somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্নায়ুযুদ্ধ ২০১৮

০১ লা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১লা র্মাচ ২০১৮ তে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরবিচ পুতিনের বার্ষিক ফেডারেল এসেম্বলিতে দেওয়া একটি বক্তব্য , যা পৃথিবীর বিভিন্ন সামরিক বাহিনীতে কর্মরত , প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাথে জড়িত - বিশেষজ্ঞ , বিজ্ঞানী , প্রকৌশলী , ছাত্র তথা সর্বস্তরের সাধারন মানুষের মধ্যে যথেষ্ট কৌতুহলের জন্ম দিয়েছে।


তিনি বলেছেন “ এই মুহূর্তে আমাদের এমন সব নতুন সামরিক অস্ত্র এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে যাদের প্রতিরোধ কিংবা আটকানোর ক্ষমতা পৃথিবীর কোন দেশ এখনও অর্জন করেনি।” ফেডারেল এসেম্বলিতে দেওয়া রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্যটি পৃথিবীতে আবার নতুন করে স্নায়ুয়ুদ্ধ শুরু হওয়ার ইঙ্গিঁতই বহন করে।

একটু পেছনে ফেরা যাক। ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পৃথিবীতে তৎকালীন আর্ন্তজাতিক সমাজতান্ত্রিক বলয় এবং মার্কিনযুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর সমন্বয়ে গঠিত “NATO (North Atlantic Treaty Organization)” জোটের মধ্যে কার্যত স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটে। নব্য রাশিয়ান ফেডারেশন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বেশ কয়েকটি সামরিক চুক্তি হয় যার মধ্যে অন্যতম একটি চুক্তি হচ্ছে “Anti-Ballistic Missile Treaty” যা ABM Treaty নামে পরিচিত। এই চুক্তিটি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গনের পর রাশিয়া এই চুক্তিটি নবায়ন করতে সম্মত হয় এবং ১৯৯৭ তে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে ইউক্রেন, বেলারুশ এবং কাজাকিস্তান এই চুক্তিতে যোগদান করে। এই চুক্তি অনুসারে চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশসমুহ শুধুমাত্র তাদের দেশের সীমারেখার মধ্যেই “Anti-Ballistic Missile Complex (ABM)” বা আন্তঃ মহাদেশীয় ক্ষেপনাস্ত্র বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন করতে পারবে কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশগুলো একে অন্যের সীমান্তবর্তী এলাকাতে এই ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন করতে পারবেনা।

এখন পাঠক আমাদের বুঝতে হবে “Anti-Ballistic Missile Complex (ABM)” বা আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপনাস্ত্র বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কি? এবং কেন এটা সামরিক ক্ষেত্রে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ? “Anti-Ballistic Missile complex” যা ABM নামে পরিচিত , এটি এমন এক ধরনের সামরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা , যেই দেশে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে , সেই দেশ কিংবা তার অভ্যন্তরে কোন লক্ষ্যবস্তুর উপরে শত্রুর নিক্ষিপ্ত যেকোনো ধরনের সাধারণ ক্ষেপনাস্ত্র , আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপনাস্ত্র, ড্রোন , যুদ্ধবিমান ইত্যাদি সেই দেশ বা নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুর উপর আঘাত হানার পূর্বেই ABM হতে নিক্ষিপ্ত দ্রুতগতিসম্পন্ন ক্ষেপনাস্ত্র বা Missile এর মাধ্যমে ধ্বংস করে দেওয়া সম্ভব। সাধারণত নিউক্লিয় ওয়ারহেডবাহী আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপনাস্ত্রগুলোকে (Intercontinental Ballistic missile) বা ICBM ধ্বংস করার জন্য এই ধরনের ব্যবস্থা ব্যবহৃত হয়। ABM প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হতে নিক্ষিপ্ত Missile গুলো আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপনাস্ত্রগুলোকে ধ্বংস করা ছাড়াও বিভিন্ন দূরত্বের দেশ এবং নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।

উপরে উল্লিখিত চুক্তিটি স্বাক্ষর হওয়ার পর রাশিয়ান ফেডারেসন মস্কোতে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নর্থ ডেকোটার Grand Forks মিলিটারি বেসে এ ধরনের ABM Complex স্থাপন করে।

