somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুটি পোলিশ কাব্য

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মানুষের সাথে কথা না বললে হয়তো বোঝা যায়না সে কতটা বিনয়ী বা লাজুক। কতটা অন্তর্মুখী। ভিসওয়াভা সিম্বোর্স্কা হয়তো তেমনই এক লাজুক পোলিশ কবি, প্রাবন্ধিক এবং অনুবাদক। নামটা দেখে কবিতা অনুবাদে সাহস হয়নি কিছুদিন, কিন্তু তাঁর সলজ্জ, মৃদু তথাপি তীক্ষ্ণ চাহনি, আর রসাত্মক উইটিনেস বেশ বিমোহিত আচ্ছন্নকারী বটে, আর তাই অবশেষে হার মানা, আর ভাষান্তরে মানুষ বোঝার অপপ্রয়াস!

বলা হচ্ছে, ১৯৪৫ সালে Dziennik Polski নামক দৈনিক কাগজে তাঁর প্রথম কবিতা Szukam słowa ("I seek the word") ছাপা হলেও এখন পর্যন্ত তাঁর আড়াইশোর বেশি কবিতা নাকি ছাপা হয়নি। লাজুক অন্তর্মুখী এই কবি হয়তো নীরবে এখনও লিখছেন চুপচাপ, কেউ জানছে না! প্রিয় শব্দগুলো রেখে দিয়েছেন নিজের জন্য, কেউ শুনছে না! দ্বিমাত্রিক কবিতার পৃষ্ঠায় তাঁর লেখা শব্দগুলো বেশ অস্তিত্ববাদী ধারণাপুষ্ট, খোঁচা দেয়। যাই হোক, তাঁর কবিতাগুলো অন্যান্য ইউরোপিয়ান ভাষা ছাড়াও এর আগে ভাষান্তর/অনুদিত হয়েছে চাইনিজ, জাপানিজ, হিব্রু আর আরবী ভাষায়। ১৯৯৬ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন।



ভিসওয়াভা সিম্বোর্স্কা (Wislawa Szymborska) (২রা জুলাই, ১৯২৩ – )


সম্ভাবনাগুলো
- ভিসওয়াভা সিম্বোর্স্কা

আমি পছন্দ করি সিনেমা।
পছন্দ করি বেড়াল।
পছন্দ করি ওয়ার্টা নদীর পাশে ওকের ছায়া,
ডিকেন্সের চেয়ে দস্তভয়েস্কি।
মানবতাকে ভালোবাসার চেয়ে মানুষকে ভালো-লাগা
আমার বেশী পছন্দের।
আমার ভালো লাগে সুতো, যখন সূঁচটা আমার হাতের কাছেই।
আমার ভালো লাগে সবুজ।

আমি অপছন্দ করি সবকিছুর জন্যই বিচারবুদ্ধিকে দোষ দেয়া।
পছন্দ করি ব্যতিক্রম।
পছন্দ করি আগেই চলে যাওয়া।
পছন্দ করি ডাক্তারদের সাথে অন্যকিছু নিয়ে কথা বলা।
আমি পছন্দ করি পুরনো দাগানো নকশা।
কবিতা না লিখে হাস্যকর হওয়ার চাইতে
লিখে হাস্যকর হওয়া আমার বেশী পছন্দের।
আমার ভালো লাগে প্রেমের বাৎসরিক আকস্মিকতা,
তার প্রত্যহ উদযাপনে।

আমি পছন্দ করি নীতিবিশারদদের
যারা আমায় কোন প্রতিশ্রুতি দেয়না।
অতিরিক্ত সরল ভালোমানুষির চাইতে হিসেবী ভালোমানুষি
আমার বেশী পছন্দের।
পৃথিবীকে আমি পছন্দ করি বেসামরিক পোষাকে।
পছন্দ করি পরাজিত সাম্রাজ্য, বিজয়ীদের চাইতে।
পছন্দ করি আমার আপত্তি, বিরোধিতা।
শৃঙ্খলাবদ্ধ নরকের চেয়ে বিশৃঙ্খল নরক আমার বেশী পছন্দের।
আমি পছন্দ করি গ্রীম-ভাইদের রূপকথা, খবরের কাগজের প্রথম পাতার চেয়ে।
আমি পছন্দ করি ফুল-ছাড়া পাতা, পাতা-ছাড়া ফুলের চেয়ে।
পছন্দ করি মুক্ত লেজের কুকুর।
আমি পছন্দ করি সাদা চোখ, যেহেতু আমারটা কালো।
পছন্দ করি ডেস্কের ড্রয়ার।

আমি পছন্দ করি আরও অনেককিছু যা আমি উপরে লিখিনি,
অ-তালিকাভুক্ত আরও অনেককিছুর চাইতে।
আমি শূন্যদের পছন্দ করি বন্ধনমুক্ত,
সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো সংখ্যার পিছে নয়।
আমি পছন্দ করি পোকামাকড়দের সময়, নাক্ষত্রিক সময়ের চেয়ে।
পছন্দ করি গাছের গায়ে হাত বুলাতে।
আমি পছন্দ করিনা এমন প্রশ্ন – আর কতক্ষণ, কিংবা কখন।
পছন্দ করি এমনকি এমন সম্ভাবনাতেও যে
অস্তিত্বের আছে কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ।

Possibilities
- Wislawa Szymborska

I prefer the cinema.
I prefer cats.
I prefer oak-trees by the Warta.
I prefer Dickens to Dostoyevsky.
I prefer myself liking humans
to myself loving humanity.
I prefer having a thread with a needle close at hand.
I prefer green.

