somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: নিউক (পর্ব এগার)

১১ ই জুন, ২০২০ সকাল ১১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একুশ অধ্যায়

বিজ্ঞান পরিষদের ভবনটি একটি প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। নিউক এবং প্লেরা ভবনটির সামনে এসে চুপি চুপি উকি দিল। তখন গভীর রাত, অনেকটা জনমানবশূন্য এই জায়গাটাতে বিজ্ঞান পরিষদের ভবনটি হওয়াতে কেমন জানি খাঁখাঁ করছে চারদিকে, তৃতীয় প্রজন্মের তিনজন রোবট মাথায় হেলমেট পরিহিত অবস্থায় ভবনটির সামনে পাহারা দিচ্ছে। তারমধ্যে একজন রোবট অলস-ভাবে দাঁড়িয়ে আরেকটি রোবটের সাথে খোশগল্প করছে। তবে সবার হাতেই সুসজ্জিত রশ্মি নিক্ষেপক অস্ত্র, যেগুলো মুহূর্তেই মধ্যেই যে কাউকে উচ্চ মাত্রার রেডিয়েশনে গলিয়ে দিতে পারে। নিউক মারামারির ব্যাপারে আনাড়ি, চোখে মুখে আতংক এবং ভয়ের একটি ভাব ফুটে উঠেছে তবে সেটা যথাসম্ভব গোপন করার চেষ্টা করছে সে। প্লেরা একহাত দিয়ে তার অগোছালো চুলগুলো ঠিক করে নিলো।

“আমরা ভিতরে ঢুকব কিভাবে রোবটগুলোতো পাহার দিচ্ছে?” বলল নিউক।

“হুম সেটাই সমস্যা। তবে যে করেই হোক ঢুকতে হবে।” ভিতরে দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে বলল প্লেরা।

“আমাদের তাড়াহুড়া করলে চলবে না। দাড়াও আগে লিডানের সাথে যোগাযোগ করে নেই বলেই হাতে থাকা একটি ডিভাইসে চাপ দিতেই লিডানের একটি ত্রি মাত্রিক হলোগ্রাফিক চিত্র ফুটে উঠল। হলোগ্রাফিক চিত্রে দেখা যাচ্ছে লিডান মনোযোগ দিয়ে তার সামনের মনিটরে কিছু একটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।”

“এখন আমাদের কি করতে হবে?” জিজ্ঞেস করল নিউক।

লিডান নিচের দিকে তাকিয়ে বায়ো-কম্পিউটারে মুখ গুজে আছে তারপর জিব দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বলল “পুরো ভবনটির একটি ত্রি-মাত্রিক চিত্র পেয়ে গেছি। ভবনটির চারদিকে এক ধরনের বিশেষ তরঙ্গ আছে, তোমরা গেট পার হলেই উচ্চ মাত্রার রেডিয়েশনে ঝলসে যাবে, একটু দাঁড়াও আমি দেখছি কি করা যায়।”

নিউক এবং প্লেরা অপেক্ষা করতে থাকে লিডানের দিক নির্দেশনার জন্য।

হলোগ্রাফিক চিত্রে দেখা যাচ্ছে লিডানের আঙ্গুলগুলো এলোপাথারিভাবে কম্পিউটারে আছরে পরছে, একটু পর পর তার ভ্রুগুলো কুচকে উঠছে, বিড়বিড় করে কি যেন বলছে সে। “এইতো প্রায় হয়ে গেছে, তিন লক্ষ্য ডিজিটের একটি নিউমেরিক্যাল সংখ্যার পাসওয়ার্ড দিয়ে প্রটেক্ট করে রেখেছিল নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে, পাসওয়ার্ডটা ভেঙ্গে যাবে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই, তারপরই নিরাপত্তায় ব্যবহৃত তরঙ্গ অকেজো হয়ে যাবে।”

“আর কতক্ষণ লাগবে?” প্লেরা উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করল।

মাথা নিচু করে তখনো কম্পিউটারের কীবোর্ডে একের পর এক হাতের আঙ্গুল দিয়ে ঝর তুলছে লিডান। কম্পিউটারে কি বোর্ড চাপড়ানোর শব্দ শোনা যাচ্ছে ওপাশ থেকে।

