somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: নিউক (পর্ব দশ)

১০ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


উনিশ অধ্যায়

এনি রোবট খুব মনোযোগ দিয়ে গ্রাউন্ডফ্লায়ারের ভিতরের তাপ, চাপ এবং অক্সিজেন পরীক্ষা করে দেখছিল কোথাও কোন গণ্ডগোল আছে মনে হয়। গ্রাউন্ডফ্লায়ারের জ্বালানী প্রায় শেষের দিকে। ইঞ্জিন থেকে অমসৃণ শব্দ বের হচ্ছে, লক্ষণ খুব একটা সুবিধার নয় যে কোন সময় কাজ বন্ধ করে দিতে পারে ইঞ্জিন। সান্ত্বনা বলতে পিছনে আপাতত কাউকে তাড়া করতে দেখা যাচ্ছে না।

“ইঞ্জিনের অবস্থা সুবিধার মনে হচ্ছে না। আর কতক্ষণ চলতে পারব?” পিছন থেকে জিজ্ঞেস করে লিডান।

এনি রোবট পিছনে তাকিয়ে ধাতব কণ্ঠে বলে “জ্বালানী যা আছে তা দিয়ে সর্বোচ্চ তিন ঘণ্টা যেতে পারব। তবে ইঞ্জিন যে কোন সময় বসে যেতে পারে।”

লিডানের চেহারায় কিছুটা স্বস্তি এবং কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ পায়। ইঞ্জিনটা কয়েক দিন আগেই পালটানো দরকার ছিল মনে মনে ভাবে।

“আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি?” লিডানের দিকে তাকিয়ে বলে নিউক।

“আমাদের এখন আনার মুখোমুখি হওয়া দরকার।”

প্লেরার মন বিষণ্ণ করে বসে বাহিরে তাকিয়ে ছিল। আনা বিশ্বাসঘাতকতা না করলে হয়ত আজ মহামান্য নিকোলাই বেচে থাকত ভাবছিল প্লেরা। আনার নামটি শুনে প্লেরার ভাবনায় ছেদ পরে। চোয়াল শক্ত করে বলে “কোথায় আছে এখন আনা? তাকে নিজের জীবন দিয়ে বিশ্বাস ঘাতকতার মূল্য দিতে হবে।”

“হুম, আমি জানি আনা কোথায় এখন” বলে লিডান। কথা শেষ করেই প্লেরা এবং নিউকের দিকে তাকিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া দেখার অপেক্ষা করে সে।

প্লেরা এবং নিউক দুজনেই সমস্বরে জিজ্ঞেস করে “কোথায়?”

আনা একটি বিশেষ প্রয়োজন আমাদের সাথে ছিল বলেই পকেট হাতড়ে একটি চার কোনাকৃতি ডিভাইস দেখায় লিডান।

প্লেরা এবং নিউক লিডানের দৃষ্টি অনুসরণ করে ডিভাইসটির দিকে তাকিয়ে সমস্বরে জিজ্ঞেস করে “এটা কি?”

“একটু পরেই বুঝতে পারবে।” বেশ নাটকীয়তা করে বলে লিডান।

লিডানের নির্দেশ মত গ্রাউন্ডফ্লায়ারটি লিডানের শহরের বাহিরের সেই বাড়িটাতে নিয়ে যায় এনি রোবট। তারা যখন পৌছায় তখন সন্ধ্যা নেমে এসেছে।

“তুমি কি এটা খুঁজছ আনা?” পিছন থেকে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসটি দেখিয়ে বলে লিডান।

আনা তখন বাড়ির ভিতরে কিছু একটা খুঁজছিল।

“আরে তোমরা এখানে? আমি কোন মতে জান নিয়ে এখানে পালিয়ে এসেছি। আমি তোমাদের নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলাম।” আনা ওয়াটসন এমনভাবে কথা বলছিল মনে হয় সে যেন কিছুই জানে না।

