somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আরব ডায়েরি-৪৭(অভিশপ্ত সামূদ জাতির দেশে-৭)

২৩ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
৪র্থ পর্ব
৫ম পর্ব
৬ষ্ঠ পর্ব


“মাদায়েন সালেহ” তে ১৩১ টি পাহাড়খোদিত কবরসারি পাওয়া গেছে। ২০০৮ সালে ইউনেস্কো এটিকে World Heritage Site হিসাবে ঘোষণা করে। এটি সৌদি আরবের প্রথম World Heritage Site। প্রতিটি পাহাড়ের সামনেই সাইনবোর্ড আছে, বর্ণনা আছে। এত গোছানো কোন কিছু আগে সৌদিতে দেখিনি।

আগেই বলেছি এই শহর একসময় নাবাতিয়ানদের শাসনে আসে। খ্রীষ্টাব্দ প্রথম শতাব্দীতে নাবাতিয়ান রাজা ৪র্থ হারিথ এর সময়ে ব্যাপক সংস্কার কাজ হয়। ব্যাবসায় বাণিজ্যে সুবিধার জন্য এ শহরকে নাবাতিয়ানদের দ্বিতীয় রাজধানী করা হয়। একে পরিপূর্ন শহর হিসাবে গড়ে তোলা হয়। নাবাতিয়ানরাও পাহাড় খোদাইয়ে বিশেষভাবে দক্ষ ছিল। মাদায়েন সালেহ’র ভূ-গঠন তাদের সেই কাজকে আরো সহজ করে দেয়। তারাও সেখানে পাহাড় খোদাই করে বাড়ীঘর তৈরি করে। তারা নতুন করে চাষাবাদের ব্যবস্থা করে, কুপ খনন করে।

প্রাচীন লিপি

দরজার উপরে আঁকা ছবি

১০৬ খ্রীষ্টাব্দে নাবাতিয়ান সাম্রাজ্য রোমানদের অধীনে আসে। রোমানরা বণিজ্যের জন্য রেড সি নৌপথ ব্যবহার করতে থাকে। নৌপথ ছিল নিরাপদ ও দ্রুত। ধীরে ধীরে প্রাচীন আল উলা-মাদায়েন সালেহ বাণিজ্যিক পথটি তার গুরুত্ব হারাতে থাকে। একসময় তা লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যায়।

চতুর্দশ শতাব্দীতে ইবনে বতুতার ভ্রমণ বর্ণনায় হিজর শহরের কথা জানা যায়। কিন্তু তিনি সেখানে কোনপ্রকার মানুষ বসবাসের কথা উল্ল্যেখ করেননি। ঊনবিংশ শতাব্দিতে আশেপাশের গ্রামের লোকজন সেখানকার পানি ব্যবহার করত। বিংশ শতাব্দীতে অটোমান সুলতান ২য় আব্দুল হামিদ সেখান দিয়ে একটি রেললাইন স্থাপন করেন যা দামেস্ক ও জেরুজালেমকে মদীনার সাথে সংযুক্ত করেছিল। (আগের পর্বে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে)। সৌদি আমলে ১৯৩০-৬০ সালে বেশকয়েকবার অনুসন্ধান চালানো হয়। ১৯৭২ সালে সৌদি সরকার একে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসাবে ঘোষণা করে।

আমরা যতই চারপাশ দেখছিলাম, ততই অবাক হচ্ছিলাম। কি বিষ্ময় লুকানো আছে চারপাশে! হঠাৎ মিলন একটি পাহাড় দেখে উল্লাসিত হয়ে উঠল। আমরা গাড়ী থামালাম। ছোট একটি পাহাড়, কিন্তু তার মাঝেই অবিকল একটি মানুষের মুখ। বুঝতে পারলাম না এটা কি হাতে খোদাইকরা নাকি প্রাকৃতিক খেয়াল।

মানুষের মুখ

ক্যামেরা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সাঈদের মন খারাপ থাকলেও সে বেশ খুশী। সফলভাবে সে প্রোগামটা করতে পেরেছে। এতদূর আসতে পারাটা স্বার্থক হয়েছে। সাঈদ মামুনকে চেপে ধরল, ‘তোমরা কি আগেরবার এত ভালো একটা ট্যুর করতে পেরেছ?’
মামুন ইনিয়ে বিনিয়ে বলল, ‘আসলে মাদায়েন সালেহ আমরা ভালোভাবে দেখতে পারি নাই, অনেককিছুই বাকী রয়ে গেছে। এবারের ট্যুরে অনেককিছুই নতুন দেখছি।’
সাঈদ অনেকটা জোড়াজুড়ি করেই মামুন ও শাহরিয়ার ভাইকে নিয়ে এসেছে। শাহরিয়ার ভাইও স্বীকার করেছেন এখানে না আসলে অনেক কিছু মিস হত।

ড্রাইভার সাহেব আমাদেরকে একজায়গায় থামালেন। গম্বুজ আকৃতির কয়েকটি পাহাড় দেখা যাচ্ছে। আগের পাহাড়গুলোর মতো তেমন আকর্ষনীয় নয়। আমরা ঝটপট কিছু ছবি তুলে আবার গাড়ীতে চড়ে বসলাম। আমাদের ড্রাইভার সাহেব মনে হয় অবাকই হলেন, যারা একেক জায়গায় ১০টি ছবি তোলে, তারা এটা না দেখেই অবজ্ঞাভরে চলে যাচ্ছে? আমরাও অবাক হলাম, কি আছে এখানে? ড্রাইভার সাহেব আমাদেরকে সামনে নিয়ে গেলেন। পাহাড় ঘুরতেই আমরা বিষ্মিত। এটা না দেখেই চলে যাচ্ছিলাম? দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে পথ চলে গেছে। ঠিক যেন পেট্রার মতো। এটা ছিল এই মাদায়েন সালেহ ঢুকার প্রধান পথ।



‘আদ দিওয়ান’

প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া সরু এই পথ দিয়েই এক সময় কাফেলা শহরে ঢুকত। পাশেই মজলিস কক্ষ (‘আদ দিওয়ান’) বানানো আছে। এখানে বিশ্রাম নিত, পানি পান করত। ব্যবসায় বাণিজ্যের আশায় মূর্তি পূজা করত। এ এক অসাধারন সৃষ্টি। আমি বিভিন্নভাবে এই সৃষ্টিকে ক্যামেরায় ধরে রাখতে চাইলাম। আমার ভেতরে অবশ্যই উত্তেজনা কাজ করছিল। কিন্তু কোন কারন ছাড়াই তখনি বালিতে আমার পা দেবে গেল। আমি পিছলিয়ে গেলাম, আর আমার ক্যামেরাটি পাহাড়ের দেয়ালে বাড়ি খেল। এত কষ্ট জীবনে পাইনি, আমার ক্যামেরা আর কাজ করছেনা। চারপাশের এত এত সৌন্দর্য্য, কিন্তু তার ছবি তুলতে পারছিনা। আমরা সরু পথের মাঝ দিয়ে অন্য পাশে গেলাম। প্রাচীন পথটি দেখতে পেলাম।




আমার ক্যামেরার ম্যামোরি কার্ড পরীক্ষা করলাম, ভালো আছে। সারাদিনের তোলা ছবিগুলো ঠিক আছে, একটু শান্তি পেলাম। বাকী সময়টা মোবাইল ফোনের ক্যামেরা দিয়েই কাজ চালাতে হল। প্রথমে সাঈদের ক্যামেরা নষ্ট হল, এখন আমারটা। এটা কি শুধুই কাকতালীয়?

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:২৭
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×