আমি, রবি আর শোভন খুব ছোটবেলার বন্ধু । আমরা তিন জন বসে আছি আজিমপুর কলনীর সবুজ ঘেরা এক চত্ত্বরে, চারিদিকে কাঠবাদাম আর কদম ফুলের গাছ।
আষাঢ মাস। ঝিরঝির বৃষ্টি হচ্ছে। আর সেই বৃষ্টির ছোয়া পেয়ে অনেক আগেই কদম ফুল ফুটে রয়েছে। কদম ফুলের পাগল করা মিষ্টি গন্ধ আর সাথে বৃষ্টি । অসাধারন পরিবেশ। কেমনযেন রোমান্টিক আবহাওয়া।
বন্ধুরা মিলে গল্প করছি, এমন সময় দেখলাম একটু দূরে আর একটি চত্ত্বরে বসে তিনটি মেয়ে হাসি তামাসা করছে। একটু লক্ষ করতেই দেখলাম তারা আমাদের উদেশ্য করেই হাসছে।
তাদেরকে লক্ষ করতে গিয়ে বোধহয় একটু বেশিই তাকিয়ে ছিলাম, এর মধ্যে ঘটলো অন্য ঘটনা। তাদের মধ্যে একজন আমাকে ভেংচি কেটে দিলো। আমি রীতিমত অবাক।
হঠাৎ করে বৃষ্টির আচ একটু বৃদ্ধি পাওয়ায় কোন উপায় না পেয়ে তাদের সামনের এক বিল্ডিং এ আস্রয় নিতে হলো।
তাদের মধ্যে সবথেকে যে লম্বা ছিলো শোভনের নাকি তাকে ভালো লাগছে। আর রবির তাদের কারো প্রতি তেমন কোন আগ্রহ ছিলো না। আর তাদের মধ্যেও দেখলাম একজন ঠিক রবির মত এবং অদ্ভুত বেপার তারা দুই জনেই চশমা পরে।
বৃষ্টির আচ তখন খুব বেশি তার পরেও কোথাও আশ্রয় নেয়ার প্রতি তাদের কোন আগ্রহ নেই। আমি অনেকটা গায়ে পরেই বললাম ইচ্ছে হলে এখানে এসে দাড়াতে পারেন, আর যদি আমাদের পাশে দড়াতে অসুবিধে হয় বলুন আমরা অন্য আর একটি বিল্ডিং এ চলে যাই।
তাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বেশি চঞ্চল জবাবটা সেই দিলো, ''না ভাইয়া আমাদের কোন প্রবলেম হচ্ছে না আমরা এখানেই ঠিক আছি।''
মেয়েটা চঞ্চন কিন্তু আর দুই জনের মত তেমন সুন্দর না, তারপরেও যেহেতু সে তাদের বন্ধু তাই আমিও একটু আগ্রহ দেখিয়ে বললাম আপনাদের সবার কি একই মত?
- আবার সেই মেয়েটি, ''হ্যা আমাদের সবার একই মত। ''
- আপনাদের মধ্যে কি শুধু আপনিই কথা বলতে পারেন?তো কথা রানী আপনার নামটা কি?(আমার ভাষা প্রয়োগ শুনে আমিই রীতিমত অবাক। এটা আমি কি বললাম!)
ভেবেছিলাম মেয়েটি আমার কথা শুনে রেগে যাবে কিন্তু ঘটনা ঘটলো উল্টো, সে মুচকি হাসছে।
- না, শুধু আমি কেন কথা বলতে পরবো আমারা সবাই কথা বলতে পারি।
- ও! তাই কিন্তু মনে তো হচ্ছে না। আপনারা কথা বলতে পারেন!
(মনে হলো এই কথাটা সবার ইগোতে গিয়ে আঘাত হানছে, সবাই একই সাথে মনে উঠলো।)
- আপনার কি মনে হচ্ছে আমরা বোবা?
- আমি একটু হাসি মুখ করে বললাম এখন মনে হচ্ছে না। আপনারা বৃষ্টিতে না ভিজে এখানে এসে দাড়ান।
- এবার শোভনের পছন্দ করে মেয়ের জবাব না আমাদের ভিজতে খুব ভালো লাগছে।
- যেহেতু কথ বলেছে লম্বা মেয়ে জবাবটা শোভনকে দেওয়ার জন্য আমি খোচা দিলাম। শোভন বলে উঠলো আমরা কি আসতে পারি?
আমি শোভনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি, (পোলা এটা কি বললো!)
- সেই লম্বা মেয়ে একটু রেগে গিয়ে বললো আপনাদের ভিজতে ইচ্ছে হলে ভিজবেন, আমাদের সাথে কেন ভিজতে হবে?
- আমি ঘটনাটা সামাল দেয়ার জন্য চঞ্চল মেয়েকে উদ্দেশ্য কতে বললাম আপনার নামটা কিন্তু জিজ্ঞেস করেছিলাম!
- ও সরি! আমি তোয়া।
(মেয়ের এত আগ্রহ কেন এই সময়ের মধ্যে সরি বলাও শুরু করে দিছে। )
- খুব সুন্দর নাম। (আমি ভাবলাম এই সুযোগ, এর সাথে যোগাযোগ রাখা সম্ভব। আর এর সাথে যোগাযোগ মানে অন্যদের সাথেও যোগাযোগ রাখা। ) আর তাই সুযোগ বুঝে আমি বলে দিলাম , এত সুন্দর নামের অধিকারীনীর সাথে বন্ধুত্ব করা যায়?
- অন্য বদ্ধুরা কেমন একটা সায় দেয়ার চোখে তার দিকে তাকালো। মেয়েটা কিছু না বলেই বলো, ভাইয়া আমাদের যেতে হবে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
- আমি ভাবলাম এখন কি করি , মেয়েটা চলে যাচ্ছে সামনে সামনে তার আর অন্য দুই বদ্ধু একটু ধীরে হাটছে। আমি সেই চশমা পরিহীতা মেয়েকে বললাম, প্লিজ, তোয়ার নাম্বারটা দেয়া যাবে?
দেখলাম সে তার মোবাইল বের করে কি যেন খুজছে, পাশের লম্বা মেয়েটিও তাকে সাহায্য করলো।
দুই জনের সহযোগীতা দেখে আমার মনে হলো এতে অবশ্যই তোয়ার সম্মতি আছে।
- নাম্বার নিয়ে আমি চলে আসলাম আর ওরা চলে যাচ্ছে, এমন সময় তোয়া পেছন ঘুরে এমন একটা মুচকি হাসি দিলো! আমি তো অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছি। কে বলে এই মেয়ে তাদের মধ্যে কম সুন্দরি!