কিন্তু ২০০০ সালে হটাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ABM চুক্তি হতে বের হয়ে আসার ঘোষণা দেয়। রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রবল বিরোধীতার মুখেও তারা নিজেদের সিধান্তে অটুট থাকে। পরে রাশিয়ান ফেডারেশন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি বিল উপস্থাপন করে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ABM চুক্তি হতে বের হয়ে আসা এই মুহূর্তে বিশ্বের সামরিক ক্ষমতায়নে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার আনা এই বিল স্বাক্ষর করেতে অস্বীকৃতি জানায় এবং ২০০২ সালে ABM চুক্তি হতে আনুষ্ঠানিকভাবে বের হয়ে আসে।

বিশ্বের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে এবং বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায় এই চুক্তি হতে বের হয়ে আসার পর রাশিয়ার অনুরধে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্মত হয় যে তারা তাদের মিসাইল সিস্টেমগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে না। কিন্তু রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় দাবী করতে থাকে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গোপনে অনেক মারাত্মক ক্ষেপনাস্ত্র এবং উন্নততর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উপর গবেষণা করছে এবং ভবিষ্যতে তারা এগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে। ২০০৫ এ রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর উপর একটি গোয়েন্দা রিপোর্ট জনসম্মুখে প্রকাশ করে এবং উদ্বেগের সাথে প্রেস কনফারেন্সে ঘোষণা দেয় “রাশিয়া এখন নিজের সার্বভৌমত্ব এবং বৈশ্বিক সামরিক ভারসাম্য ধরে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে” ।

এরপর ২০১০ সালে বিশ্ব ভূ-রাজনীতিতে একটি বড় বিস্ফোরণ ঘটে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট পোল্যান্ড , রুমানিয়া এবং চেক প্রজাতন্ত্রে শক্তিশালী আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা (ABM) স্থাপনের জন্য একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হয় যা “NATO Missile Defense System” নামে পরিচিত এবং রুমানিয়ায় NATO জোট একটি শাক্তিশালী “Missile Defense System” স্থাপন করে। প্রায় একই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের “Global Defense system program” এর আওতায় জাপান এবং সাউথ কোরিয়ায় একই ধরনের “Missile Defense System” স্থাপন করে। রাশিয়ান ফেডারেশন এবং তার মিত্র দেশগুলোর প্রবল বিরোধিতার মুখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট দাবী করে “ পোল্যান্ড , রুমানিয়া এবং চেক প্রজাতন্ত্রে স্থাপিত “Missile Defense System”, রাডার এবং অন্যান্য সামরিক স্থাপনা গুলো শুধুমাত্র ইউরোপকে , ইরান ও নর্থ কোরিয়ার মিসাইল ও সম্ভাব্য হুমকি থেকে রক্ষা করার জন্য ব্যবহার করা হবে”।

কিন্তু প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন টেকনিক্যাল এনালাইসিস এ দেখা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং NATO জোটের এ ধরনের ABM কিংবা সম্পর্কিত সামরিক স্থাপনাগুলো এমন সব স্থানে স্থাপিত যার প্রত্যেকটিই রাশিয়ান ফেডারেশনের সীমান্তবর্তী এলাকা এবং “Global Defense System” এর নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং NATO জোট শুধুমাত্র রাশিয়ান ফেডারেশনকেই চাপে রাখার উদ্দেশেই এ ধরনের আক্রমনাত্বক এবং প্রতিরক্ষামূলক কর্মসূচী গ্রহন করেছে।

উপরন্তু রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের “Special research unit” এর দাবী রুমানিয়ায় স্থাপিত ABM system যা “Aegis Ashore” নামে পরিচিত , এটি হতে নিক্ষিপ্ত মিসাইলগুলো Launch system পরিবর্তন করে “A BGM-109 Tomahawk” ক্রুজ মিসাইলে রুপান্তরিত হয়ে রাশিয়ার বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এবং রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় এর দাবী পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো যেমন লাটভিয়া , লিথুনিয়া এবং এস্তনিয়া NATO জোটে অন্তর্ভুক্তির পর সীমান্তবর্তী এলাকায় তাদের সামরিক শক্তি প্রদর্শন করছে যা রাশিয়ার সার্বভৌমত্ব এবং বৈশ্বিক সামরিক ভারসাম্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।

