somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাহাড়ে অভাব,অনটন,বৈষম্য এবং করোনা ভাইরাস:একটি প্রাসঙ্গিক ভাবনা

১৬ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৭:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলায় অনেক অনেক দুর্গম এলাকা আছে। সেসব দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় করোনার পূর্ববর্তী স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও চরম খাদ্য সংকটে থাকে সেখানকার স্থানীয় পাহাড়ী আদিবাসীরা। তাঁরা দিনমজুর করে দিনে এনে দিনে খায়। কখনো কখনো দিনে তিন বেলার এক বেলা খেয়ে পেটের ক্ষুদা নিবারণের অতৃপ্ততা নিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করতে হয় তাদের। পাহাড়ের দুর্গম এলাকাগুলোতে যাতায়তের সু-ব্যাবস্থা নেই, চিকিৎসা সেবার সু-ব্যাবস্থা নেই, শিক্ষা ব্যাবস্থা ঠিক নেই, বাজারজাত করণের সুবিধা নেই। সামাজিক, অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কারণে ঐ দুর্গম পাহাড়ী এলাকার মানুষগুলো রাজনৈতিকভাবেও অনেক পিছিয়ে পড়া। শ্রমশক্তি, উৎপাদন শক্তি তাদের হাতে ন্যাস্ত থাকলেও অর্থনৈতিক ভিত্তির অপ্রতুল্যতার কারণে তারা সেগুলোকে যথাযথভাবে প্রয়োগীক অর্থে ব্যাবহার করতে পারছে না। তার মধ্যে আরেকটা বড় প্রতিবন্ধকতা হলো বাজারজাত করণের অপর্যাপ্ত যাতায়ত ব্যাবস্থা। অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল গুতিকয়েক ব্যাক্তির কাছে দুর্গম পাহাড়ী এলাকার মানুষগুলোর শ্রমশক্তি, উৎপাদন শক্তি জিম্মি।

সম্প্রতি বাঃদেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে পাহাড়ের দুর্গম এলাকার দিনমজুর করে দিনে এনে দিনে খাওয়া মানুষগুলোর জনজীবন বর্তমানে কঠিন বিপন্নতার ঝুঁকিতে পড়ে আছে। করোনার পূর্ববর্তী স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও ছিলোনা তাদের জন্য কোন সরকারী সুযোগ-সুবিধা। বর্তমানে চলমান বৈশ্বিক মহামারি প্রাণঘাতী করোনা'র এই ভয়াভহ পরিস্থিতিতেও নেই তাদের পাশে সরকার। কঠিক থেকে অধিকতর কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের বেঁচে থাকার জীবন সংগ্রামের অসীম প্রবাহগুলো। প্রাণঘাতী করোনা'র সংক্রমন ঠেকাতে সরকারের ঘোষিত লকডাউনের মূখোমূখী হয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছে তাঁরা। দিনমজুর করে খাওয়ার সমস্ত সম্ভাবনা তাদের ক্ষীন হয়ে এসেছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ, না খেয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে মানবেতর জীবনের ছাঁয়াতলে।

তারা পরস্পর শুনে, সরকার নাকী করোনা'র এই ভয়াল পরিস্থিতিতে সবার ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছে। দিনের পর দিন ত্রানের পথচেয়ে বসে থেকেও ত্রানের দেখা পাচ্ছেনা তারা। পাচ্ছেনা কোন ধরণের সরকারী সুযোগ সুবিধা। করোনা কি জানেনা তাঁরা! করোনা শব্দটি তাদের শধুমাত্র মূখে মূখে শোনা। আমাদের মত টেলিভিশনের পর্দায় বসে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের আপডেট পেতে তারা উদগ্রীব হয়ে থাকেনা। করোনা সচেতনতার টিপস পেতে তাদের টিভির পর্দায় বসার সুযোগ হয় না। সারাদেশে এবং বিশ্বে করোনা ভাইরাস মানুষের মৃত্যুর কারণ হলেও পাহাড়ের দুর্গম এলাকার মানুষগুলোর কাছে সেটা ভুল। তাদের করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে মরার কোন আসংখ্যা নেই। তাদের মরার আসংখ্যা কর্মহীন হয়ে না খেয়ে মরার!!