বিভিন্ন ব্যাস্ততার কারনে সেই দিন আর কল দেওয়া হয়নি।
পরের দিন ঠিক সেই সময়ে সেখানেই বসে ছিলাম, এমন সময় শোভন এসে বললো কিরে তোর তোয়ার খবর কি?
আমি বললাম কোন তোয়া! শোভন অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তুই ভুলে গেলি! কালকে না নাম্বার নিলি।
- ও! তাই বল আমি কি কল দেওয়ার জন্য ফোন দিছি নাকি! আমিতো ফান করছি।
- ফান করছিস ভালো কথা একবার কল দিয়ে দেখনা।
অনেকটা শোভনের জোড়া জুরিতেই কল দিলাম।
- কল হচ্ছে............।
খুব মিষ্টি একটা কন্ঠে একজন বলে উঠলো, হ্যালো।
- আমি কি মিস তোয়ার সাথে কথা বলছি?
- জ্বি আমি তোয়া। কিন্তু সরি আপনাকে ঠিক!
- আমার নাম বললে চিনবেন কিনা জানি না, তবে আমার পরিচয় দিচ্ছি। আপনার সাথে গতকাল দুপুরে বৃষ্টির সময় কথা হয়েছে।
- আপনি! ওয়াও! (এত জোরে চিৎকার দিলো যে আমার কানে দেয়া ফোনের কথা শোভন পর্যন্ত শুনতে পেল।) আচ্ছা আপনি ফোন দিতে এত লেট করলেন কেন? জানেন কালকে সারারাত আপনার ফোনের অপেক্ষায় ছিলাম অনেক অনেক বছর পর আজকে ফজরের নামাজ পরছি তারপর ঘুমাইছি। শুধু মাত্র আপনার জন্য অপেক্ষা করে।
(তার কথা শুনে মনে হলো আমি তার কত দিনের পরিচিত।)
আমি তাকে সরি বললাম। আরো কিছুখন কথা বলার পরে বুঝতে পারলাম আজকে মনে হয় তার কথা আর শেষ হবে না।
পরিশেষে বললাম এখন আমার একটু কাজ আছে আপনাকে রাতে কল দিবো। সে বার বার করে বলে দিলো কল দিবেন কিন্তু, আমি অপেক্ষা করবো।
- আমি বললাম আচ্ছা ঠিক আছে, আপনাকে কল দেওয়ার জন্য আমার সেরাটাই চেষ্টা করবো।
শোভন আমাকে জিজ্ঞেস করলো কি কথা হলো! আমি বললাম সবইতো শুনতে পাইলি।
তারপরেও বল কি কি কথা হইলো আর কেমন মনে হইলো?
- আমি বললাম, কি বেপার! তোমার জন্য আর একটা খবর আছে লম্বা মেয়ের নাম জানতে পারছি, ওর নাম নীলিমা।
-আরে! আমি ওই মেয়ের নাম দিয়া কি করবো অন্য কি খবর তা বলো।
- আরে খবরতো খবর। এই মেয়ে দেখি পাগল, আমি নিশ্চিত এই মেয়ে আমার প্রেমে পরছে,
-দোস্ত এটা হইছে বয়সের দোষ, কেন! ওই বয়সে আমরা বুঝি কারো প্রেমে পরিনি!
- আরে প্রেমে পরবি ঠিক আছে কিন্তু তাই বলে নাওয়া খাওয়া ঘুম বাদ দিয়া দিবে?
-এমনটাও হয়, যদি তা প্রথম প্রেম হয়।
- তাইলে তুই আমারে কি করতে বলিস? আমি শোভনকে জিজ্ঞাস করলাম।
- কিছু দিন প্রেম কর এরপর বুঝায়া দিবি তুই শুধু ওর ফ্রেন্ড ছিলি।
আমি একটু ভাবনায় পরে গেলাম শুধু ফ্রেন্ড ছিলাম কিভাবে বলবো? তোয়াকে দেখে যা মনে হয় আমার থেকে কম করে হলেও পাঁচ বছরে জুনিয়র হবে। এত বছরের জুনিয়র কারো সাথে শুধু বন্ধুত্ব করা যায় আমার জানা নেই!
~।
_। সেই দিনের পর থেকে তোয়ার সাথে প্রায় কথা হতো, কোন দিন আমি ফোন দিতে ভুলে গেলে রাত বারটার দিকে ফোন দিয়ে কান্না জুড়ে দিতো । কোন কোন দিন বকা দিতাম আবার কোন কোন দিন মনে হতো কত কষ্ট পাইলে একটা মেয়ে কোন স্বল্প পরিচিত কারো কাছে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে পারে, এই ভেবে খুব ইমোশনাল হয়ে পরতাম। আবার ঠিক পরক্ষনেই ভাবতাম এই মেয়ে আমাকে ইমোশনানি ব্যাকমেইল করছে না তো!
সামনে তোয়ার জন্মদিন, আমাদের পরিচয়ের এখন প্রায় তিন মাস। এই তিন মাসে আমাদের আর একদিনও দেখা হয় নি, সত্য কথা বললে আমার সদিচ্ছার অভাবের কারনেই দেখা হয় নি। কোন দিন বলেছি আমার পরিক্ষা , কোন সময় আমি এখন ঢাকার বাইরে, কোন দিন বা এই সেই বুঝিয়ে দিয়েছি। আশ্চর্যের বিষয় আমি ছাতা-মাতা যা বলতাম তাই অন্ধভক্তের মত বিশ্বাস করতো। আর তাই এই বিশ্বাসকে মর্যাদা দিতে ইচ্ছে হতো, ইচ্ছে হতো তার সাথে দেখা করি তার প্রিয় কোন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাই। আবার ভাবতাম আমি তার কে যে তাকে বললেই সে আমার সাথে ঘুরতে যাবে! আমি বুঝতে পারতাম তোয়া আমাকে ভালোবাসে কিন্তু বাঙালী মেয়ে বুক ফাটে কিন্তু মুখ ফুটে না, এই অবস্থা।
রাত তখন দুইটা হবে, জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছি। দূরের সাজনা গাছের নরম ডাল বাতাসের তোরে একবার নিচে নামছে আবার পরক্ষনে উঠে যাচ্ছে, গাছের দিকে তাকি তাকিয়ে ভাবছি আমি কি তোয়াকে ভালোবাসি? যদি ভালোবাসি তাহলে আর লুকোচুরি কিসের বলে দিলেই হলো তাকে ভালোবাসি, সেও যদি ভালোবেসে থাকে তাহলেতো ভালোই হলো।
আর এমন সময়ই ফোন বেজে উঠলো! এত রাতে কে ফোন দিলো! ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি তোয়ার ফোন, এত রাতে কেন ফোন দিলো? কি হলো।
ফোন ধরেই একটু ব্যাস্ত হয়েই বললাম, এত রাতে সব কিছু ঠিক আছে তো?
