somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেনাতন্ত্রের দাবানলে জাতীয় অস্তিত্ব হারানোর পথে পাহাড়ের আদিবাসীরা

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৮:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা দেখেছি বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তবতা কেমন ভয়াভহ ছিলো। ৯ মাস ব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লক্ষ বাপ-ভাইয়ের জীবন উৎসর্গ ও দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত লুন্ঠনের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনে সক্ষম হয় বাংলাদেশ নামক দেশটি। বাঙালী জাতীর স্বাধীনতা লাভের মূলে ব্যাপক পরিসরের ভূমিকা ছিলো আদিবাসীদেরও। পার্বত্য চট্টগ্রাম হলো আদিবাসীদের আবাসভূমি। ৭১ সালে সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ নামক দেশটির একটা অংশ ছিলো পার্বত্য চট্টগ্রাম। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই শুরু হয়েছিলো পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাসরত আদিবাসীদের উপর রাষ্ট্রীয় বর্বর ইতিহাস। তখন থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা নানাভাবে জাতীগত বৈষম্য থেকে শুরু করে নির্যাতন, নিপীড়ন, গণহত্যা সহ ভূমি উচ্ছেদের শিকার হয়ে আসছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্র কতৃক। সেসময়েও সেনাবাহিনী মানেই ছিলো পাহাড়ের আদিবাসীদের একটি বিরাট আতংকের নাম। পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান বাস্তবতানুসারে এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিবেশ পরিস্থিতি। এখনো আদিবাসীরা বাংলার স্বাধীন সার্বভৌমত্বের কাছে চরম অনিরাপদ। নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে আদিবাসীদের জীবন প্রবাহ।

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তথকালীন আওয়ামীলীগ সরকারের সাথে আদিবাসীদের পক্ষে “পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির” মধ্য “পার্বত্য চুক্তি” স্বাক্ষরিত হলে আদিবাসীরা অনেকটা পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার আশায় আশান্বিত হয়েছিলো। কিন্তু না সেটা হয়নি, হয়েছে তার বিপরীত। “পার্বত্য চুক্তি” স্বাক্ষরের পর দীর্ঘ ২২টি বছর অতিবাহিত হলেও সরকার “পার্বত্য চুক্তি”র ৭২টি ধারার মধ্য একটিও মৌলিক ধারা পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। চুক্তি পরিপন্থীতা করে সরকার লক্ষ লক্ষ সেটেলার বাঙালীকে পার্বত্য চট্টগ্রামে ঢুকিয়ে দিয়ে হাজার হাজার আদিবাসী পরিবারকে নিজ ভিটে মাটি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। সম্প্রসারন করা হয়েছে অধিক অস্থায়ী সেনাক্যাম্প। সেসব সেনাবাহিনী ও সেটেলার বাঙালীরা যৌথভাবে বর্বর হামলা, গণহত্যা সহ নানাবিধ নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়েছিলো আদিবাসীদের উপর। যা আজ অবদি চলমান রয়েছে।



ব্যাপক থেকে ব্যাপক পরিসরে বিস্তৃত করা হয়েছে সেনাতন্ত্র নামের ভয়াভহ জুম্ম অস্তিত্ব ধ্বংসকারী দাবানল। সেই দাবানলের আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাঁইয়ের স্তুপে পরিণত হচ্ছে আদিবাসীদের জীবন প্রণালী।

সাম্প্রতিক সময়েও পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তবতা অত্যন্ত নাজুক। অরাজক বাস্তবতার এক মহা জগতে দাড়িয়ে আছে পার্বত্য চট্টগ্রাম, আর সেই অরাজক জগতের পরাধীন মানুষগুলো হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীরা। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে এখন আর আদিবাসীদের নিজেদের স্বাতন্ত্র্য পরিচয়ে বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। আদিবাসীদের পরিচয়দাতা এখন রাষ্ট্র। রাষ্ট্র ঠিক করে দিবে আদিবাসীরা কোন পরিচয়ের দায়বার কাঁধে বহন করে বেঁচে থাকবে!! আদিবাসীরা এখন আর আদিবাসী পরিচয় দিতে পারেনা। রাষ্ট্র ঠিক করে দিয়েছে আদিবাসীদের স্বাধীন সার্বভৌম দেশে বাঁচতে হলে বাঙালী পরিচয়ে বাঁচতে হবে। চিন্তা করার বিষয় একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশে এরকম সংকীর্ণ মানসিক চিন্তা চেতনার দিক থেকে কতটুকু সুস্থ অবাধ নিরপেক্ষ গণতন্ত্রের দাবি রাখতে পারে…!!! সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্র কখনো আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।

