ছবি - forbes.com
ট্রাম্প আমেরিকার ক্ষমতায় এসেছিলেন এক কল্পিত আমেরিকান জাতিবাদী অর্থনীতি গড়বেন বলে- "আমেরিকা ফার্স্ট" নামে।আর ক্ষমতায় আসার পর থেকে তার পুরো শাসনকাল জুড়েই তিনি নানা রকম বিতর্কিত কার্যকলাপের জন্য আলোচিত-সমালোচিত ছিলেন।সর্বশেষ যে বিতর্কিত কাজটি করেছেন,তা হলো তার সমর্থকদের তিনি সহিংস বিদ্রোহ-বিশৃঙ্খলা করতে উৎসাহ দিয়ে রাষ্ট্রে এক বিশৃংখলা তৈরী করেছেন এবং এর ফলে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য যে, গত ৬ জানুয়ারি মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে নজিরবিহীন হামলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিভক্তির বিষয়টি সারা দুনিয়ার নজরে এসেছে।এখন অনেকেই বলছেন, গত চার বছরে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিনিদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করেছেন। শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, কট্টর জাতীয়তাবাদের উত্থান হয়েছে। আর এই অভ্যন্তরীণ অসহিষ্ণুতা এবং উগ্রবাদই মার্কিন স্বার্থ আর মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে। আগামী বুধবার ২০ জানুয়ারি, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শপথ গ্রহণ করবেন। এই শপথ অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১৮৬৯ সালের পর এই প্রথম কোনো বিদায়ী প্রেসিডেন্ট তার উত্তরসূরির অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন না। ট্রাম্পের দাবি—তিনি পরাজিত হননি বরং ডেমোক্র্যাটরা ভোট জালিয়াতি করে জয়ী হয়েছে। ট্রাম্পের বেশির ভাগ সমর্থকও এটাই মনে করেন। ট্রাম্প গত ৩ নভেম্বরের নির্বাচনের ফল উলটে দিতে সব রকম চেষ্টা করেছেন।আর তার সাথে সাথে তার সমর্থকরা ট্রাম্পকে ক্ষমতায় রাখতে গত ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটলে হামলা চালায়।
ছবি - bu.edu
ট্রাম্পের সমর্থক কারা যারা ক্যাপিটলে হামলা চালিয়েছিল ? তারা আমেরিকান সমাজেরই অংশ এবং কেন তারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নামলেন? রাজনৈতিকভাবে দেখলে ট্রাম্পের সমর্থকরা মূলত হোয়াইট সুপ্রিমিস্টরা। বিভিন্ন নামে এদের সংগঠন আছে। এদের সাথে ট্রাম্পের প্রমোটার যারা ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে পেশ করেছেন, এমন লোকদের বোঝাপড়া আছে যে, ট্রাম্প তাদের দাবি, তাদের চিন্তা পপুলার করতে সহায়তা করবেন। এ দিকে ট্রাম্পের ভোটার-সাপোর্টার যারা তাদের বড় অংশ হলো মূলত স্বল্প আয়ের বা ছোট এন্টারপ্রাইজ, ছোট উদ্যোক্তা অথবা চাকরি হারানো নানা ধরনের মানুষের বিরাট অংশ।তাদের দাবির মোলকথা তারা কেউই এখনো ট্রাম্পকে ত্যাগ করতে চায় না। তারা ট্রাম্পকে তাদের আর্থিক অবস্থা-পরিস্থিতির পক্ষের প্রবক্তা মনে করে। কিন্তু তারা সংসদে ভায়োলেন্স বা সহিংসতার দায় নিতে চায় না। ট্রাম্পের উপরেও তার দায় দিতে চায় না।
আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতার আয়ু আর মাত্র এক দিন। কিন্তু ক্ষমতার টার্ম শেষ হওয়ার শেষ দিনগুলি যেন কঠিন থেকে কঠিনতর অসহায়ত্বের দিন হয়ে তার কাটছে। প্রতিদিনই তার জন্য নতুন নতুন একেকটা খারাপ কিছু খবর তৈরী হচছে বা ঘটে চলেছে। আর এসবের মাঝে গত ১৪ জানুয়ারি আমেরিকান সংসদে (হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভে) তিনি ইমপিচড হয়েছেন। নিজ দলের ১০ জন সদস্যও তার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। অর্থাৎ আইনত তিনি এখন দাগী বা ইমপিচড।তার বিরুদ্ধে," ইনসাইটিং ভায়োলেন্ট ইনসারেকশন"(প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই ‘সহিংস বিদ্রোহ-বিশৃঙ্খলা করতে উসকানি’ দিয়েছেন) বলে এবারের ইমপিচমেন্টে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ তোলা হয়েছিল। যদিও এটা আংশিক, মানে ইমপিচমেন্টের পুরো আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি এখনো। আমেরিকান সংসদ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। উচচকক্ষ সিনেট সহ সংসদ সদস্য বা আইনপ্রণেতাদের দুটো কক্ষ (সিনেট ও হাউজ) থেকে এই বিল অনুমোদন পেলে তবেই এরপর সেটি "পালনীয় পূর্ণ আইন" বলে বিবেচিত হয়। তাই এখন সিনেট থেকেও ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব পাস হওয়ার অপেক্ষায়,প্রস্তুতি চলছে।
ছবি - abc7.com.com
ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার আগে কি সিনেটেও ইমপিচমেন্ট শেষ হবে?
এর জবাব, মনে হয় না। পরিস্থিতির যে অবস্থা এটি সম্ভব নয়।কারন, ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি তার মেয়াদ শেষে হোয়াইট হাউজ ছেড়ে যাওয়ার পরেই কেবল সিনেটে ওই ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব উঠবে।এর মানে তা হলে, ট্রাম্প আর প্রেসিডেন্ট না থাকলেও সিনেটে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব জীবিত থাকছে ? এর একটা কারণ হলো, সংসদ বা হাউজে ওঠা প্রস্তাব ও তা পাস হওয়ার পর তা সিনেটেও পেশ ও পরিণতি ভোটাভুটিতে যাই হয় তা সম্পন্ন হতেই হবে। কারণ প্রস্তাব যখন একবার উঠেছে, এর প্রক্রিয়া শেষ হতে হবে। আর দ্বিতীয় কারণ হলো, যদি সিনেটেও ইমপিচমেন্ট প্রস্তাবটা পাস হয়ে যায় তখন এর পরে আরেক বাধ্যতামূলক কাজ বাকি থাকবে। সেটি হলো, সিনেটের প্রস্তাব পাস হওয়া মানে তখন এটা গৃহীত হয়ে যাওয়া আইন। যার সোজা অর্থ ট্রাম্প দোষী ও অযোগ্য বলে প্রমাণিত। তাই এর সাথে যে প্রশ্নটা উঠবেই যে, তা হলে ট্রাম্প কী এর পরও পাবলিক অফিসে কোনো জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার জন্য যোগ্য থাকেন? এ বিষয়টির মীমাংসা করতে হবে। কারণ সেটি মীমাংসা করা যায় আবার কেবল সিনেটেই আরেকটা প্রস্তাব তুললে। সেটা হলো, ইমপিচড হয়ে যাওয়া ট্রাম্প এরপরে পাবলিক অফিসে কোনো জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার জন্য যোগ্য কি না- এ প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি করা।
এখন নিয়ম অনুসারে হাউজে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব পাস হওয়ার পরে সিনেটে তা পৌঁছে দেয়ার দায়িত্বটা কনস্টিটিউশন দিয়েছে হাউজ স্পিকারকে (এখানে ডেমোক্র্যাট স্পিকার পেলোসিকে)। এখন কথা হল, তিনি কবে তা সিনেটে পাঠাবেন এর বিবেচনা তার নিজের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে।এ দিকে ইতোমধ্যে সিনেটেও কিছু নতুন ঘটনা আছে। চলতি সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ আছে রিপাবলিকানরা আর এর নেতা হলেন ম্যাক-কনেল। কিন্তু ২০ জানুয়ারি থেকে সিনেট হয়ে যাবে রিপাবলিকান-ডেমোক্র্যাট সমান সমান ৫০, এরকম। আমেরিকান কনস্টিটিউশনে এর সমাধান দেয়া আছে। রাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট যিনি থাকেন তিনিই পদাধিকারবলে সবসময় সিনেটের প্রেসিডেন্ট হন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হলেও তিনি ওই সিনেট অধিবেশনে সভাপতিত্ব করতে আসেন বিশেষ অনুষ্ঠান হলে অথবা সিনেট অধিবেশনে সমসংখ্যক ভোট পড়ার মতো পরিস্থিতি উদ্ভব হলে। কারণ কেবল তখনই তিনি সিনেটের ভোটাভুটিতে কোনো একটা পক্ষে নিজের ভোট প্রদান করে প্রস্তাবে সিদ্ধান্তমূলক ফলাফল এনে দেন। নইলে সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা যিনি থাকেন তিনিই পদাধিকারবলে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে সিনেট পরিচালনা করে থাকেন।
এসব বিবেচনায় বলছে, ১৯ জানুয়ারির আগে পেলোসির ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব সিনেটে পাঠানোর সম্ভাবনা নেই। কারণ তখনই একমাত্র ডেমোক্র্যাটরা সিনেটে শক্তিশালী হবে। এ ছাড়া মেজরিটি লিডার রিপাবলিকান ম্যাক-কনেল জানিয়েছেন, ১৯ জানুয়ারির আগে সিনেট বসার শিডিউল এখনো পর্যন্ত নেই। আর তার অবস্থানটা হলো, তিনি ট্রাম্পের ইমপিচমেন্টের পক্ষে ভোট দিতেন হয়তো কিন্তু তিনি উদ্যোগী হয়ে প্রস্তাব আনতে চান না। আবার ১৯ জানুয়ারি তার সদস্য থাকার শেষ দিন। এদিকে রয়টার্সের খবর যে, ক্ষুব্ধ ক্ষ্যাপাটে ট্রাম্পকে সামলাতে তার স্টাফরা পেরেশান দশায়। আর ২০ জানুয়ারি শপথের দিনেই সকালে ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ ও ওয়াশিংটন ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। সম্ভবত ফ্লোরিডায়, থাকবেন সেখানেই।
এখন প্রশ্ন ,ট্রাম্পের চোখে তার শত্রু কারা? তিনি কার বিরোধিতা করতে মাঠে নামিয়েছিলেন তার সমর্থকদের ৬ ই জানুয়ারী ২০২১? তার নিজের, আমেরিকার জনগণের না বাইডেনের? আমেরিকান সংসদ ভেঙে তছনছ করেছেন কার বিপক্ষে যাবেন বলে ? তিনি নিজে চলমান প্রেসিডেন্ট হয়েও সংসদে হামলা করিয়েছেন, কিন্তু কেন ? আর এতে করে আমেরিকান গণতন্ত্রের যতটুকু উদারতা ছিল তা নষ্ট করে দেশটিকে আরো কয়েক ধাপ পিছনে কেন নিয়ে গেলেন? নানা জরিপে বলছে,এ ঘটনার পর ট্রাম্পের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে। আমেরিকার এখনকার মারাত্মক অর্থনৈতিক সমস্যা হলো মুখ্যত কোভিড ভাইরাস মোকাবেলায় ট্রাম্পের চরম অক্ষমতা। এক দিকে চার লাখের মতো মানুষের ভাইরাসে মৃত্যু, সাথে বেকারত্ব, অর্থনীতিতে ধস প্রভৃতি।
আর এত সব সমস্যার মাঝেই বাইডেন কাল শপথ নিবেন এবং জরুরি কাজগুলো সম্পন্ন করতে তার দ্রুত কিছু করার জন্য ক্ষমতা গ্রহনের আগেই আলাপ-আলোচনা-পরিকল্পনা করছেন।বাইডেনের কাজকর্ম যদি আগামী এক বছরের মধ্যে যদি ইতিবাচক ফলাফল দেয়, তবে মধ্যবিত্ত, স্বল্প আয় ও পেশার মানুষের ট্রাম্প সম্পর্কে তাদের মূল্যায়নে বদল আসবে। আর এতে তাদের নিজ হতাশ জীবন পেছনে ফেলে সামনে আগাতে তারা ইতিবাচক দিশা পেতেও পারে।আর তা না হলে কি হবে তা সময়ই বলে দিবে।
এবার আমরা দেখি ট্রাম্প আমেরিকাকে কিভাবে - কোথায় নিয়ে এলেন এবং কিভাবেই বা বাইডেন বের হবেন এ অবস্থা থেকে?
