একজন গৃহিণী
ও একটি পরগাছার গল্প
একবার এক সুপ্রাচীন আম্রবৃক্ষের শাখায় একটা পরগাছা জন্মালো। ওটি দেখতে অদ্ভুত সুন্দর। বাড়ির গৃহিণী রোজ সকালে পরগাছার গোড়ায়, গায়ে পানি ছিটিয়ে দেয়। পরগাছাটি মা মা বলে হেসে ওঠে, আর ঝুলে পড়ে পাতা নাড়িয়ে গৃহিণীর গা ছুঁয়ে দেয়।
একদিন গৃহিণীর অসুখ হলো এবং এক রাতে সে মারা গেলো। কেউ খেয়াল করলো না পরগাছাটিও নীরবে শুকিয়ে ঝরে গেলো।
২৯ জুন ২০১৬
---------------------
কৃতজ্ঞতা : ব্লগার স্বপ্নচারী গ্রানমা। তাঁর একটা স্টেটাসে কমেন্ট করতে গিয়ে এটি লেখা হয়ে গেলো। পাঠকদের উদ্দেশ্যে সবিনয়ে বলছি, কিছু গল্প থাকে যা শুধু গল্পই, যার কোনো অন্তর্নিহিত রহস্য বা ভাবার্থ নেই। এটিও সেরকম কিছু।
কালো মেয়ে
মেয়েটা কালো বলে লোকটা খুব আফসোস করতেন, হায়, আমার মেয়েটা সুন্দর হলো না!
আফসোস করতে করতে একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তিনি দেখতে পেলেন, মেয়েটা খুব মিষ্টি ও সুন্দরী হয়ে গেছে। চঞ্চলতায় সে সারা বাড়ি আলো করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার হাসিতে মুগ্ধ হয়ে আকুলভাবে 'মা, মা' ডেকে উঠলেন লোকটা। আর মেয়েটি ধীরে ধীরে তাঁর রূপবতী ‘মা’ হয়ে গেলো।
আরো একটু পর তিনি দেখতে পেলেন, 'মা'টা হয়ে গেলো একটা হলুদ পাখি। তারপর করুণ ডানা নেড়ে পাখিটা আকাশে উড়ে গেলো, লোকটার দিকে ফিরেও তাকালো না।
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
একটি শাদা কবুতর
ধাপারি খালের মুখে আড়িয়াল বিলে আমাদের একটুকরো বোরো জমি ছিল। একবার ধান কাটা শেষ হলে রোদ পড়ার পর আমি আর নীশু খেতের আইলে গিয়ে দাঁড়ালাম। অমনি কোথা থেকে উড়ে এলো একঝাঁক লম্বা ঠোঁট ও পা-ওয়ালা সারস পাখি। ওরা গজ-ঢঙে হাঁটছিল আর মাটির বুক থেকে ধানের দানা কুড়িয়ে খাচ্ছিল। মাঝে মাঝে আনন্দিত চোখে আমাদের দেখছিল।
সোনার জমিনে থোকা থোকা শাদা বিন্দুর মতো সারস পাখিরা বিচরণ করছিল। আমি আর নীশু খুব অবাক হয়ে ওদের দেখছিলাম। হঠাৎ, চোখের পলকে সারসগুলো ঘুঘু হয়ে গেলো। ঘুট-ঘুট-ঘুট্টস শব্দে ওরা ধান খুঁটতে লাগলো। আমাদের চোখ বিস্ময়ে ছানাবড়া হতে থাকে। আমরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে বিমূঢ় হয়ে যাই।
এবং হঠাৎই ডানা ঝাড়া দিয়ে সবগুলো ঘুঘু একসঙ্গে উড়ে গেল এবং আমাদের মাথার উপর দিয়ে একপাক ঘুরে আবার মাটিতে নেমে এলো। এ কী দেখছি আমরা! স্বপ্ন নয় তো? সারা খেত জুড়ে বাক-বাকুম করে চরে বেড়াচ্ছে একঝাঁক শাদা কবুতর।
দেখতে দেখতে খুব মধুর সুরে ওরা গান গেয়ে উঠলো এবং গান গাইতে গাইতে উড়ে গেল আর আমাদের সামনে একটি সুন্দর পালক রেখে গেলো। আমি উবু হয়ে পালকটি হাতে তুলে নিই। পালকটিতে অমরাবতীর সুগন্ধি মাখানো ছিল। আমি নীশুর চুলে পালকটি গুঁজে দিলাম। নীশু স্বর্গীয় হাসিতে আমার বুক ভরে দিল।
সন্ধ্যার কিছু আগে আমরা বাড়ির দিকে পথ ধরলাম। আমি আগে, ছোটো ছোটো পায়ে নীশু আমার পেছনে হাঁটছিল। ও কখনো আমার হাত ধরে হাঁটে; আমি কখনো-বা পেছনে তাকিয়ে নীশুকে দেখছিলাম। নীশু আমার আদরের ছোটোবোন।
একবার পেছনে তাকিয়ে দেখি নীশু নেই।
নীশু!
নীশু!
আমি নীশুকে ডাকতে থাকি। আকুল হয়ে চারদিকে তাকাই। কোথাও নীশু নেই। কোথাও নেই নীশু।
আচানক আকাশ থেকে নীশুর মাথায় গুঁজে দেয়া শাদা পালকটি আমার সামনে ঝরে পড়ে; আমি উর্ধ্বে তাকিয়ে দেখি একটি শাদা কবুতর উড়ে যাচ্ছে, দূর অসীমের দিকে।
পালকটি তুলে নিয়ে আমি বুকের গভীরে গেঁথে রাখি।
৫ জুলাই ২০১৬
।.।.।.।.।.।.।.।.।
এসব গল্পকণিকায় পাঠকেরা কোনো অর্থ খুঁজে পাবেন না; আদতে কোনো সিরিয়াস বা হাল্কা ভাবার্থ সন্নিবিষ্ট করে এগুলো লেখা হচ্ছে না; মাথায় যা আসে তাই লেখা।
তবে, লেখক নিশ্চয়ই কিছু একটা উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই এসব লিখছে।
।.।.।.।.।.।.।.।.।
[গল্পকণিকা কী? একটা লেখা— কখনো মনে হয় গল্প, কখনো কবিতা। একটা গল্পে কাব্যরস বিদ্যমান থাকা স্বাভাবিক; একটা কবিতায়ও আমরা অনায়াসে গল্প বলে যেতে পারি। এ ধরনের ফিউশনকে কী নাম দেয়া যায় তা ভাবছি অনেকদিন ধরে। গল্পকণিকা মূলত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র গল্প, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের গল্প-সংকেত নয়, কারণ এগুলো স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ নামটা আমি ব্লগে ব্যবহার করছি। কেউ এসব গল্পকণিকাকে কবিতা বলে অভিহিত করলে ভুল করবেন না মনে করি।
গল্পকণিকা হলো পারমাণবিক বোমা; ক্ষুদ্রত্বে মহাবিস্ময়!]