ঠিক এই ব্যপারটাই প্রতিফলিত হয়েছে ১লা মার্চ ২০১৮ ফেডারেল এসেম্বলিতে দেওয়া রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সেই কৌতুহল উদ্দীপক বক্তব্যে। তিনি জোড় গলায় বলেছেন “আমার প্রিয় পশ্চিমা বন্ধুরা , আমরা বার বার বলেছি অনুগ্রহ করে আমাদের কথা শুনুন – আপনারা শোনেন নি , এবার আপনারা আমাদের কথা শুনবেন”। তিনি তাঁর বক্তব্যে রাশিয়ার সম্প্রতি উদ্ভাবিত ছয়টি সামরিক অস্ত্র এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন এবং টিভি স্ক্রিনের মাধ্যমে সর্বসম্মুখে প্রদর্শন করেন।

দীর্ঘদিন রাশিয়া এবং জার্মানীতে অবস্থানের কারনে বিশ্বের বহু সনামধন্য প্রতিরক্ষাবিদদের সান্নিধ্য অর্জন করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। আমি আমার এবং তাঁদের দৃষ্টিকোন থেকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করব ১লা মার্চ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রদর্শিত ছয়টি সামরিক অস্ত্র , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার নেতৃত্বাধীন NATO সামরিক জোটের বিরুদ্ধে কতটা কার্যকরী।


হাইপারসনিক রকেট সিস্টেম “কিন্‌জাল” , Kh-47M2 “Kinzhal : “কিন্‌জাল” একটি হাইপারসনিক নিউক্লিয়ার ওয়ারহেডবাহী আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপনাস্ত্র যা শব্দের চেয়ে ১০ গুন গতিতে পৃথিবীর যেকোন বিন্দুতে বা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম।
এখন আমাদের বুঝতে হবে হাইপারসনিক গতি কি ? শব্দের গতি সাধারনত অষ্ট্রিয়ান বিজ্ঞানী ম্যাকের সন্মানে ম্যাক নম্বরগুলোতে পরিমাপ করা হয়। ১ ম্যাক নাম্বার = ঘন্টায় ১০৬২ কিঃমিঃ। শব্দের গতি ১ ম্যাক থেকে ৫ ম্যাকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে এই গতিকে বলে সুপারসনিক গতি এবং শব্দের গতি, ম্যাক্স সংখা ৫ এর উপর অতিক্রম করলে একে বলা হয় হাইপারসনিক গতি। “কিন্‌জাল” ক্ষেপনাস্ত্রটি ১০ ম্যাক স্পিডে আঘাত করতে পারে যা সর্বোচ্চ ১২, ৩৫০ কিঃমিঃ/ঘন্টা । পৃথিবীর প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে এটি পৃথিবীর প্রথম হাইপারসনিক আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপনাস্ত্র যা ৪৮০ কেঃজিঃ পর্যন্ত নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বহনে সক্ষম। এটি যুদ্ধবিমান থেকে নিক্ষেপন যোগ্য (Air Launched Ballistic Missile) ক্ষেপনাস্ত্র। রাশিয়ার মিগ সিরিজের M-31 যুদ্ধবিমান এবং টপোল সিরিজের T-22 সুপারসনিক যুদ্ধবিমানের সাথে এই ক্ষেপনাস্ত্রটি সংযুক্ত। খুব শীঘ্রই এই ক্ষেপনাস্ত্রটি রাশিয়ার নৌবহর এবং স্থল বাহিনীতে সংযুক্ত হবে।