- তোয়া একটু হেসে বললো, হ্যা সব কিছুই ঠীক আছে ঘুম আসছিলো না তাই তোমাকে ফোন দিয়ে দেখলাম ঘুমিয়ে পরছো কি না!
- না, এখনো ঘুমাইনি তোমার কথা ভাবছিলাম।
- সত্যি! আমার কথা! কি কারনে হঠাৎ করে তোমার চিন্তার কারন হয়ে গেলাম বলা যাবে?
- আমি বললাম, তোমাকে নিয়ে চিন্তা আর যদি তোমাকেই না বলি তাহলে সেই চিন্তার কোন মানে আছে?
- তাহলে বলো।
- বলবো একটু সবুর করো এত তারাহুড়ো ভালো না।
- কবে সেই সময় হবে সেটা কি বলা যায়?
- সময় সুযোগ বুঝেই বলবো। তোমাকে আর মনে করতে হবে না।
-হঠাৎ করে তোয়া বললো, আসলে তোমার কথা খুব মনে পরছিলো আর তাই ঘুমও আসছিলো না তাই তোমাকে ফোন দিয়েছি, তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো কিন্তু এখন বললো না যখন তুমি তোমার কথা বলবে তখন বলবো।
- আচ্ছা ঠিক আছে আমি বলার পরেই বলো।
আমি ভাবছি অনেক দিনই তো পরিচয় কিন্তু তোয়া সম্পর্কে অনেক কিছুই জানা হয়নি আর তাই ভাবলাম রাতে যেহেতু অনেক সময় আছে আমারও ঘুম আসার কোন লক্ষন দেখা যাছে না কথা গুলো জিজ্ঞেস করেই ফেলি।
- আচ্ছা তোয়া তোমার পরিবারে কে কে আছে আমাকে তো বললে না।
- কি বলো এখনো জানো না! আমি বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে আর তিন ভাইয়ের একমাত্র আদরের বোন।
- আমি একটু একটু হেসে বললাম, বাবাহ! কত আদরের । আমি কিন্তু এত আদরের না, আমরা দুই ভাই আমি ছোট। কোন বোন নেই।
- তোমরাও তো খুব হ্যাপি ফেমিলি।
- হ্যা, আমি অস্বীকার করবো না। তো তোমাকে কে বেশি ভালোবাসে অঙ্কেল নাকি আন্টি?
- আব্বু ব্যাবসায়ী মানুষ আমাকে দেয়ার মত তার সময় কোথায়?
(আমি বুঝে নিলাম তার বাবা ব্যাবসায়ী, মানে বলা চলে ধনীর দুলালী না হলেও সেই পর্যায়ের কিছুই হবে। আর তাই তো আর এত আবেগ, বাস্তব সম্পর্কে ধারনা নেই বললেই চলে।)
-তোয়া কিছুখন থেমে বললো তোমার বাবা কি করেন।
- আমি তেমন কিছু না ভেবেই বললাম কাজ বাবা করেন, তবে এখন আর তিনি কি কাজ করেন সেই খবর রাখি না, বলতে পারো প্রয়োজন হয় না। নিজের খরচ নিজেই এটা সেটা করে মিটিয়ে নেই।
- ও তাই বলো। তাহলে তো তোমাকে স্বাধীনচেতা বলা যায়?
যদিও তার সাথে কথা বলতে ভালোই লাগছিলো কিন্তু কোণ এক অদ্ভুত কারনে আমার ঘুম পাচ্ছে। আমি তাকে বুঝতে দিচ্ছি না, তবে কিছুখন পরে মনে হলো এই কথাটা বলা দরকার কারন আমি প্রায় কথার খেই হারিয়ে ফেলছি। আমার ঘুমের কথা বলার পরেও আরো ত্রিশ মিনিটের মত তাকে সহ্য করতে হলো আমি কিছুই বলতে পারিনি, নিবোধ বালকের মত সব কথা শুনে গেছি।
সেই দিনের মত কথা শেষ কিন্তু একটু আগের সেই গভীর ঘুম কোথায় যেন হারিয়ে গেল। আর সেই ঘুমের পরিবর্তে আমি এখন তোয়াকে নিয়ে ভাবছি।
তাহলে কি আমি তোয়ার প্রেমে পরেছি?
আমি নিজের সাথে মৌন যুদ্ধে আবর্তিত হয়েছি, আমি তোয়াকে ভালোবাসি নাকি তোয়া আমাকে ভালোবাসে। আবার এমনওতো হতে পারে সবই মোহ।
এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছে, একদিন হঠাৎ অসময়ে তোয়া আমাকে ফোন দিলো। আমি অবাক সে আমাকে আপনি করে বলছে, আর কিছু বোঝার আগেই মাঝ বয়সী এক মহিলার কন্ঠ।
আমি সালাম দিলাম। তিনি বললেন, বাবা তুমি তো অনেক ছাত্রই পড়াও আমার ছেলেটাকে একটু পড়াবে?
আমি বেপারটা আচ করতে পেরে বললাম, আচ্ছা। আপনার বাসার ঠিকানা দিয়ে দিন আমি আপনার বাসায় এসে বিস্তারিত কথা কথা বলে সব ঠিক করে নিবো।
সেই সময়ের মত ফোন রেখে দিলাম। মিনিট পাঁচেক পরেই আবার তোয়ার কল।
আমি হ্যালো বলতেই সে বললো কেমন অবাক করলাম?
-আমি বলি অবাক হইনি ভয় পেয়েছিলাম।
- ওরে বাবা তুমি ভয় পাও?
- কেন আমি কি ভয় পেতে পারিনা, আমি কি মানুষ না!
- কি মিস্টার রাগ করলে নাকি? রাগ করার মত কিছুই হয় নি। তিনি আমার খলা মনি, তুমি আর ছেলেকে পড়াবে। ও ক্লাস সিক্সে পড়ে, ভালো ছাত্র।
- আমি অবাক! কিভাবে সম্ভব করলে?