হঠাৎ লিডান চিৎকার দিয়ে বলল “হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি ঢুকে পর, তোমাদের হাতে সময় নেই।”

“তাড়াতাড়ি কেন?” নিউক জিজ্ঞেস করল।

“আমি যে তরঙ্গগুলোকে ডি-একটিভ করেছি সেগুলো আবার একটিভেট হয়ে যাবে, সিস্টেম হয়ত ভাবছে যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য হ্যাং হয়ে গেছে তাই রিস্টার্ট হচ্ছে। আর পাঁচ মিনিট সময় আছে তোমাদের হাতে।” ওপাশ থেকে বলল লিডান।

প্লেরার পিছনে নিউক লুকিয়ে লক্ষ্য করে দেখল রোবট তিনজন গোল হয়ে কি যেন বলাবলি করছে, তার মধ্যে একজন রোবট ভিতরে চলে গেল।

আমাদের হাতে সময় নেই উত্তেজিত হয়ে বলল প্লেরা “আমরা সরাসরি ঢুকতে পারব না, কারণ এতে ভিতরে খবর চলে যাবে। সবাই এক সাথে চলে আসলে বিপদ, সিটিসিকে ধ্বংস করার আগ পর্যন্ত ওদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে পেরে উঠবো না।”

নিউক উত্তেজনায় কাঁপছে “হাতে আর দুই মিনিট আছে প্লেরা, যেভাবেই হোক আমাদের ঢুকতে হবে নইলে পুনরায় ক্ষতিকর তরঙ্গগুলো একটিভেটেড হলে সমস্যা আছে।”

দ্বিতীয় রোবটও ভিতরে চলে গেল তখন। প্লেরা তাড়াতাড়ি ভিতরে ঢুকে গেল, নিউক তাকে অনুসরণ করে চলল। তারা সফল ভাবে ক্ষতিকর তরঙ্গ পার হতেই তৃতীয় রোবটটি পিছনে ঘুরেই দেখে সামনে প্লেরা। প্লেরার হাতের ভয়ানক অস্ত্র ছিল সেটা দিয়ে এলোপাথাড়ি মারতে লাগল রোবটের গায়ে, রোবটটির কৃত্রিম সিনথেটিকের চামড়া ছিঁড়ে ধাতব অংশ বেরিয়ে এলো শরীর থেকে, তারপর অস্ত্রের উল্টো দিক দিয়ে মাথায় সজোরে আঘাত করতেই পরে গেল রোবটটি। অস্ত্রটিতে সাইলেন্সর লাগান ছিল বিদায় তেমন কোন শব্দ হল না।

প্লেরা সরাসরি ভবটির ভিতরে প্রবেশ করতে যাবে আর তখনই আরেকটি রোবট বেরিয়ে এলো, প্লেরা উড়াল দিয়ে ক্যারাটি মেরে রোবটটিকে ফেলে দিল দেয়ালে, ধুম করে ধাতব একটি শব্দ হল, কয়েক সেকেন্ড দেয়ালে আটকে থেকে আচরে পরল মেঝেতে।

নিউক সতর্কতার সাথে চারদিকে তাকিয়ে প্লেরাকে অনুসরণ করে ভবনটির ভিতরে ঢুকে গেল।

“দাঁড়াও এখন কোন দিক দিয়ে যেতে হবে লিডানের থেকে জেনে নেই।” বলে আবারো লিডানের সাথে যোগাযোগ করল নিউক।

“চমৎকার তোমরা ভবনটির ভিতরে ঢুকে গেছ।” ওপাশ থেকে লিডানের উত্তেজিত কণ্ঠ ভেসে এলো।

“এখন কোন দিকে যাব?” জিজ্ঞেস করল নিউক।

“এই বিল্ডিং এর পুরো ম্যাপ আমার কাছে আছে এখন। ভবনটির আন্ডার গ্রাউন্ডের একশত পঞ্চাশ তলা নিচে একটি কনট্রোল রুমে সেন্ট্রাল কম্পিউটার সিটিসি আছে। এখন প্রথমেই সেই কনট্রোল রুমে ঢুকে ইনজেকশন পুষ করে সিটিসির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিতে হবে, তারপর বাকিটা আমি এখান থেকে করতে পারব।” বলল লিডান।