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে এই আন্তঃ মহাদেশীয় ক্ষেপনাস্ত্রটি উদ্ভাবন করা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার নেতৃত্বাধীন NATO জোটের সামরিক আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দেওয়ার জন্য। আজ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং NATO জোট যতগুলো আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপনাস্ত্র বিদ্ধংসী ব্যবস্থা বা ABM স্থাপন করেছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে “MIM-104 PATRIOT”। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম এর বৈশিষ্ট হল এর উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন রাডার সিস্টেম AN/MPQ-53 যা “PHASED ARRAY ANTENA” প্রযুক্তির মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোন সুপারসনিক মিসাইলকে TRACK বা চিহ্ণিত করতে পারে। কিন্তু রাশিয়ার নব্য উদ্ভাবিত “কিন্‌জাল মিসাইল” এতই দ্রুতগতিসম্পন্ন যে তাকে TRACK করার মত রাডার সিস্টেম এখনো পৃথিবীতে ডেভেলপ হয় নি।
উপরন্তু যে সুপারসনিক যুদ্ধবিমান MIG-31 বা TOPOL-21 হতে এই ক্ষেপনাস্ত্রটি উতক্ষেপন বা Launch করা হবে , এদের Strategic Directions বা চতুর গতিপথ পৃথিবীর ( non-360 degree) রাডার বা উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ANTENA গুলোর পক্ষে চিহ্নিত বা Track করা সম্ভব নয়। অতএব এই ক্ষেপনাস্ত্রটিকে যদি চিহ্ণিত বা Track ই করা না যায় , তবে একে প্রতিহত , ধবংস কিংবা INTERCEPT করার ক্ষমতা বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা NATO এদের কারোরই নেই।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার নেতৃত্বাধীন NATO জোটের আরও চৌকস ক্ষেপনাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থা হচ্ছে “TERMINAL HIGH ALTITUDE AREA DEFENCE (THAAD)” এবং “AEGIS COMBAT SYSTEM”. কিন্তু এদের মিসাইল সিস্টেম এর সর্বোচ্চ বিদ্ধংসী ক্ষমতা ১০০০ কিঃমিঃ পর্যন্ত কিন্তু রাশিয়ার উদ্ভাবিত এই “কিনজাল মিসাইল” ক্ষেপনাস্ত্রটি নিক্ষেপন স্থান হতে সর্বোচ্চ ৩০০০ কিঃমিঃ পর্যন্ত দূরের লক্ষবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম এবং তত্ত্বগত ভাবে এটি সুপারসনিক যুদ্ধবিমান হতে নিক্ষেপন যোগ্য বিধায় (Air Launched Ballistic Missile) যুদ্ধবিমানের ভ্রমনপথের যেকোনো স্থান থেকে যেকোনো মুহূর্তে নিক্ষেপন যোগ্য এর চতুর ট্রাজেক্টোরি পাথ এর কারনে একে ধ্বংস করা ততই কঠিন।
রাশিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় তাদের ওয়েবসাইট এ ছবি এবং ভিডিওফুটেজ সহ দাবী করেছে গত বছরের ১লা ডিসেম্বর তারা এই ক্ষেপনাস্ত্রটির সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। এই বছরের মার্চ মাসে রাশিয়ার Southern Military District এ দশটি নতুন M-31 এবং পনেরোটি টপোল T-22 যুদ্ধবিমানের সাথে সংযুক্ত করে এই ক্ষেপনাস্ত্রগুলোকে রাশিয়ান বিমান বাহিনীর সাথে যোগ করা হয়েছে।


পেরিসভেত” / PERESVET – Combat Laser Complex: পেরিসভেত হল রাশিয়ার উদ্ভাবিত এক ধরনের নতুন সামরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যার মূল শাক্তি হচ্ছে LASER রশ্মি বা LASER BEAM.
এই প্রতিরক্ষা কমপ্লেক্সটি থেকে LASER BEAM নিক্ষেপের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের যুদ্ধবিমান , ক্ষেপনাস্ত্র , ড্রোন ইত্যাদিকে এদের যাত্রাপথে বা কোনো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার পূর্বেই ধ্বংস করে দেওয়া সম্ভব। এটির কার্যকারিতা অনেকটা ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মত, কিন্তু এটিতে যেকোনো ক্ষেপনাস্ত্র কিংবা মিসাইলের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয় LASER রশ্মি বা LASER BEAM।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের মতে যেকোনো আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপনাস্ত্র উতক্ষেপন বা প্রতিরোধ ব্যবস্থার থেকে এই নতুন ধরনের সামরিক অস্ত্রটি অনেক বেশী কার্যকারী এবং জ্বালানী সাশ্রয়ী কারন এই কমপ্লেক্সটির ভেতরেই রয়েছে একটি ছোট পরমানু চুল্লী , যা হতে HEL কিংবা “HIGH ENERGY LASER BEAM” এর জন্য জ্বালানী উৎপাদন করা হয়। এই LASER BEAM এর মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাস্ট্র কিংবা NATO জোটের নিক্ষিপ্ত যেকোনো ক্ষেপনাস্ত্র বা যুদ্ধবিমানগুলোর “HOMING HEAD ANTENA” কে নিস্ক্রিয় করার মাধ্যমে তাদের গতিপথ ভুলপথে চালিত করা কিংবা অ কার্‍্যকর করে দেওয়া সম্ভব যাতে তারা তাদের টার্গেটে খুব সহজে আঘাত হানতে না পারে। এই ধরনের LASER BEAM এর ব্যবহার সোভিয়েত ইউনিয়ন করেছিল সত্তরের দশকে এবং বর্তমানের HEL কিংবা HIGH ENERGY LASER BEAM রাশিয়ার প্রায় ৪৫ বছরের গবেশনার ফসল। এই পুরো COMBAT LASER COMPLEX টি পুরোপুরি মনুষ্যবিহীন এবং রিমোর্ট কন্ট্রোল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বিশ্বের প্রতিরক্ষা বিদদের বিশ্লেষণে দেখা যায় নতুন ধরনের LASER COMPLEX টি যা PERESVET নামে পরিচিত , এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর “AN/SEQ-3 LASER SYSTEM” হতে অনেক শক্তিশালী এবং বেশি দূরত্বে আঘাত হানতে পারে কারন এই LASER COMPLEX টি নিউক্লিয়ার চুল্লির মাধ্যমে নিজেই নিজের জ্বালানী উৎপাদনে সক্ষম।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায় , এই বছরের ১৮ই জুলাই এই কমপ্লেক্সটি রাশিয়ান আর্মিতে সংযুক্ত হয়েছে এবং তারা আরও ঘোষণা দিয়েছে খুব শীঘ্রই তারা নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিণী তে এ ধরনের “HIGH ENERGY LASER BEAM” সংযোজন করবে। এখানে উল্লেখ্য যে গত ১৪ই আগস্ট ২০১৮ তে “UNITED STATES DEPATMENT OF STATE” এই মর্মে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে “রাশিয়া মহাকাশে LASER weapon সমৃদ্ধ SATTELITE স্থাপন করেছে যা হতে LASER BEAM এর মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অরবিটে অবস্থানরত SATTELITE গুলোর গতিবিধি অকার্যকর বা ধ্বংস করে দিতে পারে”। এই ধরনের অভিযোগ এর জবাবে রাশিয়ান প্রতিরক্ষা বা বৈদেশিক মন্ত্রনালয় এখনো নিশ্চুপ। পাঠক, নীরবতা সম্মতির লক্ষন”।


