রোববার ভোর।
আমি বসে আছি ম্যাকডোনান্ডের কোণের টেবিলটিতে। ক্যাপাচিনোর কাপ হাতে। শূণ্য দৃষ্টিতে কাচের ফাক দিয়ে দেখছি, সামনের অপরিসর সবুজে ভোরের কুয়াশার সম্মিলন। দু’একজন জ্যাকেট পরিহিত মানুষ আয়েসী ভঙ্গীমায় হেটে যাচ্ছে সমুদ্রের পথে। অক্টোবরের হালকা কুয়াশা, হেমন্তের পাতাঝরা বাতাস আর খন্ড খন্ড বৃষ্টি। খুব আদুরে অপরিচ্ছন্নতা। পথে- প্রান্তরে, মননে, বাতাসে আর সমুদ্রের ঢেউয়ে। আমি যদিও উপভোগ করতে চাই সবরকম আবহাওয়া, আমি যেহেতু আমার ফেলে আসা উষ্ণমন্ডলীয় দিনযাপনের সাথে মেলাতে চাই এই মেরুদেশীয় শীতলতা, তাই বিভিন্ন ঋতু আমাকে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে মাতিয়ে রাখে। যেমন, এই পাতাঝরা মৌসুমেও আমি ঝরা পাতায় যে এক অদ্ভূত দ্যোতনা থাকে তার ঘ্রাণ নিতে একটুও ছাড় দিই না।
দু’একটি মানুষ কাচের গেইট ঠেলে ঢুকে পড়ে। অর্ডার স্ক্রিনের সামনে দাড়িয়ে অবসাদ ঝেড়ে ফেলে। আমার সামনের কফির মগের তরল ফুরিয়ে আসতে থাকে। আমি ভাবনার রেলগাড়ির মিটারগেজ বিস্তৃত করতে থাকি অক্ষাংশের স্তরে স্তরে-
হঠাৎ চোখ আটকে যায় আমার। একজন তরুনী হাতের প্যাকেট থেকে সামনের সবুজ চত্বরে ছিটিয়ে দিচ্ছে পাখিদের খাবার। তাকে ঘিরে অজস্র কবুতর আর সমুদ্রচিল ঘুরছে পাকে পাকে। নেমে খুটিয়ে খাচ্ছে সবুজ ঘাষের মাঝে ছডিয়ে পড়া সকালের আহার! যেন একটি নক্ষত্রচারী মানবী ছড়িয়ে দিচ্ছে শুভ্র বরফচ্ছটা, আর সবুজ চত্বর মুখোরিত করে অসংখ্য শাদা সূর্য্যফুল উঠছে আর নামছে!
তখনই বুকের মাঝে একরকম শূণ্যতা টের পেলাম। যে হাহাকার আমি পুষে রেখেছি সেই বোধবুদ্ধির সূচনাপর্ব থেকেই। সহমর্মিতার জায়গায় যে ফাকা অনুচ্ছেদ সেখানে শুধু একটি শব্দ বসিয়ে রেখেছি এতকাল- ‘নিজেকে ভালোবাসা’ ! শব্দেরও অধিক যে দায়বন্ধন সেখানে শুধু ‘আমিত্ব’ ছাড়া বিকল্প কিছু নেই।অথচ চারপাশের এই পারিপার্শ্বিকতা যে ভালো থাকার সবচে আশ্চার্য্য সৌরভ, আমি তা আবারও একবার অনুভব করলাম এই সকালে।
টেবিলে রাখা খালি কাপটি একজন ক্রু’মেম্বার নিয়ে যাবার জন্য এগিয়ে এলে আমি সংবিদ্ধ ফিরে পেলাম। ধন্যবাদ জানিয়ে উঠে দাডালাম। আমাকে ফিরতে হবে সমুদ্রপথে, নিজস্ব ট্রেইলে এখন!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৮:১২