ছবি - উইকিপিডিয়া
লেখার প্রেক্ষাপট - সোনাগাজী ভাইয়ের লেখা,"হিরো আলাম তো ভালোই ছিলো, এমপি হতে চায় কেন"? লিংক - Click This Link এবং গত কিছুদিন যাবত দেশে ঘটিত ঘটনাবলী।
বর্তমানে সমগ্র বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশী ও বিদেশে এমনকি জাতিসংঘেও যে নাম আলোচিত তা হলো ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম। আশরাফুল আলম সাঈদ, যিনি হিরো আলম নামে দেশে অধিক পরিচিত তিনি ১৯৮৫ সালের ২০ জানুয়ারি বগুড়া জেলার সদর উপজেলার এরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে ৭ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থাতেই তিনি জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা শুরু করেন। আর তাই হিরো আলম প্রথম দিকে নিজ গ্রাম এরুলিয়ায় সিডি বিক্রির কাজ করতেন এবং পরবর্তীতে স্যাটেলাইট টিভি সংযোগের (ক্যাবল পরিচালনা) ব্যবসায় নামেন। ক্যাবল সংযোগের ব্যবসা চলাকালে শখের বশে তিনি সঙ্গীত ভিডিও নির্মাণ শুরু করেন এবং বর্তমানে নিজ উদ্যোগে তিনি একজন বাংলাদেশী সঙ্গীত ভিডিও মডেল, অভিনেতা, লেখক (২০১৯ সালে একুশে বইমেলায় তার আত্মজীবনী “দৃষ্টিভঙ্গি বদলান আমরা সমাজকে বদলে দেবো” প্রকাশিত হয়, যেটি প্রকাশ করে তরফদার প্রকাশনী এবং বইটি সম্পাদনা করেন সৌরভ আলম সাবিদ) ,গায়ক এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত ব্যক্তি। তিনি একজন স্বাধীন শিল্পী হিসাবে কাজ করেন ও সামাজিক প্ল্যাটফর্মগুলিতে ভিডিও প্রকাশ করে থাকেন।
বেশীরভাগ মানুষের মতে, তার গানের গলার সুর বেসুরে । আর তাই সে সর্বাধিক আলোচিত - সমালোচিত। এখানে একটা কথা না বললেই নয় - সে কি এটিএন বাংলার (মাননীয়) চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান থেকে বেশী বেসুরে গান গায় , কিংবা (মাননীয়া ) মমতাজ বেগম (গায়িকা,রাজনীতিবিদ ও সংরক্ষিত নারী আসন-১৫ থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্যা) থেকে বেশী ফাটাইয়া ফেলে বেসুরে গায়? আমরা যদি গায়ক মাহফুজুর রহমান কিংবা গায়িকা মমতাজ'কে সহ্য করতে পারি তাহলে গায়ক হিসাবে হিরো আলমকে নয় কেন? (মন চাইলে তার গান শুনব, না চাইলে শুনব না। কিচচা খতম।) নাকি তাদের আগে মাননীয়-মাননীয়া (তাদের কারো আছে টাকা, আর কারো আছে ক্ষমতাশীনের আর্শিবাদ) আছে, এই জন্য তাদের আমরা সহ্য করছি । আর হিরো আলম না মাননীয় কিংবা না আছে টাকা কিংবা না আছে ক্ষমতাশীনের আর্শিবাদ - আর তাই এই হিরো আলমকে লাথি-গুতা মারছি,সমালোচনা করছি হাত খুলে -প্রাণ ভরে ?