- আরে তুমি বুঝবে না, আমি বলছি তুমি আমার এক ফ্রেন্ডের ছোট ভাইকে পড়াও ওর কাছ থেকে তোমার খোজ পেয়েছে। আর একটা কথা প্রথমে অবশ্য খালামনিই আমাকে একটা টিচারের কথা বলেছিলো।
- তাহলে বেপার হচ্ছে তুমি চাচ্ছো আমি তোমার পরিবারে যাওয়ার জন্য যাতে করে একটা পারমিশন পাই? কিন্তু কি কারনে জানতে পারি?
আবার সেই সুনশান নিরবতা কারো মুখেই কথা নেই।
- আমি একটু হাসি দিয়েই বললাম আরে মজা করলাম। তোমার খালার বাসায় আসলে তোমার সাথে দেখা হবে এখন রাখি।
তোয়ার কাজিন রাহুলকে এখন নিয়মিতই পড়াই, তবে ছেলেটা ছোট হলেও তোয়া বা তার পরিবার সম্পর্কে যা বলে আমি বিশ্বাস করতে পারিন না।
তাহলে কি তোয়া এতদিন আমার সাথে মিথা বলেছে?
আমি তাকে তার খালার বাসায় আসতে বললাম, কারন সেই দিন রাহুলদের বাসায় রাহুল ছাড়া আর কেউ নেই। যতটুকু বুঝতে পেরেছি ছেলেটা আমাদের সমর্কে সবই জানে, তাই তার সামনে কথা বলতে তেমন কোণ সমস্যা হবে না।
আমি তোয়া সম্পর্কে যা যা শুনেছি একে একে সব বললাম, দেখিও কাদঁছে।
-আমি বললাম কাদার কি আছে যা সত্যি তাই বলো।
-ও বললো আমি তোমাকে সব কথা মিথ্যা বলিনি, কিছু কিছু মিথ্যা বলেছি। কারন তোমাকে যে দিন প্রথম দেখি সেই দিনই বলতে পারো আমি তোমার প্রেমে পরে গেছি। আমি তোমাকে হারাতে চাইনি, আর সে কারনেই কিছু কথা মিথ্যা বলেছি।
আমার মেজার ভিষন খারাপ, ইচ্ছে করছিলো গালে কয়েকটা চর বসিয়ে দেই।
-তারপরেই নিজেকে সামনে নিয়ে বললাম, ভালোবাসা পাওয়ার জন্য প্রতারনার আশ্রয়!
-তুমি ভালো করেই জানো ভালোবাসার জন্য সব কিছুই ফেয়ার।
-এতটুকু মেয়ের কাছ থেকে এমন কথা শুনতে হবে আমি নিজেও ভাবিনি।
আমার পক্ষে আর কিছু বলা সম্ভব ছিলো না, আমি রাহুলের খোজ করতে শুরু করলাম। অনেক্ষন ডাকার পরেও তার সার না পেয়ে এ ঘর খুজেও পেলাম না। মানে হচ্ছে আমি যখন তোয়ার সাথে কথা বলছিলাম তারই এক ফাকে ঘর থেকে বের হয়ে গেছে।
অর্থাৎ বাসায় এখন আমি আর তোয়া, এর মানে কি! অন্য কোন উদ্দেশ্য নাই তো!
আমি তোয়াকে বললাম রাহুল যেহেতু বাসায় নেই আমি চলে যাচ্ছি, তোমার সাথে পরে কথা হবে। তখন সব কিছু বললো।
দরজার কাছে গিয়ে দেখি বাহির থেকে দরজা লাগানো, আমার সাথে কি হতে যাচ্ছে? আর সব কিছু বিবেচনা করে মনে হলো যা হচ্ছে তার সবই পূর্ব পরিকল্পিত।
যেহেতু বাহির থেকে তালা দেয়া আমার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব না,
-এক ফ্রেন্ডকে ফোন দিয়ে বলাম আমি রাহুলদের বাসায় আছি একটু আয় তো।
ফোনে কথা শেষও করতে পারিনি, রাহুলের মা এসে হাজির। তিনি বললেন তুমি এখানে কি করছো, আর একি বাসায় দেখি তোয়াও। কি করছিলে তোমরা এতক্ষন? আমি বললাম কই না তো কিছুই করি নাই।
তিনি ধমকের সুরে বললেন, তুমি আমার বোনের মেয়ের সাথে যা খুশি তা করে যাবে আর আমি চেয়ে চেয়ে দেখবো? যা করছো তা ঘটে গেছে, এখন আমি বলি তুমি তোয়াকে বিয়ে করো এখনি। তা না হলে এলাকার মানুষ ডেকে এনে বলবো, একা পেয়ে তুমি তোয়াকে রেপ করেছো। একে বারে রেপ কেস।
আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। তোয়ার খালার চিল্লা চিল্লি শুনে ইতোঃমধ্যে পাশের ফ্ল্যাটের লোক জন চলে এসেছে, আর সাথে অনেক লোক জড়ো হয়ে গেছে।
এই সময় দেখি ভীর ঠেলে শোভন আমার কাছে এলো। আমি বললাম আমি এখন কি করবো? ওআমার কানে কানে বললো যা ঘটছে মেনে নে তা না হলে বিপদ আরো বাড়বে।
তাহলে তুই বলতে চাচ্ছিস সব কিছু জেনেও আমি তোয়াকে বিয়ে করবো?
