somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিমান ছিনতাইয়ের ব্যর্থ চেষ্টা – একটা সফল ‘কমান্ডো অভিযান’ নিয়ে যারা মনগড়া প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছেন, তাদের জন্য

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এ বিষয়টা নিয়ে অলরেডি ফেইসবুকে আমার মতামত শেয়ার করেছি। দুই-আড়াই ঘণ্টার মাথায় মাত্র ৮ মিনিটের একটা সফল অভিযানের মধ্য দিয়ে পুরো জাতিকে আশ্বস্ত ও শঙ্কামুক্ত করার পর যারা এটাকে ‘সাজানো নাটক’, ‘চকবাজার ইস্যু বা পিলখানা ইস্যু থেকে জনগণের দৃষ্টি সরানো’, ‘একটি পরিকল্পিত হত্যা’, ষড়যন্ত্র, ইত্যাদি নানাবিধ প্রোপাগান্ডাই ছড়াচ্ছেন না শুধু, সবকিছু ছাপিয়ে এখন তাদের বড়ো প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে - ‘মাহিবি জাহানকে মেরে ফেলা হলো কেন?’ যাঁরা ‘মাহিবি জাহানকে মেরে ফেলা হলো কেন?’ প্রশ্ন করতে করতে পাগল হয়ে যাচ্ছেন, হৃদয় গলে মানবতাবোধ উপচে পড়ছে, তাঁদের উদ্দেশ্যে কিছু বলার জন্যেই ব্লগে আমার মতামতগুলো শেয়ার করছি।

আমরা যদি ধরে নিই এটা একটা সাজানো নাটক বা ষড়যন্ত্র, তাহলে যারা ‘সাজানো নাটক’ বা ‘ষড়যন্ত্র’ বলছেন, দয়া করে বিশ্লেষণ করুন এই সাজানো নাটক থেকে বিমান কর্তৃপক্ষ বা সরকার কী ফায়দা লাভ করতে চেয়েছিল। আর এখানে ঠিক কী ধরনের ষড়যন্ত্র করা হয়ে থাকতে পারে, দয়া করে তাও বিশ্লেষণ করুন। মাহিবি জাহান সম্পর্কে যা জানা যায় তা হলো তিনি ২৪ বছর বয়স্ক এক যুবক, নারায়নগঞ্জ তার বাড়ি, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ঢাকায় থাকতেন; দুবাই যাওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি বিমানে উঠেছিলেন। তিনি চিত্রনায়িকা শিমলার কাছ থেকে ভারসাম্যহীনতার অভিযোগে ৪ মাস আগে তালাকপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। মাহিবি এর আগেও একটা বিয়ে করেছিলেন। কোনো একসময় এক তরুণীকে অপহরণের দায়ে তাকে ২০ দিন হাজতে থাকতে হয়েছিল। অপরাধীদের তালিকায় তার নাম আছে বলে র‍্যাব জানিয়েছে। তার বাবা আগে মিডল ইস্টে চাকরি করতেন, বছর চারেক ধরে মুদি ব্যবসা করছেন। মাহিবি একটা শর্ট ফিল্ম বানিয়েছিলেন, নিজেও অভিনয় করেছিলেন বলে জানা যায়। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তার যাতায়াত ছিল। তিনি কোনো বড়ো ব্যবসা বা রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন বলে এখনো কোনো তথ্য আসে নি; তার বাবা বলেছেন, মাহিবি খুব বেয়াড়া ছিল। তিনি ছেলেকে সুপথে আনার অনেক চেষ্টা করেছিলেন; শেষে আশাহত হয়েছিলেন। আমাদের মিডিয়া, বিশেষ করে ফেইসবুক আরো শোর তুলছে যে, ‘মাহিবি প্রধান মন্ত্রীর সাথে কথা বলে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাকে মেরে ফেলা হলো’। এ সমস্ত তথ্য থেকে ঠিক কী ধরনের নাটক, কী উদ্দেশ্যে সাজানো হতে পারে, এর পেছনে কী ধরনের ষড়যন্ত্র থাকতে পারে তা বোধগম্য হচ্ছে না। আর, এই ‘চুনোপুটি’কে হত্যা করার জন্য কি প্লেন হাইজ্যাক করার ঘটনা সাজানোর মতো এত বিশাল ‘পরিকল্পনার’ দরকার আছে? অজ্ঞতা ও মূর্খতা থেকেই মানুষ মনগড়া কথা বেশি বলেন। একটা কমান্ডো অভিযান কীভাবে পরিকল্পনা ও এক্সিকিউট করা হয়, আমাদের মতো আমজনতার তা জানার তেমন কোনো সুযোগ নেই।