নিউক্লিয়ার টর্পেডো পসিডোন এবং প্রোজেক্ট স্ট্যাটাস ৬ / POCEIDON AND PROJECT STATUS 6 : পসিডোন একটি UNMANNED UNDERWATER VEHICLE (UUV),টর্পেডোর একটি উন্নত সংস্করণ , যা Under water Drone নামে অধিক পরিচিত। এই আন্ডার ওয়াটার ড্রোনটি ১০০ মেগাটন থার্মনিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম। থার্মনিউক্লিয়ার ওয়ারহেড হচ্ছে থার্মনিউক্লিয়ার COMBALT BOMB যা হাইড্রোজেন বোমার তুলনায় বহুগুন শক্তিশালী এবং অধিক এলাকাজুড়ে Radioactivity বা তেজক্রিয়তা ছরিয়ে দিতে সক্ষম। এই আন্ডার ওয়াটার ড্রোনটি এতই শক্তিশালী যে এটি যে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করবে তার আশেপাশে বা যাত্রাপথে , সমুদ্রে কিংবা জলসীমায় প্রচণ্ড সুনামির সৃষ্টি করবে। প্রায় ১৯ মিটার লম্বা এই আন্ডার ওয়াটার ড্রোনটি পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন (১৮৫ কিঃমিঃ/ঘন্টা) সাবমেরিন নিক্ষিপ্ত টর্পেডো এবং Remote control Device এর মাধ্যমে এর গতিপথ মুহূর্তেই পরিবর্তন করতে সক্ষম। এই আন্ডার ওয়াটার ড্রোনটি প্রায় ১০,০০০ কিঃমিঃ দূরের লক্ষবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম এবং সর্বোচ্চো ১২০০ m বা ৩৪০০ ft পানির নীচ থেকে যেকোনো ধরনের সাবমেরিন , এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার কে অটোমেটিক TRACK করে আঘাত করতে সক্ষম।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে এই আন্ডার ওয়াটার ড্রোনটি Project Status-6 আন্ডারে 09852 OSCAR এবং 09581 – KHABAROVSK সাবমেরিন এর সাথে যুক্ত। তাদের মতে পসিডন একটি আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপনাস্ত্রের সমুদ্র তলদেশীয় সংস্করন, যা সমুদ্রতলদেশ হতে সমুদ্র উপকূলীয়বর্তী শহর , স্থাপনা এবং নেভাল বেসকেই আঘাত করার উদ্দেশ্যে উদ্ভাবিত হয়েছে, যা একটি সাধারন টর্পেডোর পক্ষে সম্ভব নয়।