ছবি - সমকাল
বগুড়ার একটি আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য, এক শতাংশ ভোটারের যে স্বাক্ষর জমা দিতে হয়, সেই তালিকায় স্বাক্ষর না মেলার অভিযোগে তার প্রার্থিতা যখন বাতিল করে দিয়েছিলেন জেলা রিটার্নিং অফিসার তখন সে রাগে ক্ষোভে বলেছিলেন,''এই দেশের রাজারা কখনো চায় না যে প্রজারা রাজা হোক। সেইরকম এমপি-মিনিস্টাররা কখনো চায় না যে সাধারণ মানুষ এমপি-মিনিস্টার হোক"। (বাণীতে - হিরো আলম) । অল্প শিক্ষিত হিরো আলম তখন যা বলেছে তা আসলে এদেশের প্রেক্ষাপটে শতভাগ সত্য এবং দেশটা এখন গুটি কয়েক ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের হাতের মোয়া (সম্পদ) হয়ে গেছে এবং জনগন হয়ে গেছে তাদের সেবাদাস। আর তাই, তারা যাই বলবে-করবে তাই সঠিক বাকী সবই বাকোয়াজ।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও ভোটাধিকার প্রয়োগ রাষ্ট্রের যে কোন নাগরিকের সর্বপ্রথম মৌলিক মানবিক অধিকার। রাষ্ট্রের যে কোন নাগরিক কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে, বাংলাদেশের যে কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্য এবং তা মৌলিক মানবাধিকারের পর্যায়েও পরে এবং তা নিশ্চিত ও সুরক্ষিত করা সরকার-প্রশাসন-বিচার বিভাগ-ইসি প্রত্যেকেরই উচিত এবং ভোটাধিকার প্রাপ্ত যে কোন নাগরিকের নির্ভয়ে ও যে কাউকে তার ভোটাধিকার প্রয়োগও রাজনৈতিক ও মৌলিক মানবাধিকারের পর্যায়ে পড়ে। আর সেই নাগরিক অধিকারের বলেই দেশের প্রচলিত সকল আইন-শর্ত পূরন করেই হিরো আলম হয়েছিলেন সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী । সে অশিক্ষিত এবং টিটকার এই অযুহাতে ক্ষমতাশীনরা সহ দেশের নানা শ্রেণী পেশার মানুষ তার সমালোচনায় মূখর। ব্যক্তি স্বাধীনতার মতবাদের উপর ভর করে যারা তার সমালোচনা করছে তারাও যে আরেক জনের মৌলিক অধিকার লংঘন করছে, সেটা তারা ভেবেও দেখছে না।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান ( ১৯৭২ সনের নং আইন অনুযায়ী )
সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হইবার যোগ্যতা -
সংবিধানের ৬৬ (১) ধারা অনুযায়ী - কোন ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক হইলে এবং তাঁহার বয়স পঁচিশ বৎসর পূর্ণ হইলে এই অনুচ্ছেদের (২) দফায় বর্ণিত বিধান-সাপেক্ষে তিনি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ-সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন।
সেই হিসাবে, হিরো আলমের পূর্ণ অধিকার আছে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করার এবং জনগন যদি তাকে ভোট দেয় তবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং জনগনের সেবা করার(নাকি জনগনের সেবার অধিকার শুধু কয়েকটা পরিবারের পারিবারিক বিষয়। আর তারই ধারাবাহিকতায় সকল শর্ত পূরণ করেই, দেশের সকল প্রতিষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলের ভোট বর্জনের মাঝেও ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম ।
আবার - সংবিধানের ৬৬ (২) ধারা অনুযায়ী - সংসদে নির্বাচিত হইবার অযোগ্যতার শর্ত অনুসারে -
(২) কোন ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ-সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না, যদি
(ক) কোন উপযুক্ত আদালত তাঁহাকে অপ্রকৃতিস্থ বলিয়া ঘোষণা করে।
(খ) তিনি দেউলিয়া ঘোষিত হইবার পর দায় হইতে অব্যাহতি লাভ না করিয়া থাকেন।
(গ) তিনি কোন বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোন বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন।
(ঘ) তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোন ফৌজদারী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাঁহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকেন ।
