somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্য: বউটার জাপান ভ্রমণে প্রচণ্ড অনীহা!!!!!

১৬ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



-দোস্ত, এবারে ঈদে জাপানে যাচ্ছি।

-গতবারেও তো জাপানে গিয়েছিলি।

-হুম, গতবারে আমি জাপানে গেলেও বউ-বাচ্চা কিন্তু ইন্ডিয়াই গিয়েছিল।

-তোর পোড়া কপাল! আমেরিকা-ব্রাজিল তোর যাওয়া কখনই হল না।

-তা তোর খবর কি?

-আর খবর। অনেক দৌড়-ঝাপ করে এবার ইংল্যান্ডে যাচ্ছি।

-গুটকু ছালামের খবর পাইছিস। ও কোথায়? ব্যাটার তো বড় বড় কথা চায়না, ডেনমার্ক ছাড়া সে নাকি যাবেই না।

-তোরে কইছে। ও ব্যাটা তো এবার হুন্ডুরাসে যাচ্ছে। হা হা হা।

-যাক তাহলে পাশাপাশিই আছি। ‘দোস্ত, ফোনটা একটু হোল্ট করত। কে যেন গুতোচ্ছে?

দেখি পাশেই গলাছিলা চীনামুরগীর মতো টাক মাথার এক হ-য-ব-র-ল লোক বেশ রাগী-রাগী ভাব নিয়ে বিড়বিড় করছে।

-‘কি ভাই, সমস্যা কি? বকনা বাছুরের মতো গুতোচ্ছেন ক্যান?’-আমার চোখ-মুখ বাঁকিয়ে খেঁকিয়ে উঠা।

-সাধে কি আর গুতোই! তা মশাই এতক্ষণ ধরে আপনার ফোনে কথা শুনছিলাম। কয় পুরিয়া?

-কয় পুরিয়া মানে?

-মানে বুঝেন না। গায়ের পোশাক দেখে মনে হচ্ছে ছিয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ কবলিত মানুষ আপনি। দৈবাৎ এখনো মাঠে টিকে আছেন। আর সে কি-না জাপান-আমেরিকা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে।

-থামুন, থামুন। কি সব যা-তা বলছেন? আর আপনিই বা এসব বলার কে?

-দাঁড়ান! দাঁড়ান। আপনি যে উচ্চস্বরে পাবলিক প্লেসে দাঁড়িয়ে জাপান-আমেরিকাকে গাজীপুর টু গুলিস্তান যাত্রা বানিয়ে ছিলেন, তাতে নেহাত খাঁটি ভদ্রলোক ছাড়া আপনার হাবভাবের একটা জবাব দিতে কেউ কসুর করবে না। আমি ভদ্রর নোক নই। তাই এই গুতোগুতি।

আমার মেজাজটা গেল বেদম খারাপ হয়ে। আরে এমনিতে নানামুখি টেনশন আছি। গতরাত থেকে মশার কামড়ে চিকুনগুনিয়ার ভয় নিয়ে সারারাত অপেক্ষা করে এই ঝামেলার জাপান ভ্রমণ। আর এই ব্যাটা বিনা উস্কানিতে চুলকানি শুরু করেছে। মনে মনে ঠিক করলাম, চুলকানি যেহেতু শুরুই করেছে, তাহলে একটু ভালো করেই চুলকে দেই।

-গলাছিলা টাকলু, আমি দুর্ভিক্ষের নায়ক হই, আর বুবলির নায়ক হই তা নিয়ে তোর এত মাথা-ব্যথা ক্যান। আমি রাতে জাপানে যামু, দিনে আমেরিকায় ফিরমু। তাতে তোর কী? কে তোকে আমার কথা শুনতে কইছে? তোর লম্বা গলা টেনে আরো লম্বা করে হাইপারলুপ রেলের টিউব বানামু। সেই টিউবে করে ভ্রমণে যামু। হইছে। যা ভাগ এখন!!

আমার গলাবাজিতে কিছু ভাত না ছাড়তেই কাউয়া কৌতূহলী কাজ-না-থাকলে-খই-ভাজ প্রকৃতির লোকজন জড় হয়ে গেছে। তাদের কৌতূহলী জিজ্ঞাসা, ‘ঘটনা কি ভাই?’

-এককথায় তাদের বললাম, ‘ঐ ব্যাটা আমাকে গুতোচ্ছে’।

মানুষজন আমার কথার কিছু বুঝতে পারে নি। ভাবখানা এমন যে শুধু শুধু গুতোবে ক্যান।

ইতোমধ্যে আমার উচ্চবাচ্যতে ছিলাগলা মুরগী চুপ মেরে গেছে। মিনমিন করে কি যেন বলছে? আমি আরো দু-চারটা কথা বলে ঐ স্থান ত্যাগ করলাম। সন্ধ্যার আগেই বাসায় পৌঁছুতে হবে। বাচ্চা দুটো জাপানে যেতে খুবই পছন্দ করে। নাচন-কোদনের মাধ্যমে যাওয়া যায়। এতে তাদের আনন্দ দেখে আমি মজাই পাই। কিন্তু এই বউটাকে নিয়েই ঝামেলা। তাঁর একটাই আক্ষেপ তাকে আমেরিকা-ব্রাজিলে নিতে পারলাম না। আমারও কী বেদনা কম?

ক্লান্ত-বিধবস্ত মন নিয়ে সারারাত জাগা আমি ভয়ে ভয়ে বাসায় ফিরছি। জানি বাসায় ঢুকামাত্র কিম জং এর বানানো নতুন এটম বোমা গুয়ামের পরিবর্তে আমার উপর ফেলা শুরু হবে।

কলিং বেল টেপা মাত্র ধাঁই করে দরজা খুলে গেল। মনে হয় টুল নিয়ে বাচ্চাসহ বউটা দরজার পাশেই বসে ছিল। দরজা খোলার সাথে সাথেই মহাদেশীয় ব্যালেস্টিক মিসাইল মারা শুরু হল। ভাবখানা এমন যেন সবকিছু ছারখার করে দেবে।

‘ফোন ধরছ না ক্যান’? ‘আবারও জাপান নয়’। ‘কবে তোমার আক্কেল হবে আমেরিকা নেওয়ার’? ‘আরো আগে টিকিট কাউন্টারে যেতে পারো না’। ‘’একটি বারের জন্যও ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ এগুলোর টিকিট ম্যানেজ করতে পারলে না’’। চিঁউ চিঁউ গলায় বললাম, ‘গুটকু ছালামের থেকে জাপানেরটা বদলে হুন্ডুরাসেরটা নিয়ে এসেছি’।

বোমা বর্ষণ শেষ হলে ক্লান্তি দূর করতে বাথরুমে ঢুকতে যাব পিচ্চি মেয়েটা বলছে, ‘বাবা, এবারেও কি আমরা মফিজ পরিবহনের পিছনের ‘জে’ নম্বর ছিটে বাড়ি যাব’।

আমি হ্যাঁ-সূচক মাথা ঝাঁকাতেই দেখলাম দুটো বাচ্চার তিড়িংবিড়িং নাচন-কোদন। মফিজ পরিবহনে উঠার আগে মহড়া দিয়ে নিচ্ছে। মর জ্বালা!!!!!


পুনশ্চঃ এবার যে রাস্তার অবস্থা ঈদে জাপান যাত্রীর খবর আছে। কুরবানি দিতে বাড়ি যেতে গিয়ে নিজেই না কুরবানি হয়ে যায়। :P


সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:৩৬
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×