প্লেরা লম্বা পায়ে আনার কাছে গিয়ে তার গলা চেপে ধরে বিশ্বাসঘাতকতার রহস্য ভেদ করতে। দু হাত দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় আনা।

“ওহ তোমরা তাহলে সব জেনে গেছ?” ঠোট জোড়া প্রশস্ত করে বলে আনা।

যোগ করে বলে “তাহলে নিশ্চয়ই এটাও জানো গত দু বছর কেন তোমাদের সাথে ছিলাম। ইচ্ছে করলে আগেই তোমাদের শেষ করতে পারতাম কিন্তু তোমাদের জীবনের থেকেও আমাদের কাছে দরকার ঐ ডিভাইস।” লিডানের দিকে ইশারা করে বলে আনা।

“এই ডিভাইস তুমি কখনই পাবে না আনা। এই ডিভাইসেই আছে আমাদের সকল বিদ্রোহীদের তথ্য যারা সরকারী বাহিনীতে আমাদের হয়ে কাজ করছে।” বলে লিডান।

“ভালয় ভালয় দিয়ে দাও যদি তোমরা বাচতে চাও। জেনারেল গ্রাটিয়ার সাথে আমার কথা হয়েছে। যেকোনো সময় সে চলে আসবে এখানে।” বলে আনা।

প্লেরা পকেট থেকে অস্ত্র বের করে আনার দিকে তাক করে মুখ শক্ত করে বলে “আপনাকে মরতে হবে আনা। জেনারেল গ্রাটিয়া আসার আগে আপনাকে শেষ করে দিব।”

“পাগলামি করোনা প্লেরা। ডিভাইসটি দিয়ে সুন্দর মত এখান থেকে চলে যায়। তাহলে বাচতে পারবে হয়ত আপাতত!” বলে আনা।

প্লেরা আর কথা না বাড়িয়ে হাতের অস্ত্র দিয়ে রশ্মি ছুড়ে আনার দিকে। রশ্মির আঘাত আনার বুকে এবং চোয়ালে লাগে। তারা সবাই আশ্চর্য হয়ে লক্ষ করে দেখে আনার কিছুই হল না। যেখানে রশ্মি লেগেছিল সেখানকার সিনথেটিকের চামড়া পুরে ধাতব অংশ বের হয়ে আসে। কৃত্রিম চামড়া পুরে আগুন লেগে যায়, পোড়া চামড়ার একটি বিদঘুটে গন্ধ বের হয়ে আসে তবে আনার তেমন কিছুই হল না।

“এটা হতে পারে না?” অবাক হয়ে বলে সবাই সমস্বরে।

আনার নিজের শরীরের আগুনের দিকে পাত্তা দেয় না। নিজের স্বাভাবিক কণ্ঠ পরিবর্তন করে ধাতব গলায় বলে “আমি মানুষ নই। আমি সপ্তম প্রজন্মের রোবট। আমাকে তৈরিই করা হয়েছে তোমাদের-মত বিদ্রোহীদের ধরতে। আমার শরীরের ধাতব পদার্থ এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন দুনিয়ার কোন অস্ত্রর আঘাতেও যেন কিছু না হয়।”

আনার চেহারার সিনথেটিকের চামড়া সরে গিয়ে ভিতরের চকচকে ধাতব বেরিয়ে আসে, চোখটি মানুষের মত মনে হলেও এখন বুঝা যাচ্ছে এগুলো আসল চোখ নয়, কৃত্রিম ইলেক্ট্রনিকের চোখ। শরীরের সিনথেটিকের চামরা পুড়ে গিয়ে ভিতরের শক্ত পোক্ত সাদা সিলভারের ধাতু চকচক করতে থাকে।