(ঙ) তিনি ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ যোগসাজশকারী (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশের অধীন কোন অপরাধের জন্য দণ্ডিত হইয়া থাকেন ।
(চ) আইনের দ্বারা পদাধিকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করিতেছে না, এমন পদ ব্যতীত তিনি প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোন লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন।
(ছ) তিনি কোন আইনের দ্বারা বা অধীন অনুরূপ নির্বাচনের জন্য অযোগ্য হন।
এর সবগুলোর কোন একটি শর্তও হিরো আলম ভেংগেছে বা এরকম কোন অন্যায় তার দ্বারা হয়েছে বলে (হিরো আলম না ব্যাংক লুটেরা, না দরবেশ বাবা, না সেঞ্চুরিয়ান কিংবা দলবাজ-তেলবাজ) আইন শৃংখলা বাহিনী, আদালত কিংবা প্রশাসন কারও কাছ থেকে এরকম কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। হিরো আলমের মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ ও নমিনেশন পেপার জমাদানেও নানা ভাবে বাধার তৈরী হয়েছে । নির্বাচনে অংশগ্রহনের শুরুর পর্যায় থেকে প্রচারের সময় সে নানা ভাবেই হয়রানী সহ কয়েকবার শারিরীকভাবে নিগৃহিত হয়েছে একটি বিশেষ দলের সমর্থকদের দ্বারা যার সর্বশেষ পরিণতি হল নির্বাচন চলাকালে স্বতন্ত্র এমপি পদপ্রার্থী আশরাফুল আলমের ওপর হামলা। (ভোটের ফলাফল - ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাত। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরাফাত পেয়েছেন ২৮ হাজার ৮১৬ ভোট এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম পেয়েছেন ৫ হাজার ৬০৯ ভোট ) আর এ ঘটনায় দেশের সাধারন মানুষের সাথে সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম,মূল ধারার খবরের কাগজ,দেশের রাজনীতিবিদদের সাথে সাথে আমেরিকা এমনকি খোদ জাতিসংঘও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং এ জাতীয় ঘৃণ্য কাজ রোধ ও দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার আহববান জানিয়েছে।
অথচ সরকারের দাবী নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন অনুসারে, সহিংসতা ছাড়া বাংলাদেশের যে কোন এলাকায় নির্বাচনে হিরো আলমের অংশগ্রহণ মৌলিক মানবাধিকার এবং তা নিশ্চিত ও সুরক্ষিত করা শেখ হাসিনা (সরকার)-প্রশাসন-বিচার বিভাগ-ইসি প্রত্যেকেরই দায়িত্ব এবং তা করাও উচিত ছিল ।
এখানে তার প্রতি কারো কারো যে অভিযোগ/দাবী ছিল , ( সে টিক-টকার এবং এই আসনের স্থায়ী বাসিন্দা নন) সেখানেও একথা বলা যায় -
১। প্রথম অভিযোগ (সে টিক-টকার) - হিরো আলমের আগেও এমন অনেকেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছে এবং বার বার হয়ে যাচছে যার যোগ্যতা ছিল শুধু ফাইট্টা যায় বলা পর্যন্ত কিংবা সংসদে গান গেয়ে শোনানো পর্যন্ত । এখন, কেউ যদি গান গেয়ে এবং বিশেষ বিবেচনায় (সংরক্ষিত নারী আসন) সংসদ সদস্য হতে পারে, তাহলে হিরো আলম নিজের যোগ্যতায় এবং সরাসরি জনগনের ভোটে কেন সংসদে জনগনের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেনা?
২। ১। দ্বিতীয় অভিযোগ (এই আসনের স্থায়ী বাসিন্দা নন)) - হিরো আলম কোন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নন। আর তাই সে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে কিছু শর্ত পূরণ করে দেশের যে কোন সংসদীয় আসন-এলাকা থেকে নির্বাচন করতে পারেন।
বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে অংশগ্রহণের শর্ত অনুসারে -
"কোন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন করতে হলে সমর্থক হিসাবে ওই এলাকার (যে এলাকা কিংবা আসনে সে ভোট করতে চায়) মোট ভোটারের ১ শতাংশের স্বাক্ষর বা টিপসহি থাকতে হবে। তবে পূর্বে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে এটি প্রযোজ্য হবেনা। স্বাধীন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে অংশগ্রহণের শর্ত অনুসারে সে এই শর্ত পূরণ করেই প্রার্থী হয়েছে। তাহলে - এখানে অনেকের কেন সমস্যা বোধ হবে হিরো আলমকে নিয়ে?
