে আমাকে তালপট্টি অভিমুখে রওনা দিতে হবে । বিএনএস খালিদ-বিন-ওয়ালিদ দেশের সবচেয়ে আধুনিক ও শক্তিশালী যুদ্ধজাহাজ । আর আমি সেই জাহাজের কমান্ডার । রুমে সবাই আলোচনায় ব্যস্ত । সেই দিকে আমার এখন মনোযোগ নেই ।

আমি ভাবছি আমার কথা । আফরিনকে কথা দিয়েছিলাম ওকে ঢাকায় নিয়ে যাবো । ওর ছোট ভাইটা দেশে এসেছে, এক সপ্তাহ পরে আবার চলে যাবে । মেয়েটা জীবন সঙ্গী হিসেবে অনেক ভালো । কোন কিছু সহজে আবদার করে না । কিন্তু এইবার একটা আবদার করে বসলো । আর এইবারই কিনা ঐটা পূর্ণ করতে পারবো না । নিজেকে নিজের কাছেই ছোট মনে হচ্ছে । জানি আমার দায়িত্বের কথা শুনলে ও সহজেই হাসিমুখে মেনে নিবে কিন্তু আমার নিজের কাছেই যে খারাপ লাগছে ।

রিয়ার অ্যাডমিরাল আজাদ স্যারের ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে এলাম । দেখলাম রুমের প্রায় সবাই আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে । স্যার খুব দ্রুত কাজের কথায় গিয়ে বললেন, " কমান্ডার বিএনএস খালিদ-বিন-ওয়ালিদ নিয়ে তুমি যাবা । তোমার সাথে বিএনএস বঙ্গবন্ধু ও সমুদ্রজয় নিয়ে যাবে লে.কমান্ডার বাধন আর নাজমুল । এছাড়াও যদি আকাশ থেকে ব্যাক-আপের দরকার হয় তাহলে প্রস্তুত আছে উইং কমান্ডার তাশফিকের নেতৃত্বাধীন তিন প্লাটুন বিমান সেনা, সাথে ১৮টি যুদ্ধ বিমান । " তাশফিক স্কুল জীবন থেকেই আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন ।

- কালকেই রওনা দিতে হবে তোমার । সব ডিটেইলস এই ফাইলে রয়েছে । আর কোন প্রশ্ন ?
- না স্যার ।
- ওকে দেন অল দা বেস্ট কমান্ডার ।
- থ্যাঙ্ক ইউ স্যার ।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী মহোদয় স্বয়ং এগিয়ে এসে আমাকে শুভকামনা জানালেন আর বললেন ভারতের সাথে আমাদের খামোখা লাগতে যাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই কিন্তু ওদের বুঝানো দরকার এই বাংলাদেশ আর বিশ্বযুদ্ধের আগের বাংলাদেশ এক নয় । আমি কেবল একটা হাসি দিয়ে সম্মতি জানিয়ে বের হয় আসলাম । ভারতের সক্ষমতা আমার জানা আছে । ভালো করেই জানি বিএনএস খালিদ-বিন-ওয়ালিদের সমকক্ষ জাহাজ ওদের নেই । তবে এই মিশনে এত শক্তিশালী জাহাজ পাঠানোটা আমার কাছে হাস্যকর মনে হচ্ছে । ব্যাপারটা এমন যে মশা মারতে কামান দাগা হচ্ছে । এমন যদি হতো তালপট্টিতে ভারতের ডেস্ট্রয়ার গিয়েছে তাহলে বুঝতাম, সাধারণ কয়েকটা টহল জাহাজের জন্য এত দক্ষ-যজ্ঞ !!

যাই হোক সেনার জন্য অর্ডার ইস অর্ডার । তাই পরদিন সকালেই আমাদের নৌ-বহর রওনা দিলো । বিদায়ের আগে আফরিনের একটা চুম্বন সবসমেই আমার পাওনা । মনের ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ দিলো সেটা । তালপট্টি অভিমুখে এগিয়ে চললো আমাদের নৌ-বহর ।