বিশ্বের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে পসিডনের গতি ঘণ্টায় ১৮৫ কিঃমিঃ/ঘন্টা কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চো গতি সম্পন্ন সাবমেরিন কিংবা নিউক্লিয়ার ওয়ারহেডবাহী টর্পেডোগুলোর সর্বোচ্চো গতি ঘণ্টায় মাত্র ৫৮ কিঃমিঃ। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ব্যয়বহুল টর্পেডো কিংবা সাবমেরিন চিহ্নিতকরন ব্যবস্থা “Anti-Submariane warfare continious trial unmanned vessel (ACTUV)” এর পক্ষে পসিডোন কে ট্র্যাক করা সম্ভব নয় কারন এটি ACTUV এর Tracking system এর আওতার বাইরের একটি উচ্চ দ্রুতগতি সম্পন্ন টর্পেডো এবং এর গতিপথ অনায়াসে রিমোট কন্ট্রোল এর মাধ্যমে পরিবর্তন করা সম্ভব। বর্তমানে U.S. NAVY রাশিয়ার আন্ডার ওয়াটার ড্রোনটিকে সুরবকালের সেরা হুমকি বলে বিবেচনা করছে।


বুরভেস্তনিক / Burvestnik – Unlimited range cruise missile : বুরভেস্তনিক শব্দের অর্থ হচ্ছে যা ঝড় বয়ে আনে এবং যে ঝড়কে থামানো যায় না। অবশ্যই নামকরণটি এই নতুন ধরনের ক্ষেপনাস্ত্রটির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই ক্ষেপনাস্ত্রটির বিশেষত্ব হচ্ছে এটি একটি NUCLEAR-POWERED CRUISE MISSILE. এই মিসাইল এর মধ্যে রয়েছে একটি ছোট নিউক্লিয় রিয়াক্টর , যার মাধ্যমে এই মিসাইলটি তার রামজেট ইঞ্জিনকে সচল রাখতে পারে এবং নিজের জ্বালানী নিজেই উৎপাদন করতে সক্ষম। Nuclear powered হওয়ার কারনে এই মিসাইলটি প্রচণ্ড উচ্চগতিসম্পন্ন ,সুপারসনিক গতিতে ভ্রমন করতে সক্ষম এবং এর কোন Target Range নেই। সাধারনত পৃথিবীর ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর সীমা নির্ধারিত থাকে অর্থাৎ উৎক্ষেপন স্থল থেকে ঠিক কত দূরে আঘাত করার ক্ষমতা। আর এই ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপন স্থল থেকে পৃথিবীর যেকোনো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম যা Unlimited range নামে পরিচিত।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের Pentagon দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের Nuclear Powered Cruise Missile উদ্ভাবনের চেষ্টা করে যাচ্ছিল। ১৯৫১ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিইয়নের সাথে পাল্লা দিয়ে তারা Project Pluto হাতে নেয় কিন্তু অনেকগুলো Prototype সফল না হওয়ার কারনে ১৯৬৪ সালে তারা Project Pluto বাতিল ঘোষণা করে।
কিন্তু রাশিয়া Nuclear powered ramjet engine এর উপর গবেষণা অব্যাহত রাখে যার ফসল এই ভূমি থেকে উৎক্ষেপন যোগ্য “Unlimited range Supersonic Low altitude missile (SLAM)। গত বছরের ১৯ এ জুলাই রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় এই ক্ষেপনাস্ত্রটির সফল উৎক্ষেপনের ঘোষণা দিয়েছে। এই মিসাইলটির বর্তমান কোড নাম্বার হচ্ছে 9M730।