২০১১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি জারি করা গেজেটে এই বিধানটি সংযুক্ত করা হয়েছিল। (এই বিধানের পক্ষে তখনকার কমিশনের পক্ষ থেকে যুক্তি হিসাবে বলা হয়েছিল, নির্বাচনে প্রার্থীদের সংখ্যা সীমিত এবং যোগ্য প্রার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এই বিধানটি সহায়ক হবে।)
তবে এই প্রক্রিয়াটি বাংলাদেশের সাংবিধানিক এবং মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী বলে মনে করেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ। তোফায়েল আহমেদ বিবিসি নিউজ বাংলাকে বলছেন, ''স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এই যে ১ শতাংশ স্বাক্ষর রাখার বিধান রাখা হয়েছে, সেটা অনেকগুলো কারণেই মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।"
"প্রথমত, যিনি ভোটার, তার প্রার্থী হওয়ার অধিকার রয়েছে, সেটা ক্ষুণ্ণ হলো।
দ্বিতীয়ত, যে ভোটাররা সেখানে স্বাক্ষর করে সমর্থন করবেন, এটা তাদের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। কারণ তিনি গোপন ব্যালটে ভোট দেবেন, অথচ এখানে কেন তাকে প্রকাশ্য করে দেয়া হচ্ছে যে, তিনি কাকে ভোট দেবেন। এটা তার অধিকার এবং তার জন্যও ক্ষতিকর''। তিনি আরো বলেন "আমি মনে করি, এখনো সময় আছে, যেসব ভুলত্রুটি হয়েছে, নির্বাচন কমিশন সেসব সংশোধন করতে পারে'' ।
বর্তমানে (গত ১৫ বছরে) নির্বাচন নিয়ে দেশের মানুষের মাঝে কোন আগ্রহ নেই বললেই চলে এবং দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের বিপরীতমূখী অবস্থানের কারনে প্রশাসন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নানা সীমাবদ্ধতার কারনে দেশের মানুষের সাথে সাথে দেশের বাইরের উন্নয়ন অংশীদার,দাতা,আমেরিকা-ইউ সহ সবাই শংকিত দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ভবিষ্যত নিয়ে। এসব কারনে এবং গত ১৫ বছরে ক্ষমতাশীনদের নির্বাচন নিয়ে নানা রকম কারিকুরী ফলানোর কারনে দেশের সকল বিরোধী রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগের অধীনে নির্বাচন বর্জন করছে এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছে। সেখানে হিরো আলম সাহস করে আওয়ামী সরকারের অধীনে ভোটে দাড়িয়েছে।এতে করে সরকারের-প্রশাসনের উচিত ছিল তাকে তার প্রাপ্য অধিকার যাতে পেতে পারে তার ব্যবস্থা করা। সরকার প্রধান সহ তার দলের সবাই সারা দিন বলে চলছে, " তারা নিরপেক্ষ-গ্রহনযোগ্য নির্বাচন চায় ও আয়োজন করে। তাহলে হিরো আলমের অংশগ্রহনে তাদের সমস্যা কোথায় ছিল? নিরপেক্ষ-গ্রহনযোগ্য নির্বাচনে হিরো আলম জিতলেও আওয়ামী সরকারের পতন হতনা কিংবা কোন ক্ষতি হতোনা লাভ ছাড়া। কারন - দেশের সব কিছুই যেখানে ক্ষমতাশীনদের অনুকূলে এবং ----