এরই মধ্যে খবর পেয়ে ভারতীয় নৌ-বাহিনী ও তাদের ডেস্ট্রয়ার পাঠিয়েছে । তবে আমার ওই ব্যাপারে চিন্তা নেই খুব একটা । শক্তির দিক দিয়ে খালিদ-বিন-ওয়ালিদের তুলনা নেই । ভারতীয়রাও সেটা ভালো করেই জানে । তালপট্টি থেকে কিইছু দূরে গিয়ে আমাদের বহরে যোগ দিলো বিএনএস পদ্মা ও যমুনা । ৫টি জাহাজের সমন্বয়ে গঠিত নৌ-বহর এগিয়ে চললো তালপট্টি অভিমুখে । রেডিওতে মেসেজ দিয়ে সতর্ক করলো ভারতীয় নৌবাহিনী । ওইসবে আমার ভ্রূক্ষেপ নেই । বিএনএস পদ্মার কমান্ডারকে নির্দেশ দিলাম এগিয়ে যাওয়ার জন্য । সন্তর্পণে এগিয়ে গেলো পদ্মা । এইবার গর্জে উঠলো ভারতীয় জাহাজ আইএনএস দূর্গার কামান । পদ্মার ঠিক সামনে এসে গোলাটা পড়লো । বুঝলাম এত সহজে পিছু হটবে না ওরা । বাধনকে নির্দেশ দিতেই গর্জে উঠলো বিএনএস বঙ্গবন্ধুর শক্তিশালী কামান । গোলাটা ওদের ঠিক সামনেই পড়লো । এইভাবে কিছুক্ষণ গোলা নিক্ষেপ হতে থাকলো । এক পর্যায়ে গোলার আঘাতে প্রচন্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিএসএস পদ্মা । সঙ্গে সঙ্গেই মিসাইল ফায়ারিং এর অর্ডার দেই । এইবার আক্রমণ করে বিএনএস খাইলদ-বিন-ওয়ালিদ । শক্তিশালী মিসাইল আক্রমণের সামনে টিকতে না পেরে এইবার পিছু হটতে বাধ্য হয় ভারতীয় নৌবাহিনী । একটু পরেই রাডারে দেখলাম ভারতের যুদ্ধ-বিমান আসার সংকেত পাওয়া যাচ্ছে । ওইটা দেখেই সারফেস টু ইয়ার মিসাইল রেডি করার নির্দেশ দিয়ে রেডিও তে হুঁশিয়ারি দিলাম । একটু পরে বিমানগুলো নিরাপদ দূরুত্বে অবস্থান করে উড়তে লাগলো । বুঝলাম ওদের এখন আক্রমণের ইচ্ছা নেই ।

কিছুক্ষণ পর.........
তালপট্টিতে নামলাম আমি । অপারেটরকে রেডিওতে তালপট্টি দখলের সুসংবাদ জানিয়ে দিতে বললাম । বাংলাদেশের একটা পতাকা তালপট্টিতে উড়াবো । কিন্তু একি !! তালপট্টির মাটি নেই । শুধু দেখি তাল !! কেমনে সম্ভব ?? নাজমুল একটা তাল কেটে দিয়ে বললো, " নেন স্যার একটা তালের শাস খেয়ে নেন । " বিস্মিত আমি কি করবো বুঝতে পারছি না ।

হটাতই আমার কাধ ধরে কেউ ঝাঁকি দিলো । পিছনে ঘুরতে না ঘুরতেই আম্মুর ডাক, " এই উঠো উঠো । সেহরির সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে । তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও । " আমি ঘুম থেকে উঠে মাথা ঝাড়া দিয়ে ভাবলাম " ভাগ্যিস এইটা স্বপ্ন ছিল নাইলে ওই তালের দ্বীপের জন্য তো ইজ্জত থাকতো না আমার । এত কিছু করে শেষমেস কিনা এই তালপট্টি !! " হাসি পাচ্ছিলো অনেক ।

[ পরিশিষ্টঃ ঘটনার সম্পূর্ণ আমার স্বপ্ন থেকে নেওয়া না হলেও মূলভাবটা আমার স্বপ্নে দেখা ছিল । তালপট্টি নিয়ে এইরকম উদ্ভট স্বপ্ন দেখার ব্যাখ্যা একটাই হয় । যেই রাতে স্বপ্ন দেখি ওই রাতে বেশ কিছু মানুষের তালপট্টি নিয়ে শোকের মাতম দেখেছিলাম । আর ঘটনাক্রমে ঐ রাতে একটা মুভি " Battleship " দেখেছিলাম । সব কিছু জট পাকিয়ে গিয়ে হয়তো এই স্বপ্ন !! ]

[ বিদ্রঃ লেখাটা একটু পুরানো তবে যেহেতু আমি এই ব্লগে নতুন তাই এইটা রিপোস্ট করলাম। ]
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৩২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×