সারমাত / SARMAT – RS28 : “সারমাত” একটি নতুন পর্যায়ের আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপনাস্ত্র। এটি তৎ কালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের
R-36M-2 Voevoda আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপনাস্ত্রের একটি উন্নত সংস্করণ। এই আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপনাস্ত্রটির বিশেষত্ব হচ্ছে এটি থার্মনিউক্লিয়ার ওয়ারহেডবাহী এবং এর গতি ম্যাক ২০.৭ অর্থাৎ শব্দের গতিরচেয়ে বিশগুন। এই আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রটি ঘণ্টায় ২৫,০০০ কিঃমিঃ/ঘন্টা গতিতে আঘাত হানতে সম্ভব। এর আরেকটি উল্লেখ করার মতো function হচ্ছে এটি একটি MIRV বা Multiple Independently Target able reentry vehicle. সহজ কথায় এই মিসাইলটি উৎক্ষেপনের পর এটি প্রায় ২৪টি বিভিন্ন মিসাইলে রূপান্তরিত হয়ে প্রায় ২৪টি বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এবং প্রত্যেকটি মিসাইল একেকটি ৩৫০ কেঃজিঃ ওজনের থার্মোনিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বহনে সক্ষম। এদের প্রত্যেকটি মিসাইলই সর্বোচ্চো ১২,০০০ কিঃমিঃ পর্যন্ত দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে সারমাত এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র। সবচেয়ে মজার ব্যপার হচ্ছে এর MIRV system এর কারনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর SPACE-BASED INFRARED system এর মাধ্যমে একে চিহ্নিত করা কিংবা INTERCEPT করা সম্ভবপর নয়। উপরন্তু এটি একটি SOIL-Based ক্ষেপনাস্ত্র যার কারনে এর Launch station টি মাটির নীচে অবস্থানের কারনে একে TRACK করাও খুবই কস্টসাধ্য।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় এর মতে এ বছরের ২০ এ মার্চ এই অবিশ্বাস্য রকমের শক্তিশালী মিসাইলের তৃতীয় সফল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।


আভানগ্রাদ/ Avangrad – Hypersonic glide vehicle – odzekt Yu-71 and Yu-74 : আভানগ্রাদ একটি মনুষ্যবিহীন যুদ্ধযান যা সাধারণত SARMAT / TOPOL এর মতো আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপনাস্ত্রগুলোকে বহন করতে সক্ষম। এই মনুষ্যবিহীন যুদ্ধযানটিও হাইপারসনিক গতিতে বা ২০.১ ম্যাক স্পিড বা শব্দের চেয়ে ২০ গুন গতিতে ভ্রমন করতে সক্ষম। এটি হাইপারসনিক যুদ্ধবিমানগুলির বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে উন্নত সংস্করণ। নতুন ধরনের Aerodynamics Technology এর মাধ্যমে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সর্বোচ্চো স্থান থেকে এটা এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপনাস্ত্রগুলোকে নিক্ষেপ করতে সক্ষম। সর্বাধুনিক SCRAMJET ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়েছে এই যুদ্ধযানটিতে। বিশ্বের প্রতিরক্ষাবিদদের মতে এটিই অনায়াসে যেকোনো Anti-missile defence system কে ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা রাখে কারন এই যুদ্ধযানটি সাধারন ট্রাজেক্টরি ব্যলেস্টিক পাথ ব্যাবহার করে না। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় এখনো এই অদ্ভুত সিস্টেমটি সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করতে অপরাগ। কিন্তু তারা দাবী করেছে ২০১৬ সালে দুবার Avangrad এর সফল উৎক্ষেপন চালিয়েছে এবং ২০২০ সালের মধ্যে এটা রাশিয়ার Air-Defence এ সংযুক্ত হবে।

উপরে উল্লেখিত সামরিক ব্যবস্থাগুলোর কথা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার ভাষণে বলেছেন এবং প্রদর্শন করেছেন। এখন আমাদের বুঝতে হবে বিশ্বের Defence Strategy অনুযায়ী কোন সামরিক শক্তিধর দেশ তাদের সর্বাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম সম্পরকে এভাবে জনসম্মুখে কোনো রিপোর্ট উপস্থাপন করে না। সাধারণত যা প্রকাশ করে তা বিশ বছর আগের প্রযুক্তি। অর্থাৎ এই মুহূর্তে রাশিয়ার কাছে এর থেকেও আধুনিক বা এই সমরাস্ত্রগুলোর অনেক উন্নত সংস্করন রয়েছে যা বলাই বাহুল্য। এই বিষয়টিও প্রতিফলিত হয়েছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের ১লা মার্চের ভাষনে। তিনি বলেছেন “হয়ত এই অস্ত্রগুলো একদিন কোন দেশ তৈরী করতে সক্ষম হবে , কিন্তু এর মধ্যে আমাদের বিশেষজ্ঞ এবং প্রকৌশলীরা আরও অনেক উন্নত কিছু আমাদের উপহার দেবে”।

