somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিশ্চুপ রাজকন্যা। (ছোট গল্প)

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মনটা ভীষন খারাপ। এই বেকার জীবন দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে। আরে লেখাপড়া শেষ হওয়ার সাথে সাথেই কি চাকরি পাওয়া যায় নাকি! চাকরি কি পপকর্নের পেকেট যে না চাইলেও বললবে চাকরি লাগবে চাকরি। এই কথাটাই কাউকে বোঝাতে পারলাম না, বিশেষ করে পরিবারের সদস্যদের।
আর তাই তো একটু আগে মায়ের সাথে ঝগড়া করে ঘর থেকে বাইরে চলে এসেছি, তবে একে বারে যাওয়ার মত কোন জায়গা নেই থাকলে চলেই যেতাম, আর ভালো লাগে না!

একলা মনে চিরচেনা রাস্তা দিয়ে গুনগুন করতে করতে হাটছি, এমন সময় কোথা থেকে একটা সাদা রং এর চিরুনি আমার সামনে এসে পরলো। আমি আশেপেশে তাকিয়ে দেখি কেউই নাই, তাহলে কোথা থেকে আসলো! এমন সময় পাশের বিল্ডিং এর উপরে তাকিয়ে দেখি, কেমন এক উদাস করা দৃস্টিতে একটা মেয়ে ছাদের উপর থেকে আমার দিয়ে তাকিয়ে আছে।
আমি ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম চিরুনিটা তার কি না, সে বললো যে সেটা তার। আমি তখন ভাবলাম, হয়তো ছাদে দাঁড়িয়ে চুল আচড়াতে গিয়ে ফেলে দিয়েছে।

কিন্তু এখন কথা হচ্ছে এই চিরুনি ফেরত দিবো কিভাবে! যেই বিল্ডিং এ এই চিরুনির মালিক থাকে সেখানে পৌছতে হলে আমাকে দশ মিনিটের পথ ঘুরে তারপর যেতে হবে।
কি যে এক প্রবলেমে পরলাম, এমনিতেই মেজাজ খারাপ তার উপর আবার এই বেগার খাটা।

অনেক ঘোরা ঘুরির পর সেই বাসার সামনে, কিছু চিন্তা না করেই উঠতে শুরু করলাম ছাদে। ছাদে উঠেই দেখি অপুর্ব সুন্দরি এক মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আর সেই সুন্দর মেয়ের অসাধারন সুন্দর হাসি দেখে আমি ভুলেই গেলাম একটু আগে পর্যন্ত আমার মন খারাপ ছিলো। মেয়েটা তার চিরুনি নিয়ে আরো একটা ভূবন ভুলানো হাসি নিয়ে ছাঁদ থেকে নেমে গেল।

আমি সব ভুলে গেছি আমার মন খারাপ, আমি ঝগড়া করে বাসা থেকে বের হয়ে এসেছি সব ভুলে মেয়েটার মুখটা মনে করে করে বাসায় পৌছে গেলাম। বাসায় পৌছতেই মায়ের ঝাড়ি, '' কি হে নবাব জাদা বাসা থেকে না বের হয়ে গেছিলা আবার আসলা কেন! ''

কিন্তু কারো কথাতেই আমার আর মন খারাপ হচ্ছেনা আমি শুধু ঐ মেয়ের কথাই ভাবছি, মানুষ এত সুন্ডর হয় কিভাবে!
পরদিন বিকেলে এই বাসারই পাশে আমার এক বন্ধুর বাসা, সেই বিন্ডিং এর ছাদের আমি আর আমার বন্ধু মিলে গল্প করছি আর আমি ফাকে ফাকে ঐ ছাদের দিকে তাকাচ্ছি।

এমন সময় ঐ মেয়ে ছাদে এসে উপস্থিত, আমাকে দেখেই আবার তার সেই হাসি মুখ। আমি হাত নেরে তাকে হাই জানাতেই সেও হাই দিলো।
আমার বন্ধু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে চিনিস নাকি?
আমি বললাম অল্পই পরিচিত। কি নাম রে ওই মেয়ের?
আমার বন্ধু বললো, আমি ঠিক জানি না তবে সামিরা নাহলে সামিয়া হবে।
দোস্ত খুব সুন্দর নাম তো,
আমার বন্ধু হেসে বললো, আমি নিশ্চিত তুই ওই মেয়ের প্রেমে পরছিস।
আমি একটু অবাক হওয়ার ভঙ্গি করে বললাম ভালো করে চিনিই না প্রেমে পরে যাবো এত সহজ!
সহজ রে বন্ধু সহজ প্রেমের ক্ষেত্রে সবই সম্ভব।
আমি আর কিছু না বলে, মেয়েকে আর একবার বিদায়ের মত টাটা দিয়ে সেখান থেকে চলে এলাম।


বেশ কিছু দিন হয়ে গেল, মেয়েটার সাথে দেখা হয় না। কিভাবে হবে! আমি আমার চাকরির জন্য লেখাপড়া নিয়ে ব্যাস্ত, ওই দিকে আর যাওয়া হয় না কিন্তু তাকে ভুলে গেছি তা বলা যাবে না। দিনের প্রতিটি অবসর তার কথা ভেবেই ব্যায় করেছি।

এমনই কোন এক দিন আমার বাসার নিচের মুদি দোকানে তার সাথে দেখা, আমি জিজ্ঞেস করলাম ''কেমন আছেন? '' সে কোন কথা না বলে মাথা নেরে ভালো বলে চলে গেল।
আমি ভাবলাম, কথা বললে নানান মানুষ নানান কথা বলবে এই ভেবে হয়তো চলে গেছে।