আর একদিন পরেই ডেমোক্র্যাট শিবির আমেরিকার ক্ষমতায় বসবে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়াদও আর একদিন । তারপর তার হাঁপ ছেড়ে বাঁচার পালা। আর ঠিক এক দিন পর ট্রাম্প ক্ষমতা থেকে বিদায় নেবেন। ট্রাম্প বিদায় নিলেও তিনি ঘরে-বাইরে যে পরিস্থিতি রেখে যাচ্ছেন, তা সামাল দেওয়া নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য কঠিনই হবে বলে মনে করা হয়।
করোনায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা জেরবার। দেশটিতে ২ কোটি ৩৩ লাখের বেশি মানুষ করোনায় সংক্রমিত। প্রাণ গেছে ৩ লাখ ৯০ লাখের বেশি মানুষের। শুরু থেকেই করোনার ভয়াবহতাকে অবজ্ঞা-অবহেলা করে আসছেন ট্রাম্প। করোনা মোকাবিলায় বিজ্ঞানী-বিশেষজ্ঞদের মতামতকে করেছেন উপেক্ষা।শেষের দুই মাস তো তিনি ভোট জালিয়াতির ভুয়া অভিযোগ, মামলাবাজি করেই কাটালেন। এদিকে এ সময়েই যুক্তরাষ্ট্রে করোনা পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ নিয়েছে।ট্রাম্প তাঁর ক্ষমতার এক মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের সমাজে বিভেদ, বিভক্তি, ঘৃণার বিষবাষ্প অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। তার ফল যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ভোগ করছে। নতুন প্রশাসন এলে অবস্থার আশু পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই; বরং ট্রাম্পের লাগানো বিষবৃক্ষ ডালপালা ছড়াবে। ফলে এই সামাজিক ক্ষত বহু দিন থাকবে। ভোগ করতে হবে তার নেতিবাচক ফল।রাজনীতিকেও কলুষিত করেছেন ট্রাম্প। তিনি দেশটির বহু বছরের রাজনৈতিক রীতি, নীতি, শিষ্টাচার, ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিকে ভূলুণ্ঠিত করে অসংখ্য বাজে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।নির্বাচনে পরাজয় না মেনে, ফলাফল উল্টে দিতে ট্রাম্প তাঁর উগ্র সমর্থকদের দিয়ে ৬ জানুয়ারি দেশটির কংগ্রেস ভবনে হামলা চালিয়ে যে ন্যক্কারজনক নজির স্থাপন করেছেন, তার তুলনায় খোদ রিপাবলিকান রাজনীতিকেরাই ‘বানানা রিপাবলিক’ প্রসঙ্গ টানছেন। গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে, ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর নিশ্চিত করতে আজ যুক্তরাষ্ট্রকেই অন্যদের বিবৃতি শুনতে হচ্ছে।
ছবি - abcnews.go.com
ট্রাম্প চলে গেলেই যে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ঐতিহ্য ফিরে আসবে, তেমনটা মনে করার কারণ নেই। কারণ, তিনি তাঁর নৈরাজ্যবাদী চেতনা রেখে যাচ্ছেন। তাঁর এই চেতনা ধারণ করে তা চর্চা করার লোকও অনেক তৈরি হয়ে গেছে। ফলে ট্রাম্পবাদ সহজে যাচ্ছে না। ক্ষমতায় না থাকলেও অদৃশ্য ট্রাম্পকে মোকাবিলা করতে হবে বাইডেনকে।ট্রাম্প তাঁর ক্ষমতার এক মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের সমাজে বিভেদ, বিভক্তি, ঘৃণার বিষবাষ্প অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। তার ফল যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ভোগ করছে। নতুন প্রশাসন এলে অবস্থার আশু পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই; বরং ট্রাম্পের লাগানো বিষবৃক্ষ ডালপালা ছড়াবে। ফলে এই সামাজিক ক্ষত বহু দিন থাকবে। ভোগ করতে হবে তার নেতিবাচক ফল।
নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্বাক্ষরিত বহুল আলোচিত স্বাস্থ্যনীতি ‘ওবামা কেয়ার’ বন্ধ করে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্বাস্থ্যসেবা, অভিবাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ নীতির ওপর খড়্গহস্ত চালিয়েছেন ট্রাম্প। এ অবস্থার পরিবর্তনে বাইডেনের প্রতিশ্রুতি আছে। তাই এ নিয়ে তাঁকে কাজ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করেছেন ট্রাম্প। সেগুলোকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে বাইডেনকে।
জো বাইডেন যাতে দায়িত্বের প্রথম দিন থেকেই কাজে লেগে পড়তে পারেন, সে জন্য তিনি জয়ের পরপরই ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরুর দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প নিজেকে নির্বাচনে জয়ী দাবি করে এ প্রক্রিয়া বিলম্বিত করেছেন। বাইডেন সে সময়ই আশঙ্কা করেছিলেন, এই বিলম্ব, এই অসহযোগিতা বড় ক্ষতির কারণ হবে। বিশ্বে করোনার সংক্রমণ-মৃত্যুতে সবার শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে এই মহামারির অবসান ঘটানোর মতো এক গুরুভার বাইডেনের কাঁধে চাপছে। পাশাপাশি অর্থনীতিসহ করোনার অন্যান্য ক্ষতি কাটানোর দায়িত্বও তাঁকে নিতে হবে। এ কাজ করাটাই হবে তাঁর প্রশাসনের প্রথম ও সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
সারা দুনিয়া এখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক নেতৃত্বের পালাবদলের মুখোমুখি। চীনের উত্থানের এই পর্বে সব দেশের তো বটেই, এমনকি
এক নং অর্থনৈতিক দেশ আমেরিকাতে ও এর ছাপ পড়বেই। আগের নেতা হিসেবে আমেরিকার অভ্যন্তরীণ যেসব পেশা বা প্রডাক্টকে সে সহজেই জন্ম ও প্রটেক্ট করতে পারত এর ক্ষমতা আমেরিকার কমে যাচ্ছে, কমে নিঃশেষ হওয়ার পথে যাচ্ছে। তবে এসব পেশা উদ্যোক্তাদের আর কোনো সম্ভাবনা নেই, ব্যাপারটা ঠিক তা নয় তবে নতুন কিছু করা, কিছুর বেলায় নতুন পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার সুযোগ বের করা, কিছুতে নিজ কম লাভে প্রতিযোগিতায় নেমে যাওয়া ইত্যাদি এসব করে পেশা উদ্যোক্তাদের অনেকটাই বাঁচানো সম্ভব। আর সর্বোপরি চীনের সাথে আলাপ-আলোচনা করা। যত বেশি পারা যায় (কৃষি বা শিল্পপণ্যের) বাজার ছাড় নিয়ে আসা, রাজনৈতিক নেগোসিয়েশন করার সুযোগ এখনো যা আছে তা ব্যবহার করা। এক কথায় চীনকে গ্লোবাল নেতৃত্ব ছেড়ে দেয়ার বিনিময়ে নিজের বাজার যতটা সম্ভব ফিরিয়ে হাতে আনা, ধরে রাখার জন্য দরকষাকষি করা- এই মূলনীতিতে চলা। বাইডেন সম্ভবত সে দিকেই যাচ্ছেন। এমন রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।