প্লেরা নিজের বিস্ময়কে চেপে রেখে রশ্মি ছুড়তে থাকে আনার দিকে ফের। রশ্মির ফলাগুলো আনার সাধা চকচকে ধাতবে আঘাত এনে টনটন শব্দ করে ডানে বামে সরে যেতে থাকে। আনা এবার কয়েক কদম সামনে এসে প্লেরার কাছ থেকে অস্ত্রটি ছিনিয়ে নিয়ে সজোরে ঘুষি মারে প্লেরার তলপেটে, ধপ করে শব্দ করে প্লেরা ছিটকে পরে দূরে। নিউকে দৌড়ে গিয়ে প্লেরার কাছে গিয়ে তাকে উঠতে সাহায্য করে।

“আনা আপনার কাছ আমরা এগুলো আশা করিনি। আপনি যে এতটা বিশ্বাসঘাতকতা করবে সেটা বুঝতে পারিনি, আপনাকে একজন নিতিবান এবং সৎ মানুষ বলে ভাবতাম।” বলে নিউক।

“আমি দুঃখিত নিউক তুমি আশাহত হয়েছ দেখে। বিশ্বাসঘাতকতা একটি আপেক্ষিক বিষয়, তোমাদের কাছে যেটাকে বিশ্বাসঘাতকতা মনে হচ্ছে সেটা আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি। বিজ্ঞান পরিষদ আমার ভিতরের কম্পিউটার এমনভাবে প্রোগ্রাম করেছে যেন আমি কেবল আমার দায়িত্ব পালন করি, এর বেশী কিছু নয়। তাই আমাকে ডিভাইসটি দিয়ে চলে যাও।” ধাতব কণ্ঠে বলে উঠে।

পিছন থেকে এনি রোবট সব শুনছিল। সামনে এগিয়ে গিয়ে ধাতব গলায় বলে “আপনি নিজেও একজন রোবট হয়ে এতদিন আমাকে রোবট বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন আনা।”

আনা খেঁকিয়ে বলে “ওরে হারামজাদা আমি তোর মত তুচ্ছ রোবট নই। আমি সপ্তম প্রজন্মের আধুনিক রোবট। দেখতেও মানুষের মত, কেউ ধরতে পারবে না আমি রোবট। হারামজাদা আমার সাথে নিজেকে তুলনা করবি না বলে দিলাম।”

“রোবট রোবটই, সে প্রথম প্রজন্মের হোক আর সপ্তম প্রজন্মের। তোর ধাতব শরীরের ভিতর যেমন অসংখ্য বৈদ্যুতিক তার আছে তেমনি আমার ধাতব শরীরের ভিতরেও অসংখ্য বৈদ্যুতিক তার আছে।” এনি রোবটের গলার অভিমান ঝরে পরে।

“হারামজাদা তুচ্ছ রোবট কোথাকার। আমাকে তুই তুকারি করবি না। রোবট হয়ে একজন নিচু জাতের রোবটকে মারতে বাধ্য করবি না।”

এনি রোবট সামনে এগিয়ে গিয়ে আনার গলা চেপে ধরে। আনা নিজেকে ছাড়িয়ে এনি রোবটের পেটে সজোরে ঘুষি মারে। ঘুষির আঘাতে এনি রোবটের পেটের ধাতব অংশ ভেঙে যায়, আনা তার ধাতব হাত দিয়ে এনি রোবটের পেটের ভিতর থেকে অসংখ্য তার খুলে নেয়। এনি রোবট নিজের পেটের ভিতরের তারগুলো দেখে প্রচণ্ড ভয়ে চুপসে যায়, মনের অজান্তেই গলা ফুড়ে আত্ম চিৎকার দিয়ে মেঝেতে পরে যায়। এনি রোবটের ধাতব শরীরটি নিদিষ্ট ছন্দে কাপতে থাকে, তার কয়েক সেকেন্ড পর এনি রোবটের শরীরে ধপ করে আগুন জ্বলে উঠে।