অনেক চেষ্টার পর ভালো একটা চাকরি পেয়েই গেলাম। কিছু দিন আগে যে বাবা মার কাছে আমি ছিলাম সব থেকে যন্ত্রনা দায়ক সেই আমিই হয়ে গেলাম সোনার ছেলে। স্মৃতির পাতা থেকে খুজে খুজে আমার প্রিয় সব কিছুই দেখা যাওয়া শুরু হলো খাবারের তালিকায়।

আর কিছু দিন যেতে না যেতেই একদিন বাবা বললেন, দেখ বাবা আমরা বুড়ো মানুষ। তোর মা সারাদিন বাসায় একলা থাকে কাউকে যদি পাশে পেত কত ভালো হতো।

আমি বললাম, ''ফাতেমার মা কে বলে তার মেয়েকে বাসায় রেখে নাও।''
বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, বাবা তুই বুঝতে পারছিস না আমি কি বলতে চাচ্ছি।
আমি এবার ঠিকই বুঝতে পারলাম। কিছু না বলে একটু লজ্জা পাচ্ছি এই বুঝিয়ে বাবার সামনে থেকে চলে আসলাম।

আমি সামিয়ার কথা ভাবছি, আমি তাকে ভালোবাসি বাবা- মাকে কি সেই কথা শেয়ার করবো? যার সাথে কিছু দিন দেখা ছাড়া আর কিছুই হইনি তার কথা কিভাবে বলি সে কি আমায় ভালোবাসে? এই কথাটা জানা উচিত। আমি কিছু না ভেবেই চলে গেলাম আমার ওই বন্ধুর বাসার ছাদে। দেখলাম সামিয়া তার বাসার ছাদেই আছে।

আমি তাকে ইশারায় ছাদে থাকতে বলে বন্ধুর ছাঁদ থেকে নেমে, সামিয়াদের বাসার ছাদের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।

আমি ছাদে উঠেই দেখি সে আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আমি অন্যকিছুই ভাবছি না, সামিয়ার দিকে এগিয়ে গিয়েই বললাম, -আমি তোমাকে একটা কথা বলবো। "আমি তোমাকে ভালোবাসি"। এই কথা বলেই নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।
উপরে চোখ তুলতেই দেখি, অশ্রু সিক্ত নয়নে সে আমার দিকে তাকিয়ে ।
আমার চোখে চোখ পরতেই চোখ নামিয়ে ফুফিয়ে কেঁদে উঠলো। আমি বেপারটা কিছু না বুঝে আরো কাছে গিয়ে হাত দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলাম।
দেখলাম কান্না থামছেই না। এরপর সে আমাকে যা বলার চেষ্টা করলো তাতে আমিও আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি, - সে কথা বলতে পারেনা।

আমার পক্ষে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না, আর কিছুক্ষন থাকলে আমি চিৎকার করে কান্না শুরু করবো।

আমি তাকে বলে আসলাম আমি আবার আসবো।
আমি তাকে আগে পছন্দ করতাম, আর এখন ভালোবাসি। নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি, কারন সে আমার কাছে রাজকন্না থেকেও দামি।

আমি আমার এক বন্ধুকে পাঠালাম তার বাবার সাথে কথা বলার জন্য। সেই বন্ধু ফিরে এসে বললো, ওর বাবা আমার সাথে সরাসরি কথা বলতে চায়। আর সেই কারনে আমাকে তাদের বাসায় যেতে বললো।

আমি তার বাবার সাথে কথা বলে জানতে পারি, ও জন্মের পর থেকে এমন না। যখন অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ে তখন এক দূর্ঘটনায় তার ভয়েজ কড ছিড়ে যায়। ডাক্টার বলেছে তাকে আর ভালো করা সম্ভব না। সে তার পরেও তার অনার্স শেষ করেছে। কিন্তু এই সমস্যার জন্য তার বিয়ে দিতে পারছে না।
আমি বলে আসলাম, আপনি চিন্তা করবেন না দুই এক দিনের মধ্যেই

আমার বাবা- মাকে আপনাদের বাসায় পাঠাবো।

আমি মা কে সব কথা খুলে বললাম, তিনি কিছুই বললেন না। শুধু বললেন সব কথা তোর বাবারও জানা উচিত আমি তাকে সব কিছু বলি দেখি সে কি বলে?

এরই মাঝে ঠিক মাঝ দুপুরে অফিসে বসে চা খাচ্ছি, এমন সময় আমার কাছে একটা ফোন আসে। সারিরা নাকি ছাঁদ থেকে লাফ দিয়েছে এবং সেখানেই নাকি তার মৃত্যু হয়েছে। কত সহজে কথা গুলো বলে ফেললাম।
কিন্তু সেই দিন, ঠিক সেই সময়য়ে আমার কিছু বলার বা কান্না করার মতো ও শক্তি ছিলো না। আমি অফিসে কিছু না বলে বের হয়ে আসি।

আমি রেল লাইনের ঊপর দাঁড়িয়ে আছি, ''যেই পৃথিবী আমার মনের রাজকন্নাকে বাচতে দেয়নি আমি কোন অধিকারে সেই পৃথিবীতে বেচে থাকবো!''

এমন সময় দেখি একটা ট্রেন আসছে, আমি কানে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে আছি।
হঠাৎ করে অনুভব করলাম, কেউ আমাকে ধাক্কা দিলো। তারপরেও ট্রেনের
এক অংশের ধাক্কায় আমার বাম পা আর বাম হাত ভেঙ্গে গেছে। আর মাথার আঘাতের কারনে আমিও এখন কথা বলতে পারিনা।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

লিখেছেন আবু ছােলহ, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৮

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

গুগল থেকে নেয়া ছবি।

সামুতে মাল্টি নিক নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। অনেকের কাছে মাল্টি যন্ত্রণারও কারণ। শুধু যন্ত্রণা নয়, নরক যন্ত্রণাও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×