কেউ বলছেন, চকবাজারের ঘটনা ধামাচাপা দিতে, বা পিলখানার ঘটনা থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতেই এই নাটক সাজানো হয়েছে। বলুন, চকবাজার বা পিলখানার ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার কিছু কি আছে? ওসব তো ‘ভয়াবহ’ ঘটনা হিসাবে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত, যা সামলানোর জন্য সরকার খুব আন্তরিকভাবে ও কঠোরভাবে তৎপর রয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ ও অগ্রগতিও প্রশংসনীয়।

মাহিবির হাতের পিস্তলটি আসল, নাকি নকল, ওর বুকে বোমা বাঁধা ছিল কী ছিল না, যাত্রীগণ প্লেনের ভেতরে গোলাগুলির আওয়াজ শুনেছেন, তদন্ত শেষে হয়ত এগুলো বেরিয়ে আসবে। আর ওটা যে খেলনা পিস্তল ছিল, এ ‘গুজব’ ভাইরাল হয়েছে অপারেশন শেষ হওয়ার পর। অপারেশন শুরুর আগে যদি কেউ জানতো মাহিবি’র হাতের পিস্তলটা ছিল একটা খেলনা পিস্তল, ওর বুকে কোনো বোমা ছিল না, তাহলে আপনাদের কী মনে হয়, মাহিবিকে প্লেন থেকে জ্যান্ত, একদম জামাই-আদরে নামাইয়া আনতেন যাত্রীরা? জি না, অতো সোজা না। যে-মুহূর্তে যাত্রীরা বুঝতে পারতেন ওটা খেলনা পিস্তল, অমনি যাত্রীরা ওর উপর ঝাপাইয়া পইড়া প্লেনের ভেতরেই মাহিবিকে পিটাইয়া মাইরা তক্তা বানাইয়া ফেলতেন। আর এখন আমরা চিল্লাইতেছি খেলনা পিস্তলওয়ালা মাহিবিকি বাঁচাইয়া রাখলো না কেন? ধরুন ওর হাতে খেলনা পিস্তলই ছিল- যে স্টুপিড নিজ স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ১৪২ জনের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারে, সেই সন্ত্রাসী মরে যাওয়ার পর আপনাদের এত দরদ উথলে উঠছে কেন? বা-মাকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর বিপথগামী ঐশীর যখন ফাঁসির আদেশ হয়, তখনও ঐশীর জন্য আপনাদের মায়াকান্না হয়, ওর মৃত মা-বাবার জন্য মায়া হয় না। লিখে রাখুন, কোনো ধর্ষকের ফাঁসির আদেশ হলে আপনারাই সেই ধর্ষকের প্রাণ ভিক্ষার জন্য হাহাকার করবেন, কারণ, আপনাদের ভেতরেই খুনি, আপনাদের ভেতরেই ধর্ষক, ছিনতাইকারীর বাস।

একটা অপারেশনে যাওয়ার আগে সম্ভাব্য সবরকম পরিস্থিতিই বিবেচনা করা হয়ে থাকে। কী পরিস্থিতিতে কী অ্যাকশনে যেতে হবে, তা মোটামুটি ছকের মতোই থাকে। এটাই যে-কোনো দেশের যে-কোনো কমান্ডোদের জন্য প্রথাগত ট্রেনিং। তো, আগেই যদি জানা যেত, মাহিবির হাতের পিস্তলটা খেলনা পিস্তল, তাহলে তো খেল আগেই খতম হয়ে যেত, কমান্ডো অভিযানের তো প্রশ্নই আসতো না। কিন্তু, অপারেশন পরিকল্পনা করার সময় ওর হাতে পিস্তল আছে, শুধু এটাই বিবেচনায় থাকার কথা না; অন্যান্য এক্সপ্লোসিভ, ধারালো অস্ত্র, ইত্যাদি যা যা আগে মিডিয়া থেকে জানা গিয়েছিল, ওগুলো মাহিবির আছে ধরে নিয়েই অপারেশন প্লান করা হয়ে থাকবে।