“আহা এখন কোন দিকে যেতে হবে সেটা বল?” ঈষৎ বিরক্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করল নিউক। তার হার্টবিট বেরে চলছে। উত্তেজনায় দর দর করে ঘামছে সে।

প্লেরার এরকম পরিস্থিতি মোকাবেলার অভিজ্ঞতা আছে বিদায় নিজের উত্তেজনাটুকু দমিয়ে রাখতে পারছে সে।

“তোমরা লিফট দিয়ে যেতে পারবে না কারণ লিফট সার্ভেইলেন্স ক্যামেরা লাগানো আছে, তাছাড়া প্রতিনিয়ত নিরাপত্তা বাহিনী যাওয়া আসা করছে। তোমরা যেই ফ্লোরে আছে তার একতলা উপরের জেনারেল গ্রাটিয়াকে দেখা যাচ্ছে বলল লিডান।”

“তাহলে উপায়?” পিছন দিকে ফিরে বলল প্লেরা।

“দরজার ডান দিকে এই বিল্ডিং এর পাওয়ার ক্যাবলগুলো গিয়েছে নিচে, তোমাদের এখন সেখান দিয়ে যেতে হবে।”

প্লেরা কুঁজো হয়ে দরজার ডান দিকে চলল, প্লেরাকে অনুসরণ করে নিউকও সেদিকে গেল। ভিতরে খুবই নীরব, কয়েকজন মানুষ এবং রোবট দূরে দাড়িয়ে কি যেন আলাপ করছে, তখন চুপিসারে প্লেরা আর নিউক বিল্ডিং এর পাওয়ার ক্যাবলে কাছে চলে এলো। নিউক পাওয়ার কেবলের নিচের দিকে তাকাতেই দেখলে কেবল গুলো ভবনটির নিচের দিকে চলে গেছে। নিচের দিকটায় আলো না থাকায় ঘুটঘুটে ভয়ংকর অন্ধকার দেখা যাচ্ছে।

নিউক জিব দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বলল “আমাদের এখন কি করতে হবে?”

“আমাদের এখান দিয়ে নামতে হবে।” ফিসফিসিয়ে বলল প্লেরা।

“আমি কখনো এভাবে নামিনি!” ঢোক গিলে বলল নিউক।

“চিন্তা করো না আমি আছি সাথে।” নিউক অভয় দিয়ে বলল প্লেরা।

প্লেরা পিঠ ব্যাগ থেকে একটি দড়ি বের করে নিউককে দিল এবং নিজে আরেকটা দড়ি দিয়ে নিজের কোমরের সাথে ভাল করে বেধে নিলো। দরিটির আরেক প্রান্ত দিয়ে পাওয়ার কাবেলের সাথে আটকে নিলো নিজেকে যাতে ছিটকে না পরে, তারপর সুড়ুত করে নেমে পরল। নিউক প্রথমে ভয় পাচ্ছিল তবে মনে সাহস সঞ্চয় করে সেও নেমে পরল নীচে।

বাইশ অধ্যায়

প্লেরা আর নিউক একশত পঞ্চাশ-তলা মাটির নিচে এসে পৌঁছল। গুটিকয়েক বাল্প ঝুলে আছে উপরে, হলদে আলোতে রাঙ্গিয়ে রেখেছে চারপাশটা। প্লেরা দেয়ালের একপাশে লুকিয়ে করিডরের সামনে চোখ রাখে, সামনে হাতের ডানে দেয়াল, আর বামে চার পাঁচটা ছোট ছোট কক্ষ। প্লেরার পিছনে নিউক নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে। করিডরের শেষ মাথাতে ধাতব রঙ্গের একটি লিফট এবং তার সামনেই কয়েকজন রোবট অলস দাঁড়িয়ে আছে, হাতে ভয়ানক অস্ত্র।