বিএনপি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসংখ্য মামলার আসামী ও সাজাপ্রাপ্ত হয়ে রাজনীতির বাইরে,তার ছেলে তারেক জিয়া অসংখ্য মামলার আসামী,সাজাপ্রাপ্ত ও নির্বাসিত। মির্জা ফখরুল,মির্জা আববাস খন্দকার মোশারফ,রিজভী,গয়েশ্বর রায়রা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মত গত ১৫ বছর বিএনপিকে টিকিয়ে রেখেছে এবং যেখানে শেখ হাসিনার সাথে কারোর কোন তুলনা করার সুযোগ নেই এবং নেই কোন দৃশ্যমান নেতা যে নির্বাচনে যদি বিএনপি জিতে (এখনত তারা সকল প্রকার নির্বাচন বর্জন করেছে ) তাহলে কে হবে তাদের সংসদীয় দলের নেতা তথা সরকার প্রধান।
জাতীয় পার্টি - দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টির কারিশমাটিক নেতা এরশাদ মৃত । জাতীয় পার্টি এখন দেবর-ভাবীর দ্বন্দ্বে জেরবার এবং এর বাকী নেতারা নিজেদের ভিতরই লড়ছে দেবর-ভাবীর পক্ষে-বিপক্ষে।
জামায়াত - জামায়াতের বেশীরভাগ নেতাই ফাসিতে ঝুলেছে এবং বর্তমানে আইনের মারপ্যাচে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ না হলেও তারা জামায়াত নামে কোন নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে পারবেনা। কাজেই ,এদিক থেকেও আওয়ামীলীগের কোন ভয় নেই।
বাকী সব রাজনৈতিক দলের ( ৩০ - ৫০ সংখ্যায় যাই হোক না কেন) দুই-একজন নেতা বাদে দেশব্যাপী তাদের কোন সেভাবে পরিচিতি নেই এবং তারা আছে নামে মাত্র যাদের আবেদন জনগনের নিকট সীমিত বা সেই সব দলের কার্যক্রম কাগজে-কলমে এবং ভোটের মাঠে প্রভাব নেই বললেই চলে এবং তারাও কেউ এখন দেয়না বা হয়না নির্বাচনে প্রার্থী (কারন - সবার মতে নির্বাচন এখন শুধু লোক দেখানো। একটি দলের প্রার্থী জয়ী হবে। এটাই এখন এ দেশের নিয়তি )।
অন্যদিকে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ ও এর প্রধান শেখ হাসিনার সাথে বর্তমানে দেশে কারোর কোন তুলনা করার কোন সুযোগ নেই। তিনি নিজেকে ওয়ান ম্যান আর্মি শো এর মত ইতিমধ্যেই এক অনন্য উচচতায় নিয়ে গেছেন যেখানে তার ধারে-কাছে কেউ নেই,না রাজনীতির ময়দানে ও না ক্ষমতার মঞ্চে । শেখ হাসিনার সমান কিংবা বিকল্প না তার দলে আছে না বাকীদের নিকট আছে। আর তার সাথে সাথে আছে তাহার বিশ্বস্ত সেনাপতিরা (শামীম ওসমান, কাদের,হানিফ,ইনু) যাহারা বিএনপির আলু-ফালু-মালু থেকে বহুগুন শক্তিশালী এবং যাদের প্রিয় কাজ ও কথাই হল - খেলা এবং খেলা হপ্পে খেলা।
এত বড় দল, বিশাল সুবিধাভোগী, ব্যাপক উন্নয়ন , সুসংগঠিত কর্মী ও বহু বিশ্বস্ত সেনাপতিরা থাকার পরও আওয়ামীলীগের কেন -
১। হিরো আলমের প্রার্থীতায় বাঁধা তৈরী করতে হবে বা তার উপর আক্রমণ করবে?
২। এ উপ নির্বাচনে নিরপেক্ষতা বজায় রাখলে সরকাররের কি কিছু হারানোর ভয় ছিল ?
৩। নাকি, জনগনের উপর (ভোটাধিকার) তাদের বিশ্বাস নেই?
