এই তো দুই দিন আগের কথা।
আবির আমার বাসার সামনে এসে ফোন দিয়ে বললো একটু নিচে আসবে?
আমি বললাম কেন?
আরে আসোই না।
আমি বললাম আচ্ছা আসছি। তুমি বাসা থেকে একটু দূরে অপেক্ষা করো আমি তৈরি হয়ে আসছি।
ও বললো আরে দুই মিনিট কথা বলেই চলে যাবো। তৈরী হতে হবে না।
আরে আমি তৈরী হয়ে আসবো কি দুই মিনিট কথা বলার জন্য? তোমার শত কাজ থাকলেও আজকে আমি তোমার সাথেই ঘুরবো।
তেমন তৈরি হতেও ইচ্ছে করছে না। হালকা সবুজ রং এর একটি ড্রেস আর চোখে সামান্য কাজল দিয়েই বের হয়ে গেলাম।
জানি ও এতেই বলবে এত না সাজলেও হয়‚ এমনিতেই তোমার উপর প্রতিদিন নতুন করে প্রেমে পরি তার উপর কাজল দিয়েছো যেন তোমার উপর হুমরি খেয়ে পরি।
মনে মনে ভাবছি।
এমন সময়ই কল দিয়ে বললো আর কতক্ষণ?
একদমই ধৈর্য্য নেই ছেলেটির পাগল একটা!
আমি বললাম আমি নিচে এসেছি তো‚ তুমি কই?
বললো তোমাদের বাসা থেকে পশ্চিম দিকে যে একটা করই গাছ আছে না‚ তার নিচে দাড়িয়ে আছি।
আচ্ছা তাহলে অপেক্ষা করো আসছি। আর শোন একটা রিক্সা ঠিক করে রাখো তোমার যেখানে ইচ্ছে সেখানে কিন্তু কম করে হলেও রিক্সা ভাড়া যেন একশত টাকা হয় এমন দূরে হতে হবে।
ও বললো‚ পাগলামী আর গেলো না।
দেখি ও সত্যি সত্যি একটা রিক্সা ঠিক করে বসে আছে। আমি উঠতে যাবো দেখি ও রিক্সা থেকে নেমে আমারে এক কথা কোলে করেই রিক্সায় উঠিয়ে দিলো। আমি তো মহা খুশি। এমনি ও তেমন একটা আমার হাতও ধরে না। মাঝেমধ্যে খুব ইচ্ছে করে ওকে জড়ায়ে ধরি কিন্তু ও তেমন একটা আগ্রহ দেখায় না। আমিও মনের কথা মনেই রেখে দেই। আমি সব সময় অপেক্ষায় থাকি ও কখন একটু আমায় টাচ করবে।
রিকশা চলছে ……
আমি ঠিক মত ওর দিকে তাকাতে পারছি না। ও টাচ করার পর থেকেই আমার খুব ভালো লাগছে‚ একটু একটু লজ্জাও লাগছে‚ তাই নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। জানি ও এখন আমার দিকে তাকিয়ে বলবে‚ তোমাকে ভিষণ সুন্দর লাগছে‚ এমনিতেই আমি প্রতিদিন নতুন করে তোমার প্রেমে পরি। তারমধ্যে চোখে কাজল দিয়েছো‚ যেন আর উঠতেই না পারি। তারপর আমি বলবো কেন! উঠার ইচ্ছে আছে নাকি?
কিন্তু না ও কোন কথা বলছে না।
তাই কোন উপায় না দেখে আমিই জিজ্ঞেস করলাম আমরা কোথায় যাচ্ছি?
বেশি দূরে না। বড় রাস্তার পাশে নদীর ওই দিকটায় নাকি কাশ ফুল ফুটেছে। ওই দিকেই বসবো।
আবার চুপ!
আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম তোমার কি মন খারাপ‚ আনমনে কোথায় যেন তাকিয়ে আছে। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম।
কোন রকম একটা উত্তর আসলো না।
আমরা চলে এসেছি! এই টুকু রাস্তার ভাড়া সর্বোচ্চ হলে ৩০টাকা হওয়া কথা কিন্তু ও ১০০টাকা দিয়ে দিলো। কারন আমি বলেছিলাম ১০০টাকার ভাড়া করতে। আমি জানি বলেও লাভ হবে না।
এমনিতে এই জায়গাটা আমার খুব প্রিয়। আজকে আরো ভালো লাগছে, রিক্সায় ঘোরার ইচ্ছে আর নেই।
দুই জন চুপচাপ বসে আছি। আমি অনেকক্ষন ওর হাত ধরবো কি ধরবো ভেবেও ওর হাতে হাত রেখে বললাম কি হয়েছে আমায় বলবে?
আমার মনটা আজকে খুবই ভালো তাই ওর মনটা খারাপ দেখে অনেক কষ্ট লাগছে ।
ও একবার আমার দিকে তাকালো।
তারপর ওর আর একটা হাত আমার হাতের উপর রেখে বললো‚ তোমার সাথে আমার হয়তো আর দেখা হবে না।
আমি অবাক হয়ে বললাম কি বলছো! আমাদের ৩বছরের রিলেশনে আমরা দুই জনই হেপি ছিলাম।
ও বললো, আমি হেপি ছিলাম না।
কিন্তু এই রিলেশনে আমি আমার ১০০% ভাগ ভালবাসাই ওকে দিয়েছি। এমন কোন একটা কথা নেই আমি শুনি নাই। ওর জন্য কি করি নাই! না খেয়ে থেকে ওর সাথে রাতের পর রাত কথা বলেছি। দিনের পর দিন ঘরে মিথ্যা বলে কলেজ ভার্সিটির ফিস এর নাম করে ওরে নিয়ে ঘুরেছি। আমার ঘরে কথা বলতে সমস্যা হতো তাই গরমের দিলে কম্বল এর ভিতরে গিয়ে ওর সাথে কথা বলতাম, কারন ওর নাকি আমার সাথে কথা বলতে না পারলে কষ্ট লাগে। আমি আমার কষ্ট দেখিনি দেখেছি ওরটা। আর আজকে ও বলছে ও নাকি হেপি ছিলো না সুখি ছিলো না! আমি হাসি হাসি মুখ করে ওর দিকে তাকালাম।
আমার জিদ‚ রাগ‚ ক্ষোভ, আর কষ্টে মনে হচ্ছিলো হৃদয়টা এখনই ফেটে যাবে। আমি সুন্দর করে হাসি দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম‚ তুমি কি ভেবে বলছো?
ও বললো, এ ছাড়া তো আমার সামনে কোন পথ নেই।
আমি কিচ্ছু ভাবতে পারছিলাম না। আমার কোন মাথায় কিছুই কাজ করছিলো না।
তখনই দেখলাম পাশের রাস্তা দিয়ে একটা ট্রাক আসছে। আমি এক ঝটকায় ওর হাত ছেড়ে দিয়ে দিলাম এক দোড়! একবার ভাবলাম পেছনে তাকাই কিন্তু না আমি তাকানোরও সময় পাই নি।
শুধু একটাই শব্দই শুনতে পেয়েছিলাম। মিম…………
হয়তো ডাকটা ওই দিয়েছিলো।
তারপর কি হলো আমার আর কিছুই মনে নেই।
একটু পর দেখছি। আমার আবির আমারই মত দেখতে একটি রক্তাক্ত মেয়ের সামনে বসে কাদছে। পাগলের মত কাদছে। রাস্তায় মাথা ঠুকছে। আমি ওরে বারবার সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছি। ওর মাথায় হাত দিয়ে বলছি কাদছো কেন! কিন্তু না কোনই উত্তর করছে না। তাহলে কি ও আমার কথা শুনতে পাচ্ছে না! আমি আবির কে স্পর্শ করছি। কিন্তু কই এখন তো আগের মত আমার লাগছে না। আমার কোন অনুভুতিই কি তাহলে এখন নেই! খুব কষ্ট করে একটা সিনজি ডেকে ওই মেয়েটিকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছে আমিও যাচ্ছি।
ডাঃ বললো মেয়েটি মারা গেছে। আকাশ বাতাস কাপিয়ে ও কাদছে।
(দ্বিতীয় পর্বে সমাপ্ত)