কিন্তু গত চার বছর ট্রাম্প উল্টো পথে চলেছেন। ট্রাম্প ও তার প্রমোটার ও অদৃশ্য উপদেষ্টারা ভেবেছেন, এগুলো হোয়াইট সুপ্রিমিস্টদের মতো সংগঠন বা চিন্তা দিয়ে চালাতে হবে। আর কথিত আমেরিকান ‘জাতিকে’ চীনের বিরুদ্ধে সংগঠিত করতে পারলে মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া যদিও এ কথা সত্য যে, আমেরিকা এখনো সামরিকভাবে চীনের থেকে অনেক গুণ শ্রেষ্ঠ। কাজেই এদের অনুমান, আমেরিকা কেন চীনের কাছে হেরে যাবে। এই চিন্তার খারাপ দিকটা হলো এরা মনে করে গ্লোবাল অর্থনৈতিক সামর্থ্যকে পাল্টা সামরিক সক্ষমতা দিয়ে মোকাবেলা করা সম্ভব।
তীব্র বাক্যবাণে পরস্পরকে জর্জরিত করা, চরম উত্তেজনা কিংবা পিছু হটে "যুদ্ধবিরতি"র নরম সুর - এসব কিছুই দেখা গেছে দুই বছরের আমেরিকা-চীন বাণিজ্য বিরোধে।দীর্ঘবিরোধ ও নানা চড়াই -উতড়াই পেরিয়ে অবশেষে বাণিজ্য যুদ্ধের অবসানে একটি চুক্তি সই করেছে আমেরিকা ও চীন। কিন্তু এর আগে এই যুদ্ধ যে ক্ষতি করেছে তা দু'দেশের জন্যই ছিল অনভিপ্রেত।চুক্তির পরেও ট্রাম্প চলেছেন নিজের ক্ষ্যাপাটে নীতিতে। সাধারণভাবে আমেরিকায় উপস্থিত চীনা কোম্পানির ওপর ট্রাম্প খড়গহস্ত হওয়ার নীতিতে চলেছিলেন।তারপরেও চীনা কোম্পানিমাত্রই, বিশেষ করে টেলিফোন কিংবা ইলেকট্রনিকস সম্পর্কিত প্রযুক্তি কোম্পানি আমেরিকা থেকে তথ্য পাচার করছে বা এরা চীনা সামরিক বাহিনীর সাথে জড়িত ভাড়াটে অথবা বাহিনীর হয়ে তথ্য পাচার করছে, এটাই ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের কমন অভিযোগ বা উছিলা। কিন্তু কোনোটার বেলাতেই তিনি কোনো প্রমাণ সাথে হাজির করেননি। কিন্তু জাতিবাদী, বিদেশবিরোধী প্রপাগান্ডা যা ট্রাম্পের এক বিশেষ অস্ত্র যা সাদা সুপ্রিমিস্টদের জন্য খোরাক ও ভুয়া সুসংবাদ- এসব ঠিকই চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেয়া হয়েছে।ক্ষমতার শেষের শেষের দিকে এসে তিনি নতুন নীতি জারি করলেন। টাইটান, আলিবাবা, টেনসেন্ট, বাইদু ছাড়াও আরো ৯ বড় জায়ান্ট চীনা কোম্পানির নামের একটা লিস্ট বানিয়ে দাবি করলেন, এগুলো চীনা সেনাবাহিনীর সাথে জড়িত কোম্পানি। এরপর সরকারি নির্দেশ জারি করলেন যে, এসব কোম্পানির সাথে আমেরিকানরা বিনিয়োগ-ব্যবসায়িক সম্পর্ক রাখতে পারবে না।কোনো দেশের সুপার পাওয়ার হতে গেলে বা সুপার পাওয়ারের লক্ষণ হিসেবে কী থাকতে হবে এই প্রশ্নের জবাবে দুনিয়াতে মানা হয় যে ওই দেশটি হাইটেকে কত এগিয়ে আছে, কত তার দখল এবং সর্বোপরি হাইটেকে তার মোট বিনিয়োগ কী পরিমাণ ইত্যাদি।ট্রাম্পের ঐসব চীনা কোম্পানির বিরুদ্ধে ওই সিদ্ধান্তের পর সারা দুনিয়ায় ব্যাপক সমালোচনা করেছিল। ওয়ালস্ট্রিট লিখেছিল আলিবাবা বাইদু নিউ ইয়র্কে রেজিস্টার্ড কোম্পানি, টেনসেন্ট হংকংভিত্তিক। এই তিন কোম্পানির মোট বিনিয়োগ হলো ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার, যা অস্ট্রেলিয়ার ইকোনমির চেয়েও বড়। এসব ব্যাপারে ট্রাম্প কোন খেয়ালই করেননি।
সমালোচকেরা আসলে বলতে চেয়েছে, আমেরিকার পক্ষে এমন পাল্টা ট্রিলিয়ন ডলারের টেক কোম্পানি জন্ম দেয়ার সক্ষমতার দিন পেরিয়ে গেছে। কাজেই ওই কোম্পানির সাথে আমেরিকার ব্যবসায়িক সম্পর্কও যদি ভেঙে দেয়া হয়, তবে আমেরিকা ততই আরো পিছনে পড়ে যাবে বা নাই হয়ে যাবে। যেমন মোবাইল ফোনে ৫জি টেকনোলজিতে চীন এরই মধ্যে বিশ্বে লিড নিয়ে ফেলেছে। যেখানে আমেরিকা কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে চলতি শতকের শুরু থেকেই ফোন টেকনোলজি থেকে ছিটকে পিছনে পড়ে গেছে ।
