somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটা টুনটুনির গল্প।

১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এই মাত্র টিউশনি থেকে ফিরলাম, এসেই দেখি আমার রুমমেট ফরহাদ ভাই আর সুমন ভাই রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। দেখে মনে হচ্ছে যেন আমার জন্যই অপেক্ষা করছেন,
আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা বলছে, -মিরাজ পাঁচশ টাকা বের কর।
আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না, তাদের সাথে আছি প্রায় পাচ বছর আমার একান্ত আপন বলতে তারাই সুখে দুঃখে তারাই আমার পাশে ছিলো আজ হঠাত কি হলো যে আমার কাছ থেকে টাকা চাচ্ছে। যদিও আজকে টিউশনি থেকে টাকা পেয়েছি, আমি আর কিছু না ভেবে তাদেরকে টাকা দিয়ে দিলাম। কারন আমি জানি মাস শেষে টাকা না থাকলেও সমস্যা নেই তারা তো আছেনই।
ফরহাদ ভাই সুমন ভাইকে বললেন, চল সুমন বাজার থেকে ঘুরে আসি।
সুমন ভাই এর জবাবে বললেন, আনিস আর রাশেদের ঘরের কেউ যাবে না?
আমি বেপার সেপার কিছুই বুঝলাম না।

আমাদের মেসে মোট চার ঘর, ধরতে পারেন চার ঘরের একটা যৌথ পরিবার কিন্তু খাবারের বেলায় সবাই আলাদা । আজকে কি এমন হলো যে সবাই একসাথে বাজার করছে! তাহলেতো রান্নাও একসাথেই হবে, এমনি তে এমন সময় সবাই যার যার কাজে ব্যাস্ত থাকে।
আমি বিষণ ক্লান্ত পরপর দুইটা টিউশনি করিয়ে তারপর বাসায় আসলাম, ঘরে যেতেও ইচ্ছে করছেনা কেউ নেই একা একা ভালো লাগবে না তাই বাইরেই বসে রইলাম।
হঠাত শুনতে পেলাম একটা শব্দ আসলো আমি একটু চমকে উঠলাম মেসে কেউ নেই শব্দ আসলো কোথা থেকে?

আমি উঠেগিয়ে আমার রুমের দরজ়া খুলতেই দেখি, সামিয়া বসে আছে। আমি কি করবো! হাসবো, কাদবো নাকি গলা ফাটিয়ে চিতকার করবো নাকি দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরবো? কিছুই বুঝে ঊঠতে পারলাম না। মাথাটা একটু ঘুরছে মানুষ একটূ বেশি খুশি হলে কি এমন হয়?
(সামিরার সাথে আমার ৪ বছরের রিলেশল, আমি তখন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আর ও তখন নতুন ভর্তি হতে এসেছে। কেমন যেন একটা বেপার আছে তার মাঝে প্রথম দেখাতেই প্রেমে পরে যাই । তারপর কত দিন খুজে তাকে আবার পেতে হয়েছে, তা যারা কাউকে এমন করে খুজে বের করেছেন তারা ছাড়া কেউ বুঝতে পারবেন না। )
সামিরার সাথে আমার রিলেশন প্রায় ভেঙ্গে গিয়েছিলো, কারন তার বিয়ের কথা চলছে এই মাসে কি এরপরের মাসে তার বিয়ে, আর আমি উপর্যপুরি এক বেকার যার কাজ বলতে ধুই তিনটা টিউসনি করে নিজের পেট চালাই। আমি সামিরার পাশে গিয়ে বসলাম কিছুই বলতে পারছি না বা কি বলবো তাও বুঝতে পারছি না।