পাঠক , খুব সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট “ডোনাল্ড ট্রাম্প” আফিসিয়ালি ঘোষণা দিয়েছেন শীঘ্রই তারা ১৯৮৭ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে করা “Intermediate range Nuclear Forces treaty” থেকে বের হয়ে আসবেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবার নিউক্লিয়ার মিসাইল তৈরিতে মণোনিবেশ করবে। জবাবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেছেন “এটি খুবই অনাকাঙ্খিত এবং ইউরোপ যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তার ভূমিতে আবার ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবস্থা স্থাপনের সু্যোগ দেয় , তার জন্য সম্ভাব্য পরিণতি ইউরোপকে ভোগ করতে হবে।

এই লেখাটি যখন শেষ করছি তখন NATO সামরিক জোট রাশিয়ার সীমান্তবর্তী দেশ নরওয়েতে , সোভিয়েত পরবর্তী সময়ের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া “Trident juncture 2018” শুরু করেছে , যাতে প্রায় ৫০,০০০ সৈন্য , ২৫০টি যুদ্ধবিমান , ৬৫টি যুদ্ধজাহাজ এবং ১০,০০০ ট্যাংক অংশ নেবে। ওদিকে গত সেপ্টেম্বর এ সাইবেরিয়ায় রাশিয়া এবং চায়না মিলে “Vostok 2018” সামরিক মহড়া আয়োজন করে , যা সোভিয়েত পরবর্তী সময়ের রাশিয়ার সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া ছিল।

কিছুদিন আগে ইউরোপের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী জার্মানির চ্যান্সেলর “আঙ্গেলা মারকেল” তাঁর ভাষণে বলেছেন “ ইউরোপকে নিজেদের সামরিকভাবে শক্তিশালী করতে হলে অন্যকারো উপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে” এবং তিনি সামরিক খাতে ফেডারেল বাজেট প্রায় তিনগুন বাড়ানোর ঘোষণা দেন। মেধা , প্রজ্ঞা এবং প্রযুক্তিতে জার্মানি এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা দেশগুলোর একটি এবং ইউরোপের নেতৃত্ব বর্তমানে তাদের হাতেই ন্যাস্ত। নতুন করে শুরু হওয়া স্নায়ুযুদ্ধের এই প্রান্তে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের উপর রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনকে প্রতিহত করার জন্য ইউরোপের সবচেয়ে প্রযুক্তিগত ভাবে সমৃদ্ধ দেশ জার্মানি কি পদক্ষেপ নিচ্ছে , পাঠক , তা নিয়ে পরবর্তী লেখায় আলোচনা করব। অনেক সময় নষ্ট করে আমার লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Reference :
http://en.kremlin.ru/events/president/news/56957
http://eng.mil.ru/
http://tass.com/defense/998221
https://defence-blog.com/army/russian-claims-new-peresvet-combat-laser-system-already-service.html
https://edition.cnn.com/2018/02/02/politics/pentagon-nuclear-posture-review-russian-drone/index.html
https://thediplomat.com/2018/03/russia-reveals-unstoppable-nuclear-powered-cruise-missile/
https://rg.ru/2015/02/02/raketa-site-anons.html
http://www.defenseworld.net/news/22162#.W9n5ANSF5kh
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১:৩১
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রোএক্টিভিটি এবং কম্পাউন্ড ইফেক্ট: আমার গুরুত্বপূর্ণ দুইটি শিক্ষা

লিখেছেন মাহদী হাসান শিহাব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১১



আমার গুরুত্বপূর্ন দুইটা লার্নিং শেয়ার করি। এই দুইটা টুল মাথায় রাখলে দৈনন্দিন কাজ করা অনেক সহজ হয়। টুল দুইটা কাজ করতে ও কাজ শেষ করতে ম্যাজিক হিসাবে কাজ করে।

এক.

স্টিফেন কোভের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

লিখেছেন সায়েমার ব্লগ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৩

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ
ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

১।
যৌন প্রাকৃতিক, জেন্ডার নয়।জেন্ডার মানুষের সৃষ্টি (social, cultural construction)। যৌনকে বিভিন্ন সমাজ বিভিন্ন সময়ে যেভাবে ডিল করে, তাঁকে ঘিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্মৃতির ঝলক: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুভূতি এবং মনের শান্তির খোঁজে

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০১



সরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে একটি ঘূর্ণায়মান পথ জুড়ে ঘুরে বেড়ানোর অবস্থানে আমি খুব শান্তি অনুভব করি। নদীর জল ছুঁয়ে পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সঙ্গে এক আন্তরিক সংযোগ অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×