I prefer not claiming that
the intellect should be blamed for everything.
I prefer exceptions.
I prefer leaving before.
I prefer talking to doctors about something else.
I prefer old marked illustrations.
I prefer being laughable because of writing poems
to being laughable because of not writing them.
I prefer odd anniversaries in love life,
to be celebrated every day.

I prefer moralists
who do not promise me anything.
I prefer calculated goodness to goodness that is too gullible.
I prefer the earth in civvy street.
I prefer conquered countries to the conquering ones.
I prefer having my objections.
I prefer the hell of chaos to the hell of order.
I prefer Grimm tales to the first pages of newspapers.
I prefer leaves without flowers to flowers without leaves.
I prefer dogs with their tails unclipped.
I prefer fair eyes since mine are dark.
I prefer drawers.

I prefer many things I have not listed above
to many others unlisted here.
I prefer noughts that are loose
to those queueing for a digit.
I prefer insect time to stellar time.
I prefer touching wood.
I prefer not asking how much longer and when.
I prefer considering even such a possibility
that existence has its reasons.

Translated by Mikołaj Sekrecki





১৬ই মে, ১৯৭৩
- ভিসওয়াভা সিম্বোর্স্কা

সেই তারিখগুলোর একটা,
যেটা আজ একেবারেই অপরিচিত,
অচেনা।

কোথায় যাচ্ছিলাম সেদিন,
কি-ই বা করছিলাম,
জানি না।

কার সাথে দেখা হয়েছিলো,
কি নিয়েই বা কথা বলছিলাম,
কিছুই মনে পড়ছে না।

যদি কোন অপরাধ হোতো সেদিন আশেপাশে,
আমার কোন অজুহাতই কাজে আসতো না,
হয়তো।

সূর্যটা জ্বলেছে গন্‌গন্‌, ক্ষয়েছে,
আমার দিগন্তবৃত্ত পেরিয়ে।
জগতটা ঘুরেছে চক্রাকারে
আমার লেখার-খাতার অগোচরে।

তার চেয়ে বরং ভাবি
এটা ছিলো ক্ষণস্থায়ী মৃত্যু,
যখন আমি বেঁচে ছিলাম
স্মৃতিশূন্য।

প্রেতাত্মা ছিলাম না বটে,
এতকিছুর পরও,
শ্বাস নিচ্ছিলাম দিব্যি, খাচ্ছিলাম,
হাঁটছিলাম।

হয়তো শোনা যাচ্ছিলো, আমার পদধ্বনি।
দরজার হাতলে আমার আঙুল
নিশ্চয়ই রেখে গিয়েছিলো তার ছাপ।

আয়না হয়তো বেঁধে ফেলেছিলো আমার প্রতিবিম্ব।
আমি হয়তো পড়েছিলাম কোন জামা,
হতে পারে এই রঙের, কিংবা অন্যকিছু।
আমায় কেউ দেখেছিলো নিশ্চয়ই।

হয়তো আমি ফিরে পেয়েছিলাম কিছু একটা সেদিন,
হারিয়ে যাওয়া।
হয়তো হারিয়েছিলাম কিছু,
দেরিতে আসা।

সংবেদনশীল অনুভূতিগুলোয় পূর্ণ ছিলাম
আমি।
অথচ সবকিছুই আজ ব্রাকেটের মাঝে
ফোটা ফোটা বিন্দুর মতন।

কোথায় লুকিয়ে ছিলাম,
কোন অজ্ঞাতবাসে?
স্বচক্ষুর সামনে অন্তর্ধান,
কৌশল তো খারাপ নয়।

স্মৃতি ঝাঁকাই।
হয়তো এর শাখাপ্রশাখায় ঘুমিয়ে থাকা
ওগুলো জেগে উঠবে সহসা, পাখা ঝাপটাবে,
কাঁপবে, পতপত।
নাহ্‌।
স্পষ্টতঃই, আমি আশা করছি অত্যধিক।
একটি পূর্ণ মুহূর্ত, নিদেনপক্ষে।

MAY 16, 1973
- Wislawa Szymborska

One of those many dates
that no longer ring a bell.

Where I was going that day,
what I was doing --- I don't know.

Whom I met, what we talked about,
I can't recall.

If a crime had been committed nearby,
I wouldn't have had an alibi.

The sun flared and died
beyond my horizons.
The earth rotated
unnoted in my notebooks.

I'd rather think
that I'd temporarily died
than that I kept on living
and can't remember a thing.

I wasn't a ghost, after all.
I breathed, I ate,
I walked.

My steps were audible,
my fingers surely left
their prints on doorknobs.

Mirrors caught my reflection.
I wore something or other in such-and-such a color.
Somebody must have seen me.

Maybe I found something that day
that had been lost.
Maybe I lost something that turned up late.

I was filled with feelings and sensations.
Now all that's like
a line of dots in parentheses.

Where was I hiding out,
where did I bury myself?
Not a bad trick
to vanish before my own eyes.

I shake my memory.
Maybe something in its brances
that has been asleep for years
will start up with a flutter.
No.
Clearly I'm asking too much.
Nothing less than one whole second.

Translated by unknown




________________________

একটা মেমেন্টো...

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১২:৫২
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×