এই মাত্র টিউশনি থেকে ফিরলাম, এসেই দেখি আমার রুমমেট ফরহাদ ভাই আর সুমন ভাই রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। দেখে মনে হচ্ছে যেন আমার জন্যই অপেক্ষা করছেন,
আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা বলছে, -মিরাজ পাঁচশ টাকা বের কর।
আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না, তাদের সাথে আছি প্রায় পাচ বছর আমার একান্ত আপন বলতে তারাই সুখে দুঃখে তারাই আমার পাশে ছিলো আজ হঠাত কি হলো যে আমার কাছ থেকে টাকা চাচ্ছে। যদিও আজকে টিউশনি থেকে টাকা পেয়েছি, আমি আর কিছু না ভেবে তাদেরকে টাকা দিয়ে দিলাম। কারন আমি জানি মাস শেষে টাকা না থাকলেও সমস্যা নেই তারা তো আছেনই।
ফরহাদ ভাই সুমন ভাইকে বললেন, চল সুমন বাজার থেকে ঘুরে আসি।
সুমন ভাই এর জবাবে বললেন, আনিস আর রাশেদের ঘরের কেউ যাবে না?
আমি বেপার সেপার কিছুই বুঝলাম না।
আমাদের মেসে মোট চার ঘর, ধরতে পারেন চার ঘরের একটা যৌথ পরিবার কিন্তু খাবারের বেলায় সবাই আলাদা । আজকে কি এমন হলো যে সবাই একসাথে বাজার করছে! তাহলেতো রান্নাও একসাথেই হবে, এমনি তে এমন সময় সবাই যার যার কাজে ব্যাস্ত থাকে।
আমি বিষণ ক্লান্ত পরপর দুইটা টিউশনি করিয়ে তারপর বাসায় আসলাম, ঘরে যেতেও ইচ্ছে করছেনা কেউ নেই একা একা ভালো লাগবে না তাই বাইরেই বসে রইলাম।
হঠাত শুনতে পেলাম একটা শব্দ আসলো আমি একটু চমকে উঠলাম মেসে কেউ নেই শব্দ আসলো কোথা থেকে?
আমি উঠেগিয়ে আমার রুমের দরজ়া খুলতেই দেখি, সামিয়া বসে আছে। আমি কি করবো! হাসবো, কাদবো নাকি গলা ফাটিয়ে চিতকার করবো নাকি দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরবো? কিছুই বুঝে ঊঠতে পারলাম না। মাথাটা একটু ঘুরছে মানুষ একটূ বেশি খুশি হলে কি এমন হয়?
(সামিরার সাথে আমার ৪ বছরের রিলেশল, আমি তখন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আর ও তখন নতুন ভর্তি হতে এসেছে। কেমন যেন একটা বেপার আছে তার মাঝে প্রথম দেখাতেই প্রেমে পরে যাই । তারপর কত দিন খুজে তাকে আবার পেতে হয়েছে, তা যারা কাউকে এমন করে খুজে বের করেছেন তারা ছাড়া কেউ বুঝতে পারবেন না। )
সামিরার সাথে আমার রিলেশন প্রায় ভেঙ্গে গিয়েছিলো, কারন তার বিয়ের কথা চলছে এই মাসে কি এরপরের মাসে তার বিয়ে, আর আমি উপর্যপুরি এক বেকার যার কাজ বলতে ধুই তিনটা টিউসনি করে নিজের পেট চালাই। আমি সামিরার পাশে গিয়ে বসলাম কিছুই বলতে পারছি না বা কি বলবো তাও বুঝতে পারছি না।
ওর অনার্স কমপ্লিট, বাবা মায়েরা এই বয়সের মেয়ের বিয়ে দেয়ার জন্য তাগিদ অনুভব করবে এটাই স্বাভাবিক।
ও আমাকে আগেই কিছু একটা করতে বলেছিলো, যে দিন ওই পাত্রের সাথে তার দেখা করানো হয় আমি সেই দিন আমার মোবাইল বন্ধ করে শহর ছেড়ে পালিয়েছিলাম। পরে জানতে পারি ও বিভিন্ন কথা বলে পরিবার থেকে ছয় মাসের জন্য দেরি করতে বলে, এই খবরও আমাকে দেয়া হয় । কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও আমি কিছুই করতে পারি নি। আর আমি যে সেইদিন কিছু না বলে পালিয়েছিলাম সেই কারনেও কিছুই বলেনি। আমার মাঝে মধ্যে মনে হয় এই মেয়ের মাথায় সমস্যা আছে যতই তাকে কষ্ট দিয়ে দূরে ঠেলে দেই ও ততই আরো কাছে চলে আছে।
নাকি সব মেয়েরাই এমন যার কাছ থেকে অবহেলা পায় তাকেই আরো বেশি কাছের করে নেয়!