-দেখ বিপদে পরলে অনেক কিছুই করতে হয়, আর এখন যদি তোর নামে রেপ কেস পরে তাহলে কি হবে! ভাবতে পারিস। জীবনে দুই তিনটা বিয়ে করলে যতটুকু না ঝামেলায় পরতে হয় তার থেকে বেশি ঝামেলা একটা সাধারন কেসও।
আমি বুঝতে পারছি না, শোওন আমার পক্ষে নাকি তাদের পক্ষে।
তবে ও আমাকে আর একটা বুদ্ধি দিলো যখন দেখবি সব কিছু শান্ত হয়ে গেছে তখন না হও ছেড়েদিবি।
আমি চেয়ারের উপর বসে আমি, পাশে তোয়া, চার পাশে শ'খানেক লোক আর সামনে বসে কাজী।
ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস আমাকে নিরবে মেনে নিতে হচ্ছে।
আমি ইচ্ছে করলে আমার বাব-মা কে ডাকতে পারতাম কিন্তু লোকজন যখন বলবে আমি তোয়ার সাথে খারাপ কাজ করেছি তখন যে পরিমান কষ্ট পাবে তার থেকে নতুন বঊ নিয়ে বাসায় গেলে তার সিকি পরিমান কষ্টও পাবে না।
আমি, রবি আর শোভন খুব ছোটবেলার বন্ধু । আমরা তিন জন বসে আছি আজিমপুর কলনীর সবুজ ঘেরা এক চত্ত্বরে, চারিদিকে কাঠবাদাম আর কদম ফুলের গাছ।
আষাঢ মাস। ঝিরঝির বৃষ্টি হচ্ছে। আর সেই বৃষ্টির ছোয়া পেয়ে অনেক আগেই কদম ফুল ফুটে রয়েছে। কদম ফুলের পাগল করা মিষ্টি গন্ধ আর সাথে বৃষ্টি । অসাধারন পরিবেশ। কেমনযেন রোমান্টিক আবহাওয়া।
বন্ধুরা মিলে গল্প করছি, এমন সময় দেখলাম একটু দূরে আর একটি চত্ত্বরে বসে তিনটি মেয়ে হাসি তামাসা করছে। একটু লক্ষ করতেই দেখলাম তারা আমাদের উদেশ্য করেই হাসছে।
তাদেরকে লক্ষ করতে গিয়ে বোধহয় একটু বেশিই তাকিয়ে ছিলাম, এর মধ্যে ঘটলো অন্য ঘটনা। তাদের মধ্যে একজন আমাকে ভেংচি কেটে দিলো। আমি রীতিমত অবাক।
হঠাৎ করে বৃষ্টির আচ একটু বৃদ্ধি পাওয়ায় কোন উপায় না পেয়ে তাদের সামনের এক বিল্ডিং এ আস্রয় নিতে হলো।
তাদের মধ্যে সবথেকে যে লম্বা ছিলো শোভনের নাকি তাকে ভালো লাগছে। আর রবির তাদের কারো প্রতি তেমন কোন আগ্রহ ছিলো না। আর তাদের মধ্যেও দেখলাম একজন ঠিক রবির মত এবং অদ্ভুত বেপার তারা দুই জনেই চশমা পরে।
বৃষ্টির আচ তখন খুব বেশি তার পরেও কোথাও আশ্রয় নেয়ার প্রতি তাদের কোন আগ্রহ নেই। আমি অনেকটা গায়ে পরেই বললাম ইচ্ছে হলে এখানে এসে দাড়াতে পারেন, আর যদি আমাদের পাশে দড়াতে অসুবিধে হয় বলুন আমরা অন্য আর একটি বিল্ডিং এ চলে যাই।
তাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বেশি চঞ্চল জবাবটা সেই দিলো, ''না ভাইয়া আমাদের কোন প্রবলেম হচ্ছে না আমরা এখানেই ঠিক আছি।''
মেয়েটা চঞ্চন কিন্তু আর দুই জনের মত তেমন সুন্দর না, তারপরেও যেহেতু সে তাদের বন্ধু তাই আমিও একটু আগ্রহ দেখিয়ে বললাম আপনাদের সবার কি একই মত?
- আবার সেই মেয়েটি, ''হ্যা আমাদের সবার একই মত। ''
- আপনাদের মধ্যে কি শুধু আপনিই কথা বলতে পারেন?তো কথা রানী আপনার নামটা কি?(আমার ভাষা প্রয়োগ শুনে আমিই রীতিমত অবাক। এটা আমি কি বললাম!)
ভেবেছিলাম মেয়েটি আমার কথা শুনে রেগে যাবে কিন্তু ঘটনা ঘটলো উল্টো, সে মুচকি হাসছে।
- না, শুধু আমি কেন কথা বলতে পরবো আমারা সবাই কথা বলতে পারি।
- ও! তাই কিন্তু মনে তো হচ্ছে না। আপনারা কথা বলতে পারেন!
(মনে হলো এই কথাটা সবার ইগোতে গিয়ে আঘাত হানছে, সবাই একই সাথে মনে উঠলো।)
- আপনার কি মনে হচ্ছে আমরা বোবা?
- আমি একটু হাসি মুখ করে বললাম এখন মনে হচ্ছে না। আপনারা বৃষ্টিতে না ভিজে এখানে এসে দাড়ান।
- এবার শোভনের পছন্দ করে মেয়ের জবাব না আমাদের ভিজতে খুব ভালো লাগছে।
- যেহেতু কথ বলেছে লম্বা মেয়ে জবাবটা শোভনকে দেওয়ার জন্য আমি খোচা দিলাম। শোভন বলে উঠলো আমরা কি আসতে পারি?
আমি শোভনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি, (পোলা এটা কি বললো!)
- সেই লম্বা মেয়ে একটু রেগে গিয়ে বললো আপনাদের ভিজতে ইচ্ছে হলে ভিজবেন, আমাদের সাথে কেন ভিজতে হবে?
- আমি ঘটনাটা সামাল দেয়ার জন্য চঞ্চল মেয়েকে উদ্দেশ্য কতে বললাম আপনার নামটা কিন্তু জিজ্ঞেস করেছিলাম!
- ও সরি! আমি তোয়া।
(মেয়ের এত আগ্রহ কেন এই সময়ের মধ্যে সরি বলাও শুরু করে দিছে। )
- খুব সুন্দর নাম। (আমি ভাবলাম এই সুযোগ, এর সাথে যোগাযোগ রাখা সম্ভব। আর এর সাথে যোগাযোগ মানে অন্যদের সাথেও যোগাযোগ রাখা। ) আর তাই সুযোগ বুঝে আমি বলে দিলাম , এত সুন্দর নামের অধিকারীনীর সাথে বন্ধুত্ব করা যায়?
- অন্য বদ্ধুরা কেমন একটা সায় দেয়ার চোখে তার দিকে তাকালো। মেয়েটা কিছু না বলেই বলো, ভাইয়া আমাদের যেতে হবে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
- আমি ভাবলাম এখন কি করি , মেয়েটা চলে যাচ্ছে সামনে সামনে তার আর অন্য দুই বদ্ধু একটু ধীরে হাটছে। আমি সেই চশমা পরিহীতা মেয়েকে বললাম, প্লিজ, তোয়ার নাম্বারটা দেয়া যাবে?
দেখলাম সে তার মোবাইল বের করে কি যেন খুজছে, পাশের লম্বা মেয়েটিও তাকে সাহায্য করলো।
দুই জনের সহযোগীতা দেখে আমার মনে হলো এতে অবশ্যই তোয়ার সম্মতি আছে।
- নাম্বার নিয়ে আমি চলে আসলাম আর ওরা চলে যাচ্ছে, এমন সময় তোয়া পেছন ঘুরে এমন একটা মুচকি হাসি দিলো! আমি তো অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছি। কে বলে এই মেয়ে তাদের মধ্যে কম সুন্দরি!