এদিকে কূটনীতির মাঠও বাইডেনের জন্য সহজ হবে না। বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব-প্রতিপত্তি আর আগের মতো নেই। ট্রাম্প জামানায় বিশ্বমঞ্চে ক্ষমতার লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ রাশিয়া ও চীন। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে চীন নির্বিঘ্নে তার ভূরাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু চীন নয়, ট্রাম্পের দুর্বলতার সুযোগ রাশিয়াও নিয়েছে।
২০১৫ সালে ইরান বিশ্বের ছয়টি পরাশক্তির সাথে তার পরমাণু কর্মসূচি সংক্রান্ত একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে আসতে সম্মত হয়। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন এবং রাশিয়া, অর্থাৎ পি ফাইভ প্লাস ওয়ান নামে পরিচিত পরাশক্তিগুলি ছিল এই চুক্তির অংশীদার। ২০১৫ সালের চুক্তির পর ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়া থেকে সরে আসে ইরান। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ইরান সংবেদনশীল পরমাণু কর্মকাণ্ড সীমিত করতে রাজি হয় এবং দেশটির বিরুদ্ধে আনা অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেবার শর্তে আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের পরমাণু কর্মকাণ্ড পরিদর্শনে অনুমতি দেয়।সেসময় বারাক ওবামা প্রশাসন আত্মবিশ্বাসী ছিল যে এর অধীনে ইরান কোনও ধরনের গোপন পারমাণবিক কর্মকাণ্ড চালাবে না। ইরানও তা নিশ্চিত করে।তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।যেখানে বাকীরা এখনো এই চুক্তি রক্ষায় চেষ্টা চালিয়ে যাচছেন।এখন বাইডেনের এ ব্যাপারে বা চুক্তিতে পুনরায় আমেরিকাকে বহালের চেষ্টা করতে হবে এবং তা আমেরিকার স্বার্থেই।
যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র বলে পরিচিত, ইউরোপের অনেক দেশকেও দূরে ঠেলে দিয়েছেন ট্রাম্প। এই সম্পর্ক পুনর্গঠন করতে বাইডেন প্রশাসনকে খাটতে হবে। হুট করেই সম্পর্ক পুনর্গঠন সম্ভব হবে না। তা ছাড়া রাশিয়া, চীন, ইরান, ফিলিস্তিনি, ইসরায়েল, ইয়েমেন, সিরিয়া, আফগানিস্তান, তাইওয়ান, কিউবা, উত্তর কোরিয়া প্রভৃতি ইস্যুতে ট্রাম্পের রেখে যাওয়া বিতর্কিত কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট বাইডেন প্রশাসনকেই সুরাহা করতে হবে।
ট্রাম্প বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাকেও অবজ্ঞা করেছেন। ঐতিহাসিক প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বাইডেনকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্বের সঙ্গে নতুন করে কাজ শুরু করতে হবে।
