বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, যে শূন্য-দেশকে আপাত: দৃষ্টিতে শান্ত, সমাহিত মনে হচ্ছে, তার সূক্ষ্মস্তরে সবসময়ই নানান প্রক্রিয়া ঘটে চলেছে। এর মধ্যে নিহিত শক্তি থেকে পদার্থ-কণা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তৈরি হচ্ছে, আবার তারা নিজেকে সেই শক্তিতে বিলীন করে দিচ্ছে। এ প্রক্রিয়াটির মূলে রয়েছে ‘রহস্যময়’ কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন বা তথাকথিত ‘জিরো পয়েন্ট এনার্জি’। এ প্রক্রিয়ায় পদার্থ ও প্রতিপদার্থ যুগলের আকারে যে অসদ কণিকা (virtual particle) প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে তা হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা তত্ত্ব অনুযায়ী প্ল্যাঙ্ক ধ্রুবকের পরিসীমার মধ্যে বিলীন হয়ে যায় ( উৎস: সায়েন্টিফিক আমেরিকান, ডিসেম্বর ১১৯৭ সংখ্যা)।
সূরাঃ ৫৫ রাহমান, ২৬ নং ও ২৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। তাতে সব বিলিন হয়
২৭। আর বাকী থাকে তোমার প্রতিপালকের সত্তা, যিনি মহিমাময়, মহানুভব।
* শূন্যতে ঘটা প্রক্রিয়ায় নিহিত শক্তির যোগফল সর্বশক্তিমান। তাতে সব বিলিন হয়। কিন্তু তিনি নিজে বিলিন হন না।সেজন্য তিনি মহিমাময় এবং মহানুভব।
লক্ষ্য করুন, কোনো বস্তু যখন স্থির অবস্থায় থাকে তখন এর মোমেন্টাম শূন্য এবং এর শক্তি ভরের সমান (E=m)। এই শক্তিকে বলা হয়ে থাকে পদার্থের স্থিতি শক্তি। এটাই আইনস্টাইনের বিখ্যাত গাণিতিক সম্পর্ক E=mc² যেখানে c মান[17] ১। ১৯০৫ সালে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন তার এই বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব প্রকাশ করেন। তিনি প্রমাণ করে দেখান যে, শক্তি থেকে ভরের উৎপত্তি সম্ভব এবং একই সাথে শক্তির মাঝে ভরের হারিয়ে যাওয়া সম্ভব (উৎস: ভিক্টর স্টেঙ্গর, নিউ এথিজম, ২০০৯) ।
সূরাঃ ২ বাকারা ১১৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
১১৭। আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীর দৃষ্টান্ত বিহীন নতুন স্রষ্টা। আর যখন তিনি কোন কিছু করতে সিদ্ধান্ত করেন তখন উহার জন্য শুধু বলেন ‘হও’ আর উহা হয়ে যায়।
* শক্তি থেকে ভরের উৎপত্তি সম্ভব বিধায় সর্বশক্তিমান তাঁর সত্তা থেকে উদ্ভব হওয়া ভরকে লিমিট দিয়ে হও বললে সেটা লিমিটেড হয়।
আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, শূন্য থেকে মহাবিশ্বের উদ্ভবের ধারনাটা পদার্থ এবং শক্তির নিত্যতার সূত্রের লঙ্ঘন। কী ভাবে আপনি শূন্য থেকে রাতারাতি একটা মহাবিশ্ব তৈরি করে ফেলতে পারেন? ওয়েল … যদি আপনি মহাবিশ্বের সমস্ত ভর হিসেব করেন, দেখবেন এটা ধনাত্মক। আর যদি আপনি মহাবিশ্বের মহাকর্ষ ক্ষেত্রের শক্তির হিসেব নেন, দেখবেন সেটা ঋণাত্মক। যখন আপনি এ দুটোকে যোগ করবেন, কি পাবেন? শূন্য। তার মানে মহাবিশ্ব তৈরি করতে কোন শক্তি আসলে লাগছে না। মহাবিশ্ব ফ্রি পাচ্ছেন