বিভিন্ন ব্যাস্ততার কারনে সেই দিন আর কল দেওয়া হয়নি।
পরের দিন ঠিক সেই সময়ে সেখানেই বসে ছিলাম, এমন সময় শোভন এসে বললো কিরে তোর তোয়ার খবর কি?
আমি বললাম কোন তোয়া! শোভন অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তুই ভুলে গেলি! কালকে না নাম্বার নিলি।
- ও! তাই বল আমি কি কল দেওয়ার জন্য ফোন দিছি নাকি! আমিতো ফান করছি।
- ফান করছিস ভালো কথা একবার কল দিয়ে দেখনা।
অনেকটা শোভনের জোড়া জুরিতেই কল দিলাম।
- কল হচ্ছে............।
খুব মিষ্টি একটা কন্ঠে একজন বলে উঠলো, হ্যালো।
- আমি কি মিস তোয়ার সাথে কথা বলছি?
- জ্বি আমি তোয়া। কিন্তু সরি আপনাকে ঠিক!
- আমার নাম বললে চিনবেন কিনা জানি না, তবে আমার পরিচয় দিচ্ছি। আপনার সাথে গতকাল দুপুরে বৃষ্টির সময় কথা হয়েছে।
- আপনি! ওয়াও! (এত জোরে চিৎকার দিলো যে আমার কানে দেয়া ফোনের কথা শোভন পর্যন্ত শুনতে পেল।) আচ্ছা আপনি ফোন দিতে এত লেট করলেন কেন? জানেন কালকে সারারাত আপনার ফোনের অপেক্ষায় ছিলাম অনেক অনেক বছর পর আজকে ফজরের নামাজ পরছি তারপর ঘুমাইছি। শুধু মাত্র আপনার জন্য অপেক্ষা করে।
(তার কথা শুনে মনে হলো আমি তার কত দিনের পরিচিত।)
আমি তাকে সরি বললাম। আরো কিছুখন কথা বলার পরে বুঝতে পারলাম আজকে মনে হয় তার কথা আর শেষ হবে না।
পরিশেষে বললাম এখন আমার একটু কাজ আছে আপনাকে রাতে কল দিবো। সে বার বার করে বলে দিলো কল দিবেন কিন্তু, আমি অপেক্ষা করবো।
- আমি বললাম আচ্ছা ঠিক আছে, আপনাকে কল দেওয়ার জন্য আমার সেরাটাই চেষ্টা করবো।
শোভন আমাকে জিজ্ঞেস করলো কি কথা হলো! আমি বললাম সবইতো শুনতে পাইলি।
তারপরেও বল কি কি কথা হইলো আর কেমন মনে হইলো?
- আমি বললাম, কি বেপার! তোমার জন্য আর একটা খবর আছে লম্বা মেয়ের নাম জানতে পারছি, ওর নাম নীলিমা।
-আরে! আমি ওই মেয়ের নাম দিয়া কি করবো অন্য কি খবর তা বলো।
- আরে খবরতো খবর। এই মেয়ে দেখি পাগল, আমি নিশ্চিত এই মেয়ে আমার প্রেমে পরছে,
-দোস্ত এটা হইছে বয়সের দোষ, কেন! ওই বয়সে আমরা বুঝি কারো প্রেমে পরিনি!
- আরে প্রেমে পরবি ঠিক আছে কিন্তু তাই বলে নাওয়া খাওয়া ঘুম বাদ দিয়া দিবে?
-এমনটাও হয়, যদি তা প্রথম প্রেম হয়।
- তাইলে তুই আমারে কি করতে বলিস? আমি শোভনকে জিজ্ঞাস করলাম।
- কিছু দিন প্রেম কর এরপর বুঝায়া দিবি তুই শুধু ওর ফ্রেন্ড ছিলি।
আমি একটু ভাবনায় পরে গেলাম শুধু ফ্রেন্ড ছিলাম কিভাবে বলবো? তোয়াকে দেখে যা মনে হয় আমার থেকে কম করে হলেও পাঁচ বছরে জুনিয়র হবে। এত বছরের জুনিয়র কারো সাথে শুধু বন্ধুত্ব করা যায় আমার জানা নেই!
~।
_। সেই দিনের পর থেকে তোয়ার সাথে প্রায় কথা হতো, কোন দিন আমি ফোন দিতে ভুলে গেলে রাত বারটার দিকে ফোন দিয়ে কান্না জুড়ে দিতো । কোন কোন দিন বকা দিতাম আবার কোন কোন দিন মনে হতো কত কষ্ট পাইলে একটা মেয়ে কোন স্বল্প পরিচিত কারো কাছে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে পারে, এই ভেবে খুব ইমোশনাল হয়ে পরতাম। আবার ঠিক পরক্ষনেই ভাবতাম এই মেয়ে আমাকে ইমোশনানি ব্যাকমেইল করছে না তো!
সামনে তোয়ার জন্মদিন, আমাদের পরিচয়ের এখন প্রায় তিন মাস। এই তিন মাসে আমাদের আর একদিনও দেখা হয় নি, সত্য কথা বললে আমার সদিচ্ছার অভাবের কারনেই দেখা হয় নি। কোন দিন বলেছি আমার পরিক্ষা , কোন সময় আমি এখন ঢাকার বাইরে, কোন দিন বা এই সেই বুঝিয়ে দিয়েছি। আশ্চর্যের বিষয় আমি ছাতা-মাতা যা বলতাম তাই অন্ধভক্তের মত বিশ্বাস করতো। আর তাই এই বিশ্বাসকে মর্যাদা দিতে ইচ্ছে হতো, ইচ্ছে হতো তার সাথে দেখা করি তার প্রিয় কোন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাই। আবার ভাবতাম আমি তার কে যে তাকে বললেই সে আমার সাথে ঘুরতে যাবে! আমি বুঝতে পারতাম তোয়া আমাকে ভালোবাসে কিন্তু বাঙালী মেয়ে বুক ফাটে কিন্তু মুখ ফুটে না, এই অবস্থা।
রাত তখন দুইটা হবে, জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছি। দূরের সাজনা গাছের নরম ডাল বাতাসের তোরে একবার নিচে নামছে আবার পরক্ষনে উঠে যাচ্ছে, গাছের দিকে তাকি তাকিয়ে ভাবছি আমি কি তোয়াকে ভালোবাসি? যদি ভালোবাসি তাহলে আর লুকোচুরি কিসের বলে দিলেই হলো তাকে ভালোবাসি, সেও যদি ভালোবেসে থাকে তাহলেতো ভালোই হলো।
আর এমন সময়ই ফোন বেজে উঠলো! এত রাতে কে ফোন দিলো! ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি তোয়ার ফোন, এত রাতে কেন ফোন দিলো? কি হলো।
ফোন ধরেই একটু ব্যাস্ত হয়েই বললাম, এত রাতে সব কিছু ঠিক আছে তো?