এবার আমরা মাহিবির দিক থেকেও ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করি। সন্ত্রাসীরা যে-কোনো অভিযানে নামার সময় ওরা জানে যে ওদের প্রাণ ওদের হাতের মুঠোয়, ওদের মৃত্যুর ঝুঁকি এত বেশি যে, যে-কোনো মুহূর্তেই ওদের মৃত্যু ঘটতে পারে। সন্ত্রাসী গ্রুপ যদি নিয়মিত/শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্তত একজন সদস্যকেও হত্যা করতে পারে, সেটাই তাদের বড়ো ক্রেডিট হিসাবে গণ্য হয় এবং তাদের মনোবল যেমন চাঙ্গা হয়, তেমনি নিয়মিত বাহিনীর মনোবল ভেঙে যায়, যা মেনে নেয়া নিয়মিত বাহিনী তথা জাতির পক্ষে কঠিন। মাহিবিও এই ভয়ঙ্কর ‘ছিনতাই’ পরিকল্পনা করার সময় তার সম্ভাব্য সব পরিণতির কথা জেনেশুনেই এ পথে পা বাড়িয়েছিলেন। যখন প্লেনের ভেতরে তিনি নিজেকে ছিনতাইকারী হিসাবে ঘোষণা দিলেন, তিনি অবশ্যই জানতেন, যে-কোনো মুহূর্তে যে-কেউ তাকে পাকড়াও করতে পারে, যে-কোনো সময় তার মৃত্যু হতে পারে। আত্মঘাতী জঙ্গীদের প্রস্তুতির মতোই তার মানসিক প্রস্তুতি থাকার কথা।

এখন কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন যে, নিহত মাহিবি জাহানের হাতের পিস্তল আসল, নাকি খেলনা ছিল তা তদন্ত শেষ হওয়ার আগে জানা যাবে না। কিন্তু বিভিন্ন মিডিয়াতে ভাইরাল হচ্ছে যে, মাহিবির হাতের পিস্তলটি আসল পিস্তল ছিল না, ওটা একটা খেলনা পিস্তল ছিল। কিন্তু কমান্ডো অভিযান শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা টিভি ও ফেইসবুক মারফত জানতে পারছিলাম, ছিনতাই চেষ্টাকারীর বুকে বোমা বাঁধা, সে উড়োজাহাজ উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে, এবং ককপিটে দুই রাউন্ড গুলিও ছুঁড়েছে। এবার গভীরভাবে চিন্তা করে বলুন, যদি এই কথাগুলো সত্য হতো, অর্থাৎ মাহিবির হাতে যদি একটা আসল পিস্তল ও বুকে বোমা বাঁধা থাকতো, তাহলে কমান্ডো অভিযানে কী কী ঘটতে পারতো? শুধু এটুকু বলতে পারি, আজও হয়ত পুরো জাতি এক মাহিবির জন্য আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় সময় পার করতো। এমনও হতে পারতো, ওর বুকের বোমাটা ও ফাটিয়ে দিয়েছে, প্লেনসহ কয়েক সেকশন কমান্ডো ও আরো কিছু মূল্যবান স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে। চিন্তা করুন ১৯৭৭ সালে রেড আর্মি কর্তৃক জাপানী প্লেন হাইজ্যাক করার কথা, যেটি ২৭ সেপ্টেম্বরে ঢাকায় নেমেছিল, ০২ অক্টোবরে সব যাত্রীকে নামিয়ে দিয়ে প্লেন নিয়ে চলে গিয়েছিল। সবচাইতে রিমোট একটা পসিবিলিটির কথা বলি- এমনও হতে পারতো যে, মাহিবি একজন পাইলট। সে প্লেন চালানোর অ্যাটেম্পট নিতে পারতো, ওটা উড়াতে যেয়ে ভূ-পতিত হয়ে আরো ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটাতে পারতো।