আনা তার চকচকে মাথা ঘুরিয়ে পুনরায় লিডানের দিকে তাকিয়ে বলে “ডিভাইসটি দিয়ে দাও।”

নিউক ইশারা করে ডিভাইসটি দিয়ে দিতে বলে লিডানকে। তারা ডিভাইসটি দিয়ে বেরিয়ে পরে। বাড়িটির নিচে গিয়ে গ্রাউন্ডফ্লায়ারটির ভিতরে বসে তারা ক্লান্ত শরীর নিয়ে।

থুম ধরে বসে আছে লিডান গ্রাউন্ডফ্লায়ারের ভিতর। এনি রোবটের কথা মনে পরছে তার।

“কি হল চালাচ্ছেন না কেন? আমাদের তাড়াতাড়ি চলে যেতে হবে।” পিছন থেকে তাড়া দেয় নিউক।

“একটি কাজ বাকি আছে” বলে লিডান। তারপর পকেটে হাত দিয়ে একটি বাটনে চাপ দিতেই বাড়িটি প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে। বিস্ফোরণের শব্দের ভিতরে আনার আত্নচিতকার চাপা পরে যায়। এরকম কোন সময়ের কথা চিন্তা করে সবসময়ে বাড়িটিতে ধ্বংস করার ব্যবস্থা রেখেছিলাম, তা যে এত তাড়াতাড়ি কাজে লাগবে ভাবিনি মনেমনে ভাবে লিডান।

দূর থেকে আরো অনেকগুলো গ্রাউন্ডফ্লায়ার এবং স্কাইজায়ানের শব্দ পেতে থাকে তারা। তারা বুঝতে পারে শব্দগুলো তাদের দিকে ধেয়ে আসছে ধরার জন্য, ওদিকে তাদের গ্রাউন্ডফ্লায়ারের জ্বালানী যা আছে তা দিয়ে সর্বোচ্চ ঘণ্টা খানেক চলবে। তাদের তিনজনের বুক থেকে একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে এনি রোবটের জন্য। একটি যন্ত্র মানবীর জন্য তিনজন রক্তমাংসের মানুষের চোখ সিক্ত হয়ে উঠে গভীর আবেগে।

বিশ অধ্যায়

তিন মাস পর।

অতিকায় স্কাইজায়ানটি কালো অন্ধকার বেদ করে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে। স্কাইজায়ানের সামনের সারিতে বসে আছে নিউক প্লেরা এবং লিডান, তাদের পিছনের সারিতে সারিবদ্ধভাবে বসে আছে দুই থেকে তিনশত জনের মত একটি বিদ্রোহী দল, তাদের সবার হাতেই ভয়ানক রশ্মি নিক্ষেপক অস্ত্র। পরিকল্পনা অনুযায়ী আজ রাতেই বিজ্ঞান পরিষদে আক্রমণ করে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিবে তারা। জানালার ফাঁক দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে প্লেরা, গত তিন মাস অনেক ঝর ঝাপটা গিয়েছে, লিডান নতুন জায়গায় থেকে বায়ো-কম্পিউটার কাজে লাগিয়ে হামলার পরিকল্পনা ঠিক করেছে। শত শত বিদ্রোহী ছিল যারা গোপনে শাসক উথারের বাহিনীতে ছিল তাদের বেশীর ভাগই ধরা পরে গেছে, প্রত্যেককেই ভয়াবহ সাজা দেয়া হয়েছে। এসব ভেবেই মনটা বিষণ্ণ প্লেরার, চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে আসে তার। প্লেরাকে অন্যমনস্ক দেখে নিউক তার কাঁধে হাত দিয়ে মৃধ চাপ দেয়। প্লেরা মাথাটা নিউকের দিকে ঘুড়িয়ে কৃত্রিম একটি হাসি দেয়।

লিডান স্কাইজায়ানের সামনের ভিউ-স্কিনের দিক থেকে মুখ ঘুড়িয়ে প্লেরা এবং নিউকের দিকে তাকায়, তারপর পরিকল্পনা আরেকবার আওড়াতে থাকে “বিজ্ঞান পরিষদ মূল ভবন থেকে প্রায় তিন চার কিলোমিটার দূরে ল্যান্ড করতে হবে আমাদের। অপারেশন পরিচালনা করতে হবে দূর থেকে, বুঝলে?”