৪। কিংবা ,তাদের নেতা-সরকার প্রধানের মুখের কথা (নিরপেক্ষ-গ্রহনযোগ্য নির্বাচন) আর মনের কথা এক নয়?
৫। নাকি, যা দেখা যায়/যাচছে (মাঝে মাঝে কিছুটা ভাল করার চেষ্টা ) তার অনেক কিছুই সঠিক নয়?
আওয়ামী সরকার যেহেতু প্রায় ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে এবং তাদের দাবী অনুসারে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন তাদের হাত ধরে হয়েছে তাহলে আশা করা যায় নিরপেক্ষ ও ভয়-ডর বিহীন ভোটাধিকার পেলে জনগন আবার তাদের পূণরায় ক্ষমতায় আরোহনের জন্য রায় দিবে। কাজেই সরকারী দলের হাসি মুখেই যে কোন বিরোধী প্রাথীকে বরণ করা উচিত নয় কি?
নাকি, শুধু বিশেষ পরিবার ও তার অনুগতদের জন্যই দেশের জনগনের সেবাদান (রাজনীতি-নির্বাচন) প্রক্রিয়া?
বাকী সবাই, লে হালুয়া----------
জবাব দিহীতা - গত কয়েক দিনের ঘটনা প্রবাহ ও হিরো আলমের পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা - সমালোচনার প্রেক্ষাপটেই এই লেখা। এখানে কে সত্যি বা কে ভাল বা খারাপ তা প্রমান কিংবা সরকারের নীতির সমালোচনা করা কিংবা সরকারের বিরোধীতা করার বিষয় নয় । পাঠককে এর সাথে রাজনীতির দূরতম কোন সম্পর্কও না খোজার বিনীত অনুরোধ রইলো। এ শুধুই একজন সাধারন মানুষ ও সচেতন নাগরিক হিসাবে হিরো আলম ইস্যুর পোস্টমর্টেম,যেখানে শুধু সঠিক জিনিসটা জানারই চেষ্টা।
তথ্যসূত্র
==========
১। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান। সংসদে নির্বাচিত হইবার যোগ্যতা ও অযোগ্যতা - Click This Link
২। সংসদ নির্বাচন-নির্বাচনী আইন কি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে?- https://www.bbc.com/bengali/news-46436257
৩। হিরো আলম - https://bn.wikipedia.org/wiki/
৪। রুচির দুর্ভিক্ষে উত্থান হয়েছে হিরো আলমের - মামুনুর রশীদ - https://www.jugantor.com/entertainment/658858/
৫। হিরো আলমের ওপর হামলায় জাতিসংঘের উদ্বেগ - Click This Link
৬। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিং - হিরো আলমের ওপর হামলার প্রসঙ্গে ম্যাথু মিলার যা বললেন -
লিংক - Click This Link
-
পূর্ববর্তী পোস্ট -
===============
৮। সেন্টমার্টিন দ্বীপ লিজ কিংবা বিক্রি - সত্যিটা কি ? - Click This Link
৭।আমেরিকার ভিসা নীতি বনাম বাংলাদেশের ভিসা নীতি-এর পর কি হবে?-
Click This Link
৬। আমার সোনার বাংলা কি কোটিপতি ও খেলাপি ঋণ তৈরীর কারখানা ? - Click This Link
৫। " রংপুর সিটি কর্পোরশন নির্বাচন - লাঙলের জয় ও নৌকা চতুর্থ " - কি বার্তা দেয় আমাদের? - Click This Link
৪। " বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন " - তুমি কার ? -
Click This Link
৩। সামাজিক রীতি-নীতি-শিষ্ঠাচার এখন যাদুঘরে - আপনি কি একমত ? -
Click This Link
২। বর্তমান সময়ে আমরা কি একটি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও দৃষ্টিশক্তি হীন জাতি বা প্রজন্মে পরিণত হচছি বা হতে যাচছি? -
Click This Link
১। আমাদের সমাজের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা কি ভেঙে পড়ছে ? -
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ২:২৮