- তোয়া একটু হেসে বললো, হ্যা সব কিছুই ঠীক আছে ঘুম আসছিলো না তাই তোমাকে ফোন দিয়ে দেখলাম ঘুমিয়ে পরছো কি না!
- না, এখনো ঘুমাইনি তোমার কথা ভাবছিলাম।
- সত্যি! আমার কথা! কি কারনে হঠাৎ করে তোমার চিন্তার কারন হয়ে গেলাম বলা যাবে?
- আমি বললাম, তোমাকে নিয়ে চিন্তা আর যদি তোমাকেই না বলি তাহলে সেই চিন্তার কোন মানে আছে?
- তাহলে বলো।
- বলবো একটু সবুর করো এত তারাহুড়ো ভালো না।
- কবে সেই সময় হবে সেটা কি বলা যায়?
- সময় সুযোগ বুঝেই বলবো। তোমাকে আর মনে করতে হবে না।
-হঠাৎ করে তোয়া বললো, আসলে তোমার কথা খুব মনে পরছিলো আর তাই ঘুমও আসছিলো না তাই তোমাকে ফোন দিয়েছি, তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো কিন্তু এখন বললো না যখন তুমি তোমার কথা বলবে তখন বলবো।
- আচ্ছা ঠিক আছে আমি বলার পরেই বলো।
আমি ভাবছি অনেক দিনই তো পরিচয় কিন্তু তোয়া সম্পর্কে অনেক কিছুই জানা হয়নি আর তাই ভাবলাম রাতে যেহেতু অনেক সময় আছে আমারও ঘুম আসার কোন লক্ষন দেখা যাছে না কথা গুলো জিজ্ঞেস করেই ফেলি।
- আচ্ছা তোয়া তোমার পরিবারে কে কে আছে আমাকে তো বললে না।
- কি বলো এখনো জানো না! আমি বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে আর তিন ভাইয়ের একমাত্র আদরের বোন।
- আমি একটু একটু হেসে বললাম, বাবাহ! কত আদরের । আমি কিন্তু এত আদরের না, আমরা দুই ভাই আমি ছোট। কোন বোন নেই।
- তোমরাও তো খুব হ্যাপি ফেমিলি।
- হ্যা, আমি অস্বীকার করবো না। তো তোমাকে কে বেশি ভালোবাসে অঙ্কেল নাকি আন্টি?
- আব্বু ব্যাবসায়ী মানুষ আমাকে দেয়ার মত তার সময় কোথায়?
(আমি বুঝে নিলাম তার বাবা ব্যাবসায়ী, মানে বলা চলে ধনীর দুলালী না হলেও সেই পর্যায়ের কিছুই হবে। আর তাই তো আর এত আবেগ, বাস্তব সম্পর্কে ধারনা নেই বললেই চলে।)
-তোয়া কিছুখন থেমে বললো তোমার বাবা কি করেন।
- আমি তেমন কিছু না ভেবেই বললাম কাজ বাবা করেন, তবে এখন আর তিনি কি কাজ করেন সেই খবর রাখি না, বলতে পারো প্রয়োজন হয় না। নিজের খরচ নিজেই এটা সেটা করে মিটিয়ে নেই।
- ও তাই বলো। তাহলে তো তোমাকে স্বাধীনচেতা বলা যায়?
যদিও তার সাথে কথা বলতে ভালোই লাগছিলো কিন্তু কোণ এক অদ্ভুত কারনে আমার ঘুম পাচ্ছে। আমি তাকে বুঝতে দিচ্ছি না, তবে কিছুখন পরে মনে হলো এই কথাটা বলা দরকার কারন আমি প্রায় কথার খেই হারিয়ে ফেলছি। আমার ঘুমের কথা বলার পরেও আরো ত্রিশ মিনিটের মত তাকে সহ্য করতে হলো আমি কিছুই বলতে পারিনি, নিবোধ বালকের মত সব কথা শুনে গেছি।
সেই দিনের মত কথা শেষ কিন্তু একটু আগের সেই গভীর ঘুম কোথায় যেন হারিয়ে গেল। আর সেই ঘুমের পরিবর্তে আমি এখন তোয়াকে নিয়ে ভাবছি।
তাহলে কি আমি তোয়ার প্রেমে পরেছি?
আমি নিজের সাথে মৌন যুদ্ধে আবর্তিত হয়েছি, আমি তোয়াকে ভালোবাসি নাকি তোয়া আমাকে ভালোবাসে। আবার এমনওতো হতে পারে সবই মোহ।
এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছে, একদিন হঠাৎ অসময়ে তোয়া আমাকে ফোন দিলো। আমি অবাক সে আমাকে আপনি করে বলছে, আর কিছু বোঝার আগেই মাঝ বয়সী এক মহিলার কন্ঠ।
আমি সালাম দিলাম। তিনি বললেন, বাবা তুমি তো অনেক ছাত্রই পড়াও আমার ছেলেটাকে একটু পড়াবে?
আমি বেপারটা আচ করতে পেরে বললাম, আচ্ছা। আপনার বাসার ঠিকানা দিয়ে দিন আমি আপনার বাসায় এসে বিস্তারিত কথা কথা বলে সব ঠিক করে নিবো।
সেই সময়ের মত ফোন রেখে দিলাম। মিনিট পাঁচেক পরেই আবার তোয়ার কল।
আমি হ্যালো বলতেই সে বললো কেমন অবাক করলাম?
-আমি বলি অবাক হইনি ভয় পেয়েছিলাম।
- ওরে বাবা তুমি ভয় পাও?
- কেন আমি কি ভয় পেতে পারিনা, আমি কি মানুষ না!
- কি মিস্টার রাগ করলে নাকি? রাগ করার মত কিছুই হয় নি। তিনি আমার খলা মনি, তুমি আর ছেলেকে পড়াবে। ও ক্লাস সিক্সে পড়ে, ভালো ছাত্র।
- আমি অবাক! কিভাবে সম্ভব করলে?