“সেন্ট্রাল কম্পিউটার সিটিসি কোন কক্ষে আছে?” জিজ্ঞেস করে নিউক।

“লিফটের সামনের রুমেই আছে।” ফিস ফিস করে বলল প্লেরা।

“কয়েকজন রোবট আছে সেই কক্ষের সামনে, আমরা যাব কিভাবে সেখানে?” কপালে ভাজ একে জিজ্ঞাসা করে নিউক।

“সেটাই ভাবছি, এখান থেকে ফায়ার করলে উড়ে যাবে রোবটগুলো কিন্তু কথা হচ্ছে অন্য কোন কক্ষে আরও রোবট আছে কিনা আমি নিশ্চিন্ত নই, তাছাড়া এই ভবনটি বৃত্তাকার এবং প্রতিটি ফ্লোরই কয়েকটি ব্লকে ভাগ করা, এক ব্লক থেকে আরেক ব্লকের মাঝে স্বচ্ছ কাচের দরজা আছে, আমরা এখন ব্লক নাম্বার তিন এ আছি, বাকি ব্লকের খবর চলে যাবে এখানে কিছু হলে।” বলল প্লেরা।

“এখন কি করব তবে?” বলল নিউক।

তবে উত্তরের অপেক্ষা না করে আবার লিডানের সাথে যোগাযোগ করল নিউক। লিডানের হলোগ্রাফিক একটি চিত্র ভেসে এলো। “লিডান এখন কি করব, বিল্ডিং এ চারপাশের ব্লকের খবর কি?”

“হুম, তোমরা এখন তিন নাম্বার ব্লকে আছ এটা নিশ্চয়ই জানো, এখানে চারজন রোবট আছে আর বাকি কক্ষগুলোতে কেউ নেই।”

“আর বাকি ব্লকে?” পাশ থেকে জিজ্ঞেস করল প্লেরা।

“তোমাদের ডানে চার নাম্বার ব্লক সেখানে একদল রোবট আছে যারা নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত।”

“আমরা ঢুকবো কিভাবে সিটিসির কক্ষে, তুমি কি কিছু করতে পার?” জিজ্ঞেস করল প্লেরা।

“আমি প্রতিটি ব্লকের মাঝের কাচের দরজাগুলো আটকে দিতে পারি, আর লিফটও আটকাতে পারব তবে…….”

কথাটা শেষ করার আগেই প্লেরা জিজ্ঞেস করল “তবে কি?”

“তোমাদের হাতে সময় নেই, বেশিক্ষণ লক করে রাখতে পারব না, সবাই জেনে যাবে এবং একটি হূলস্থুল বেদে যাবে। তোমাদের যা করার খুব শীঘ্রই করতে হবে।”

“ওকে” বলেই প্লেরা সামনে এগিয়ে গেল আর পিছু পিছু নিউক। রোবটগুলো পিছনে ফিরে দেখতে পেল প্লেরা আসছে। রোবটগুলো হাতের নিশানা ঠিক করে এলোপাথাড়ি রশ্মি ছুড়তে লাগল, মুহূর্তের মধ্যেই লাল নীল ধুয়ার পরিবেশটা ভারী হয়ে উঠল। প্লেরা এবং নিউক সতর্কতার সাথে আগাতে লাগল, রশ্মিগুলো তাদের পিছনের দেয়ালে আঘাত হানে, কংক্রিটের দেয়ালের ভিতরের লোহার রডগুলো বেরিয়ে এলো রশ্মি আঘাতে। কংক্রিট এবং ধাতব গুরা বেরিয়ে পিছন থেকে। ইতিমধ্যেই একটি সাইরেন বেজে উঠল।

