ছবি - shadow.com.bd
মহান আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন ফেরেশতা হযরত জীবরাঈল (আঃ) কর্তৃক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর মাধ্যমে পবিত্র হেরা পর্বতের গুহায় এক পবিত্র গ্রন্থ নাযিল করেছিলেন। যা এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বে সর্বাধিক পঠিত এবং সেই গ্রন্থের নাম আল কোরআন।যদি আমরা আল কোরানের ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে দেখব - আল কোরআন এমন একজন মানুষের উপর নাজিল হয়েছিল যিনি -
১।মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এমন একজন মানুষ - যাঁর শুরুটাই শূন্য। পৃথিবীর আলোর মুখ দেখার আগেই পিতৃহারা। ছয় বছর বয়সে মাতৃহারা। আট বছর বয়সে আশ্রয়দাতা পিতামহকে হারান। এরপর চাচার কাছে লালিত। পড়াশোনার সুযোগবঞ্চিত কৈশোর কেটেছে মরুভূমিতে মেষ চরিয়ে।
২। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এমন একজন মানুষ - যিনি নিরক্ষর ছিলেন। পড়তে বা লিখতে পারতেন না।যাকে পরবর্তীতে আল্লাহ স্বীয় কুদরতে জ্ঞানদান এবং জ্ঞানী করেছেন।
৩। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এমন একজন মানুষ - যিনি কখনো কোনো কবিতা লেখেন নি। কোথাও ভাষণ দেন নি। কোথাও ওয়াজ করেন নি। কবি, বাগ্মী বা ধর্মবেত্তা হিসেবে যাঁর কোনো পরিচিতি ছিল না।
৪। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এমন একজন মানুষ - যিনি দার্শনিক, ইতিহাসবিদ, গবেষক, সমাজবিজ্ঞানী, মহাকাশবিজ্ঞানী হিসেবেও যিনি খ্যাতিমান হন নি।
৫।মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এমন একজন মানুষ - যিনি ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত পরিচিত ছিলেন একজন শান্তিপ্রিয় সদাচারী ভালো মানুষরূপে, একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে, একজন সত্যবাদী মানুষরূপে।
ছবি - sangbadchorcha.com
৪০ বছর বয়সে তাঁর মুখ থেকে নিঃসৃত হতে শুরু করল (মহান আল্লাহপাক প্রদত্ত ও নাজিলকৃত ) জীবনের বাঁকবদলকারী বাণীমালা, যা আরবি ভাষায় সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপিত। তিনি বললেন," আল্লাহ এই বাণীমালা তাঁর ওপর নাজিল করেছেন"। আরবি ভাষার সকল কবি-সাহিত্যিক স্বীকার করলেন, " না - এর মতো কোনো পঙক্তিমালা তাদের পক্ষে রচনা করা সম্ভব নয়"। শতাব্দীর পর শতাব্দী পার হয়ে গেল কিন্তু এর মতো কোনো পঙক্তিমালা কারো পক্ষেই রচনা করা সম্ভব হলো না।
মানুষের এক জীবনে যা দরকার, তার সবই সাজানো রয়েছে আল কোরআনের পরতে পরতে। সুস্থ সুন্দর সুখী পরিতৃপ্ত জীবনের জন্যে যা প্রয়োজন, আলকোরআনের পাতায় পাতায় রয়েছে তারই দিক-নির্দেশনা। পবিত্র কোরআনে মানব জীবনের সব দিকনির্দেশনার বর্ণনার পাশাপাশি মানবজাতীর প্রতি উপদেশ স্বরুপ বেশ কিছু আয়াত আছে।আসুন আমরা সেগুলো সম্পর্কে জানি -
ছবি - samakal.com
আল কোরআনের উপদেশাবলী
১। কোমলভাষী হও,রূঢ় ভাষা ব্যবহার কোরো না।(সুরা আলে ইমরান, আয়াত - ১৫৯)।
"হে নবী! আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগ ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো। কাজেই আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করুন এবং কাজে কর্মে তাদের পরামর্শ করুন। অতঃপর যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহ তা'আলার উপর ভরসা করুন। যারা আল্লাহর ওপর নির্ভর করে তাদের তিনি ভালবাসেন।"
২। এই বিশ্বের বিস্ময় ও সৃষ্টি নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা করো। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত - ১৯১)।
"জ্ঞানী তারাই যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমান ও জমিনের সৃষ্টি বিষয়ে চিন্তা করে এবং বলে, (বলে,) ‘হে আমাদের রব! আপনি এগুলো অনর্থক সৃষ্টি করেননি।আপনি অত্যন্ত পবিত্র। আপনি আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন"।
৩। নারী ও পুরুষ উভয়ই তাদের কৃতকর্মের সমান প্রতিদান পাবে। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত - ১৯৫)।
"তারপর তাদের পালনকর্তা তাদের দোয়া (এই বলে) কবুল করে নিলেন যে, আমি তোমাদের কোন পরিশ্রমকারীর পরিশ্রমই বিনষ্ট করি না, তা সে পুরুষ হোক কিংবা স্ত্রীলোক। তোমরা পরস্পরে এক। তারপর যারা হিজরত করেছে, তাদেরকে নিজেদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে এবং তাদের প্রতি উৎপীড়ন করা হয়েছে আমার পথে এবং যারা লড়াই করেছে ও মৃত্যুবরণ করেছে, অবশ্যই আমি তাদের উপর থেকে অকল্যাণকে অপসারিত করব। এবং তাদেরকে প্রবেশ করাব জান্নাতে যার তলদেশে নহর সমূহ প্রবাহিত। এই হলো বিনিময় আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর আল্লাহর নিকট রয়েছে উত্তম বিনিময়"।
৪। মৃতদের সম্পদ তার পরিবারের সদস্যদের ভেতর বণ্টন করতে হবে এবং সম্পদের উত্তরাধিকারে নারীদেরও সুনির্দিষ্ট অংশ রয়েছে।। (সুরা নিসা, আয়াত - ৭)।
পিতা-মাতা এবং আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষের অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীরও অংশ আছে, সেটা অল্পই হোক বা বেশীই হোক, (নর-নারী প্রত্যেকের জন্য) নির্ধারিত অংশ রয়েছে ।
৫। এতিম - অনাথের সম্পদ আত্মসাত করোনা ।(সুরা নিসা, আয়াত - ১০)।
"যারা অন্যায়ভাবে এতিমদের সম্পত্তি গ্রাস করে, নিশ্চয়ই তারা তাদের পেট আগুন দিয়ে পূর্ণ করছে। শীঘ্রই তারা জ্বলন্ত আগুনে জ্বলবে"।
আল্লাহ পাক আমাদেরকে আল কোরআন জানার-বুঝার এবং আল কুরআনের আলোকে জীবন গড়ার তওফিক দান করুন
চলবে -
===============================================================
পূর্ববর্তী পোস্ট -
আল কোরআনের উপদেশাবলী - পর্ব - ৬ Click This Link
আল কোরআনের উপদেশাবলী - পর্ব - ৫ Click This Link
আল কোরআনের উপদেশাবলী - পর্ব - ৪ Click This Link
আল কোরআন সংকলন-সংরক্ষণের ইতিহাস - Click This Link
আল কোরআন এর ২৬ টি আয়াত বাতিল চেয়ে আদালতে দায়ের করা রিট বাতিল করলো ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
- Click This Link
আল কোরআনের উপদেশাবলী - পর্ব - ৩ Click This Link
আল কোরআনের উপদেশাবলী - পর্ব - ২ Click This Link
আল কোরআনের উপদেশাবলী - পর্ব - ১ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:০৮