“হ্যাঁ সেটাতো জানি। যেহেতু আমার আর প্লেরার বিজ্ঞান পরিষদের ভিতরে ঢুকার অভিজ্ঞতা আছে, তাই প্রথমে আমরা দুজন ভিতরে ঢুকব। আপনাকে ঠিকমত বাহিরের সিকিউরিটি সিস্টেম হ্যাক করে সার্ভেইলেন্স ক্যামেরা অকেজো করতে হবে।” বলে নিউক।

“হুম, সেটা নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। বায়ো-কম্পিউটার কাজে লাগিয়ে বিগত কয়েক মাস এনালাইসিস করে বের করেছি বিজ্ঞান পরিষদের ভবনের নিরাপত্তা থার্ড পার্টি সিকিউরিটি কম্পিউটার দিয়ে করা হয়। ভাগিস সিটিসিকে পুরো ভবনের দায়িত্ব দেয়া হয়নি। তাহলে কাজটি আমার জন্য কিছুটা কঠিন হয়ে যেত!” বলল লিডান।

“ব্যাপারটা খটকা লাগছে, সিটিসিকে কেন ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়া হয়নি? সিটিসি অত্যন্ত শক্তিশালী একটি যন্ত্র যার ক্ষমতাকে ঈশ্বরের সাথে তুলনা করা হয় অথচ তাকে কেন ব্যবহার করা হল না বুঝলাম না!” বলল নিউক।

“আমাদের এই গ্রহে সমস্ত মিডিয়া এখন নিয়ন্ত্রিত, সব নিউজ সিটিসির মাধ্যমে ফিল্টার হয়ে জনগণের কাছে পৌঁছে। যে কোন স্বৈরশাসক মিডিয়াকে ভয় পায়, তাই মিডিয়াকে কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য সিটিসিকে ব্যাবহার করা হয়। এটা ছাড়াও গোপন প্রজেক্টের সমস্ত তথ্যগুলো সিটিসির কাছে রাখা আছে, যাতে বাহিরে লিক না হয়। সিটিসি যেন তার সমস্ত প্রসেসিং পাওয়ার এই দুই কাজে ব্যাবহার করতে পারে তাই সিটিসিকে আলাদাভাবে ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়া হয়নি।” পাশ থেকে জবাব দিল প্লেরা।

লিডান প্লেরার কথায় সম্মতি জানাল তারপর যোগ করে বলল “ভবনের নিরাপত্তায় যেই ব্যবস্থা করা হয়েছে তাতে তাদের ধারণা কেউ নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আঘাত হানতে পারবে না।”

প্লেরা প্রসঙ্গে পাল্টে বলল “আমরা না হয় ভবনে ঢুকে গেলাম, কিন্তু সিটিসিকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণে নিব?, মহামান্য বিজ্ঞানী ড.লেথরিনের কাছে নিশ্চয়ই শুনেছিলেন সিটিসিকে সম্মুখ যুদ্ধে পরাজিত করা প্রায় অসম্ভব!”