প্রশ্ন উঠেছে যে, মাহিবিকে মেরে ফেলা হলো কেন? তাকে জীবিত আটক করা হলো না কেন? আমাদের বোঝা দরকার যে, তাকে মেরে ফেলা হয় নি, তাকে আটক করতে যেয়ে প্রথমে মাহিবি আহত হয়, পরে মারা যায়। আপনি হয়ত এই প্রশ্নও করতে পারেন, তাকে আহতই বা করা হবে কেন? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হলে আমাদের আরো একটু গভীরে যাওয়া দরকার। যে কোনো অপারেশনে টেরোরিস্টকে জীবিত উদ্ধারের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে। এখানেও নিশ্চয়ই সেই চেষ্টাই ছিল। সিকোয়েন্স অব অ্যাকশন কীরূপ ছিল তা আমাদের জানার উপায় নেই, কিন্তু এটা নিশ্চিত, বুকে বোমা বাঁধা টেরোরিস্ট ও কমান্ডোদের মুখোমুখী হওয়ামাত্র দু-পক্ষেরই গুলি বিনিময় হতো এবং এখানে যে আগে গুলি ছুঁড়বে, জয় তার পক্ষেই থাকবে। এটা ঘটে থাকে খুবই তাৎক্ষণিকভাবে, ফ্র্যাকশন অব এ সেকেন্ডের মধ্যেই। এরূপ কঠিন, ভয়াবহ ও ফ্লুইড (ঘোলাটে) পরিস্থিতিতে, জেনেশুনে কোনো কমান্ডোই এই প্রথম গুলি ছোঁড়ার সুযোগ টেরোরিস্টের হাতে ছেড়ে দিয়ে বলবে না- বাবা, তুই আগে গুলি কর, তারপর আমি করবো। যুদ্ধক্ষেত্রে এমন ঘটনার বহু নজির আছে, নিজ পক্ষের সবাই মারা গেছে, বেঁচে থাকা সর্বশেষ সৈনিকটি একটিমাত্র এলএমজি দিয়ে অজস্র শত্রু সেনাকে হত্যা করেছে। এই অভিযানে কমান্ডোরা জানতেন যে মাহিবির হাতে একটা ‘আসল’ পিস্তল আছে, তার বুকে বোমাও বাঁধা আছে, প্লাস, অন্যান্য মারণাস্ত্রও থাকতে পারে- এ অবস্থায় অক্ষত মাহিবিকে উদ্ধারের জন্য মাহিবির মুখোমুখী হয়ে বা মাহিবির দৃষ্টিসীমার কাছাকাছি যেয়ে অপেক্ষা করতে থাকলে হয়ত অনেক কমান্ডোকেই প্রাণ দিতে হতো। এমনকি, আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিমানসহ কমান্ডো ও অন্যান্য স্থাপনা উড়িয়ে দিতে পারতো। তখন আমরা কমান্ডোদের দিকে আঙুল তুলে বলতাম- তোমরা আমার 'জব্বর কমান্ডো’, একজন হাইজ্যাকাররে ধরতে যাইয়া ৫ জনের প্রাণ হারাইলা, যেমন পিলখানার ঘটনার জন্য আমরা সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করে থাকি, ঐখানে দ্রুত কমান্ডো অভিযান পরিচালনা করা হয় নি বলে।

যাই হোক, সন্ত্রাসীকে কাউন্টার অ্যাকশনে যাওয়ার সুযোগ কোনো কালে কোনো দেশের কমান্ডোরাই দিবে না। স্ট্যান্ডার্ড প্রসিডিউর হলো, সুযোগ পাওয়ামাত্র গুলি, যাতে টেরোরিস্ট কোনো কাউন্টার অ্যাকশনে না যেতে পারে; কারণ, কাউন্টার অ্যাকশনের সুযোগ পাওয়া মাত্র টেরোরিস্টরা আত্মঘাতী আক্রমণ দ্বারা ত্বরিত্ব গতিতে যে-কোনো ভয়ঙ্কর অ্যাকশন নিয়ে ফেলবে। ধরুন, মাহিবির হাতে পিস্তল ও বুকে বোমা বাঁধা ছিল। আমাদের গোটা দশেক কমান্ডো আর কয়েকজন যাত্রীকে সাবাড় করে দিয়ে সে অক্ষত অবস্থায় ধরা পড়লো, সেই অক্ষত মাহিবিরে দিয়া আমরা কী করবো? তাকে ধুইয়া পানি খাইব? আদর করতে থাকবো, গালে চুম্মা খাইতে থাকবো? বাহবা দিতে থাকবো, আর যারা মারা গেলো তাদের জন্য মাতম তুলবো, এবং কমান্ডোদের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করবো? ফেইসবুকে এটা শেয়ার করলে Nafees Rahman নামক জনৈক ফেইসবুক ফ্রেন্ড একটা সুন্দর কথা বলেছেন এ ব্যাপারেঃ

