আজ শনিবার, ছুটির দিন আমাদের এখানে। সপ্তাহের এই ছুটির দিনে পেটের ভিতর দানার-দান খানা-খাদ্য চালান করতে না পারলে শান্তি লাগে না। গত সপ্তাহে হাতির সমান ১২টি ডলার দিয়ে দু-পাউন্ড গরুর সীনার মাংস কিনেছিলাম, উদ্দেশ্য শনিবার একটু কাচ্চি রান্না করব! এরিজোনাতে আসার আগে গরুর মাংস এভাবে কিনতাম না, তখন ১০-১২ জন বাংলাদেশী মিলে ফার্মে গিয়ে আস্ত গরু জবাই দিতাম, পরে সবাই মাংস ভাগ করে নিতাম, পাউন্ড প্রতি দাম পরত মাত্র ২-৩ ডলার অর্থাৎ কেজি প্রতি দাম বাংলাদেশ থেকে কম! পয়েন্ট টু-বি-নোটেড মাই লর্ড, আমেরিকায় মানুষ গড়ে বেশি মালপানি কামায় বাংলাদেশিদের তুলনায়, সেই হিসেবে দাম খুবই কমই বলা যায়! আমি আমেরিকা মুভ করেছি প্রায় সাড়ে তিন বছর হল, এর আগে ডেনমার্কে ছিলাম। ডেনমার্ক আবার যখন কেনাকাটা করতাম মনে হত শায়েস্তা খাঁর আমলে আছি, গরুর মাংস কেজি ছিল এক ডলারের মতন, পাউন্ডে মাত্র পরত মাত্র পঞ্চাশ সেন্ট! তখন মাসে মালপানি যা কামাতাম সব খরচের পরও মাসে মোটা অংকের দিরহাম জমা থাকত, মালপানি কামাতে কামাতে আমি মালামাল হয়ে যাচ্ছিলাম!
ব্লগে কিছুদিন ধরে হেভি-ওয়েট ব্লগাররা দৈনন্দিন জিনিষপত্রের দাম নিয়ে তাদের মহা-মূল্যবান মেধা ক্ষয় করছে, ভাবলাম আমিও জিনিষপত্রের দাম-টাম নিয়ে দু-চারটি মূলবান জ্ঞান বিতরণ করি কারণ বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন সাহেব বলেছেন "জ্ঞানের বিনিয়োগ সেরা সুদ প্রদান করে"! যাইহোক, এবার জায়গায় ব্রেক করি, ধান ভাঙ্গতে শিবের গীত বেশী হয়ে যাচ্ছে। সমকালীন রাজনীতি, অর্থনীতির বিষয়, দ্রব্যমূল্য ইত্যাদি নিয়ে আলাপের জন্য জাঁদরেল ব্লগারেরা আছেন, আমার শুধু শুধু সেই বিষয়ে লেখে সামুর হার্ডডিস্ক ভরে ফেলে লাব হবে না। ও কাজটির জন্য বিজ্ঞ হেভি-ওয়েট ব্লগাররা আছে!
যাইহোক, শনিবার রাতেই কাচ্চির জন্য মাংস রান্না করে রেখেছিলাম, উদ্দেশ্য শনিবার সকালে যাতে কাচ্চি তাড়াতাড়ি রান্না শেষ করতে পারি। আমি চাইলে রাতেই কাচ্চি রান্না করতে পারতাম, তবে ভাবলাম রাতে রান্না করলে আর জিবকে সামলাতে পারব না। আমার নিজের উপর নিজের ঈমান দুর্বল, দেখা যাবে রাতেই দু-প্লেট কাচ্চি পেটে চালান করে বসে আছি! রাতে আমি সাধারণত খানা খাদ্য কম খাবার চেষ্টা করি। রাতে একটু সাধা ভাত আর সাথে শুধু এক পেয়ালা সালাদ খাই। সালাদে থাকে লেটুস, শসা, কিচমিচ, বাদাম এবং একটু সর্স!
