somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঠান্ডা চা

০৯ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৮:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ, এখন, সন্ধ্যে পার…

ঃ ডক্টর, কি অবস্থা আমার ছেলেটার?
ওকে কি ছাড়া যাবে?
ঃ আপনি বললে ওকে ছেড়ে দিচ্ছি।
ঃ আমি আসলে সেটা মিন করিনি, আসলে বুঝতেই পারছেন, মা'য়ের মন, প্রবোধ মানেনা, আমি জানি
আপনারা ওর যত্নের ত্রুটি করছেন না। (দীর্ঘশ্বাস ও খানিক নিরবতা)।
সামনের সপ্তাহে ওর ২১তম জন্মদিন, ওর মা খুব চাচ্ছিল ছেলেকে নিয়ে সেলিব্রেট করবে...
তাই জানতে চাচ্ছিলাম, বাসায় আনার মত সুস্থ হয়েছে কিনা?
ঃ দেখুন স্যার, বাস্তবতা আপনাকে মেনে নিতেই হবে; he is not fit to go home, এক
কথায় বললে " ভালো না" আরও খানিক সময় লাগবে, আপনাদের সবার ভালোর জন্যই বলছি।

ঠিক এগার বছর পূর্বে……

ঃ আসসালামু আলাইকুম, ওসি সাহেব।
ঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম, স্যার।
ঃ ছেলেটার কি অবস্থা?
ঃ বড় শক্ত ছেলে স্যার, ওর স্থানে অন্য কেউ হলে কাপড় নষ্ট করে দিত…
ঃ আচ্ছা… ওর গার্জিয়ান আসবে, তাদের হাতে ওকে বুঝিয়ে দিবেন।
ঃ ঠিক আছে, স্যার।
ঃ আর আপনি কাল একবার সন্ধ্যায় আসবেন, বাকী কথা সাক্ষাতে হবে।
______________________________________________

ঃ ভাইজান আপনার চা তো ঠান্ডা হয়া গ্যাল গা!

সন্ধ্যের পরে থানায় বাবা-মা এসেছিল, সাথে আরও দু-একজন, আমাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল। না, আমার বিরুদ্ধে কোনও মামলা কিংবা অভিযোগ করা হয়নি, এটা আমার সৌভাগ্যই বলতে হবে। তবে মেরেছিল বেদম, মাইরের বিনিময়ে মামলা থেকে অব্যাহতি, কাজের বিনিময়ে খাদ্য এর মত। পরের কয়েকদিন বাসায় সেবা শুশ্রূষা চলল, অনেক বন্ধু-বান্ধবই এসেছিল বাসায়, অনেকে আসেনি, সেদিন যারা আসেনি, আজ তারা বারবার আসে, বারবার আসে।

একটা মেসেজ ছিল এমপির, যার বাহক আজ আমি, একটা জীবন্ত ও চলন্ত সাইনবোর্ডঃ শরীরের দৃশ্যমান স্থানে কয়েকটা দাগ, সবাইকে মনে করিয়ে দেয়, "চ্যালেঞ্জিং সামওয়ান হ্যাজ আ কনসিকোয়েন্স", আর আমাকে মনে করিয়ে দেয়, ভুল বা ঠিক বলে কিছু নেই, সবই বেচে থাকা, টিকে থাকা, নিজের অস্তিত্বের জানান দেয়া।

ঝুপড়ী দোকানের পেছনে, গলি ঘুপচিতে, আড্ডায় একটু একটু করে সিগ্রেট ধরেই ফেলেছি, যতটা না ধরেছি নেশায়, তার থেকে বেশী "ভাব" নিতে। সদ্য এইচ এস সি পরীক্ষা শেষ করলাম, পৃথিবী হাতছানি দিয়ে ডাকছে, আর সেই আহবানের ১ম প্রস্তুতি হাতে সিগ্রেট।
ছাত্র রাজনীতির সাথে টুকটাক জড়িত ছিলাম, যখনকার কথা বলছি, তখন রাজনীতির "সহমত ভাই" এর উদ্ভব হয়নি, লেখালেখির বদভ্যাস ছিল, বামেদের চা-চক্রে আনাগোনা ছিল, এতকিছুর প্রভাবে বদহজম স্বরুপ স্থানীয় এমপিরে নিয়া কিছু ছড়া লিখছিলাম; আমাকে হতবাক করে দিয়ে সেগুলো জনপ্রিয়তা পেল, এই জনপ্রিয়তার জোয়াড়ে এমপির বিরুদ্ধেই বলা শুরু করলাম; সতর্ক বানী এসেছিল, গায়ে মাখিনি, স্বাধীন দেশে স্বাধীন নাগরিক হিসেবে নিজের মত প্রকাশ করছি, ভয় কিসের!

কৈশোরের পর এই ১ম প্রভাত ফেরী মিস হল, প্রভাত ফেরী কাটালাম থানায়, সন্ধ্যে নাগাদ বাড়িতে খবর পৌছল, পরবর্তী ৩৬ ঘন্টার চেষ্টায় তারা এমপির সাক্ষাৎ পেল আর তারপরেই এমপির থানায় ফোন।

কয়েকদিনের মধ্যেই মোটামুটি সুস্থ হয়ে উঠলাম, যদিও লোকজনের আমাকে চিনতে কষ্ট হয়, আর আমি আমাকে চিনতেই পারি না।

যেদিন বাড়ি থেকে ১ম বের হলাম, সেদিনই এমপির বাড়িতে হাজির হলাম, খবর পেয়ে অজানা আশংকায় মা-বাবা দৌড়ে হাজির; তারা এসে আমাকে এমপির সাথে চা খেতে দেখল, খানিকক্ষণ কথা বলে তারা আমাকে নিয়ে চলে গেল। সেদিন থেকেই এমপির বাড়িই আমার বাড়িঘর।

সিগ্রেট আর বাকীসব বদভ্যেস ছেড়ে দিয়েছি, আজ সম্পূর্ণ অন্য এক মানুষ।
ও হ্যা, মাঝে আবার ধরেছিলাম, সে অন্য গল্প।

গত ১১ বছরে আমি এমপির পরিবারের আস্থা অর্জন করেছি, পরিবারের একজন হয়ে পড়েছি, এমপির কিশোরী কন্যে আমাকে মন দিয়ে বসে আছে, আমি বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে যানি।

আজ এমপির পুত্রের বয়স ২১ বছর পূর্ণ হলো, রিহ্যাব এ আছে, হবু শ্বাশুড়ির প্যানপ্যানানিতে এমপি রিহ্যাব এ ফোন করেছিল…

ঃ মাঝে মাঝে বাসী ঠান্ডা চা ও অসাধারণ হয়।

এমনি এমনি কিছুই হয়না, লোকজন বলে "কৈশোর বয়সটা খারাপ", শুধু খানিক পুশ দেয়ার দরকার ছিল।

--------------
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×