“তাড়াতাড়ি কর প্লেরা আমাদের হাতে সময় নেই।” চেঁচিয়ে বলে নিউক।

হাতের ধরে থাকে অস্ত্র দিয়ে প্লেরাও ছুড়তে থাকে মারাত্মক রশিগুলো, উপরে ঝুলে থাকা লাইটগুলো চুরমার হয়ে গেল, করিডরের আলো কমে গিয়ে হালকা অন্ধকার হয়ে উঠল। প্লেরা হাতের অস্ত্র থেকে একের পর এক রশ্মি ছুড়তে লাগল, রশ্মিগুলো রোবটগুলোর বুকে আঘাত হানে, বুকের কৃত্রিম সিনথেটিকের চামরা পুরে গিয়ে হাল্কা আগুনের ফুলকি বের হতে থাকে, পোড়া এক ধরনের বিকট গন্ধে ভরে যায় করিডোরটা। ওদিকে আশে পাশের ব্লক থেকেও এক দল রোবট রশ্মি ছুড়োতে থাকে তবে রশ্মি প্রুফ কাচের দেয়াল বেদ করে তাদের ব্লকে আসতে পারে না তবে টুংটাং শব্দ শোনা যায় বেশ। প্লেরা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে রশ্মি ছুড়ে ঘায়েল করে ফেলে রোবট-গুলকে, তারপর উড়ে এসে কুংফু মেরে ফেলে দেয় নিচে রোবটগুলোকে।

সিটিসির কন্ট্রোল রুমের সামনে এসে পরে তারা। কন্ট্রোল রুমের দরজার ডানে দেখতে পায় একটি ছোট ধাতব বৃত্তাকার ঢাকনা। প্লেরা সজোরে লাথি মারতে থাকে সেখানে।

“কি করছ প্লেরা?” জিজ্ঞেস করে নিউক।

“এখানে একটি সার্কিট আছে, সেটাকে অকেজো করতে হবে নয়ত কন্ট্রোল রুমের দরজা খুলবে না বলে।” প্লেরা।

প্লেরা সার্কিট খুলে ফেলতেই কট করে শব্দ করে কন্ট্রোল রুমের দরজাটা খুলে যায়।

“তুমি এখানে থাক আমি ভিতরে যাই।” বলেই কন্ট্রোল রুমের হাতল হেঁচকা টান মেরে ভিতরে ঢুকতে নেয় প্লেরা।

নিউক আলতো করে প্লেরার হাতটি ধরে ফেলে। তারপর বলে “প্লেরা তুমি যাবে না ভিতরে, সিটিসি অনেক শক্তিশালী কম্পিউটার, সে টেলিপ্যাথি টেকনোলজি ব্যাবহার করে তোমাকে হিপনোটাইজ করে ফেলবে, তখন তোমাকে দিয়ে যে কোন কিছু করাতে পারবে, এমনকি চাইলে নিজেকে দিয়ে নিজেই আত্মহত্যা করাতে পারে।” উদ্বিগ্ন হয়ে বলে নিউক।

দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। প্লেরার হাতটি তখনও নিউক ধরে রেখেছে।

নীরবতা ভেঙে নিউক বলে “আমি ভিতরে যাব প্লেরা।”

প্লেরা নিউকের দিকে চোখ তুলে তাকায়, একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে “নিউক সেতো তোমারও ক্ষতি করতে পারে।”

একটু চুপ থেকে আবার বলে “আমি চাইনা তোমার কিছু হোক নিউক। তাছাড়া তোমাকে আগেই বলেছিলাম আমি ভিতরে ঢুকব।”

“প্লেরা আমার কিছু হলে হোক, আমি চাইনা তোমার কোন ক্ষতি হোক আবেগী গলায় বলে নিউক। তাছাড়া আমি মরে গেলেও কিছু যায় আসে না প্লেরা।”

প্লেরার বুকের ভিতরটা কেমন জানি ধরাস করে উঠে, চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে আসে।

“কিছু যায় আসে নিউক। আমি ভালবাসা কি জানি না, কারণ আমাদের এই সমাজে কোন পুরুষ নেই, নর নারীর যেই চিরন্তন আকর্ষণ সেটা বুঝার ক্ষমতা হয়ত আমার হবে না কখনো, তবে এটুকু জানি তোমার সাথে থাকলে আমার ভাল লাগে, বুকের ভিতর কেমন জানি ধক ধক করে সব সময়। তোমার মুখের দিকে তাকালে আমি সাহস পাই। আমি চাই সবসময় এরকম একটি শক্ত হাত আমাকে ধরে থাকুক।” প্লেরার কণ্ঠে আবেগ ঝরে পরে।

নিউকের বুকের ভিতরটা কেপে উঠে প্লেরার কথা শুনে। থরথর করে কাপতে থাকে কেমন জানি, নিউকেরও এই মেয়েটাকে প্রচণ্ড ভালবেসে ফেলেছে!