হয়তো বিলম্ব করা যেতো। এটি নিয়ে আমিও ভেবেছি, মাত্র ৮ মিনিট সময়ে কেন কমান্ডোরা এই অপারেশন শেষ করলো। অনেক নতুন প্রশ্নও হয়তো মনে জেগেছে, যার উত্তর পাই নি। তবে, সকল যাত্রী নিরাপদে প্লেন ত্যাগ করার পর কমান্ডো বাহিনী যখন নিশ্চিত হয়েছে কথিত হাইজ্যাকার কেবল একজন, তাদের কাছে নিশ্চয়ই তখন বড় প্রায়োরিটি হয়ে দাঁড়াবে প্লেনটিকে নিরাপদ করা। হাইজ্যাকারের হাতে যদি একটি আগ্নেয়াস্ত্র দৃশ্যমান হয়ে থাকে, আর কোনো অস্ত্র যে তার কাছে নেই, সেটি কিভাবে কমান্ডোরা নিশ্চিত হতে পারে? যদি বোমাসদৃশ কোনোকিছু হাইজ্যাকারের গায়ে লাগানো থাকে, এবং যদি সত্যিই কমান্ডোরা সেটি থেকে তার ঝুলে থাকতে দেখে, তাঁরা ধরেই নেবে, যে-কোনো সময় সে সেটির বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে, যার ফলে প্লেনটির বড় রকম ক্ষতি হতে পারে। এ অবস্থায় প্রথম সুযোগেই গুলি করা ছাড়া কমান্ডোদের সত্যিই কোনো বিকল্প আছে বলে আমি মনে করতে পারি না। বুঝতে হবে, কমান্ডোরা পুলিশের মতো আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নয়, এরা সেনাসদ্যদের মধ্যে থেকে বাছাই করা এ-ধরনের অবস্থায় যে-কোনো মুল্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স। যে কাজ করতে তাঁরা প্রশিক্ষিত, তাই তাঁরা করবে। এটিই স্বাভাবিক!

এখন তো মাহিবি জাহান ওরফে পলাশ মাহমুদ বা পলাশ আহমেদ বা মাহাদী সম্পর্কে আমরা অনেক কিছু জানতে পেরেছি। এই জানা থেকে সে প্রধান মন্ত্রীকে এমন কী জনগুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর খবর দিতে চেয়েছিল বলে আমরা মনে করতে পারি? ওর বউ শিমলা ওরে তালাক দিছে। তো, তালাক মিটাইয়া দেয়ার জন্য প্রধান মন্ত্রীর সাথে সরাসরি কথা বলতে হবে, আর প্লেন হাইজ্যাক করতে হবে? এমন স্টুপিড বলদ আর আবালের জন্য আপনাদের এই দরদ দেখে আমি ‘কিংবর্লতব্যবিমূঢ়’ হয়ে যাচ্ছি (কি বলবো বুঝতে পারছি না- ‘কিংবর্লতব্যবিমূঢ়। এটা আমার শব্দ)। এখন তাইলে আপনারাও নামজাদা নায়িকারে বিয়া করেন, কিছুদিন পর তালাক খান, বিমান হাইজ্যাক করে আরজ পাঠান- মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর সাথে কথা বলতে চাই। ‘প্রধান মন্ত্রী’ পদটা তাহলে এত সস্তা আর সহজপ্রাপ্য, যেনতেন কারবারেই প্রধান মন্ত্রীর সাথে বাতচিত করে ফয়সালা করতে হবে? শালার বেতমিজ আর কারে কয়!

ঐ হালায় যখন বুঝছে সে ধরা পইড়া যাইতেছে, মরণ ছাড়া আর পথ নাই, শেষ চেষ্টা হিসাবে প্রধান মন্ত্রীর সাথে কথা বলার আর্জি করছে বলে মনে হয়। ও মনে হয় ভাবছিল, প্রধান মন্ত্রীর সাথে যখন তখন দেখা করা যায়, ডাক দিলেই দৌড়াইয়া আসবো।

