somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

এম্প্যাথি

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ওসি খালাম্মার কথা হঠাৎ কদিন ধরে খুব মনে পরছে। খালাম্মাকে ওসি খালাম্মা বলতাম কারণ উনার স্বামী ছিলেন শহরের ওসি। খালাম্মাকে দেখলেই আমার মনে হতো মোনালিসা বুঝি ছবি থেকে নেমে এসেছে।
আসলে এই মোনালিসার সাথে মিলটা অনেক পরে পেয়েছি। কিন্তু ছোটবেলা থেকে উনার পানখাওয়া লাল ঠোঁটের প্রাণবস্ত হাসি। টান করে বাঁধা চুল, বড়সর কপাল, মায়াবী চোখ, শ্যামলা বরণ দোহারা গড়নের হাসিখুশি মানুষটিকে আমার ভারী ভালোলাগত। কাছে ডেকে অনেক আদরে কথা বলতেন। এক সময় তারা শহর ছেড়ে চলে যান। অনেক পরে আবার যোগাযোগ হয়। এবং তখন খালাম্মা জানান তিনি আমাদের আত্মীয়। আমার সেজ খালার স্বামীর বাড়ির দিক থেকে সম্পর্ক। মা বাবার সাথে বেয়াই সম্পর্ক নতুন ভাবে স্থাপিত হয়। আগের চেনাজানার সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হয়। ইতমধ্যে আরো অনেক শহর ঘুরে জেলা শহরে খালু নিজেদের বাড়ি করেন। যাওয়া আসা ঘনঘন হয়।
উনাদের মেয়ে জেসমিন আপা পেয়ারা পারতে গিয়ে গাছ থেকে পরে গিয়েছিলেন যখন ছোটটি ছিলেন আমাদের শহরে। উনার একটা হাত ভেঙ্গে যায়। সাথে সাথে হাসপাতালে নিয়ে ব্যাণ্ডেজ বাঁধা হয় হাতে। কিন্তু কোন করণে ক্ষতটি ঠিক হয় না। হাতে সমস্যা দেখা দেয় এবং এক সময় হাতটি কেটে ফেলতে হয় কনুইর উপর থেকে বাচ্চা মেয়েটিকে বাঁচাতে।
হাসি খুশি একটি পরিবারে একটা দুঃখ ঢুকে যায়। খালাম্মা বিশেষ ডিজাইনে একপাশে ঝালরের মতন হাতাওয়ালা ফ্রক বানিয়ে পরাতেন জেসমিন আপাকে। যাতে ঝালরের নিচে যে একটি হাত নাই তা বোঝা যায় না।
আমার মনে আছে খুব ছোটবেলা যখন কোন বাড়িতে অনুষ্ঠানে যেতাম। খালাম্মা জেসমিন আপাকে নিয়ে আসতেন। অনেক মহিলা ঝালর তুলে জেসমিন আপার নাই হয়ে যাওয়া হাতের অংশটি দেখতেন এবং আহা উহু মার্কা শব্দ করতেন। হাত নেই সে টা জেনেও ওই জায়গাটা দেখ, তারা কি সুখ বা দুঃখ পেতেন। আমি এখনও বুঝতে পারি না।

তাদের এই দুঃখবোধ একটি বাচ্চা মেয়ে বা তার মাকে কতটা মানসিক আঘাত করত সে বিবেচনা সেই সময় মানুষের ছিল বলে আমার মনে হয় না।
একটা মেয়ের হাত ভেঙ্গে গেছে সবাই জানে সে জায়গাটা দেখে আহা উহু এবং নানা রকম বক্তব্য দিয়ে তারা তো কোন উপকার করতে পারতেন না। কিন্তু সেটা মানুষের স্বভাব। মনে কষ্ট দেয়ার বিষয়টা মানুষের মনেও আসে না।
জেসমিন আপাকে পরে আবার দেখেছি। তখন তিনি বি এ পাশ করেছেন। ঘরের এমন কোন কাজ নাই যা তিনি এক হাতে করতে পারেন না।
একজন দুই হাতওয়ালা মানুষ যত কাজ করতে পারে তার চেয়ে বেশি কাজ এক হাতেই তিনি রীতিমতন সামলে নিচ্ছেন।
জেসমিন আপা দারুণ দেখতে একজন স্বামীর সাথে সংসার করছেন। ছেলে মেয়ে নিয়ে ভালো আছেন। শুনেছি তিনি এখন আমেরিকায় আছেন।
কিছুদিন ধরে একটা ভিডিও খুব শেয়ার হচ্ছে। দুইফুট উচ্চতার একজন মানুষ বিয়ে করছে। তার বিয়েতে মহা ধুমধাম হচ্ছে। অনেক দেশের গন্যমান্য লোকজন এসেছেন তার বিয়েতে।
শুধু ভিডিও শেয়ার নয় পত্রিকাওলারাও লুফে নিয়ে প্রতিবেদন ছাপছেন বিষয়টির উপর।
কিন্তু এই দুইফুট উচ্চতার মানুষটি শারীরিক ভাবে বেড়ে উঠতে পারেননি কিন্তু তার মস্তিস্কে যে মেধা আছে যা ব্যবহার করে নিজেকে ভালো একটা অবস্থানে সে নিয়ে যেতে পেরেছে স্বনির্ভর একজন মানুষ হয়ে উঠেছে। যা অনেক সুস্থ সবল মানুষ করতে পারেন না।
অনেকদিন পর মহিলাদের ঝালর সরিয়ে জেসমিন আপার কাটা হাত দেখার মানসিকতা চোখে দারুণ উৎকট ভাবে ভেসে উঠল।
আর মনে পরল। নিক নামে যে লোকটি হাত এবং দুটো পা ছাড়া জন্ম নিয়েছে। পায়ের জায়গায় ছোট দুটো লেজের মতন আছে তার । কিন্তু সে এই শারীরিক বৈশিষ্ট নিয়ে থেমে থাকেনি। এমন কোন কাজ নেই নিক যা করতে পারে না। সুখে সংসার করছে। বাচ্চা আছে। নিক নিজেকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেছে আজ সুস্থ সবল লোকজন ঘন্টার পর ঘন্টা নিরব হয়ে বসে, নিকের মটিভেশন বক্তব্যগুলো শোনে। হাত পা শারীরিক উচ্চতা নিয়ে অনেকে তেমন ভাবে ভাবতেও পারে না, নিক যা ভাবে এবং করতে পারে।

নিজেকে উৎকৃষ্ট ভেবে মানুষ অন্যের খুঁত ধরা দোষ ধরা নিয়ে ব্যাস্ত এ ভাবনা থেকে বিরত হয়ে সব মানুষকে তার নিজস্বধারায় বিবেচনা করলে বেশ হয়।
ভাবনার উৎস সুন্দর থেকে। সে সুন্দরের বিভক্তি ঠিক কি ভাবে করতে হয় কোথায় এবং কেন, সে মাত্রা এখনও ঠিক হয়নি অনেকের মনে। গড়পরতা দেখায় ব্যাস্ত বেশির ভাগ মানুষ ।
সৌন্দর্য বাইরে থাকে না ভিতরে জ্বলজ্বল করে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৩২
৮টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×