আপনি – যেন ফ্রি লাঞ্চ হিসেবে। আপনি হয়তো মাথা নেড়ে ভাবতে পারেন – নাহ, এটা ঠিক নয়। এই যে চারিদিকের ধনাত্মক চার্জ আর ঋণাত্মক চার্জ দেখি – কই তারা তো একে অপরকে নিষ্ক্রিয় করে দিচ্ছে না। তাহলে কীভাবে শূন্য থেকে মহাবিশ্ব পাওয়া যাবে? ওয়েল, আপনি যদি একই ভাবে মহাবিশ্বের যাবতীয় ধনাত্মক চার্জের পরিমাণ আর ঋণাত্মক চার্জের পরিমাণ ধরে যোগ করেন দেখবেন যোগফল পাওয়া যাচ্ছে শূন্য! মহাবিশ্বের আসলে কোন নেট চার্জ নেই। আচ্ছা স্পিন বা ঘূর্ণনের ব্যাপারেই বা ঘটনা কি? গ্যালাক্সির ঘূর্ণন আছে, তাই না? এবং তারা ঘুরে বিভিন্ন ডাইরেকশনে। আপনি যদি গ্যালাক্সিগুলোর সমস্ত ঘূর্ণন যোগ করেন, কি পাবেন? শূন্য। সুতরাং – মহাবিশ্বের রয়েছে ‘শূন্য স্পিন’, ‘শূন্য চার্জ’, এবং ‘শূন্য এনার্জি কনটেন্ট’। অন্য কথায় পুরো মহাবিশ্বই শূন্য থেকে পাওয়া। (উৎস:কোয়ান্টাম শূন্যতা এবং মহাবিশ্বের উৎপত্তি- অভিজিৎ রায়)
সূরাঃ ২১ আম্বিয়া, ৩০ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩০। যারা কুফুরী করে তারা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী মিশেছিল ওতপ্রতভাবে। অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিয়েছি। আর প্রাণবান সব কিছু সৃষ্টি করেছি পানি হতে। তথাপি কি তারা ঈমান আনবে না?
* কেউ যদি সঠিকভাবে ভাবে তাহলে তারা আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী ওতপ্রতভাবে মিশেছিলো বলে বুঝতে পারবে। তারপর সর্বশক্তিমান সব কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি পানি থেকে প্রাণ সৃষ্টি করেছেন।
# বিজ্ঞান মহানবিশ্বের প্রাথমিক অবস্থার বিবরণ যা দিয়েছে তার সাথে আল্লাহর দাবীর গরমিল দেখা যাচ্ছে না। সেজন্য মুমিনগণ আল্লাহর সকল কথা বিশ্বাস করে। আর বিবর্তন আল্লাহর কাজ হওয়ার ক্ষেত্রেও মুমিন কোন সমস্যা দেখছে না।
আর আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) হচ্ছে অন্য স্থান থেকে পৃথিবীতে আগত। তাদের আকৃতির মানব যারা তাঁদের পূর্বে ছিল। তাঁরা তাঁদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। তারমানে আদমের বংশ বিস্তারের জন্য তাঁরা যাদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন আল্লাহ তাদের বিনাশ সাধন করে সেই স্থানে আদম (আ.) ও হাওয়াকে (আ.) স্থলাভিষিক্ত করেছেন। সংগত কারণে বিজ্ঞানের কোন কিছুর সাথে আল্লাহর কথার গরমিল পাওয়া যাচ্ছে না। সুতরাং বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে আল্লাহর কথায় বিশ্বাসী মুমিনগণকে অন্ধবিশ্বাসী বলা মূলত একটি বেদরকারী কাজ। আর বিজ্ঞান অনুযায়ী বিশ্বাসের বিপরীতে কোনভাবেই অবিশ্বাস প্রতিষ্ঠা পায় না। সুতরাং বিজ্ঞানের বিবিধ বিবরণে অবিশ্বাসীদের উত্তেজিত হওয়া মূলত বেদরকারী কাজ। কারণ বিজ্ঞানের যে বিবরণ থেকে তারা অবিশ্বাসী, সেই একই বিবরণ থেকে মুমিন দৃঢ় বিশ্বাসী হতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:১৩