অনেকক্ষন হয়ে গেছে আমি কথা বলছি না, শুধু ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি আর বিভিন্ন কথা ভাবছি।
সামিরাই বলে উঠলো, -কি! আমার সাথে কথাও বলবে না?
আমি সত্যি কথা বলতে পারছিলাম না। লজ্জায়, ভয়ে আর নিজের প্রতি নিজের ঘৃনায়। আমি আবার একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছি।
হঠাত করে ফ্লোরের দিকে চোখ পরতেই দেখি একটা নতুন ব্যাগ। (কি বেপার কার ব্যাগ?মনে মনে ভাবছি)
আমি জিজ্ঞেস করার আগেই সামিরা বললো ওটা আমার বাসা থেকে নিয়ে এসেছি।
এর মধ্যে মেসের অন্য সবাই চলে এসেছেন, তাদের বাজার দেখে মনে হলো আজ কারো বিয়ে।
আমাদের মধ্যে ফরহাদ ভাই সবথেকে সিনিয়র, তিনি আমাকে ডেকে পাঠালেন, আমি গেলাম।
ভাইয়ের কথা শুনে আমি রীতি মত দিনের বেলায় চোখে তারা দেখা শুরু করলাম।
সামিরা বাসা থেকে পালিয়ে এসেছে, সে আর কোন দিন বাসায় ফিরে যাবে না, আমি তাকে গ্রহন না করলেও বাসায় যাবে না। আজকেই তাকে আমার বিয়ে করতে হবে, আর আমাদের বিয়ের পরেও খরচ নিয়ে আমাকে ভাবতে হবে না কারন সামনের মাস থেকে সামিরা চাকরিতে জয়েন করছে। তাই সম্পূর্ন দায়িত্ব তার। এই কথা শুনে আমার একটু ইগোতে বাধলো আরে আমি কেমন পুরুষ একটা মেয়ে আমার দ্বায়িত্ব নিয়ে আমাকে কাপুরুষ চিহ্নিত করতে চায়!
আমি এবার একটু রেগে গিয়েই বললাম, আমি তার সব শর্তে রাজী কিন্তু শেষটা মানতে পারলাম না, প্রয়োজনে আরো টিঊসনি করে তাকে আমি ভালো রাখার চেষ্টা করবো সেই দ্বায়িত্ব আমার । পেছনে দেখি সামিরা মুখ টিপে হাসছে। মেসের সবাই চিতকার দেওয়া শুরু করলো। আর আমার দেয়া পাচশ টাকা দিয়ে ফরহাদ ভাই একটা কাপর এনেছেন আমার হাতে দিয়ে বললেন তোমার টাকা দিয়ে এনেছি।
।
।
আজ সামিরা মা হতে চলছে, আর আমি বাবা। আমরা সবাই বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি কিন্তু আজ ফরহাদ ভাইকে খুব মিস করছি ভাই তার কাজের জন্য আমাদের থেকে অনেক দূর দেশে আছেন। তবে সুমন ভাই আনিস ওনারা আছেন, আজ আমরা খুব সুখী তা শুধু মাত্র তাদের সাপোর্ট এর জন্যই সম্ভব হয়েছে।
লেখকঃ ja al.