ওর অনার্স কমপ্লিট, বাবা মায়েরা এই বয়সের মেয়ের বিয়ে দেয়ার জন্য তাগিদ অনুভব করবে এটাই স্বাভাবিক।
ও আমাকে আগেই কিছু একটা করতে বলেছিলো, যে দিন ওই পাত্রের সাথে তার দেখা করানো হয় আমি সেই দিন আমার মোবাইল বন্ধ করে শহর ছেড়ে পালিয়েছিলাম। পরে জানতে পারি ও বিভিন্ন কথা বলে পরিবার থেকে ছয় মাসের জন্য দেরি করতে বলে, এই খবরও আমাকে দেয়া হয় । কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও আমি কিছুই করতে পারি নি। আর আমি যে সেইদিন কিছু না বলে পালিয়েছিলাম সেই কারনেও কিছুই বলেনি। আমার মাঝে মধ্যে মনে হয় এই মেয়ের মাথায় সমস্যা আছে যতই তাকে কষ্ট দিয়ে দূরে ঠেলে দেই ও ততই আরো কাছে চলে আছে।
নাকি সব মেয়েরাই এমন যার কাছ থেকে অবহেলা পায় তাকেই আরো বেশি কাছের করে নেয়!

অনেকক্ষন হয়ে গেছে আমি কথা বলছি না, শুধু ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি আর বিভিন্ন কথা ভাবছি।
সামিরাই বলে উঠলো, -কি! আমার সাথে কথাও বলবে না?
আমি সত্যি কথা বলতে পারছিলাম না। লজ্জায়, ভয়ে আর নিজের প্রতি নিজের ঘৃনায়। আমি আবার একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছি।
হঠাত করে ফ্লোরের দিকে চোখ পরতেই দেখি একটা নতুন ব্যাগ। (কি বেপার কার ব্যাগ?মনে মনে ভাবছি)
আমি জিজ্ঞেস করার আগেই সামিরা বললো ওটা আমার বাসা থেকে নিয়ে এসেছি।

এর মধ্যে মেসের অন্য সবাই চলে এসেছেন, তাদের বাজার দেখে মনে হলো আজ কারো বিয়ে।

আমাদের মধ্যে ফরহাদ ভাই সবথেকে সিনিয়র, তিনি আমাকে ডেকে পাঠালেন, আমি গেলাম।
ভাইয়ের কথা শুনে আমি রীতি মত দিনের বেলায় চোখে তারা দেখা শুরু করলাম।
সামিরা বাসা থেকে পালিয়ে এসেছে, সে আর কোন দিন বাসায় ফিরে যাবে না, আমি তাকে গ্রহন না করলেও বাসায় যাবে না। আজকেই তাকে আমার বিয়ে করতে হবে, আর আমাদের বিয়ের পরেও খরচ নিয়ে আমাকে ভাবতে হবে না কারন সামনের মাস থেকে সামিরা চাকরিতে জয়েন করছে। তাই সম্পূর্ন দায়িত্ব তার। এই কথা শুনে আমার একটু ইগোতে বাধলো আরে আমি কেমন পুরুষ একটা মেয়ে আমার দ্বায়িত্ব নিয়ে আমাকে কাপুরুষ চিহ্নিত করতে চায়!
আমি এবার একটু রেগে গিয়েই বললাম, আমি তার সব শর্তে রাজী কিন্তু শেষটা মানতে পারলাম না, প্রয়োজনে আরো টিঊসনি করে তাকে আমি ভালো রাখার চেষ্টা করবো সেই দ্বায়িত্ব আমার । পেছনে দেখি সামিরা মুখ টিপে হাসছে। মেসের সবাই চিতকার দেওয়া শুরু করলো। আর আমার দেয়া পাচশ টাকা দিয়ে ফরহাদ ভাই একটা কাপর এনেছেন আমার হাতে দিয়ে বললেন তোমার টাকা দিয়ে এনেছি।


আজ সামিরা মা হতে চলছে, আর আমি বাবা। আমরা সবাই বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি কিন্তু আজ ফরহাদ ভাইকে খুব মিস করছি ভাই তার কাজের জন্য আমাদের থেকে অনেক দূর দেশে আছেন। তবে সুমন ভাই আনিস ওনারা আছেন, আজ আমরা খুব সুখী তা শুধু মাত্র তাদের সাপোর্ট এর জন্যই সম্ভব হয়েছে।

লেখকঃ ja al.
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×