সদা সত্যি কথা বলিবে এই কথাটা আসলে সিরিয়াসলি পালন করা রিস্কি। এই ধরেন রাস্তা দিয়ে হেটে চলা ইচড়ে পাঁকা ভাইস্তাকে ডেকে ,”কি খবর?” জিজ্ঞেস করতেই ভাইস্তার সত্যালাপে যদি শুনতে হয়
“আর খবর! গতকাইল রাইতে আব্বা বাসায় আইসা দেখে খাওনের টেবিলে ডাইল ভাত আর আম্মা জান সিটিং রুমে বইসা কানতেছে। বাপে ভাবছে নানী মারা গেছে তাই ডাইল ভাত খাইয়া ঢেঁকুর তুলতে তুলতে আম্মাজানরে যখন ডাক দিলো তখন তার কস্টের উত্তর,”পটলের এই বয়সে ক্যান্সার হইলো, ওর মায়ের কান্না সহ্য করতে পারছি না!” তখন বাপজান চ্যাঙ্গা দিয়ে থালটা ভাংতেই বুঝতে পারলাম ঘরের ভিতর মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ শুরু হইয়া গেছে। যখন পরিস্থিতি যুদ্ধবিরতির দিকে তখন আব্বাজান আমারে ডাক দিয়া জিগায় সারা দিন ঘরে কি কাম হইছে... তখন তো বুঝতেই আছেন আমার কি অবস্থা! আব্বা জানের পক্ষে গেলে আম্মাজানের কিল আর আম্মাজানের পক্ষে গেলে বাপের বনচটকানা।”
তখন আপনি কিঞ্চিৎ চিন্তিত হইয়া যদি জিজ্ঞেস করেই ফেলেন,” তো তুমি কুজা হইয়া হাটতেছো কেন? উত্তর কুন পক্ষে গেছে?”
ভাইস্তা নিজের পিঠে হাত দিয়ে উহু আহা করতে করতে,”আর পক্ষ! জাতিসংঘের মতো নিরপেক্ষ আচরন করতে গিয়া বইলা ফেলাইছি যে কানে হেডফোন দিয়া সারা দিন ঘুমাইছি। আর যায় কই! গত বছর বার্ষিক পরীক্ষায় ফেল করছি কেন সেই কারন দর্শানোর নোটিশ দেবার আগেই নীরিহ ইয়েমেন বানাইয়া পিঠে বড় বড় বোমা মারলো দুইজনই। তারপর যুদ্ধ শেষ!”
“তো এখন যাও কই?” আপনার চিন্তিত প্রশ্নের উত্তর,”আর কই যাবো! ছালা কিনতে যাই। ডিশের তার কাটনের চেস্টা করলাম কিন্তু চাক্কু দিয়া মোটা তার কাটলো না। তারওপর আম্মাজান যেভাবে নজর দিতেছে মনে হইতেছে দেশের ডিজিএফআই বাংলা ভাইরে নজরদারীর ওপর রাখছে।এখন পিঠে ছালা ছাড়া গতি নাই!”
সেজন্যই বলা যায় কৌশলী হতে দোষ নাই। সত্য কথা সবসময় বলাও ঠিক না। আবার জায়গায় বেজায়গায় সবকিছু বলাও ঠিক না। এই যেমন ছোটকালে আমি একটু বেশী রকমের ভোম্বল ছিলাম। আমার অন্যান্য কাজিনরা সে হিসেবে বেশ চালাক চতুর ছিলো। একজন ব্লাক বেল্ট, আরেকজন সুন্দর গান গাইতো আরেকজন প্রতি ক্লাসেই ফাস্ট আরেকজন তার পিতার ব্যাবসায় ভালোই সাহায্য সহযোগিতা করতো। তো একবার ঈদের দিন সবাই বললো একটা কিছু করে দেখাইতে। তো আমি ঐ ব্লাক বেল্ট রে ডাক দিয়া জিগাইলাম
: ধরেন আপনারে বলা হইলো শূন্য থিকা ২০০ এর মধ্যে একটা সংখ্যা বেছে নেন এবং এটা মনের ভিতর রাখেন।
: রাখলাম।
: তারপর তার সাথে ১০ গুন করে ২০ ভাগ করে শূন্য যোগ করেন।
: করলাম
: তারপর চোখ বন্ধ কইরা শুন্য দিয়া গুন করলে যেটা দেখবেন সেইটা কিন্তু আমি জানি।
: কি জানোস?
: সবকিছু অন্ধকার দেখতেছেন না?
সেই কাজিন চোখ খুলে সোজা এক বনচটকানা মারলে আমার চশমাটা ফুড়ুৎ করে উড়ে যায় আর আমি দিনের বেলা চান তারা দেখতে থাকি।
তাই বলা হয় সর্বদা মুখ খুলতে নাই!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৮ ভোর ৫:১২