অপরদিকে সেনাবাহিনীর ভয়াভহতা জুরে আছে গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামে। এবং তার সাথে আরো একটি আতংক জুরে আছে যে আতংকের নাম সেটেলার বাঙালী। সেনাবাহিনী এবং সেটেলার বাঙালীদের সমঅত্যাচারে আদিবাসীরা রয়েছে চরম নিরাপত্তাহীনতায়। দেশের সূর্যসন্তান সেনাবাহিনী এবং বাংলার দামাল ছেলে সেটেলার বাঙালী কতৃক কখনো আদিবাসীদের গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে! কখনো আদিবাসীদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে! আবার কখনো আদিবাসী নারী ও শিশুদের ধর্ষণ করা হচ্ছে এবং ধর্ষণের পর নৃসংশভাবে হত্যা করা হচ্ছে। এসব হত্যাকান্ড, ধর্ষণ সহ নানাবিধ পশুত্ববাদী নৃসংশতা, বর্বরতা সংঘটিত হচ্ছে সম্পূর্ণ বিচার বহিঃর্ভূত ভাবে।



সেনাবাহিনীর হায়েনারূপী সেনাতন্ত্রে পাহাড়ের আদিবাসীরা এখন আর স্বাধীনভাবে ঘুরতে পারেনা! ঘুমোতে পারেনা! কারণ সবক্ষেত্রে একটা বিরাট আতংক কাজ করে আদিবাসীদের মনে। নির্বিচারে সেনাবাহিনী কতৃক সরকারী বুলেটে হত্যা করা হচ্ছে আদিবাসীদের। অস্ত্র গুজে দিয়ে কখনো গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে সন্ত্রাসীর সাইনবোর্ড। নিরীহ আদিবাসীদের ঘর থেকে তুলে নিয়ে লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে উপজাতীয় সন্ত্রাসীর তকমা। তারপর ক্রসফায়ার ফাঁদে ফেলে মারা হয় নিরীহ আদিবাসীদের। এসব হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে আদিবাসীরা কোন মিটিং, মিছিল ও জনসমাবেশ করতে পারবে না। যদি করা হয় ঠিক তখনোই আদিবাসীদের গলায় আরো ঝুলিয়ে দেয়া হয় দেশদ্রোহির সাইনবোর্ড, রাষ্ট্রদ্রোহির সাইনবোর্ড, এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীর সাইনবোর্ড। কোন প্রতিবাদ করারা যাবেনা, তারা(সেনাবাহিনী & সেটেলার) তাদের ইচ্ছেনুযায়ী আদিবাসীদের মারবে, ধরবে, খাবে, হত্যা করবে, নারী ধর্ষণ করবে। কারণ রাষ্ট্র তাদেরকে এসব পশুত্ববাদীতা বিস্তারের জন্যেই পাহাড়ে বসিয়ে রেখেছে সরকারী বেতন দিয়ে। সরকার মনে প্রানে চাই বাংলাদেশ থেকে আদিবাসী অস্তিত্বের পতন হোক। ধ্বংস হয়ে যাক আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী।

ধিক্কার জানাই রাষ্ট্রীয় সরকারের এমন স্বৈরাচারমূলক আইনি প্রক্রিয়াকে। এই আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কখনো একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের প্রগতিশীল চিন্তাধারার বিকাশ হতে পারেনা। সুস্থ, অবাধ, নিরপেক্ষ গণতন্ত্রের জন্ম হতে পারেনা।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৮:০০
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×