somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাহাড়ে প্রথম গণহত্যা দিবস আজ

২৫ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৪:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ পাহাড়ে প্রথম গণহত্যা দিবস
আজ ২৫ মার্চ।পাহাড়ের প্রথম গণহত্যা দিবস।১৯৮০ সালের আজকের এই দিনে কাউখালী থানার সেনা কর্মকর্তা কলমপতি ইউনিয়নভুক্ত নোয়াপাড়া বৌদ্ধ মন্দিরটির আসন্ন কিছু উৎসব উপলক্ষে মেরামতের বিষয়টি আলোচনার জন্য স্থানীয় গ্রামবাসীদের প্রাঙ্গনে সমবেত হতে নির্দেশ দেন।যখন গ্রামবাসীরা সমবেত হয় তখন সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য সমবেত জনতার উপর গুলি চালানো আরাম্ভ করে। এতে আনুমানিক ৩০০ উপজাতি নিহত এবং আরো অনেকে নিহত হয়।এরপর সেনাবাহিনীর সদস্য এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে অবৈধভাবে প্রবেশ করা নতুন বসতিকারী সেটেলার বাঙালীরা একযোগে কলমপতি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের ওপর নৃসংশ আক্রমন চালায়! বাড়িঘর লুন্ঠন করে! জ্বালিয়ে দেয় এবং ইউনিয়নের মোট ৯টি বৌদ্ধ মন্দির ধ্বংস করে দেয়।সেদিন সেনাবাহিনীর লেলিয়ে দেয়া সেটেলার বাঙালীরা ২০ জন বৌদ্ধ ভিক্ষুকে মারধোর করে! ৩০ জন আদিবাসী মেয়েকে অপহরন করার মধ্য দিয়ে ধর্ষণ করে এবং এই ৩০ জনের মধ্য অনেক আদিবাসী নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করে।
সদ্য ভুমিষ্ট হওয়া শিশুর ক্ষুধার্থ পরিষ্কার কান্নার শব্দ পোঁছাতে পারে তার মায়ের কানে।তার মা যে নেই! সেনাবাহিনী এবং সেটেলার বাঙালীর যৌথ আক্রমনে স্নেহের কোমল শিশুটিকে ফেলে চলে যেতে হয়েছে অকালে মাকে।সেদিন মা হয়েছিলো স্বামীহারা! বাবা হয়েছিলো স্ত্রীহারা! সন্তান হয়েছিলো পিতৃহারা/মাতৃহারা। মা-বাবা হয়েছিলো সন্তানহারা! বোন হয়েছিলো ভাইহারা! ভাই হয়েছিলো বোনহারা। সেদিন কলমপতির নিরীহ আদিবাসী জুম্মদের খুব সহজেই পরিষ্কার পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছিলো সেনাবাহিনী এবং সেটেলার বাঙালীরা।
এটিই ছিলো পার্বত্য চট্টগ্রামের সেনাবাহিনী এবং সেটেলার বাঙালী কতৃক আদিবাসী জুম্মদের উপর সংঘটিত প্রথম গণহত্যা, যা জুম্মজাতির ইতিহাসে অবিস্মরনীয়।
তবে বলাবাহুুল্য, সেনাবাহিনী এবং সেটেলার বাঙালী কতৃক আদিবাসী জুম্মদের উপর সংঘটিত গণহত্যা কেবল সেই ১৯৮০ সালের ২৫ই মার্চ কলমপতি গণহত্যার মধ্য সীমাবদ্ধ থাকেনি।কলমপতি গণহত্যার পর ক্রমানুসারে আরো অনেক গণহত্যা চালিয়েছিলো সেনাবাহিনী এবং সেটেলার বাঙালীরা।ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান করে অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে বেঁচে থাকার প্রয়াসে প্রতিবাদ করতে গিয়ে অকালে প্রাণ হারিয়েছিলো অনেক জুম্ম আদিবাসী।
১৯৮০ সালের পরে ১৯৮১ সালের ২৫শে জুন মাটিরাঙ্গা এবং বেলছড়ি এলাকায় সেনাবাহিনী এবং সেটেলার বাঙালীরা আবারো আক্রমন করে একযোগে।নির্বিচারে হত্যা করে অনেক জুম্ম আদিবাসী নারী পুরুষকে।এরপর গণহত্যা ঘটে ১৯৮৪ সালের ৩১ মে হতে ৭ জুন পর্যন্ত ভূষনছড়া এবং ছোটহরিনা মৌজায়।তারপরের ঘটনা ঘটে ১৯৮৬ সালের ১ মে তারিখে পানছড়ি এবং মাটিরাঙ্গায়।একই মাসের ১৮ তারিখে রামবাবু ডেবা পাড়ায় এবং ঐ একই সালের ১৯ ডিসেম্বর চংড়াছড়ি এবং মেরুং মৌজায়।সেনাবাহিনী এবং সেটেলার বাঙালী কতৃক জুম্মদের উপর ক্রমাগতভাবে সংঘটিত হয়েছিলো এভাবেই অগনিত গণহত্যা, যা আজ অবদি তার প্রভাব পার্বত্য চট্টগ্রামে বিস্তরভাবে ব্যাপক।
গণহত্যাগুলো যা হয়েছিলো, সব ছিলো বিচার বহিঃর্ভূত।বিচারহীনতা জুম্মদের আশা আকাঙ্খা সবকিছুই মিছিয়ে দিয়েছে মাটির সাথে। ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত হওয়া “পার্বত্য চুক্তি” পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ার ফলে হতাশা আরো বেড়ে গিয়েছে চরমভাবে জুম্ম আদিবাসীদের মানসিকতায়।রাষ্ট্রীয় দামাল ছেলে সেনাবাহিনী কতৃক এবং সেটেলার বাঙালী কতৃক বর্তমানেও জুম্ম আদিবাসীদের উপর নির্যাতন নিপীড়নের বিন্দুমাত্র কমতি নেই।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৪:০৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×