এই হালায় যদি এখন জীবিত থাকতো, তাইলে ওর কাছ থেকে আমরা কী কী তথ্য পেতে পারতাম? বা, ওর নিজের বউরে পাওয়াইয়া দেয়া ছাড়া আর কোন্‌ জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়া সে প্রধান মন্ত্রীর সাথে আলোচনা করতো বলে মনে করেন? নাকি প্রধান মন্ত্রীরে বলতো, দেখেন- আমি খেলনা পিস্তল (বা আসল পিস্তল) নিয়া প্লেনে উঠে গেলাম, আমারে আপনার সিকিউরিটি ধরবারই পারলো না? নাকি বলতো- ঢাকা শহরে যানযট বাইড়া গেছে, ঐটা কমাইয়া দেন? আপনাদের কি মনে হয়, মাহিবি সাহেব ঠিক ঐ লেভেলের বিরাট ব্যক্তিত্ব ছিলেন?

নাকি, মাহিবি মারা গেছে বলে আপনারা এখন মহান মানবিকতায় আপ্লুত বোধ করছেন? আপনারা মানবিক হোন, আপনাদের মানবতাবোধের প্রতি আমার সশ্রদ্ধ সালাম ও কদমবুচি রইল, কিন্তু আমি দুঃখিত, এ ক্ষেত্রে আমি খুবই নিষ্ঠুর, আপসহীন, আমার অপশন শুধু একটাই - ডাইরেক্ট অ্যাকশন।

আমাদের সমস্যা হলো বহুবিধ - ভালো করলেও সমস্যা, খারাপ করলেও সমস্যা, আর কিছু না করলেও সমস্যা।

এটা এমনও হতে পারতো, ঐ একমাত্র মাহিবিকে ঘিরে রেখেছে কমান্ডোদের দল, আর মাহিবি বিরাট এক গোঁ ধরে বসে আছে - তাকে ধরাও যাচ্ছে না, সে সারেন্ডারও করছে না, হয়ত ৩/৪দিন পার হয়ে গেছে, তাহলে চিন্তা করুন, আজ বাংলাদেশের পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকতো। ১৪২ জন যাত্রীর পরিবারের অবস্থা আজকে কেমন হতো! বহির্বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি আজ কোনখানে গিয়ে ঠেকতো?

যে-সব অপহরণ ও মুক্তিপণের ঘটনা ঘটে, কিংবা সন্ত্রাসীদের আস্তানায় যে-সব অভিযান পরিচালনা করা হয়, তার ফলাফল সচরাচর নিম্নরূপ দেখা যায়ঃ

১। অভিযানকারী দল ও সন্ত্রাসী, উভয় পক্ষেই হতাহত এবং সন্ত্রাসীদের কেউ আটক, কেউ পলাতক।

২। বহুদিন পর অপহৃত ব্যক্তির হাড়গোর উদ্ধার, অপহরণকারী পলাতক, কিংবা পরবর্তীতে আটক।

৩। অপহরকারী ও অপহৃত ব্যক্তিকে আহত বা অক্ষত অবস্থায় আটক/উদ্ধার।

বিমান ছিনতাই চেষ্টায় বা অপহরণ ঘটনায় সচারচর যা ঘটে থাকে, চট্টগ্রামে বিমান ছিনতাই চেষ্টায় তাই ঘটেছে। এমন কিছু ঘটে নি, যা ইতিহাসে এই প্রথম ঘটলো। মাত্র ৮ মিনিটের কমান্ডো অভিযানে যে এই সম্ভাব্য ভয়ানক পরিস্থিতির অবসান ঘটেছে, পুরো জাতিকে অল্প সময়ের মধ্যে টেনশনমুক্ত করেছে, সেজন্য আমাদের দেশপ্রেমিক দক্ষ কমান্ডো বাহিনী বিরাট অভিনন্দন প্রাপ্য। অভিনন্দন প্রাপ্য স্বয়ং সরকারও, যে তাদের এরূপ গর্ব করার মতো দক্ষ কমান্ডো বাহিনী গড়ে তুলতে পেরেছে। স্মরণ করুন, হলি আর্টিজেন, সিলেটের সফল অভিযান পরিচালনা করেছিলেন আমাদের এই দক্ষ কমান্ডোগণ, যারা আমাদের এই মাটিরই সন্তান।


বিঃ দ্রঃ এখানে বিমান বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আমি কোনো আলোচনা করি নি। ওটা অন্য বিষয়।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১৯ রাত ১২:৩৯
১২টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×