লিডানকে একটু চিন্তিত দেখাল। একটু থেমে বলল “সেটা একটা সমস্যা, কারণ সিটিসিকে ট্যালিপ্যাথি প্রযুক্তি দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে, তাই ওর কন্ট্রোল রুমে কেউ গেলেই ট্যালিপ্যাথি ব্যাবহার করে মানুষের ব্রেনকে হিপনোটাইজ করে ফেলে। ড. লেথরিনের কাছে নিশ্চয় শুনেছ এই গ্রহের সমস্ত মানুষের ব্রেনের সিগনাল মেশিন লার্নিং দিয়ে ট্রেনিং করে একটি মডেল ডেভেলপ করা হয়েছে, সেই মডেল সিটিসির ইলেকট্রনিক ব্রেনে ইন্সটল করা আছে। আমি গত তিন মাস এটা নিয়ে কিছুটা পড়াশুনা করে একটি এলগোরিদম ডেভেলপ করেছি। আমার এলগোরিদম সিটিসির ব্রেনের সেই মেশিন লার্নিং মডেলকে করাপ্ট করে দিবে।” বলেই পকেট হাতড়ে একটি ইনজেকশনের মত ডিভাইস বের করে দেখাল লিডান।

নিউক এবং প্লেরা তাকিয়ে আছে সেই ইনজেকশনের মত দেখতে ডিভাইসটার দিকে।

লিডান বলল “এই ইনজেকশনটি সিটিসির কন্ট্রোল রুমে ঢুকে ওর সিস্টেমে পুষ করতে হবে, তাহলে ওর ভিতরের সেই মডেলটা করাপ্ট হয়ে টেলিপ্যাথি ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবে, তখন সিটিসির সাথে আর আট দশটা সাধারণ কম্পিউটার এর সাথে কোন পার্থক্য থাকবে না। এখন মূল কথা হল ওর কন্ট্রোল রুমে ঢুকার সাথে সাথে ও তার ট্যালিপ্যাথি শক্তি দিয়ে হিপনোটাইজড করে ফেলবে, এটা একটি চ্যালেঞ্জ।” লিডানের বুক থেকে একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।

প্লেরা লিডানের কাছ থেকে ইনজেকশনটা নিজের হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতে লাগল। তারপর বলল “আচ্ছা ওর রুমে ঢুকেই কেন এটা পুষ করতে হবে? কোনভাবে দূরে বসেই ওর ব্রেনে পাঠিয়ে দেয়া যায় না এটা?”

লিডান মাথাটা ডানে বামে ঘুড়াল যার অর্থ হল না এটা সম্ভব না। “অতিরিক্ত নিরাপত্তার কথা ভেবে বাহির থেকে সিটিসির ভিতরের ইনপুটের কোন অপশন রাখা হয়নি, কোন কিছু ইনপুট দিতে হলে ওর কনট্রোল রুমে গিয়েই দিতে হবে। আমি যে দূর থেকে সিটিসিকে এটা পুষ করতে চেষ্টা করিনি ব্যাপারটা তা নয়, কিন্তু পারিনি।”

প্লেরা আর কথা না বাড়িয়ে ইনজেকশনটি নিজের কাছে রেখে বলল “তুমি বাহিরের সিকিউরিটি হ্যাক করবে সেই সুযোগে আমি আর নিউক ভিতরে ঢুকে যাব। নিউক সিটিসির কন্ট্রোল রুমের বাহিরে পাহাড়া দিবে আর আমি ভিতরে ঢুকে এই ইনজেকশন পুষ করার চেষ্টা করব।”

“আমি বিজ্ঞান পরিষদের নিরাপত্তা হ্যাক করতে পারব তবে বাকি কাজটা যত সহজে বললে ব্যাপারটা অত সহজ নয় প্লেরা, অনেক রিস্ক আছে।” বলল লিডান।

“হুম, তবে কাউকে না কাউকে রিস্ক-তো নিতেই হবে।”

আগের পর্ব:
ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: নিউক (পর্ব এক)
ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: নিউক (পর্ব দুই)
ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: নিউক (পর্ব তিন)
ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: নিউক (পর্ব চার)
ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: নিউক (পর্ব পাঁচ)
ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: নিউক (পর্ব ছয়)
ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: নিউক (পর্ব সাত)
ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: নিউক (পর্ব আট)
ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: নিউক (পর্ব নয়)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১:৫৫
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×