somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাম্প্রতিক বন্যায় স্বাস্থ্যঝুঁকি : করণীয়

১৭ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় দু:সংবাদ হচ্ছে, বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি চরম অবনতি। এবার উজানের ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা ও তিস্তা-বরাকের অববাহিকায় ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পানির উচ্চতা বেড়েছে। ভারত তিস্তা ব্যারাজের ৬০কিলোমিটার উজানে নির্মিত গজলডোবা বাধের ৫৪টি গেটের সবগুলো একসাথে খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পূর্বাভাস বিষয়ক দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থার বিশেষজ্ঞগণ ধারণা করছেন, স্মরণকালের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় বন্যা হতে পারে, যা হয়তো ১৯৮৮ সালের বন্যাকেও ছাপিয়ে যেতে পারে।

বন্যায় যোগাযোগব্যবস্থা, ঘর বাড়ি, শস্যক্ষেত্র, গবাদিপশু ইত্যাদির ক্ষতির সাথে সাথে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির আশংকাও থাকে। বন্যার সময় বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে থাকে। কখনো কখনো রোগগুলো মহামারি আকারও ধারন করতে পারে। প্রিয় পাঠক, চলুন জেনে নেওয়া যাক বন্যায় পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার কারণ ও প্রতিকারের উপায়গুলো।

বন্যার সময়ে যেসব রোগ হতে পারে সেগুলো হচ্ছে:

১. পেটের পীড়া: পেটের পীড়া নানা রকম হয়ে থাকে। যেমন:
ক. ডায়রিয়া, কলেরা।
খ. ডিসেন্ট্রি (আমাশয় ও রক্ত আমাশয়)
গ. টাইফয়েড
ঘ. ভাইরাল হেপাটাইটিস

২. বুকের প্রদাহ: কফ, কাশি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস প্রভৃতি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়।

৩. জ্বর: নানা রকম ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল জ্বর হয়ে থাকে।

৪. চর্মরোগ: যেমন- খোস পাচড়া, ছত্রাকঘটিত সংক্রমণ প্রভৃতি চর্মরোগ হয়ে থাকে।

৫. চোখের প্রদাহ: যেমন- কনজাংটিভাইটিস, আইরাইটিস ইত্যাদি।

৬. সর্প দংশন : নানা রকম সর্পদংশনের ঘটনাও ঘটে থাকে।

৭. বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া: বন্যার সময় শিশুরা অনেকসময় সাতার না জানার দরুন পানিতে ডুবে মারা যায়।




বন্যার সময় যেসব কারণে রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে থাকে, চলুন জেনে নিই:

~ অনিরাপদ খাদ্যদ্রব্য:

বন্যার পানিতে থাকে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, মানুষ ও গবাদিপশুর বর্জ্রপদার্থ এবং বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ। খাদ্যদ্রব্যের সাথে এ পানির সংমিশ্রন খাবারকে অনিরাপদ এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর করে তোলে।

বন্যার সময় ইলেক্ট্রিসিটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যার ফলে স্টোরড খাবারও নষ্ট হয়ে যায়। যেকোনো খাবার যদি বন্যার পানির সংস্পর্শে আসে, তাহলে তা খাবার অযোগ্য হয়ে পড়ে।

~ দূষিত খাবার পানি:

বন্যার সময় নিরাপদ পানির উৎস সমূহ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফলে, নিরাপদ এবং পানযোগ্য পানির মারাত্মক সংকট দেখা যায়। বন্যার পানির সাথে পানিবাহিত রোগেরও তখন আগমন ঘটে। ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, চর্মরোগ, চোখের অসুখ প্রভৃতি সমস্যা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে।

~ যথাযথ স্যানিটেশন ব্যাবস্থার অভাব:

বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় টিউবওয়েল এবং টয়লেট মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে বানের পানিতেই প্রাকৃতিক কর্ম সারতে হয় অধিকাংশ মানুষকেই। আবার এই পানিতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ সারতে হয়। এভাবে স্যানিটেশন ব্যবস্থার মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে।

~ মশার প্রাদুর্ভাব:

অবিরাম বর্ষন এবং বন্যায় মশার বংশবৃদ্ধির হার বেড়ে যায় এবং মশাবাহিত রোগসমূহ যেমন- ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ইত্যাদি ছড়িয়ে পড়ে।

~ মোল্ড :

বন্যাদুর্গত মানুষজন যাদের এলার্জি অথবা হাপানি আছে, তাদের জন্য মোল্ডের (জীবাণুর বিশেষ অবস্থা) সংস্পর্শ বিপদ ডেকে আনতে পারে। বিভিন্ন ধরনের শ্বাসনালীর জটিলতা যেমন: গলা ব্যাথা, চোখ ও নাক দিয়ে পানি পড়া, সর্দি ইত্যাদি হতে পারে । মোল্ড সংক্রান্ত স্বাস্থ্যঝুকিতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় শিশু, বৃদ্ধ এবং গর্ভবতী মহিলারা।

~মানসিক চাপ এবং অবসাদ:

বন্যা শুধু শারীরিক ক্ষতিই করে না, বরং মানসিক চাপও তৈরী করে। প্রলয়ংকরী বন্যাতে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষজন ভীষণভাবে দীর্ঘকালীন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়। বন্যা পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্ত বাসস্থান ঠিক করা, অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবিলা করা ইত্যাদী বিষয়সমূহ মানসিক বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। বন্যা পরবর্তী সময়ে যেসকল মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা, রাগ, হতাশা, অস্বাভাবিক নিদ্রালুতা, হাইপার এক্টিভিটি, ইনসোমনিয়া এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে আত্মহত্যার চেষ্টাতেও রূপ নিতে পারে।

বন্যার সময় সবধরনের প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করে সুস্থ থাকার পদ্ধতি এবং আক্রান্ত হলে আমাদের করণীয় সম্পর্কে এবার চলুন জেনে নিই।

- বন্যা মোকাবিলায় সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য ব্যাবহার করা। আমরা ইতোপূর্বেই জেনেছি যে, প্রায় অধিকাংশ রোগই পানি ও খাদ্যবাহিত। তাই বিশুদ্ধ পানি ও টাটকা খাবারই এসব রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। পানিকে সেকে কমপক্ষে আধাঘন্টা ফোটাতে হবে। তাছাড়া, ফিটকিরি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দিয়েও পানি বিশুদ্ধ করা যায়। প্লেট, গ্লাস, হাত ভালো করে বিশুদ্ধ পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। বাসি, নষ্ট খাবার পরিহার করতে হবে।

- বন্যার পানিতে বেশি হাটা, চলা, গোসল করা পরিহার করতে হবে। এতে করে জ্বর, বুকের প্রদাহ, চর্মরোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

- শিশুদেরকে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। অসাবধানতার কারণে পানিতে যাতে পড়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুদেরকে শুষ্ক পরিবেশে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অবস্থায় রাখতে হবে।

- ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে খাবার স্যালাইন খেতে হবে। বমি বেশি হলে শিরায় স্যালাইন দিতে হবে। অতিমাত্রায় পাতলা পায়খানা, বমি হলে, রক্ত গেলে, জ্বর থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

- বৃষ্টি, ঝড়, বন্যার কারণে ঠান্ডা লেগে অনেকসময় কফ-কাশি, শ্বাসকষ্ট, জ্বর প্রভৃতি হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে কিছু উপসর্গ নিরাময়ের ঔষধ সেবনের পরও উপকার না পেলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

- বন্যার সময় চর্মরোগ দেখা দিলে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের সহযোগিতা নিতে হবে।

- সাপে কামড়ালে আক্রান্ত স্থানের উপরে মোটা কাপড় দিয়ে বেধে ক্ষতস্থান ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

বন্যা বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অসহনীয় এক অভিশাপ। একেকটা বন্যা আমাদেরকে কয়েক বছরের জন্য পঙ্গু করে দিয়ে যায়। বন্যা প্রতিরোধে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি জনসচেতনতাই পারে বন্যাকবলিত মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দিতে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৪২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×