ছোটো ছেলে লাবিবের উপর ওর মা প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হলো গতকাল (১৩ এপ্রিল ২০২০) বিকেলের পর, সন্ধ্যার আগে। আমাকে এসে রাগের সুরে বললো, 'ওকে পড়াচ্ছ না কেন? দিনরাত মোবাইল নিয়া বসে থাকে। মোবাইল চাইলেই বলে, আমি তবে বাইরে চলে যাব।' লাবিবকে আমিই পড়াই এবং সবসময়ই পড়াই। বলা যায়, ওকে পড়ানোর জন্য আমিই মুখিয়ে থাকি, এবং আগে থেকে রেডি হয়ে বসে থাকি। ওকে ডাকতে থাকি বসে বসে, কিন্তু ও ব্যস্ত থাকে ওর নিজের কাজে। ডাকতে ডাকতে বিরক্ত হয়ে যাওয়ার পর সে হাতের গিটার, মোবাইল, ল্যাপটপ কোনোমতে ফেলে আমার কাছে দৌড়ে আসে হাঁপাতে হাঁপাতে। এ ব্যাপারে আমার আকুলতার কথা আগে ফেইসবুক স্টেটাসে লিখেছি।
করোনার এই লং টার্ম ছুটির প্রথম ধাপে আমি ওকে যথারীতি পড়াতে থাকি। কিছুদিন পর যখন বাইরে যাওয়া নিরুৎসাহিত করা হলো, তখন আমি নিজে থেকে লাবিবকে আর ডাকি না। অর্থাৎ, ও যাতে একটু রিলাক্সড টাইম পাস করতে পারে, সেজন্য পড়াশুনার উপর চাপাচাপি করি না। বাসায় ওর বোন ঐশী এসেছে মেডিকেল কলেজ থেকে। ওরা দিনভর গল্পগুজব, ল্যাপটপ, মোবাইল, ইত্যাদি নানান কাজে ব্যস্ত থাকে। অন্য সময়ে বিকেলে লাবিব বাইরে চলে যায় ফুটবল খেলতে বা সাইকেল চালাতে। কখনো ওর বন্ধুরা আসে দল বেঁধে। এই করোনা সময়ে ঘরে বসে যাতে হাঁপিয়ে না ওঠে, সেজন্য একদিকে যেমন পড়াশুনার উপর চাপ সৃষ্টি করি না, বরং মাঝে মাঝেই ওকে ডেকে ওর গিটারের সুর নিই আমার গানের জন্য; অন্যদিকে, মানসিকভাবে ওদের চাঙ্গা রাখার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করি, বাইরে গেলে ওদের জন্য যথাসাধ্য খাবার-দাবার নিয়ে আসি।
যাই হোক, লাবিবের আম্মু বলার পর সাথে সাথেই আমি লাবিবকে ডাকি এবং একটু রাগারাগিও করি, এতদিন হয়ে গেল একবারও বই নিয়ে বসে নি বলে। বলে দিলাম সন্ধ্যায় বসার জন্য। ও চলে যাওয়ার পর আমি আমার প্ল্যান করে ফেললাম।
রাত ৮টার দিকে লাবিব আমার কাছে আসলো পড়তে।
'লাবিব, তোমাকে আজ একটা কাজ দিব।' আমি বলি। লাবিব জানতে চায় - 'কী কাজ?' আমি বলি, 'তুমি এখন ঝটপট একটা গান লিখে ফেলো তো।' লাবিব খুব ছোটো বেলায়, কেজি-১,২ হবে, গল্প লেখা শুরু করেছিল। সেগুলো ছিল ইংরেজিতে। ফেইসবুকে শেয়ার করা হলে বেশ প্রশংসা পাওয়া যায়। এরপর আর লেখে নি। আজ হঠাৎই বলে ফেললাম- একটা গান লিখো। সে ইংলিশ ভার্সনে পড়ে। তাকে বাংলা শেখাতে শেখাতে আমার জান তেজপাতা হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তবু তেমন উন্নতি নাই। আমি জানি, সে গান যদি লিখেও, লিখবে ইংরেজি গান, যা দেখে আমি বেশ বিরক্তই হবো। কারণ, আমার ১ম উদ্দেশ্য হলো ওর বাংলা হাত চালু হোক, ২য় উদ্দেশ্য হলো ওর ক্রিয়েটিভিটি দেখা। যেহেতু সে গান, গিটারের পাগল, গান লিখতে পারলেও পারতে পারে।
আমাকে অবাক করে দিয়ে লাবিব বলে- আমি তো গান একটা লিখেছি। অর্ধেক হয়েছে। সুরও করেছি। আমি মুহূর্তের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। বললাম, নিজের সুর, নাকি আর কারো সুরে? লাবিব বলে- সুর আমিই দিয়েছি। বাংলা, নাকি ইংরেজি গান? - বাংলা। ভেরি গুড, যাও, গিটার নিয়ে আসো। এখনই শোনাও।
আমি বলতেই সে দৌড়ে গিটার নিয়ে এলো। তারপর বাজানো শুরি করলো। ওর গিটারের স্টার্টিং দেখেই আমি মুগ্ধ। তারপর যখন গানের সুর ধরলো, আমি বিস্মিত, হতবাক, তার গানের কনসেপ্ট দেখে। এই যে করোনার দিনে আমরা ঘরে বন্দি হয়েছি, ওর ছোট্ট মনের উপর এর প্রভাব পড়েছে খুব। ওর মন বাইরের প্রকৃতি দেখতে চায়, সে বাইরে খোলা হাওয়ায় যেতে চায়, কিন্তু যাওয়া বারণ। সে সবার সাথে একই ছাদের নীচে আছে, কিন্তু তবু যেন সবার মধ্যে অনেক অনেক দূরত্ব।