রাঙ্গামাটির জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকে যান। সাজেকের দুর্গম এলাকার একটু খোঁজ নিয়ে দেখেন, সেখানকার দিনমজুর করে খেতে খাওয়া পাহাড়ী আদিবাসীদের জীবনপ্রবাহ এখন কতটা পরিত্যাক্ত। একই জেলার বিলাইছড়ি উপজেলায় যান। উপজেলার দুর্গম এলাকার পাহাড়ী মানুষগুলোর বেঁচে থাকার সংগ্রামের আঁকুতিগুলো দেখে আসেন।

বান্দরবান জেলার রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি সহ বেশ কয়েকটি দুর্গম পাহাড়ী আদিবাসীদের পাড়ায় যান। সেখানেও দেখতে পাবেন দিনমজুর করে খাওয়া পাহাড়ী মানুষগুলো না খেয়ে থাকার আহাজারি।

খাগড়াছড়ি জেলায় যান সেখানেও দুর্গম এলাকার অভাব দেখতে হবেনা কাউকে। দুর্গম পাহাড়ী এলাকার মানুষগুলোর মানবেতর জীবনধারার আর্ত্মচিৎকার সেখানেও দেখতে পাবেন।

এইতো গেল ক'দিন আগে পাহাড়ের দুর্গম এলাকাগুলোতে হাম রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। হামের প্রাদুর্ভাবে মৃত্যুর পথযাত্রী হয়েছিলো অনেক পাহাড়ী শিশু! যে শিশুরা হতে পারতো একেকটা পাহাড়ের আলোক বর্তিকা। অন্ধকার দূর করার অগ্নি মশাল। ঐ শিশুরাই ছিলো পাহাড়ের আগামীর ভবিষ্যৎ। আমাদের প্রজন্ম।

পাহাড়ে হামের প্রাদুর্ভাবে যতগুলো পাহাড়ী আদিবাসী শিশুর মৃত্যু হলো, উত্তাল করোনা'র ভয়াভহতা এখনো পর্যন্ত মৃতের সংখ্যার দিক থেকে পাহাড়ে হামে আক্রান্ত শিশুদের মৃতের সংখ্যার তুলনায় পিছিয়ে বোধয়।

এর দায় কে নেবে? অবশ্যই সরকারকেই নিতে হবে। শধুমাত্র সরকারের অনিচ্ছা ও সু-দৃষ্টিহীনতার কারণে আমাদের হারাতে হলো পাহাড়ের এতগুলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে।

ক'দিন আগে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া 15-16 শিক্ষাবর্ষের শিক্ষা ও গবেষণা ডিপার্টমেন্টের মেধাবী ছাত্র সুমন চাকমা'র আলোচিত মৃত্যু'র রহস্য আমাদের কারোর অজানা নয়। সুমন চাকমার ফুসফুসজনিত জনিত সমস্যা ছিলো। মাসকয়েক আগে ইন্ডিয়া থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ফিরে আসে সুমন। তারপর ক'দিন আগে হথাৎ করে তার আবার ফুসফুসের সমস্যা দেখা দেয়। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেও ভর্তি করা হয়নি সুমন'কে। সম্মূখীন পরিস্থিতি দেখে সুমন তার ফেইসবুক টাইম লাইনে একটা স্ট্যাটাস দেয়। স্ট্যাটাসে লেখা ছিলো "আমার করোনা হয়নি, অথচ পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে এই করোনার কারনেই আমার মৃত্যু হবে"। মিথ্যা নয়। হ্যাঁ, সত্যিতে রূপান্তরিত হয়েছিলো সুমনের দেয়া সেই আগাম স্ট্যাটাস। করোনা না হয়েও সুমন'কে মরতে হলো অসহায়, নিরুপায় হয়ে বিনাচিকিৎসায়।

পাহাড়ের পশ্চাৎপদ ভাঙাচোরা শিক্ষা ব্যাবস্থা থেকে উঠে এসে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে পড়ুয়া একজন মেধাবী ছাত্র নিঃসন্দেহে পাহাড়ের গর্ব। পাহাড়ের অহংকার। অন্ধকারের আলোর মশাল। পাহাড়ের নক্ষত্র।

সুমন চাকমা'র মৃত্যুর দায় এখন আমরা কাকে দেবো? সুমন'কে বিনাচিকিৎসায়, ডাক্তারদের অবহেলায় হারিয়ে পাহাড়ের যে অপূরণীয় ক্ষতি হলো তার শূণ্যতা পূরণ করে দেবে কে? কার বা আছে সে ক্ষমতা।

পাহাড়ী আদিবাসীদের আদিবাসী হয়ে জন্ম নেয়াটাই পাপ ছিলো বোধয়। তা না হলে কেন পাহাড়ের আদিবাসীরা সবখানে এত এত রাষ্ট্রীয় বৈষম্যর মূখোমূখী হয়!!!
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৭:৪২
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×