- আরে তুমি বুঝবে না, আমি বলছি তুমি আমার এক ফ্রেন্ডের ছোট ভাইকে পড়াও ওর কাছ থেকে তোমার খোজ পেয়েছে। আর একটা কথা প্রথমে অবশ্য খালামনিই আমাকে একটা টিচারের কথা বলেছিলো।
- তাহলে বেপার হচ্ছে তুমি চাচ্ছো আমি তোমার পরিবারে যাওয়ার জন্য যাতে করে একটা পারমিশন পাই? কিন্তু কি কারনে জানতে পারি?
আবার সেই সুনশান নিরবতা কারো মুখেই কথা নেই।
- আমি একটু হাসি দিয়েই বললাম আরে মজা করলাম। তোমার খালার বাসায় আসলে তোমার সাথে দেখা হবে এখন রাখি।
তোয়ার কাজিন রাহুলকে এখন নিয়মিতই পড়াই, তবে ছেলেটা ছোট হলেও তোয়া বা তার পরিবার সম্পর্কে যা বলে আমি বিশ্বাস করতে পারিন না।
তাহলে কি তোয়া এতদিন আমার সাথে মিথা বলেছে?
আমি তাকে তার খালার বাসায় আসতে বললাম, কারন সেই দিন রাহুলদের বাসায় রাহুল ছাড়া আর কেউ নেই। যতটুকু বুঝতে পেরেছি ছেলেটা আমাদের সমর্কে সবই জানে, তাই তার সামনে কথা বলতে তেমন কোণ সমস্যা হবে না।
আমি তোয়া সম্পর্কে যা যা শুনেছি একে একে সব বললাম, দেখিও কাদঁছে।
-আমি বললাম কাদার কি আছে যা সত্যি তাই বলো।
-ও বললো আমি তোমাকে সব কথা মিথ্যা বলিনি, কিছু কিছু মিথ্যা বলেছি। কারন তোমাকে যে দিন প্রথম দেখি সেই দিনই বলতে পারো আমি তোমার প্রেমে পরে গেছি। আমি তোমাকে হারাতে চাইনি, আর সে কারনেই কিছু কথা মিথ্যা বলেছি।
আমার মেজার ভিষন খারাপ, ইচ্ছে করছিলো গালে কয়েকটা চর বসিয়ে দেই।
-তারপরেই নিজেকে সামনে নিয়ে বললাম, ভালোবাসা পাওয়ার জন্য প্রতারনার আশ্রয়!
-তুমি ভালো করেই জানো ভালোবাসার জন্য সব কিছুই ফেয়ার।
-এতটুকু মেয়ের কাছ থেকে এমন কথা শুনতে হবে আমি নিজেও ভাবিনি।
আমার পক্ষে আর কিছু বলা সম্ভব ছিলো না, আমি রাহুলের খোজ করতে শুরু করলাম। অনেক্ষন ডাকার পরেও তার সার না পেয়ে এ ঘর খুজেও পেলাম না। মানে হচ্ছে আমি যখন তোয়ার সাথে কথা বলছিলাম তারই এক ফাকে ঘর থেকে বের হয়ে গেছে।
অর্থাৎ বাসায় এখন আমি আর তোয়া, এর মানে কি! অন্য কোন উদ্দেশ্য নাই তো!
আমি তোয়াকে বললাম রাহুল যেহেতু বাসায় নেই আমি চলে যাচ্ছি, তোমার সাথে পরে কথা হবে। তখন সব কিছু বললো।
দরজার কাছে গিয়ে দেখি বাহির থেকে দরজা লাগানো, আমার সাথে কি হতে যাচ্ছে? আর সব কিছু বিবেচনা করে মনে হলো যা হচ্ছে তার সবই পূর্ব পরিকল্পিত।
যেহেতু বাহির থেকে তালা দেয়া আমার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব না,
-এক ফ্রেন্ডকে ফোন দিয়ে বলাম আমি রাহুলদের বাসায় আছি একটু আয় তো।
ফোনে কথা শেষও করতে পারিনি, রাহুলের মা এসে হাজির। তিনি বললেন তুমি এখানে কি করছো, আর একি বাসায় দেখি তোয়াও। কি করছিলে তোমরা এতক্ষন? আমি বললাম কই না তো কিছুই করি নাই।
তিনি ধমকের সুরে বললেন, তুমি আমার বোনের মেয়ের সাথে যা খুশি তা করে যাবে আর আমি চেয়ে চেয়ে দেখবো? যা করছো তা ঘটে গেছে, এখন আমি বলি তুমি তোয়াকে বিয়ে করো এখনি। তা না হলে এলাকার মানুষ ডেকে এনে বলবো, একা পেয়ে তুমি তোয়াকে রেপ করেছো। একে বারে রেপ কেস।
আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। তোয়ার খালার চিল্লা চিল্লি শুনে ইতোঃমধ্যে পাশের ফ্ল্যাটের লোক জন চলে এসেছে, আর সাথে অনেক লোক জড়ো হয়ে গেছে।
এই সময় দেখি ভীর ঠেলে শোভন আমার কাছে এলো। আমি বললাম আমি এখন কি করবো? ওআমার কানে কানে বললো যা ঘটছে মেনে নে তা না হলে বিপদ আরো বাড়বে।
তাহলে তুই বলতে চাচ্ছিস সব কিছু জেনেও আমি তোয়াকে বিয়ে করবো?
-দেখ বিপদে পরলে অনেক কিছুই করতে হয়, আর এখন যদি তোর নামে রেপ কেস পরে তাহলে কি হবে! ভাবতে পারিস। জীবনে দুই তিনটা বিয়ে করলে যতটুকু না ঝামেলায় পরতে হয় তার থেকে বেশি ঝামেলা একটা সাধারন কেসও।
আমি বুঝতে পারছি না, শোওন আমার পক্ষে নাকি তাদের পক্ষে।
তবে ও আমাকে আর একটা বুদ্ধি দিলো যখন দেখবি সব কিছু শান্ত হয়ে গেছে তখন না হও ছেড়েদিবি।
আমি চেয়ারের উপর বসে আমি, পাশে তোয়া, চার পাশে শ'খানেক লোক আর সামনে বসে কাজী।
ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস আমাকে নিরবে মেনে নিতে হচ্ছে।
আমি ইচ্ছে করলে আমার বাব-মা কে ডাকতে পারতাম কিন্তু লোকজন যখন বলবে আমি তোয়ার সাথে খারাপ কাজ করেছি তখন যে পরিমান কষ্ট পাবে তার থেকে নতুন বঊ নিয়ে বাসায় গেলে তার সিকি পরিমান কষ্টও পাবে না।