ট্রাম্প প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১২ দেশের চুক্তি (টিপিপি) থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ইতি টেনেছেন। ইউনেসকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেছেন। সামরিক জোট ন্যাটোকে খাটো করেছেন। এভাবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা-জোট থেকে দূরে সরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে একাকী করেছেন ট্রাম্প। বাইডেনকে এ নিয়েও নতুনভাবে কাজ শুরু করতে হবে।
ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকছেন না, তাঁর বিদায়ের ক্ষণগণনা চলছে, এটা অনেকের কাছে আশার বিষয়। কিন্তু বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর উত্তরসূরির জন্য একটা বন্ধুর পথ রেখে যাচ্ছেন। ফলে ২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার মুহূর্ত থেকেই বাইডেনকে নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।আর বর্তমানে যে সামাজিক ,অর্থনৈতিক সঙ্কট চলছে তার মোকাবেলাও করত হবে বাইডেনকে।
আর ট্রাম্প কর্তৃক সৃষ্ট এসব সংকট থেকে বের হওয়ার জন্য বাইডেনকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে এবং নিতে হবে দ্রুত এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত । এসব ক্ষত এবং সংকট কাটিয়ে উঠার উপর নির্ভর করবে আমেরিকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা এবং এক নং পরাশক্তি হিসাবে তার অবস্থান ধরে রাখা।সবশেষে একথা বলা যায় যে,ভূল নীতির কারনে একবার অর্থনৈতিক সক্ষমতা পড়ে গেলে এরপর তা থেকে বেরিয়ে আসা এবং সবাইকে শাসানো বা দুনিয়াজুড়ে মাতববরী করার ক্ষমতা আমেরিকার থাকবে কিনা সন্দেহ। তখন আর আমেরিকা ফার্স্ট বা জাতিবাদী স্লোগান তুলে কিছুই ঠেকানো যাবে না।এখন দেখার বিষয়, এসব ব্যাপার কিভাবে বাইডেন সামলায় এবং আমেরিকাকে ট্রাম্প কর্তৃক সৃষ্ট এসব সংকট থেকে বের করে আনেন।
বিদায় ট্রাম্প, স্বাগতম বাইডেন। - শেষ।
================================================================================
পূর্ববর্তী পোস্ট - Click This Link
(আমেরিকার নির্বাচন পরবর্তী ফলোআপ পোস্ট -১২ )।
পূর্ববর্তী পোস্ট - Click This Link
(আমেরিকার নির্বাচন পরবর্তী ফলোআপ পোস্ট -১১ )।
পূর্ববর্তী পোস্ট - Click This Link
(আমেরিকার নির্বাচন পরবর্তী ফলোআপ পোস্ট -১০ )।
পূর্ববর্তী পোস্ট - Click This Link
(আমেরিকার নির্বাচন পরবর্তী ফলোআপ পোস্ট -০৯ )।
পূর্ববর্তী পোস্ট - Click This Link
(আমেরিকার নির্বাচন পরবর্তী ফলোআপ পোস্ট -০৮ )।
পূর্ববর্তী পোস্ট - Click This Link
(আমেরিকার নির্বাচন পরবর্তী ফলোআপ পোস্ট -০৭ )।
পূর্ববর্তী পোস্ট - Click This Link
(আমেরিকার নির্বাচন পরবর্তী ফলোআপ পোস্ট -০৬ )।
পূর্ববর্তী পোস্ট - Click This Link
(আমেরিকার নির্বাচন পরবর্তী ফলোআপ পোস্ট -০৫ )।
পূর্ববর্তী পোস্ট - Click This Link
(আমেরিকার নির্বাচন পরবর্তী ফলোআপ পোস্ট -০৪ )।
পূর্ববর্তী পোস্ট - Click This Link
(আমেরিকার নির্বাচন পরবর্তী ফলোআপ পোস্ট -০৩ )।
পূর্ববর্তী পোস্ট - Click This Link
(আমেরিকার নির্বাচন পরবর্তী ফলোআপ পোস্ট -০২ )।
পূর্ববর্তী পোস্ট - Click This Link
(আমেরিকার নির্বাচন পরবর্তী ফলোআপ পোস্ট -০১ )।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:৪৬