নিউক একটু থামে তারপর বলে “প্লেরা তোমাকে সবার দরকার, তাছাড়া তুমি জান আমি যেই ক্রোয়োনিক এক্সপেরিমেন্টে অংশ নেই সেই যন্ত্র কমপক্ষে দশ হাজার বছর পরে খোলার কথা ছিল কিন্তু সেটা এখন মানে চার হাজার বছরের মাথায় খুলেছে, আমি অবাক হয়ে ভাবতাম কেন এখন খুলল। তবে জানো আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি।”

একটু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার বলল “ আমার মনে হয় প্রকৃতি চাচ্ছিল আমি এখন জেগে উঠি, হয়ত আমাকে দিয়ে কোনকিছু করাতে চাচ্ছে প্রকৃতি। মহামান্য নিকোলাইয়েরও বিশ্বাস ছিল প্রকৃতি আমাকে পাঠিয়েছে, তার কথাই ঠিক ছিল। আমারও এখন কেন জানি মনে হয় প্রকৃতি আমাকে নির্বাচন করেছে এ কাজের জন্যই।”

প্লেরার চোখ ছল ছল করে উঠে। “আমি যেভাবেই হোক তোমাকে যেতে দিব না নিউক, প্রয়োজনে যা কিছু হবে আমার হবে কিন্তু তোমাকে এর ভিতর যেতে দিব না।” প্লেরার চোখ সিক্ত হয়ে উঠে আবেগে।

“জেদ করো না প্লেরা, শান্ত হও।” প্লেরার দু কাঁধে হাত রেখে শান্তনা দেবার স্বরে বলে নিউক।

একটু চুপ থেকে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে “তোমাকে একটি কথা বলা হয়নি প্লেরা। তুমি একবার জিজ্ঞেস করেছিলে না কেন আমি এই এক্সপেরিমেন্টে অংশ নিয়েছি? তোমাকে সেদিন একটি মিথ্যে কথা বলেছিলাম।”

একটু চুপ থাকে নিউক তারপর যোগ করে বলে “মানুষ শুধু শুধু এরকম একটি এক্সপেরিমেন্টে অংশ নেয় না প্লেরা, আমিও শুধু শুধু নেই নি। আমার একটি কঠিন রোগ হয়েছে, আমাদের সেই যুগের ডাক্তাররা বলেছিল আমি বড়জোর মাস তিনেক বাঁচব।”

থামে নিউক, বুকের ভিতরটা তার ভারী হয়ে আসে। “আমি জেগে উঠেছি তিন মাসের বেশী হয়ে এলো, আমি এমনিও মারা যাব, যে কোন সময় মারা যেতে পারি। ভারী গলায় বলে নিউক। তুমি বেচে থাকলে আমি মরেও শান্তি পাব।”

প্লেরার চোখের পানি টলটল করতে থাকে। নিউক আলতো করে প্লেরাকে নিজের বুকের মাঝে চেপে ধরে, প্লেরার চোখ অশ্রুতে হয়ে উঠে সিক্ত, নিউকের বুকের উষ্ণতা প্লেরার মাঝে ছড়িয়ে পরে, তার মরচে পরা হৃদয়ে এতটা ভালবাসা জমে ছিল সেও হয়ত জানত না।

আগের পর্ব:
ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: নিউক (পর্ব এক)
ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: নিউক (পর্ব দুই)
ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: নিউক (পর্ব তিন)
ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: নিউক (পর্ব চার)
ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: নিউক (পর্ব পাঁচ)
ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: নিউক (পর্ব ছয়)
ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: নিউক (পর্ব সাত)
ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: নিউক (পর্ব আট)
ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: নিউক (পর্ব নয়)
ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: নিউক (পর্ব দশ)

বি,দ্র কালকে শেষ পর্ব আসবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১:৫৫
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×