লাবিব ক্লাস সেভেনের ছাত্র। ও খুব গান পাগল। গান, গিটার ওর সঙ্গী। ওর বড়ো ভাইবোনও খুব গানপাগল। আমার বাবাও ছিল খুব গান পাগল। আমার ভাইয়েরাও গানের পাগল। আমাদের রক্তে গান। ও সারাদিন ভাইবোনদের সাথে গান বাজনা নিয়ে মগ্ন থাকে, ল্যাপটপ মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু, ও যে সত্যিই একটা গান লিখে ফেলবে, এবং তা সুর দিয়ে গেয়েও ফেলবে, আমি এতটা আশা করি নি। ভেবেছিলাম, ওকে কিছুদিন সময় দিব গান লিখতে। কিছু একটা যদি লিখেও ফেলে, আমি সেটা ঘষামাজা করে নিজেই সুর দিয়ে গেয়ে ফেলবো ওকে উৎসাহিত করার জন্য। কিন্তু, উলটো, ওর প্রতিভায় আমি নিজে শুধু মুগ্ধ না, আমি উৎসাহিতও হয়েছি ওর কাছ থেকে।
আমি ১০ শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় স্কুলের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় প্রথম নিজের গান, নিজেই সুর দিয়ে গেয়েছিলাম। আমি প্রতিযোগিতায় ভালো নম্বর পাই নি, কিন্তু জাহিদ, বাবুল, আমিনুর নামক বাঘা বাঘা শিল্পীদের চাইতে বেশি নম্বর পেয়েছিলাম। প্রতিযোগিতায় কোনো স্থান না পেলেও নামকরা গায়কদের পেছনে ফেলা ছিল আমার জন্য বড় অর্জন। আর আজকে, আমার ছেলে ক্লাস সেভেনের ছাত্র, আমার থেকে তিন ক্লাস আগেই আমাকে পেছনে ফেলে সে নিজের গান গেয়ে ফেললো! আপনাদের কাছে এ গান হয়ত কিছু না, কিন্তু বাবা হিসাবে ছেলের এ গানের মুল্য আমার কাছে অপরিসীম।
গানটা নিচে শেয়ার করলাম। একেবারে ফার্স্ট রেকর্ড। আমাকে যেটা সে শুনিয়েছে, সেটাই রেকর্ড করেছি। ওর লিরিক্স দেখার সুযোগ হয় নি। অডিওতে বেশ ত্রুটি আছে, কথা পরিষ্কার বোঝা যায় না। কিন্তু সে যা করেছে, তা আমার কাছে খুব বিস্ময়কর। এমনিতে সে যে-কোনো গানই গাইতে পারে, অর্থাৎ, একটা গান দিয়ে যদি বলি এটা গাইতে পারবে? আমি আশ্চর্য হয়ে যাই, যখন অল্পকিছুক্ষণ পরেই সে ওটার কারাওকে বের করে, গেয়ে আমাকে অডিও দিয়ে বলে- এই যে গেয়েছি! এর আগে ওদের দু ভাই ও বোনের গান আপনাদের কাছে শেয়ার করেছি; আজকেও সেই আগের গানগুলো শেয়ার করবো, সেইসাথে লাবিবের লেখা ও সুর করা প্রথম গানটাও দিচ্ছি। মূলত, লাবিবের এ গানটার জন্যই আজকের এই পোস্ট।
১
হঠাৎ যেন - কথা, সুর ও কণ্ঠ - বেবি লাবিব
২
OneRepublic - Counting stars - Cover by Baby Labib
৩
Flute - Sunflower - Post Melone and Swae Lee - Cover by Baby Labib
৪
Train - Hey Soul Sister - Cover by My youngest son Baby Labib
৫
Baby come on by Plus 44 - Cover by My Youngest Son Labib
৬
Runaway - Cover song by Baby Labib
৭
Can't help falling in love - Elvis Presley - Cover song by baby Labib - Video-photomix
৮
Shallow - Lady Gaga & Bradley Cooper - Cover song by baby LABIB - Modern song - Photomix
৯
La Vi En Rose - Can't Help Falling in Love - With or Without You - Cover by Highway Melancholies
১০
Singing Closer by Baby Labib - Lipsing by Baby Labib
১১
Baby Labib got a bicycle and singing Hey soul sister 27 Dec 2018
১২
Cigarettes after sex - Cover song by Pilot - Photomix
১৩
Sadher lau banailo more boiragi - Guitar by Baby Labib - Photomix
১৪
Towards the Flying Sea-Lights - Instrumental (Guitar) - Tune, Composition and Guitar by Pilot
১৫
Tumi Bhorechoe mon Song By Sumon Cover By Oishi and Pilot
১৬
Neela - Miles - Cover by Oishi - My Daughter - Guitar - Labib, My Younger Son - Photomix
১৭
Something about us - Daft Punk - Cover by Adnin - Music by Pilot - Photomix
১৮
বোনাস - পরের পোস্টটিই হবে বোনাস
সবাই ঘরে থাকুন, নিরাপদ থাকুন।
শুভ নববর্ষ
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:১০