আজকে দুপুরের গরুর কাচ্চি।
আজ সকালে ঘুম একটু ওয়ালমার্ট গিয়ে কিছু বাজার করলাম। বাসায় আলু ছিল না, কাচ্চিতে আলু না দিলে আবার আমার ভাল লাগে না, তার উপর পেটে কাচ্চি চালান করার সময় বোরহানি না থাকলে আমি খেয়ে আরাম পাই না! ওয়ালমার্ট থেকে টক দইও নিলাম বোরহানির বানানোর জন্য। বাসায় এসেই কিচেনে ঝাঁপিয়ে পরলাম কাচ্চি এবং বোরহানি বানানোর জন্য। যেহেতু মাংস রান্না করা ছিল তাই পুরো রান্না এবং বোরহানি বানাতে এক ঘণ্টারও কম সময় লাগল। আমার বাসায় কাউকে দাওয়াত দিলেও বিরানি, পোলাও, গরুর মাংসের আইটেম-গুলো সাধারনত আমিই করি, আর বউ করে ডেসার্ট, মুরগির রোষ্ট-সহ ইত্যাদি আইটেমগুলো। যাইহোক নিজের আত্মজীবনী পড়া বাদ দেই, রান্না-বান্না করে দেখি ক্ষুদায় পেট চোঁ চোঁ করছে, দেড়-প্লেট কাচ্চি পেটে চালান করে দিলাম আরামসে।
খাদ্যে ঝাঁপিয়ে পরার জন্য প্রস্তুত আমরা!
আজকাল খানা-খাদ্য সতর্ক-সহকারে খাই। ইদানীং জিম করা শুরু করেছি কারণ জিম না করলে পেটটা সামনের দিকে সিজদা দিয়ে দিতে পারে, তখন খুব একটা ভাল লাগবে না। তাই আমি চেষ্টা করছি চিকন আলী হতে। তার উপর বিখ্যাত মানুষী জন-রে সাহেব আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছেন, তিনি বলেছেন "আনন্দ সহকারে পরিমাপ করে খাও। কেননা বেশি খেলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।" আমার আবার ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে ভাল লাগে না। তবে আমি নিজেকে ভাল মানুষ হিসেবেই জানি, তাই সেটা প্রমাণ করার জন্য হলেও খানা-খাদ্য খেতে ভালবাসতে হয় কারণ জুলিয়া চাইল্ড সাহেব আবার বলেছেন "যে মানুষগুলো খাবার খেতে ভালোবাসে, তারা সব সময়ই সবচেয়ে ভালো হয়।"
যাইহোক, প্রিয় ব্লগাররা আমার খানা খাদ্যের ছবি দেখে আপনারা আবার খাদ্যের উপর ঝাপিয়ে পরিয়েন না, এমনিতেই জিনিষপত্রের দাম বেড়ে চলছে। আমাদের এক হেভি-ওয়েট ব্লগার সম্প্রতি বলেছেন বাঙ্গালিরা গড়ে ভারতীয়দের থেকে তিনগুণ খাবার বেশী খায়, আপনারা উৎসাহিত হয়ে উহা চারগুণ করিয়েন না! তবে খেলেও খাবার নষ্ট করিয়েন না, ক্যাথেরিন অ্যানি পোর্টার সাহেব বা মুহতারামাহ কিন্তু হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন "আপনি জীবনকে নষ্ট করে ফেলেন যখন আপনি কোনো ভালো খাদ্যকে নষ্ট করেন।" আমার এখানে এখন শনিবার রাত নটার একটু বেশী বাজে, আজ আর ঝিমে যেতে ইচ্ছে করছে না, জিম যে দূরে তা না, আমাদের এপার্টমেন্টের কমপ্লেক্সেই জিম। আমার আবার খেতে লাগে আরাম, আর জিম করতে লাগে ব্যারাম।
আজ এ পর্যন্তই। পৃথিবীর সকল প্রাণী সুখী হোক।
কাচ্চি বিরিয়ানি সমাচার ১
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:৫১