২০১৩ এর কিছু রাজনৈতিক ঘটনা নিয়ে আমার চিন্তাভাবনা আজ শেয়ার করতে চাই।
# যুদ্ধাপরাধীদের বিচারঃ
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের এই গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি সরকার অবশেষে কার্যকর করতে পেরেছে কিছুটা হলেও। যদিও মেয়াদের শেষ বছরে এত তোড়জোড় এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এত দ্রুত সম্পন্ন হলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে এত ধীর গতি আর নানারকম বিতর্ক সৃষ্টি ছিল হতাশাজনক। কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করায় সরকার যথেষ্ট দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এভাবে সমস্ত যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর দেখতে চায় এবং সেটা এই পাঁচ বছরে সম্পন্ন হলে অনেক ভাল হত।
# শাহবাগ ইস্যুঃ
শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের সৃষ্টি অনেক মহৎ একটা উদ্দেশ্য নিয়ে হয়েছিল। প্রথম সাত দিন সেখানে কোন দল মত নির্বিশেষে একটাই দাবি ছিল কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি চাই। আমাদের বয়সী তরুন সমাজের সেখানে আকুন্ঠ সমর্থন ছিল। কিন্তু সাত দিন পরই শাহবাগ এর গতিপথ প্রভাবিত হয়ে যায়। সহজভাবে বলতে চাই শাহবাগ সরকারদলীয় মঞ্চে পরিণত হয়। সাধারণ মানুষের ও তরুন সমাজের আস্থা হারায় এক মাসের মধ্যে। ইমরান এইচ সরকারের মত বিতর্কিত লোক শাহবাগের নেতা হওয়ায় গণজাগরণ মঞ্চ বিপুল সংখ্যক মানুষের ঘৃণার মঞ্চে পরিণত হয়। আমার কাছে এখন গণজাগরণ মঞ্চের পুরো ব্যপারটাই সরকারি একটা প্লান মনে হয় এবং অবশ্যই ব্যর্থ প্লান। কাদের মোল্লার ফাঁসি হয়েছে কিন্তু শাহবাগ চত্বরকে এর জন্য সামান্যতম কৃতিত্ব আমি দিতে চাই না।
# হেফাজত ইস্যুঃ
আমার কাছে হেফাজত ইস্যুকে সম্পূর্ণ ইস্যুলেস মনে হয়। শাহবাগ এর নাস্তিক তাড়াতে তথাকথিত মোল্লাবাহিনী-- সম্পূর্ণ হাস্যকর , ফালতু। আমার কথা হল শাহবাগ কেন সারাদেশে বহু নাস্তিক আছে এবং নাস্তিকতা এখনও নিষিদ্ধ ঘোষণা হয় নি এবং শাহবাগে কখনও কোন ধর্মকে কটাক্ষ করে কিছু করা হয় নি, নাস্তিকতার প্রচারও করা হয় নি , তারপরও রাতারাতি একটা দল সংগঠিত হয়ে ইসলাম রক্ষার নামে ঢাকা দখল করতে চলে আসল। আমি হেফাজতের ইস্যুলেস আন্দোলনের পিছনে বি এন পি ও জামাতের মাস্টারপ্লান দেখতে পাই। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে এর চেয়ে ভাল শাহবাগ তথা সরকারবিরোধী প্লান হয়ত সম্ভব ছিল না। ৫ ই মে তে গণহত্যার যে অপপ্রচার চলে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট ছাড়া আর কিছু না। তবে হ্যা হেফাজত প্লান বি এন পি জামাতের সার্থক দাবার গুটি হিশেবে কাজ করেছে, কিছু মূর্খ বাঙ্গালির সমর্থন আর জনমানুষের মাঝে কিছু জল্পনা কল্পনা আর সহানুভুতি মিশ্রিত সরকারবিরোধী অনুভুতি তো সৃষ্টি করতে পেরেছে। যার কিছু প্রাভাব সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও দেখা গেছে।
# তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুঃ
এইটা নিয়ে কিছু বলতে ভয় লাগে, আমাকে বিনপি বা আম্লিগ না বানিয়ে দেয় পাব্লিক। যাই হোক, একটা কথা বলতে চাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা গনতন্ত্রের উপর বিষফোড়া । তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বন্ধ করা প্রয়োজন গণতন্ত্রের প্রয়োজনেই। হাস্যকর ব্যপার হল এই বিষফোঁড়ার জন্য বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে পাঁচ বছর পর পর আন্দোলন করতে দেখা যায় । শুধু ভূমিকা পরিবর্তন হয়, একবার পক্ষে আরেকবার বিপক্ষে। একটা কথা আমি বিশ্বাস করি, মানুষ রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে নির্দিষ্ট কিছু রাজনৈতিক আদর্শের জন্য। আমাদের দেশের দুই প্রধান দলের এমন আচরণ তাদের আদর্শ নিয়ে আমাদের মনে অনেক সন্দেহের সৃষ্টি করে। তাদের কি আসলেই কোন মৌলিক আদর্শ আছে? নাকি শুধুই ক্ষমতার লড়াই। আমার মনে হয় একটা স্কুলের বাচ্চাও এই প্রশ্নের উত্তর জানে। আমার বন্ধুরা যারা রাজনীতি করে তারাও এই ভূমিকা পরিবর্তনের জন্য বিব্রত হয়। রাজনৈতিক প্রসঙ্গ উঠলে বাধ্য হয়ে প্রসঙ্গ বদল করতে হয়।
# আমার কিছু ধারণাঃ
আওয়ামীলীগ যেমন বারবার সংবিধান টেনে এনে বাড়াবাড়ি করেছে বি এন পি ভুল করেছে তাদের আন্দোলনে জামাতকে সঙ্গী করে। মোটামুটি পর্যায়ের একটা সমঝোতাতে রাজি হয়ে নির্বাচনে গেলে হয়ত বি এন পির ই লাভ হত। ফলাফলটা তাদের পক্ষে আসত বলে আমার মনে হয়। সেটা যাই হোক, বর্তমান পরিস্থিতি দেশের জন্য হতাশাজনক। সামনে কি হবে আমরা কেউ জানি না। আমরা শুধু আশা করি রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে আরও বেশি আদর্শের সঞ্চার হোক, সংঘাত এর রাজনীতির অবসান হোক, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হোক, জামাত শিবির ও মৌলবাদী রাজনীতি নিষিদ্ধ হোক। বি এন পি জামাতের সঙ্গ এবং আওয়ামী লীগ এরশাদের সঙ্গ চিরতরে ত্যাগ করুক। অবশেষে গনতন্ত্রের জয় হোক।