নিমাই সিদ্ধান্ত লইয়াছে সন্ন্যাস লইবে, ভগবানের অন্বেষণে সংসারত্যাগী হইবে৷
এই ভাবিয়া সে বাহির হইল, গলির মুখে যাইতে না যাইতেই এক লোক হাত তুলিয়া পথ আগলাইলো, বলিল, থাম বাছা, আমিই ভগবান!
নিমাই এক ঝটকায় তাহাকে পথ হইতে সরাইয়া দিল, ব্যাটা, গুল মারিবার আর জায়গা পাও না, গলির মুখেই ভগবান পাওয়া যায়!
নিমাই চলিতে লাগিল নিরন্তর, মাস পার হইল, পরিধেয় বস্ত্র জীর্ণ হইল, শরীর হইল অস্থিচর্মসার, তাহাকে দেখিলে যে কাহারোই মায়া হইবে৷ সে স্টেশনে বসিয়া আছে, ক্ষুধায় পেট জ্বলিতেছে, এমন সময় এক লোক কলা পাতায় কিছু প্রসাদ লইয়া সামনে আসিল, নে বাছা, খা, আমিই ভগবান!
নিমাই ততক্ষণে সে খাবার মুখে দিয়াছিল, ওই লোক ভগবান শুনিবামাত্রই থুহ করিয়া ফেলিয়া দিল৷ বলিল, দূর হ, ভণ্ড কোথাকার! ভগবান এত সহজ বিষয়? এত সহজে মেলে!!
ছয় বৎসর অতিক্রান্ত হইয়াছে, নিমাইয়ের শরীর গিয়াছে, স্বাস্থ্য গিয়াছে, বস্ত্র তো বহুত আগেই গিয়াছে, সে এখন নাগা সন্ন্যাসী, বেনারসে ঘুরিয়াছে, কাশী গয়া এমনকি রাজস্থান তিব্বত অবধি ঘুরিয়াছে, সন্ন্যাসের চক্কোরে দুই বার বলাৎকারও হইয়াছে, তবু তাহার মনে হইতেছে পর্যাপ্ত সাধনা এখনও হইয়া ওঠে নাই, ভগবানের অনুগ্রহ লাভের আশায় রোজই অশ্রুবিসর্জন করে, তপস্যার তবু শেষ নাই৷
গত ছয় বছরে কমপক্ষে দুই ডজন লোক বিভিন্ন সময়ে সামনে আসিয়া বলিয়াছে, বাছা, আর কষ্ট করিস নে, এবার থাম, আমিই তোর কাঙ্খিত ভগবান৷
নিমাই এসব লোককে প্রতিবারই বিবিধ প্রকারের গালাগাল করিয়া তাড়াইয়া দিয়াছে, ব্যাটা ভণ্ড, ভগবান কি এত সহজে মেলে? এত সস্তায় যে ভগবান ধরা দেয়, তাহাকে তো আমি চাই না!
এভাবেই চলিতেছে তপস্যা, নিমাইয়েরও, ভগবানেরও৷ ভগবান কঠিন হইতে গিয়াও হইতে পারেন না, নিমাইয়ের কষ্ট দেখিলেই ছুটিয়া আসেন, আর নিমাই উহাকে তাড়াইয়া দেয়, যা শালা, ভগবান কী এত সহজ বিষয়????